প্রবন্ধ

মায়ের কোল শিশুর প্রথম বিদ্যালয়

লেখক:মাওলানা শফীকুর রহমান
১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
৬৫১৮ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

আল্লাহ তা'আলা অনুগ্রহ করে পিতা- মাতাকে সন্তান উপহার দেন। শিশুরা আসলে জান্নাতের ফুল। প্রতিটি শিশুই স্বভাবধর্ম ইসলামের ওপর জন্মগ্রহণ করে। পরে তার পিতা-মাতাই তাকে ইয়াহুদী, নাসারা ও খোদাদ্রোহী বানায়। অন্যকথায় শৈশবে মাতাপিতার দেয়া শিক্ষাই একটি মানুষের জান্নাত- জাহান্নাম অনেকটা নির্ধারণ করে দেয়। এজন্য ইসলাম শিশুশিক্ষার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। মূলত শৈশব-কৈশোরই হচ্ছে মানুষের শিক্ষাজীবনের ভিত্তিকাল। স্বচ্ছ মেধা, সরল চিন্তা ও একনিষ্ঠ মনোযোগের কারণে শিশুরা সবকিছু সহজে আয়ত্ব করতে পারে। হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. বলেছেন, 'শিশুর মনমানসিকতা ও চিন্তাচেতনার মূল কাঠামো জন্মের পাঁচ বছরের মধ্যেই গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে তা কেবল সুসংহত হতে থাকে।' আর এ প্যাঁচটি বছর শিশুরা তাদের মায়ের আঁচল-তলেই বেড়ে ওঠে। তারা পুরোপুরি মায়ের উপরই নির্ভরশীল থাকে। খাওয়া-দাওয়া, ঘুম-গোসল, খেলাধূলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সবই সম্পন্ন হয় মায়ের হাতে তার নিবিড় তত্ত্বাবধানে। অনুরূপভাবে জন্মগ্রহণ করার পর একটি শিশু তার চারপাশ থেকে প্রতিনিয়তই শিখতে থাকে। মা- বাবা, খেলার সাথী, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজন সবার কাছ থেকে সে শিক্ষা লাভ করে। তবে শিশুরা মায়ের কাছ থেকে শিখে সবচে' বেশি। এ হিসেবে মায়ের কোলই শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। মা-ই হলেন শিশুর প্রথম শিক্ষক।

সুতরাং মায়েরা যদি সঠিক পরিকল্পনা ও পরিচর্যার মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা- দীক্ষার দায়িত্ব পালন করেন তাহলে তারা হয় চরিত্রবান ও দেশ-জাতির জন্য আশীর্বাদ। পক্ষান্তরে শিশু বলে তাদের শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি উদাসীন হলে কিংবা অবহেলা করলে এই কচি শিশুরাই হয় চরিত্রহীন ও সকলের জন্য অভিশাপ। সম্ভবত এদিকে লক্ষ্য করেই সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্ট তার বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন- আমাকে একজন আদর্শ মা দাও; তোমাদেরকে একটি আদর্শ জাতি উপহার দেবো। অতএব একজন সচেতন মুসলিম জননী তার সন্তানকে প্রথম দিন থেকেই গড়ে তোলবেন আল্লাহমুখী করে। সন্তানের কোমল হৃদয়ে বপন করবেন তাওহীদ ও উন্নত গুণাবলীর বীজ। এরপর বীজটির পরিচর্যার জন্য ঘরের পরিবেশটাকে করে নেবেন শিশুর অনুকূল। সর্বোপরি কলিজার টুকরো সন্তানটির শিক্ষা-দীক্ষার জন্য বেছে নিবেন এমন একটি প্রতিবেশ যা তার প্রতিদিনের পরিচর্যাকে ব্যর্থ করে দিবে না; পল্লবিত ও পুষ্পিত করে তুলবে। 


মায়ের কোলে শিশুর শিক্ষা 

একটি শিশু মায়ের মুখ থেকে যেমন শিখবে নিত্যদিনের কথামালা ও বোলচাল তেমনি শিখবে মায়ের সযত্ন প্রয়াসে প্রাথমিক দীনী শিক্ষা। মায়ের কাছ থেকেই সে শিখবে কুরআন-সুন্নাহ ও শরীয়তের মৌলিক জ্ঞান, যাতে ভবিষ্যতে যে শিক্ষাই সে অর্জন করুক ঈমান নিয়ে মুসলমান অবস্থায়ই যেন পরকালে পাড়ি জমাতে পারে। 


শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার সিলেবাস 

১. তাওহীদ ও রিসালাত শিক্ষা শিশুকে সর্বপ্রথম সহজ ভাষায় শেখাতে হবে আল্লাহর নাম, কালিমা তাইয়িবা, তাঁর একত্ববাদ, বড়ত্ব, দয়া-অনুগ্রহ, তিনি সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা, তাঁর প্রতি মহব্বত- ভালোবাসা ইত্যাদি মৌলিক আকীদা। অনুরূপভাবে আমাদের নবীর নাম, পরিচয়, তিনি কেমন ছিলেন, তাঁর জীবনের ঘটনা, তাঁর প্রতি মহব্বত ইত্যাদিও শেখাতে হবে।

২. কুরআনে কারীম 

কুরআনে কারীমের শেষ দশটি সূরা, সূরা তীন, সূরা কদরসহ আরো যে সূরাগুলো সম্ভব শিশুদেরকে মুখস্থ করিয়ে দেয়া।

৩. শৈশবে কোন কিছু মুখস্থ করা পাথরে খোদাই করে নকশা করার মত। এজন্য ছোট ছোট জরুরী মাসনূন দু'আ শৈশবেই বাচ্চাদের শিখানো উচিত। যেমন ঘুমানো, ঘুম থেকে উঠা, খাওয়া, পান করা, বাথরুমে প্রবেশ করা, বের হওয়া, বিপদের সময়, নিয়ামত প্রাপ্তির সময় ইত্যাদির দু'আ, সালাম ও সালামের জবাব শিখানো, কালিমা তায়্যিবা, আযান, ইকামত ইত্যাদি। তেমনিভাবে ছোট ছোট কয়েকটি দুরূদও মুখস্থ করানো উচিত।

৪. গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত 

বাচ্চাকে সর্বদা সুন্নাত তরীকায় জীবন যাপনে অভ্যস্ত করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে তার জন্য সুন্নাতের উপর আমল করা সহজ হয়। বিশেষ করে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত শেখালে বাকি সুন্নাতগুলোর উপর আমল করা সহজ হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। সুন্নাত তিনটি এই,

(ক) আগে আগে সালাম করা। সালামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার করা। 

(খ) প্রত্যেক ভালো কাজে বা স্থানে ডানকে প্রাধান্য দেয়া এবং প্রত্যেক নিম্নমানের কাজে বা স্থানে বামকে প্রাধান্য দেয়া।

(গ) সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা'আলাকে স্মরণ রাখা।

৫. শরীয়তের মৌলিক বিষয়

যেহেতু শরীয়তের উপর চলতে গেলে মাসআলা-মাসাইল মেনে আমল করতে হয় এজন্য শরীয়তের প্রধান ও বড় বিষয়গুলোও শৈশবেই শিখিয়ে দেয়া বাঞ্ছনীয়। যেমন ইস্তিঞ্জা করার পর পবিত্রতা অর্জন করার পদ্ধতি, উযূর ফরয, উযূ ভঙ্গের কারণ, তাশাহুদ, দু'আয়ে কুনূত, নামায আদায়ের নিয়ম ইত্যাদি।

৬. মাতা-পিতার হক

বর্তমান সমাজে মা-বাবারা সন্তান কর্তৃক যে ব্যাপকভাবে অবজ্ঞার শিকার হওয়ার মূল কারণ সন্তানকে ইসলামী শিক্ষা না দেয়া এবং তাদেরকে মাতা- পিতার হক না শিখানো। এজন্য শৈশবেই সন্তানদেরকে মাতা-পিতার ১৪টি হক শিখিয়ে দেয়া যেতে পারে। পাশাপাশি উস্তাদের হক, বড়দের হক, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ সম্পর্কেও শৈশবেই স্বচ্ছ ধারণা দেয়া উচিত।


