প্রবন্ধ
সুন্নাহ-সম্মত পোশাক (পর্ব তিন)
(আট) পোশাকের চারটি স্তর
ফরজ পর্যায় : পোশাকের প্রথম স্তর ফরয। এতে কোন ব্যত্যয় ঘটলে কবীরা গুনাহ হবে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল শরীরের আবশ্যকীয় গুপ্তাঙ্গ। শরীরে এ পরিমাণ অংশ অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে। একে শরীয়তের পরিভাষায় সতর বলা হয়। পুরুষের সতর হলো নাভী থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। এ অংশ সর্বদা আবৃত করে রাখা ফরয। স্ত্রী ছাড়া অন্য কাউকে তা দেখানো হারাম।
মহিলাদের সতরের চারটি স্তর রয়েছে। স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে সতরের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। অন্যান্য মহিলাদের ক্ষেত্রে তার সতর হল নাভী থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। এ অংশ অন্যান্য মহিলাদের সামনেও আবৃত করে রাখতে হবে, কোন মহিলার সামনেও তা খোলা যাবে না। আর মাহরাম পুরুষ তথা পিতা, ভাই, আপন চাচা, মামা, ভাগিনা, শ্বশুর প্রমুখ যাদের সাথে কখনো বিবাহ জায়েয নয় এদের ক্ষেত্রে মহিলাদের সতর হল নাভী থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং পেট ও পিঠ। এদের ক্ষেত্রে চুল, মাথা, হাত, বাহু, গলা, পায়ের নলা আবশ্যকীয় সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। কোনরূপ কামভাব না থাকলে মাহরাম পুরুষ এ অঙ্গগুলো দেখতে পারবে। আর কামভাবের আশঙ্কা থাকলে এ অঙ্গগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেয়া নাজায়েয। তবে কোন কোন আলেম মাহরাম পুরুষদের থেকেও সর্বদা এ অঙ্গগুলো ঢেকে রাখা জরুরী বলেছেন। (তাফসীরে মা'আরেফুল কুরআন ৬/৪০৩)
মাহরাম পুরুষ ছাড়া অন্যান্য সকল পুরুষ চাই সে কোনভাবে আত্মীয় হোক না হোক, তাদের থেকে মাথা, চুল, কান, গলা, বুক, পিঠ, পায়ের নলা ইত্যাদি পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখতে হবে। তাদের ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য এই সকল অঙ্গই সতরের অন্তর্ভুক্ত। শুধুমাত্র শরঈ প্রয়োজনে মুখমণ্ডল, কবজি পর্যন্ত দু'হাত ও পায়ের পাতা খোলার সুযোগ আছে।
নাজায়েয পর্যায়: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সকল পোশাক ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন সেগুলো সব এ পর্যায়ভুক্ত। এগুলো পরিধান করা নাজায়েয। নিষেধের গুরুত্ব বা মাত্রা হিসাবে তা মাকরূহ বা হারাম হবে। পুরুষদের জন্য রেশমী পোশাক, টাখনুর নিচে ঝুলন্ত পোশাক, অহঙ্কার বা প্রসিদ্ধির পোশাক, মেয়েলি পোশাক, লাল জাফরানী রঙের পোশাক, কোন অমুসলিম বা পাপে লিপ্ত ফাসেক সম্প্রদায়ের অনুকরণে তৈরী পোশাক, মেয়েদের জন্য পুরষালি পোশাক, আঁটসাঁট পোশাক, ফিনফিনে পাতলা পোশাক সবই এ পর্যায়ের।
জায়েয পর্যায়: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পোশাক পরিধান করেননি এবং তা কোন মূলনীতির আলোকেই নিষিদ্ধ বা মাকরূহ পোশাকের আওতায় পড়ে না, সে পোশাক ব্যবহার করা বৈধ বিবেচিত হবে। এটি পোশাকের জায়েয পর্যায়। মুসলিম বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই এরূপ পোশাক রয়েছে, যেগুলো কোন অমুসলিম বা পাপী সম্প্রদায়ের অনুকরণেও নয়, বা কোন নিষিদ্ধ পোশাকের আওতাভুক্তও নয়। পোশাকের ক্ষেত্রে বর্ণিত শরীয়তের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হওয়ার কারণে এ পোশাককে সুন্নাহ পরিপন্থী বলা যাবে না বরং এগুলো বৈধ পোশাক ও সুন্নাহ-স্বীকৃত পোশাক।
নফল বা মুস্তাহাব পর্যায়: যে সকল পোশাক রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিধান করেছেন এবং উৎসাহ প্রদান করেছেন সেগুলো পরিধান করলে সওয়াব হবে এবং তা মুস্তাহাব সাব্যস্ত হবে। তবে কেউ না পরলে গুনাহ হবে না। আর যে সকল পোশাক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিধান করেছেন, কিন্তু পরতে উৎসাহ প্রদান করেননি, সেগুলোও যদি কোন মুসলিম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুকরণের উদ্দেশ্যে পরিধান করে তাহলেও সাওয়াব হবে। অবশ্য কেউ না করলে গুনাহ হবে না এবং না করলে আপত্তিও করা যাবে না।
মূলত এ ধরনের পোশাকই হুবহু বা সামান্য পরিবর্তনসহ আমাদের সমাজে সুন্নতী লেবাস হিসাবে পরিচিত। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো প্রণিধানযোগ্য।
১। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন পোশাক কখনো কখনো পরিধান করে থাকলে তা সর্বদা পরিধানের উপর গুরুত্বারোপ করা সুন্নত বিরোধী কাজ। অনুরূপ কোন বিষয়ে কম গুরুত্ব দিলে সে বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়াও সুন্নাত বিরোধী কাজ। পদ্ধতি বা গুরুত্বগত ব্যতিক্রম বা বিরোধিতা শরীয়তের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয় ও গর্হিত।
২। এ ধরনের নফল পর্যায়ের অনুকরণ অনুসরণকে ফরজ, ওয়াজিব পর্যায়ের মত গুরুত্ব প্রদান করা এবং কেউ না করলে আপত্তি ও কটাক্ষ করা অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ।
৩। এ ধরনের নফল পর্যায়ের অনুসরণ অনুকরণকে তাকওয়া পরহেজগারীর একমাত্র মাপকাঠি মনে করা আর অন্যান্য ফরজ-ওয়াজিব ও বান্দার হকের প্রতি উদাসীন থাকা চরম অন্যায়। আর এগুলোকে কেন্দ্র করে ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের সীমারেখা নির্ধারণ করা এবং দলাদলি, কাদা ছোড়াছুড়ি অত্যন্ত ঘৃণিত ও নিন্দনীয়।
৪। কোন জিনিস সুন্নত মোতাবেক না হলেই তা সুন্নাতের খেলাফ হবে এমনটি সবক্ষেত্রে নয় বরং এমনও হতে পারে যে, উক্ত জিনিসটি সুন্নাত নয় আবার সুন্নাহ বিরোধীও নয়। যেমন বর্তমান যামানায় আমরা বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহার করি। এ পাখা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যবহার করেননি। যার ফলে এ পাখা ব্যবহারকে সুন্নাত বলা যাবে না। আবার খেলাফে সুন্নাত বা সুন্নাহ বিরোধীও বলা যাবে না। শরীয়তের আলোকে জায়েয পোশাক এ পর্যায়ভুক্ত। এসব পোশাককে খেলাফে সুন্নাহ বা সুন্নাহ পরিপন্থী বলা যাবে না।
(নয়) বাংলাদেশে প্রচলিত কিছু পোশাকের শরঈ বিশ্লেষণ
ধুতি : আমাদের দেশে বর্তমানে ধুতি একান্তভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের পোশাক হিসেবে গণ্য। কেউ ধুতি পরলে প্রথম দৃষ্টিতেই বাংলাদেশের যে কোন মুসলিম বা হিন্দু তাকে হিন্দু বলে মনে করবেন। অতএব অমুসলিম সম্প্রদায়ের অনুকরণ হেতু ধুতি মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ পোশাক হিসাবে গণ্য হবে। মূলত পরিধান-পদ্ধতির কারণে ধুতি নিষিদ্ধ। তাই কেউ যদি ধুতিকে চাদরের মত বা লুঙ্গির পদ্ধতিতে ব্যবহার করে তাহলে তা নিষিদ্ধ হবে না।
হাফ প্যান্ট : যুবশ্রেণীর মাঝে হাফপ্যান্ট পরার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। হাফপ্যান্টে যেহেতু সতর আবৃত হয় না। হাঁটু এবং হাঁটুর উপরাংশ অনাবৃত থাকে তাই হাফপ্যান্ট পরিধান করে সতর অনাবৃত রাখা নাজায়েয বা কবীরা গুনাহ ।