বাচ্চাদের শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে বর্জনীয় বিষয়

১. শিশুদেরকে জোরপূর্বক কোন কিছু শেখানো যাবে না। শিশুর স্বভাব প্রকৃতির প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রথমে তার ভেতর শেখার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। তারপর উৎসাহ দিয়ে দিয়ে সহজতম উপায়ে তাকে শেখাতে হবে। এতে সে নিজেই কাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলো আত্মস্থ করে নিবে।

২. শিশুদেরকে প্রহার করা উচিত নয়। এর দ্বারা তারা শিক্ষার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে, জেদি হয়ে যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে তো পড়াশোনাই ছেড়ে দেয়।

৩. শিশুদেরকে বিধর্মী, পাপাচারী ও ধর্মদ্রোহী শিক্ষক দ্বারা এবং এ জাতীয় লোকদের পরিচালিত স্কুলে পড়ানো যাবে না। এতে তাদের কৃষ্টি-কালচার শিশুর মধ্যে সংক্রমিত হয়; যা শিশুর দুনিয়া-আখিরাত ধ্বংসের কারণ হয়।


শিশুর দীক্ষা

ফারসীতে একটি প্রবাদ আছে,

خشت اول گر نهد معمار کج / تا ثریا می رود دیوار کج

অর্থ: দেয়ালের প্রথম ইটটি যদি বাঁকা করে বিছানো হয় তবে তার উচ্চতা তারকালোক স্পর্শ করলেও শেষ পর্যন্ত বাঁকাই থাকবে।

বাংলায় প্রবাদ আছে, কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ পাকলে করে ঠাস ঠাস। অর্থাৎ শিশুকাল যেমন মানুষের পরবর্তী জীবনের ভিত্তি তেমনই শৈশবের শিক্ষা-দীক্ষা প্রাসাদের ভিত্তিমূলের মতই ভবিষ্যত জীবনের ভালো-মন্দের ভিত্তি। সুতরাং এ সময়ে যদি তার মধ্যে আদব-আখলাক, উত্তম চরিত্র ও উন্নত নৈতিকতার ভিত্তি স্থাপন করা না হয় তাহলে পরে আর এটা সম্ভব হবে না। এজন্য সময় থাকতে সুযোগের সদ্ব্যবহার বুদ্ধিমানের কাজ। 


শিশুর তরবিয়তের জন্য যেসব বিষয় লক্ষণীয়

১. শিশুর সামনে নিজেকে একজন সাচ্চা ও আদর্শ মুসলমান হিসেবে পেশ করা। 

শিশুদের মধ্যে দেখে দেখে শেখার প্রবণতা অনেক বেশি। মাকে নামায পড়তে দেখে শিশুও নামায পড়তে লেগে যায়। মায়ের কুরআনে কারীম তিলাওয়াত শোনে সে-ও গুনগুনিয়ে কিছু একটা পড়তে থাকে। কাজেই কোন মা যদি তার বাচ্চার সামনে নিজেকে সকল মন্দ অভ্যাস থেকে মুক্ত করে এবং সকল ভালো গুণে নিজেকে সমৃদ্ধ করে আদর্শ মানুষ ও সাচ্চা মুসলমান হিসেবে পেশ করতে পারে তাহলে বাচ্চাও তাকে দেখে দেখে সবগুলো না হলেও বেশিরভাগ গুণাবলীই অর্জন করে নিবে। এটাই শিশুর নৈতিকতা ও সচ্চরিত্র শেখার সবচেয়ে সহজ ও উপকারী পদ্ধতি।

২. বুযুর্গানে দীনের ঘটনা শুনানো। 

বাচ্চাদের স্বভাব হল, বড় কারো কথা শুনলে সে-ও তার মত হতে চায়। শিশুর ভেতর বড় হওয়ার আগ্রহ সৃষ্টির জন্য আম্বিয়া আলাইহিস সালাম বিশেষ করে আমাদের পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম রাযি., সালাফে সালিহীন, আকাবিরে দেওবন্দ প্রমুখ মহামনীষীর তাকওয়া- পরহেজগারী সংক্রান্ত ঘটনাবলী শুনাবে। 

৩. নামাযের ব্যাপারে সজাগ থাকবে।

শিশুর বয়স সাত বছর হওয়ার আগেই তাকে নামায দেখাবে, শিখাবে। সাত বছর পূর্ণ হলে তার নামায পড়ার ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কারণ যার নামায ঠিক হয়ে যায় তার দুনিয়ার সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। আর যে নামাযে অবহেলা করে সে সবকিছুতেই পিছিয়ে থাকে।