শার্ট-প্যান্ট: শার্ট-প্যান্ট মূলত অমুসলিম ইংরেজদের পোশাক: নেককার পরহেজগারদের পোশাক নয়। এজন্যই সমাজের সাধারণ মানুষ শার্ট-প্যান্ট পরিহিত ব্যক্তিকে মুত্তাকী পরহেজগার বলে মনে করে না। ইউরোপীয় উপনিবেশের পূর্বে ভারতবর্ষে শার্ট- প্যান্টের প্রচলন ছিল না। বর্তমানে আমাদের দেশে এর ব্যাপক প্রচলন ঘটে গেছে। এখন কেউ শার্ট-প্যান্ট পরিধান করলে তাকে কেউ ইংরেজ মনে করে না এবং ইংরেজদের মতো দেখা যাবে এই উদ্দেশ্যেও কেউ তা পরিধান করে না। সব ধর্মাবলম্বীরাই বর্তমানে তা পরিধান করে থাকে।
তাই প্যান্ট-শার্ট বর্তমানে নাজায়েয পোশাক থাকেনি। তবে নেককার পরহেজগারগণ এখনো তা পরিহার করে থাকেন। একজন মুসলিম স্বভাবতই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব পোশাক পরিধান করেছিলেন সেগুলো পছন্দ করবেন। তা না হলে নিজ দেশীয় বৈধ পোশাক পরিধান করবেন। ইউরোপিয়ান স্টাইল সে কেন গ্রহণ করবে? তাছাড়া বর্তমানে প্রায় সব প্যান্টই টাখনু আবৃতকারী। বলাবাহুল্য, পুরুষদের জন্য টাখনুর নীচ পর্যন্ত ঝুলানো সব পোশাকই নাজায়েয। অধিকন্তু যদি তা টাইটফিট হয়, হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত শারীরিক অবয়ব স্পষ্ট ফুটে উঠে তাহলে আরো কঠিন রকমের নাজায়েয। তবে যদি তা ঢিলেঢালা হয় এবং টাখনুর নীচ পর্যন্ত আবৃতকারী না হয় তাহলে তা নাজায়েয বিবেচিত হবে না। কেননা,تشبه বা কোন অমুসলিম সম্প্রদায়ের সাদৃশ্যের বিষয়টি বর্তমানে প্যান্ট-শার্টে বিদ্যমান নেই, যেমনটি রয়েছে ধুতিতে। তবে তা অনুত্তম বিবেচিত হবে। যে পোশাক পরিধান করলে প্রথম দৃষ্টিতেই মুসলিম বলে মনে হয়, সে পোশাকই পরিধান করা উচিত। অপরদিকে আলেম-উলামা বা দীনের দাঈ ইসলাম প্রচারক এবং অনুরূপ ব্যক্তিবর্গের জন্য প্যান্ট-শার্ট আরো বেশি অপছন্দনীয়। অনেক জায়ে কাজও দীন প্রচারক, আলেমদের জন্য আপত্তিকর। কেননা, তারা পোশাক- আশাকের ক্ষেত্রেও দীনের দাঈ।
টাই: বর্তমানে প্রচলিত ও ব্যবহৃত পুরুষদের পোশাকের একটি হল টাই। টাই সম্পূর্ণ ইউরোপীয় পোশাক। কোন কোন গবেষকদের মতে এটি খ্রিস্টান ধর্মের প্রতীক। ইউরোপের খ্রিস্টানরা তাদের গলায় ক্রুশ ঝুলাত। ক্রমান্বয়ে এ ক্রুশই টাইয়ে রূপান্তরিত হয়।
মুসলমানদের জন্য ক্রুশ ব্যবহার বা ক্রুশের ছবিযুক্ত পোশাক ব্যবহার নিষিদ্ধ। কোন অমুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পোশাক বা ধর্মীয় স্মৃতিবিজড়িত পোশাক হারাম। এজন্য অধিকাংশ আলেমগণ টাই পরিধান নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। অবশ্য কোন কোন গবেষক আলেম ক্রুশচিহ্ন হতে টাইয়ে রুপান্তরিত হওয়ার বিষয়টি কোন বই-পুস্তকে খুঁজে পাননি বলে উল্লেখ করেছেন। তবে সমাজে একথাটির প্রসিদ্ধি রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, টাই সাধারণ ইউরোপিয়ান পোশাক, খ্রিস্টান ধর্মের প্রতীক নয়। তবে মুমিনের উচিত সর্বাবস্থায় টাই পরিত্যাগ করা। কোন মুমিন অপ্রয়োজনীয় অথচ সন্দেহযুক্ত এবং বাহ্যত শিরকের প্রতীক ব্যবহার করতে পারে না। তাছাড়া টাই ব্যবহারে ফাসেকদের অনুকরণ ছাড়া পোশাকের অন্য কোন বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান নেই।
ছবিযুক্ত টি-শার্ট, গেঞ্জি : বর্তমানে ছবিযুক্ত টি-শার্ট, গেঞ্জির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। টি-শার্ট ও গেঞ্জিতে সাধারণত কোন খেলোয়াড়ের ছবি, কোন অভিনেতা-অভিনেত্রীর ছবি, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর ছবি, কখনো আবার নটী- নর্তকীর অর্ধনগ্ন ছবিরও ছাপ দেয়া থাকে। পূর্বে আমরা আলোচনা করেছি, প্রাণীর ছবি সংবলিত পোশাক ব্যবহার নিষিদ্ধ। তাই প্রাণীর ছবি সংবলিত এ সব পোশাক পরিত্যাজ্য। এগুলো ব্যবহার করা যাবে না।
শাড়ী : বাংলাদেশের মহিলাদের প্রধান পোশাক শাড়ী। শাড়ী মূলত ভারতীয় পোশাক। বাংলাদেশের মুসলিম অমুসলিম প্রায় সকল মহিলা শাড়ী পরিধান করে থাকেন। স্বদেশীয় এ পোশাক ব্যবহার করা বৈধ। তবে শাড়ী ব্যবহার করলে সতর আবৃত করার দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। মহিলাদের পেট, পিঠ মাহরাম পুরুষ আত্মীয়দের ক্ষেত্রেও সর্বসম্মত সতরের অন্তর্ভুক্ত। বাবা, ভাই, প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে কারো সামনেই পেট, পিঠ অনাবৃত থাকতে পারবে না। অনুরূপ মাহরাম নয় এমন আত্মীয়দের সামনে গলাও অনাবৃত রাখা যাবে না। তাই শাড়ী পরিধান করলে এ বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কোমর পর্যন্ত ঝুল বিশিষ্ট এবং কলার বিশিষ্ট ব্লাউজ পরিধান করতে হবে।
(দশ) পোশাক বিষয়ক কিছু আদব
পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত হল ডান দিক থেকে পরিধান শুরু করা, আর খোলার ক্ষেত্রে বাম দিক থেকে খুলতে শুরু করা। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে, হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, كان النبي صلى الله عليه وسلم يعجبه التيمن في تنعله وترجله وطهوره في شانه كله অর্থ : নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুতা ব্যবহার করতে, মাথার চুল আঁচড়াতে, পবিত্রতা অর্জনে ও তাঁর সকল বিষয়ে ডান থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন। (সহীহ বুখারী ১/৭৪) সুনানে তিরমিযীতে বর্ণিত আছে, হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বলেন, كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا لبس قميصه يبدأ بميامنه অর্থ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন জামা পরিধান করতেন, তখন ডান দিক থেকে শুরু করতেন। (সুনানে তিরমিযী - ১/৩০৬) পাজামা পরিধান করার ক্ষেত্রে বসে পরিধান করা আদব একথাও ফকীহগণ লিখেছেন। আর নতুন পোশাক পরিধানের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন দু'আ পড়তেন।
সুনানে তিরমিযীর এক হাদীসে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন নতুন পোশাক পরিধান করলে তার নাম উল্লেখ করে বলতেন,اللهم لك الحمد أنت كسوتنيه أسئلك خيره وخير ما صنع له، وأعوذ بك من شره وشر ما صنع له. অর্থ : হে আল্লাহ! আপনারই সকল প্রশংসা। আপনি আমাকে এই পোশাকটি পরিধান করিয়েছেন। আমি আপনার নিকট এর কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং এর উৎপাদনের যত মঙ্গল ও কল্যাণ রয়েছে তা প্রার্থনা করছি। আর আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি এর অমঙ্গল থেকে এবং উৎপাদনের মধ্যে যত অমঙ্গল- অকল্যাণ রয়েছে তা থেকে। (সুনানে তিরমিযী ১/৩০৬)
অন্য এক হাদীসে নিম্নলিখিত দু'আটি বৰ্ণিত আছে, الحمد لله الذي كساني ما أواري به عورتي، وأتجمل به في حياتي، অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাকে পোশাক পরিয়েছেন, যা দ্বারা আমি আমার দেহের গোপনাংশ আবৃত করছি এবং আমার জীবনকে সজ্জিত করছি। (মুসনাদে আহমাদ ১/১৫৮)
আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
সুন্নাহ-সম্মত পোশাক (পর্ব এক)
এক. আল্লাহ তা'আলার বিধানের প্রতি পূর্ণ সমর্পণ ঈমান ও ইসলামের অপরিহার্য শর্ত। এই আত্মসমর্পন ছাড়া কেউ...
পোশাকের ইসলামী রুচি
...
তাকওয়ার লেবাস, লেবাসের তাকওয়া
...
সুন্নাহ-সম্মত পোশাক (পর্ব দুই)
ষষ্ঠ মূলনীতি: পুরুষের পোশাক জাফরানী, কুসুমী কিংবা গাঢ় লাল রঙের না হওয়া। পুরুষের জন্য জাফরানী রঙের ...