আল্লামা আবুল হাসান আলী নাদাবী রহ. তার মায়ের কড়া শাসন সম্পর্কে বলেন, ছোট বেলায় আব্বা মারা যাওয়ার পর আমার মনরক্ষার ক্ষেত্রে অপরাপর মায়েদের তুলনায় আমার মা স্বাভাবিকভাবেই অধিকতর যত্নশীল ছিলেন। কিন্তু এতদসত্ত্বেও দুটো ব্যাপারে তিনি খুবই কঠোর ছিলেন। 

একটি হল, নামাযের ব্যাপারে অলসতা তিনি আদৌ বরদাশত করতেন না। কখনো যদি ইশার নামায না পড়েই শুয়ে পড়তাম কিংবা ঘুমিয়ে যেতাম, তা ঘুম যত গভীর ও গাঢ়ই হোক না কেন, ঘুম থেকে তুলে আমাকে নামায পড়াতেন। নামায না পড়ে আমাকে কখনো ঘুমাতে যেতে দিতেন না। ফজরের আগেই আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে মসজিদে পাঠিয়ে দিতেন। এরপর কুরআনে কারীম তিলাওয়াতের জন্য বসিয়ে দিতেন।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি তিনি পছন্দ করতেন না এবং সেক্ষেত্রে স্নেহ-মমতাকে আদৌ প্রশ্রয় দিতেন না তা হল, ঘরের খাদেমার কোন ছেলে-মেয়ের প্রতি কিংবা যারা বাড়ি বাড়ি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের সঙ্গে অথবা দরিদ্র শ্রেণীর ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে কোন প্রকার বাড়াবাড়ি কিংবা অন্যায় আচরণ করলে অথবা তাদের কারো প্রতি অহঙ্কার ও অবজ্ঞা প্রদর্শন করলে তিনি আমাকে দিয়ে তার কাছে কেবল মাফই চাওয়াতেন না; হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করতেন। আর এতে আমাকে যত যিল্লতির সম্মুখীনই হতে হোক না কেন তিনি কানে নিতেন না। এ থেকে জীবনে আমি খুবই উপকৃত হয়েছি। যুলুম, অন্যায়, অহঙ্কার ও বড়াই করাকে আমি ভয় করতে শিখেছি। অপরের মনে কষ্ট দেয়া, অন্যকে অপদস্ত ও হেনস্থা করাকে কবীরা গুনাহ ভাবতে শিখেছি। এর ফলে নিজের ভুল-ত্রুটি স্বীকার করে নেয়া আমার কাছে চিরদিন সহজ মনে হয়েছে। (আমার আম্মা; পৃষ্ঠা ৩৮)

৪. শিশুর মনে 'আমিত্ব ভাব' সৃষ্টি না হয় এ ব্যাপারে সজাগ থাকবে।

কারো মধ্যে যদি আমিত্ব ভাব কিংবা অহঙ্কার চলে আসে তাহলে এটা তার বড় হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। উপরন্তু তাতে কবীরা গুনাহ তো আছেই।

৫. দীনদারদের পোশাক-পরিচ্ছদ পরানো।

বাহ্যিক আকার আকৃতির প্রভাব ভেতরেও সংক্রমিত হয়। সুতরাং শিশুকে বিজাতীয় পোশাক- পরিচ্ছদ পরানো হলে ওগুলোর প্রতি তার আকর্ষণ সৃষ্টি হবে এবং সে বিজাতীয় কৃষ্টি-কালচারের দিকে ধাবিত হবে। একপর্যায়ে তার আর দীনদারদের পোষাক ভালো লাগবে না এটা শিশুর জন্য মারাত্মক হুমকি ও ক্ষতির বিষয়।


শিশুর নিরাপত্তার স্বার্থে যে সকল বিষয় বর্জনীয়

১. মোবাইল থেকে দূরে রাখা। 

মোবাইলের নেশা একটি মারাত্মক ব্যাধি। শিশু যদি মোবাইল ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তাহলে বড় হলে তার থেকে সেটা দূর করা কঠিন হয়ে যায়। অপরদিকে পড়ালেখার জন্য মোবাইল মারাত্মক একটি বাধা। এজন্য একজন আদর্শ মায়ের উচিত দামী মোবাইল ব্যবহার না করা। শিশুর স্বার্থে মায়েরা সাধারণ ও কমদামী মোবাইল ব্যবহার করবে, তাও যথাসম্ভব শিশুর আড়ালে। অনুরূপ কম্পিউটার ব্যবহারও পরিত্যাগ করবে। টেলিভিশনের তো প্রশ্নই আসে না; মুরুব্বীরা এটাকে জাহান্নামের বাক্স বলে থাকেন।

২. বাচ্চাকে যথাসম্ভব কাজের বুয়ার হাতে না দেয়া।

মায়ের তুলনায় কাজের বুয়ার আখলাক-চরিত্র, শিক্ষা-দীক্ষা সবকিছুই নিম্নমানের। বরং তাদের কোন কোন অভ্যাস তো শিশুর জন্য ধ্বংসাত্মক হয়ে দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে যদি বাচ্চাকে তার কাছে রেখে মা অফিস আদালতে দৌড়ায় তাহলে শিশুর অবস্থা আর হবে কি? এটাই কারণ যে, বর্তমানে ছেলে-সন্তানেরা কাজের বুয়া থেকে বস্তির ছেলেদের খাসলত অর্জন করে। পরে এরাই সমাজের বিভিন্ন ফিতনা-ফাসাদের কারণ হয়।

৩. বদ অভ্যাসের ব্যাপারে ছাড় না দেয়া।

বেশি আদর সোহাগ করার কারণে অথবা একেবারে খোঁজ-খবর না নেয়ার কারণে অনেক সময় শিশু বিভিন্ন বদ অভ্যাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। যেমন মিথ্যা বলা, চুরি করা ইত্যাদি। এগুলোকে অঙ্কুরেই মূলোৎপাটন না করলে পরে কঠিন আকার ধারণ করে। তবে অবশ্যই এগুলো দূর করার ক্ষেত্রে হিকমত অবলম্বন করতে হবে। ঠাণ্ডা মাথায় বাধা দিতে হবে; রাগের মাথায় নয়। যাতে হিতে বিপরীত না হয়।

৪. খারাপ সঙ্গ থেকে দূরে রাখা। 

প্রবাদ আছে, সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ। দুষ্ট ছেলেমেয়ের সাথে ওঠা-বসা করলে ভালো শিশুটিই খারাপ হয়ে যায়। আর ভালো শিশুর সাথে খেলাধূলা করলে শিশুটি দুষ্ট হবে না। এজন্য দুষ্ট ছেলে-মেয়েদের থেকে শিশুকে নিরাপদ রাখতে হবে।

৫. শিশুকে ধোঁকা না দেয়া। 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমের রাযি. এর বর্ণনা: একবার আমার আম্মা আমাকে কিছু একটা দিবেন বলে কাছে ডাকলেন। হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমাদের বাড়িতে বসে ছিলেন। তিনি আমার আম্মাকে বললেন, তুমি কি সত্যিই তাকে কিছু দিবে? আম্মা বললেন, হ্যাঁ, তাকে খেজুর দেয়ার ইচ্ছা ছিল। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে তবে তোমার এ কথাটি মিথ্যা বলে গণ্য হতো। (সুনানে আবূ দাউদ; হা.নং ৪৯৯১) 

হাদীসটি প্রত্যক্ষভাবে যদিও শিশুর সামনে মিথ্যা বলা বা ধোঁকা দেয়া থেকে বারণ করেছে; (কারণ এর দ্বারা সে-ও এটা শিখে ফেলবে।) কিন্তু পরোক্ষভাবে মাতা-পিতাকে সন্তানের সামনে সকল মন্দকর্ম ও মন্দ আচরণ থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ প্রদান করেছে।

আল্লাহ তা'আলা আমাদের সন্তানদেরকে আমাদের চোখের শীতলতা বানিয়ে দিন। আমীন।

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

ইসলামী শিষ্টাচারের পাঠ

...

শাইখুল ইসলাম আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ.
৯ নভেম্বর, ২০২৪
৩০০৮ বার দেখা হয়েছে

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →