প্রবন্ধ

সুন্নাহ-সম্মত পোশাক (পর্ব এক)

লেখক:মুফতী শাব্বির আহমাদ
১৬ নভেম্বর, ২০১৬
৩৪০০ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

এক. আল্লাহ তা'আলার বিধানের প্রতি পূর্ণ সমর্পণ ঈমান ও ইসলামের অপরিহার্য শর্ত। এই আত্মসমর্পন ছাড়া কেউ মুসলমান হতে পারে না। শরীয়তের এ বিধান নারী পুরুষ সকলের জন্যই সমান প্রযোজ্য। ঈমানদার নারী পুরুষ সর্বাবস্থায় শরীয়তের হুকুম-আহকামের অধীন। কুরআনুল কারীমে পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছে,


وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا


অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন পুরুষ কিংবা নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন অধিকার নেই। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করলে সে স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় নিপতিত হবে। ( সূরা আহযাব- ৩৬) 

বলা বাহুল্য, ইসলাম কেবল কিছু রীতিনীতি ও ধ্যানধারণার নাম নয়, ইসলাম হল একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শ। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের দিক- নির্দেশনা বিদ্যমান। ইসলাম ভিন্ন অন্যান্য ধর্ম ও মতবাদের সারকথা হল কিছু বিশ্বাস, ধ্যান-ধারণা, কিছু উপাসনা ও কিছু নীতিকথা। কিন্তু ইসলাম মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জীবনের এমন কোন অঙ্গন নেই, যে ক্ষেত্রে শরঈ নীতিমালা নেই। একজন মানুষ পূর্ণ মুসলিম হিসেবে তখনই স্বীকৃতি পাবে যখন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শরীয়তের পাবন্দ হবে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,


يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ


অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ, তোমরা পূর্ণাঙ্গ ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা, নিশ্চই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাকারা- ২০৮)


এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা একথাই বলেছেন যে, এমন যেন না হয়; তোমরা ইসলামের কিছু বিষয় মেনে নিলে আর কিছু মানলে না কিংবা তা মানতে গিয়ে গড়িমসি করলে। এমন করা হলে তা ইসলাম হবে না। বরং তা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করা হবে। বস্তুত কুরআন সুন্নাহয় বর্ণিত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের নামই হচ্ছে ইসলাম। চাই তা বিশ্বাস ও ইবাদতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হোক বা সামাজিক আচার আচরণ, রীতি- নীতি, কিংবা জীবনের অন্য কোন বিষয় সংক্রান্ত হোক। উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফতি মুহাম্মাদ শফী রহ. লিখেছেন,


اس میں ان لوگوں کے لئے بڑی تنبیہ ہے جنہوں نے اسلام کو صرف مسجد اور عبادات کے ساتھ مخصوص کر رکھا ہے، معاملات اور معاشرت کے احکام کو گویا دین کا جزہی نہیں ہیں سمجھتے، اصطلاحی دینداروں میں یہ غفلت عام ہے، حقوق معاملات اورخصوصا حقوق معاشرت سے بالکل بیگانہ ہیں، ایسا معلوم ہوتا ہے کہ ان احکام کو وہ اسلام کے احکام ہی یقین نہیں کرتے، نہ ان کے معلوم کرنے یا سکیھنے کا اہتمام کرتے ہیں، نہ ان پر غور کرنے کا نعوذ باللہ۔


অর্থাৎ এ আয়াতে ঐ সকল লোকদের জন্য কড়া সতর্কবাণী রয়েছে যারা ইসলামকে শুধু মসজিদ বা ইবাদতের মাঝে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। লেনদেন ও সামাজিকতার বিধানাবলিকে যারা দীনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ মনে করে না। সমাজে পরিচিত দীনদারদের মাঝে এ ত্রুটি ব্যাপকহারে বিদ্যমান। শরীয়তের দৃষ্টিতে অপরের হক, অধিকার, লেন- দেন ও সামাজিক রীতি-নীতি রুচি- প্রকৃতির ব্যাপারে এরা সম্পূর্ণ অজ্ঞ। মনে হয়; তারা এসব ব্যাপারে ইসলামের বিধি-বিধান আছে বলেই বিশ্বাস করে না। তাই এগুলো জানতে শিখতে যেমন তাদের কোন আগ্রহ নেই, তেমনি এসবের অনুশীলনেও তাদের কোন আগ্রহ নেই। নাউযুবিল্লাহ। (তাফসীরে মা'আরিফুল কুরআন ১/৪৯৯)


দুই. পোশাক-পরিচ্ছদ অপরিহার্য বস্তু। মানবজীবনের জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের ন্যায় এসব ব্যাপারেও রয়েছে শরীয়তের নীতিমালা, রয়েছে ইসলামের সুমহান দিকনির্দেশনা। হাদীসের কিতাবের পাঠকগণ সম্যক অবগত আছেন যে, হাদীসের সব কিতাবেই লেবাস-পোশাক সংক্রান্ত আলাদা অধ্যায় রয়েছে। রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনাম। বর্ণিত হয়েছে শত শত হাদীস। একটি তথ্যের মাধ্যমে বিষয়টির গুরুত্ব অনুমান করা যাবে। আল্লামা ইবনুল আছীর জাযারী রহ. সংকলিত 'জামিউল উসুল' কিভাবে লেবাস অধ্যায়ে যে হাদীসগুলো সংকলিত হয়েছে, তার সংখ্যা এক হাজার একশত চব্বিশটি, আল্লামা হাইসামী কর্তৃক 'মাজমাউয যাওয়াইদ কিতাবে সংকলিত হয়েছে আরো চার শতাধিক হাদীস। কেবল সহীহ বুখারীতেই লেবাস অধ্যায়ে একশত তিনটি শিরোণামে দুইশত বাইশটি মারফূ হাদীস এবং সাহাবা তাবেয়ীদের ঊনিশটি আসার বিদ্যমান রয়েছে।

আলেমগণ জানেন, উল্লিখিত কিতাবসমূহে যে সকল হাদীস সংকলন করা হয়েছে, তার বাইরেও অনেক হাদীসের কিতাব আছে এবং সেসব কিতাবেও লেবাস-পোশাক সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। এ থেকে খুব সহজেই অনুমান করা যায় যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত গুরুত্বের সাথে লেবাস- পোশাক সংক্রান্ত বিধিবিধান বর্ণনা করেছেন। এসব হাদীসে রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লেবাস-পোশাকের ক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুম আহকাম বর্ণনা করেছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন পোশাকের ক্ষেত্রেও একজন ঈমানদার ব্যক্তির থাকবে স্বকীয়তা-স্বাতন্ত্র্য বোধ। পোশাকের মাঝেও ফুটে উঠবে তার ঈমানী ভাবধারা, দীনী ও ইসলামী মূল্যবোধ। কেননা, লেবাস-পোশাক তো সুস্থ রুচিরও পরিচায়ক। এ কারণেই সাহাবা তাবেয়ী যুগের এ সংক্রান্ত বহু ঘটনা হাদীসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।


তিন. আল্লাহ তা'আলার বিধানের বিপরীতে অন্যকারো আনুগত্য- চাই তা ব্যক্তি বিশেষের হোক বা শ্রেণী বিশেষের কিংবা কোন জাতি বিশেষের- কোন অবস্থাতেই তা গ্রহণযোগ্য নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,


 لا طاعة لبشر في معصية الله إنما الطاعة في معروف


অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার নাফরমানীর ক্ষেত্রে কারো আনুগত্য বৈধ নয়, মানুষের আনুগত্য কেবল শরীয়ত সম্মত বিষয়েই হতে পারে।*

(*সহীহ মুসলিম; হা.নং ১৮৪০, সহীহ বুখারী; হা.নং ৭১৪৫, সুনানে আবূ দাউদ; হা.নং ২৬২৫, সুনানে নাসায়ী; হা. নং ৪২০৫, সহীহ ইবনে হিব্বান; হা. নং ৪৫৬৭, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; হা. নং ৩৩৭০৬, মুসনাদে আহমাদ; হা নং ৬২২, মুস্তাদরাকে হাকেম; হা. নং ৪৬২২, হাকেম রহ হাদীসটিকে সহীহুল ইসনাদ বলেছেন।)

পোশাকের ক্ষেত্রেও হাদীসের এ বাণী শতভাগ প্রযোজ্য। এক্ষেত্রেও কোন বিজাতীয় বেশভূষার অনুসরণ চলবে না। চলবে না কোন বিধর্মী ব্যক্তির সাদৃশ্যগ্রহণ। কোন পাপী-খোদাদ্রোহী ব্যক্তির অনুকরণ হতে পারবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 


من تشبه بقوم فهو منهم 


অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে। (সুনানে আবূ দাউদ; [লেবাস অধ্যায়] হা. নং ৪০৩১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; হা. নং ৪০৩১, শু'আবুল ঈমান লিলবাইহাকী; হা. নং ৪০৩১, মুসনাদে বাযযার; হা. নং ৪০৩১, তাবারানী আওসাত; হা. নং ৪০৩১, হাইসামী রহ বলেন, فيه على بن غراب وقد وثقه غير واحد وضعفه بعضهم وبقية رجاله ثقات মাজমাউয যাওয়ায়েদ; হা. নং ৪০৩১।)

লেবাস-পোশাক মানুষের শি‘আর তথা পরিচয় চিহ্নও বটে। এর মাধ্যমে তার সামাজিকতা, জাতীয়তা ফুটে উঠে। বিভিন্ন বাহিনীর ইউনিফর্মের যৌক্তিকতা এখানেই। তাই শরীয়তের রুচি প্রকৃতি অনুযায়ী লেবাস পোশাক পরার অর্থ হল ইসলামের পরিচয় সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা। আর তা লঙ্ঘন করার অর্থ হল ইসলাম বিরোধী শি‘আর-কালচার সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা। এ দৃষ্টিকোণ থেকেও পোশাকে বিজাতীয় কালচার বর্জন করা জরুরী। তাছাড়া অন্য অনেক বিষয় থেকে লেবাস পোশাকের বিষয়টি এজন্যও অধিক গুরুত্বপূর্ণ যে, তা একটি প্রকাশ্য বিষয়। এ বিষয়ে শরীয়তের আহকাম লঙ্ঘিত হওয়ার অর্থ হল গর্হিত কাজ প্রকাশ্যে হওয়া। আর কোন গুনাহ প্রকাশ্যে হওয়া অত্যন্ত জঘন্য ব্যাপার। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,


كل أمتى معافى إلا المهاجرين


অর্থাৎ আমার সকল উম্মত ক্ষমার যোগ্য তবে যারা প্রকাশ্যে গুনাহ করে। এর অর্থ হল তওবার মাধ্যমে আল্লাহর মেহেরবানীতে উম্মত সকল গুনাহ থেকে মাফ পেয়ে যাবে, তবে যদি সে প্রকাশ্যে গুনাহ করে এবং লজ্জিত হওয়ার পরিবর্তে দম্ভ করে চলতে থাকে তাহলে সে মাফ পাবে না। (সহীহ বুখারী, কিতাবু আদাবিল হাদীস হা. নং ৫৭২১, সহীহ মুসলিম; হা. নং ২৯৯০।)


চার. বর্তমানে আমাদের সমাজে দীনের অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় ইসলামী পোশাক- পরিচ্ছদের বিষয়টিও চরম অবহেলার শিকার। আমরা শরীয়তের দিক- নির্দেশনাগুলো বেমালুম ভুলে যাচ্ছি। পোশাক পরিচ্ছদে বিজাতীয় সংস্কৃতির সয়লাব বয়ে যাচ্ছে। তাদের আবিষ্কৃত নিত্য-নতুন ফ্যাশন আধুনিকতার নামে আমরা গলাধঃকরণ করছি। আবাল-বৃদ্ধ- বনিতা সকলেই এতে আক্রান্ত হয়ে গেছে। শিশু থেকে শুরু করে সকলের পোশাকের মাঝেই এ প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেকের মাঝে আবার এ সম্পর্কে অজ্ঞতাও চরম পর্যায়ে রয়েছে। কারো কারো এই ধারনাই নেই যে পোশাকের ব্যাপারেও শরীয়তের দিক নির্দেশনা রয়েছে। বিষয়টিকে তারা পুরাপুরি নিজ ইচ্ছা ও স্বাধীনতার বিষয় মনে করে।

কেউ কেউ বলে থাকেন, পোশাকের বিষয়টি কেবল পরিবেশ ও সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এক্ষেত্রে ইসলামী পোশাক বা ইসলামী ভাবধারা বলতে কিছু নেই। এ ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। যেকোন পোশাক পরিধান মানুষের নিজস্ব অধিকার। এক্ষেত্রে ইসলামকে টেনে আনা উচিত নয়। এটা সঙ্কীর্ণতার পরিচয়। কেউ আবার বলে থাকেন, ধর্মের সম্পর্ক অন্তরের সঙ্গে, শরীরের সঙ্গে নয়। বাহ্যিক পোশাক নিয়ে ধর্মের কোন মাথা ব্যাথা নেই। পোশাক-আশাক নিয়ে বাড়াবাড়ি করা মোল্লা-মৌলভিদের কাজ, এরা নিজেদের মত করে ধর্মের প্রচলন চায়, নিজেদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিয়েছে, বাস্তবে ধর্মতো সহজ বিষয়, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত সব শর্ত আরোপ করেননি। মোল্লা-মৌলভীদের নিজস্ব সঙ্কীর্ণতার কারণে তারা আজ ধর্মকে এত কঠিন করে ফেলেছে, এগুলো অনভিপ্রেত।

কেউ কেউ আবার একথাও বলে, আমাদের লেবাস পোশাক ইসলামী ভাবধারার না হলে কি হবে, আমাদের অন্তর তো ঠিক আছে, নিয়ত পরিষ্কার আছে। আর যার অন্তর সাফ তার বাহ্যিক দিক ঠিক না থাকলেও কিছু আসে যায় না। ইসলাম মানুষের অন্তর দেখে। অন্তর ঠিক থাকলে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক থাকে। মন ভালো হওয়াই যথেষ্ট। মন ভালো না হলে টুপি, দাঁড়ি, জুব্বা, পাগড়ি পরেও কোন লাভ নেই। কত ইসলামী পোশাকধারীদের দেখি কত ধরনের অন্যায় করে থাকে। এরা কি ইসলামী পোশাকের কারণে ভালো হয়ে গেলো?

মূলত যারা পোশাক ও সাজসজ্জার বিষয়ে নিজেদের মন মতো চলতে চায় বা বিজাতীয় সংস্কৃতি ও ফ্যাশনের অনুকরণ করতে চায়, এরা নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে এসব কথা বলে থাকে। এরা যখন যে ফ্যাশন বের হয়, তখন নির্বিচারে তা আধুনিকতার নামে গ্রহণ করে থাকে। অমুসলিম ও ফাসেকদের রীতিনীতি কিছুই তারা তোয়াক্কা করে না। ইসলাম তো ভিতর বাহির দুটোরই ধর্ম। দু'টিকেই ইসলাম গুরুত্ব দিয়েছে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, وَذَرُوا ظَاهِرَ الْإِثْمِ وَبَاطِنَهُ অর্থাৎ তোমরা প্রকাশ্য গুনাহ ছাড় এবং অভ্যন্তরীন গুনাহ ছাড়। (সূরা আনআম- ১২০ ) 

শরীয়তের বিধিবিধান তো ভিতর বাহির উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে। অন্তর যেমনি সাফ হতে হবে, বাহ্যিক অবয়বও তেমনি পরিশুদ্ধ হতে হবে। পোশাক-আশাকও তেমনি রুচিপূর্ণ হতে হবে। শরীয়তের দৃষ্টিতে উভয়টি কাম্য। পোশাক পরিচ্ছেদ বাহ্যিক বিষয় বটে, মানুষের সকল ভালো-মন্দের দলীল এটা নয়। কিন্তু এ কথাতো অনস্বীকার্য যে, মানুষের স্বভাব- চরিত্রের উপর লেবাস-পোশাকের বিশাল প্রভাব রয়েছে।

বর্তমানে তো মনোবিজ্ঞানীরাও একথা অকপটে স্বীকার করে নিয়েছে যে, মানুষের পোশাক তার স্বভাব চরিত্রের উপর প্রতিক্রিয়াশীল। মানুষের বাস্তব জীবন ও চিন্তাধারার প্রতিফলন পোশাকের মাঝে ফুটে উঠে। এটা কি অস্বীকার করা যাবে যে, কিছু পোশাক অন্তরে অহঙ্কার আত্মগরিমা সৃষ্টি করে। আবার কিছু পোশাক অন্তরে বিনয় ও নম্রভাব জাগ্রত করে, কিছু পোশাক ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করে, অন্যদিকে কিছু পোশাক মন্দ ও অকল্যাণের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করে।

একথাও তো বাস্তব যে অন্তরে অবক্ষয় শুরু হলে বাহ্যিক অবস্থায়ও তার প্রভাব পড়ে। ফলের ভেতর পচন শুরু হলে বাহিরে তার চিহ্ন প্রকাশ পেতে থাকে। এমন লোকেরা কি জাগতিক বিষয়ে বাহ্যিক অবয়বে সুন্দরের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না? গাড়ির ইঞ্জিন ভালো হওয়াই কি যথেষ্ট? বডি ফিটনেসের কি প্রয়োজন নেই? বাড়ির প্লাস্টার ও পেইন্টের প্রয়োজনীয়তা কি তারা অস্বীকার করবে? বহিরাংশ পঁচা, দৃষ্টিনন্দন নয় এমন জাগতিক জিনিসগুলো কি তারা স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করবে? আসলে পার্থিব সকল বিষয়ে কেবল ভেতর ঠিক থাকলেই চলে না; বাহ্য অবস্থাও ভালো হওয়া লাগে। কিন্তু দীন-শরীয়ত ও আখেরাতের বিষয়ে সকল বাহানা। এরাই ঐসব লোক যাদের নিকট কোট-টাই পরা ধর্ম- প্রচারক ভালো লাগে, পাগড়ীধারী উলামায়ে কেরামের মাঝে তারা সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পায়। ইসলামী পোশাককে তারা সাম্প্রদায়িক পোশাক মনে করে, হুযূর-মাওলানাদের ইউনিফর্ম বলে তাচ্ছিল্য করে থাকে, কখনো আবার সৌদি, পাকিস্তানি পোশাক বলে গালমন্দ করে।

ইসলামী পোশাক মানে কোন সাম্প্রদায়িক বা আঞ্চলিক পোশাক নয়, তবে হ্যাঁ, মুসলিম জাতির পোশাক, চাই সে যে অঞ্চলের অধিবাসী হোক।

অবশ্য এমন লোক আছে যারা এ কারণে ইসলামী লেবাস পরে না যে তা পরে কোন অন্যায় অপরাধ করলে ইসলামী লেবাসের অপমান হবে। কিন্তু কথা হল; যদি তা শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য হয়, তাহলে এ ভয়ে অপরাধ ছাড়তে হবে, ইসলাম তো ছাড়া যাবে না।

কেউ কি মুসলমান অবস্থায় অন্যায় করলে ইসলামের বদনাম হবে? এভয়ে ইসলাম ছেড়ে দিবে? মূলত এগুলো শয়তানের ধোঁকা বৈ কিছু নয়। তবে আমাদের দেশে এ প্রবণতাও রয়েছে যে, ইসলামী লেবাসধারী লোক অন্যায় করলে দোষ ব্যক্তির উপর না পড়ে পোশাকের দিকে আসতে থাকে। দোষকে ছুতো বানিয়ে পোশাককে গালমন্দ করতে থাকে। কেউ দোষ করলে অবশ্যই তা দোষ কিন্তু একে ছুতো বানিয়ে তার গুণটাকে অস্বীকার করা বা গুণটাকে গালমন্দ করা তো বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পারে না। 


পাঁচ. ইসলাম বাস্তবতার ধর্ম। ইসলামের শিক্ষা বিশ্বজনীন ও সার্বজনীন। এতে মানবীয় স্বভাবজাত চাহিদার অপূর্ব প্রতিফলন রয়েছে। উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই ইসলাম পোশাক আশাকের মূল্যায়ন করেছে। স্থান, কাল, মৌসুমের ভিন্নতার কারনে পোশাকের ভিন্নতার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা হয়নি। মোটা, পাতলা বা কোন বিশেষ ডিজাইনের পোশাক ইসলাম বাধ্যতামূলক করে দেয়নি, যে তাছাড়া অন্য ধরন বা কালার ব্যবহার করা যাবে না বা তা করলে ইসলাম পরিপন্থি হবে। তবে ভারসাম্যপূর্ণ রুচিসম্মত এক নীতিমালা শিক্ষা দিয়েছে। যে মূলনীতিগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা সর্বাবস্থায় জরুরী। মূলনীতিগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে যেকোন ধরনের পোশাক ব্যবহার করা যাবে। আমরা প্রথমে সে মূলনীতিগুলো সম্পর্কে আলোচনা করবো।


প্রথম মূলনীতি: সতর আবৃত করা। 

পোশাক এমন হতে হবে, যা পুরোপুরি সতর আবৃত করে। পুরুষের সতর হল নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আর মহিলাদের জন্য পরপুরুষ ও অমাহরাম আত্মীয়দের ক্ষেত্রে পুরো শরীর সতরের অন্তর্ভুক্ত। পোশাকের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো সতর ঢাকা। (সূরা আহযাব- ৫৯, আহকামুল কুরআন [থানবী রহ.] ৩/৪১৬, মাজমু'আ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২২/ ১১১,মউসূআতুল ফিকহিয়্যা আল-কুওয়াইতিয়্যা ৪০/৩৪৩, তাফসীরে কুরতুবী ১৪/ ২২৭) 

আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, يَابَنِي آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ , অর্থাৎ হে বনী আদম, আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের গুপ্তাঙ্গগুলোকে আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে। তাকওয়া-পরহেজগারীর পোশাক তোমাদের জন্য সর্বোত্তম। (সূরা আ'রাফ- ২৬)

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা'আলা পোশাকের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তাহল সতর আবৃত করা। এখানে سَوْآتِ শব্দের অর্থ হলো এমন স্থান যা খোলা রাখা স্বভাবতই মানুষ লজ্জাজনক মনে করে। সুস্থরুচি এগুলো অপরের সামনে খুলে থাকাকে অপছন্দ করে। বলা বাহুল্য, শরীয়ত নারী পুরুষের সতরের বিবরণ পেশ করে এর সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে। অতএব যে পোশাক এ উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হবে, অর্থাৎ যা দ্বারা পূর্ণ সতর আবৃত হয়না, এমন পোশাক শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েয পোশাক। এ ধরনের পোশাক শরীয়তের দৃষ্টিতে পোশাকেরই অন্তর্ভুক্ত নয়। অতএব এমন পোশাক পরিত্যাগ করে পূর্ণ সতর আবৃত থাকে এমন পোশাক পরিধান করা আবশ্যক। সূতরাং পুরুষের জন্য হাফপ্যান্ট পরা, মহিলার জন্য সতরের কোন অংশ উন্মুক্ত থাকে এমন পোশাক পরিধান নাজায়েয। মূলত তিন ধরনের পোশাক এ মূলনীতির আলোকে অবৈধ পোশাক সাব্যস্ত হবে।

১। এমন সংক্ষিপ্ত পোশাক যা সতর আবৃত রাখতে ব্যর্থ।

২। এমন পাতলা ফিনফিনে পোশাক যা পরিধান করলে বাহ্য দৃষ্টিতে সতর আবৃত হয় বটে, তবে পাতলা হওয়ার কারণে শরীর বুঝা যায়, এমন পোশাক সতর আবৃত না করার কারণে নাজায়েয পোশাক গণ্য হবে।

এমন পোশাক শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েয পোশাকের অন্তর্ভুক্ত।

৩। এমন আঁটসাঁট পোশাক যা পরিধান করা সত্ত্বেও সতরের আকৃতি পোশাকের উপর ফুটে ওঠে তাও সতর আবৃত না করার কারনে নাজায়েয পোশাকের অন্তর্ভুক্ত হবে। স্বামী ছাড়া অন্য কারো সম্মুখে এমন পোশাক পরিধান করা হারাম সাব্যস্ত হবে।

অতএব পুরুষের পোশাক এমন হতে হবে যা দ্বারা নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আবৃত থাকবে। সতরের কোন অংশ খোলা থাকবে না এবং তা এত আঁটসাঁট হতে পারবে না যে তা দ্বারা স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোর অবয়ব ফুটে উঠবে। বরং তা ঢিলেঢালা হতে হবে। অনুরূপ এমন পাতলাও হতে পারবে না যা দ্বারা সতর দেখা যাবে। নারীদের পোশাকের ক্ষেত্রেও এ তিন শর্ত পাওয়া যাওয়া বাঞ্ছনীয়। যদি কোন পোশাকে এ তিন শর্তের কোন শর্ত অনুপস্থিত থাকে, তাহলে তা নাজায়েয পোশাক সাব্যস্থ হবে।

সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থ তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিমে উল্লিখিত আছে,


فكل لباس ينكشف منه جزء من عورة الرجل والمرأة لا تقره الشريعة الإسلامية مهما كان جميلا أو موافقا لدورالازياء وكذلك اللباس الرقيق أو اللاصق بالجسم الذي يحكي للناظر شكل حصة من الجسم الذي يجب ستره فهو في حكم ما سبق في الحرمة وعدم الجواز .. 


অর্থাৎ প্রত্যেক ঐ পোশাক যা পরিধান করা সত্ত্বেও নারী-পুরুষের সতরের অংশ-বিশেষ খুলে থাকে তা শরীয়ত অনুমোদন করে না, চাই তা যত চমৎকারই হোকনা কেন বা যত ফ্যাশনেবলই হোকনা কেন। অনুরূপ পাতলা লেবাস বা এমন আঁটসাঁট পোশাক যা দ্বারা দর্শকের সামনে শরীরের এমন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকৃতি ফুটে ওঠে যা ঢেকে রাখা আবশ্যক, এমন পোশাক হারাম ও নাজায়েয পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/৮৮) 

বর্তমান যুগে আধুনিক ফ্যাশনের অন্ধ-অনুকরণের ফলে পোশাকের ক্ষেত্রে নগ্নতার ছড়াছড়ি চলছে। নারীদের পোশাকের ক্ষেত্রে যেন তা মহামারী আকার ধারণ করেছে। উপরোক্ত তিন শর্তের কোন তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না। সতর খোলা থাকছে, ফিনফিনে পাতলা পোশাক পরা হচ্ছে, আঁটসাট স্কিনটাইট পোশাক পরা হচ্ছে। এসবই শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েয পোশাক। এগুলোতে পোশাকের মূল মাকসাদই ব্যাহত হচ্ছে। পোশাক পরা সত্ত্বেও নগ্নতার গোনাহ হচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,


صنفان من أهل النار لم أرهما بعد قوم معهم سياط كأذناب البقر يضربون بها الناس ونساء كاسيات عاريات مميلات مائلات رءوسهن كأسنمة البخت المائلة لا يدخلن الجنة ولا يجدن ريحها وإن ريحها لتوجد من مسيرة كذا وكذا 


অর্থাৎ দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী। এদেরকে আমি দেখিনি দুনিয়ায় তারা পরবর্তীতে আসবে। (এক) এমন লোকজন যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে। যার দ্বারা তারা মানুষকে অন্যায়ভাবে পিটাবে। (দুই) ঐ সকল নারী যারা কাপড় পরিধান করা সত্ত্বেও বিবস্ত্র থাকে, পর পুরুষকে আকৃষ্ট করে বেড়ায়, নিজেরাও পরপুরুষের প্রতি আকৃষ্ট থাকে। তাদের মাথার চুল ঝুঁকে পড়া বুখতী উটের কুঁজের ন্যায় হবে। এরা জান্নাতে যেতে পারবে না। এমনকি এরা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ বহু দূর থেকে পাওয়া যায়।(সহীহ মুসলিম; হা নং ২১২৮, মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ৮৬৫০, মুসনাদে আবূ ইয়া'লা; হা. নং ৬৬৯০, সহীহ ইবনে হিব্বান; হা নং ৭৪৬১।)

পাশ্চাত্যের অশ্লীল ও খোদাদ্রোহী সংস্কৃতি ও তার অনুসারীদের প্রকৃতি বিরোধী প্রবণতার এটিও একটি মারাত্মক দিক যে, তারা নারীদের যথাসম্ভব অনাবৃত রাখতে উৎসাহ দিয়ে থাকে। আর পুরুষের ক্ষেত্রে পোশাক দিয়ে পুরো শরীর এমনকি টাখনুসহ আবৃত রাখতে চেষ্টা করে। একজন পুরুষ টাখনু অনাবৃত রেখে পাজামা, প্যান্ট পরিধান করলে তাদের দৃষ্টিতে খারাপ দেখায়, স্মার্টনেস ভূলুণ্ঠিত হয়। পক্ষান্তরে একজন মহিলা টাখনুর উপরে প্যান্ট, পাজামা, স্যুট ইত্যাদি পরিধান করলে মোটেও খারাপ দেখায় না বরং ভালো দেখায়, স্মার্টনেস সংরক্ষিত হয়। তাদের দৃষ্টিতে মহিলাদের শরীর অনাবৃত রাখা, আটসাট বা স্কিনটাইট পরিধান করা নারীর স্বাধীনতা।

এজন্যই একজন পুরুষ গরমকালেও পরিপূর্ণ স্মার্ট ও ভদ্রলোক হওয়ার জন্য মাথা থেকে পায়ের পাতার নিম্ন পর্যন্ত পুরো শরীর একাধিক কাপড়ে আবৃত করে রাখে। অপরদিকে শীতকালেও একজন মহিলা মাথা, গলা, কাঁধ, পা, হাঁটু ইত্যাদিসহ যথাসম্ভব দেহ অনাবৃত রাখে। বেহায়া পুরুষদের অশ্লীল দৃষ্টির আনন্দদান ছাড়া এভাবে দেহ অনাবৃত রাখার আর কি উদ্দেশ্য হতে পারে?


দ্বিতীয় মূলনীতি : বিধর্মীদের পোশাক না হওয়া।

আল্লাহ মুসলমানদেরকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত জাতির মর্যাদা দান করেছেন। মুসলমানদের মর্যাদা আলাদা। আল্লাহ তা'আলা সকল মানুষকে দু'ভাগে বিভক্ত করেছেন। ইরশাদ করেছেন, هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ فَمِنْكُمْ كَافِرٌ وَمِنْكُمْ مُؤْمِنٌ অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে দু'ভাগে বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। তোমাদের কেউ কাফের আর কেউ মু'মিন। (সূরা তাগাবুন - ২ )

অনুরূপ কোন পোশাক তাদের শিআর বা বিশেষ পোশাক নয় কিন্তু তাদের ব্যবহার্য। এক্ষেত্রে যদি সে পোশাক তাদের অনুসরণের ইচ্ছায় পরিধান করা হয় বা তাদের মতো যেন মানুষ মনে করে এ ইচ্ছায় পরিধান করা হয় তাহলে তা নাজায়েয হবে। এ দু অবস্থাকে শরীয়তের পরিভাষায় تشبه তাশাব্বুহ বলা হয়। হাদীস শরীফে এসেছে, من تشبه بقوم فهو منهم অর্থাৎ কেউ যদি কোন বিজাতীর সাদৃশ্য গ্রহণ করে, তাহলে সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে। (সুনানে আবূ দাউদ,হাদীসের বিশ্লেষণ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।)

মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে (১/৪৩) হযরত উমর রাযি. বলেন, وذروا التنعم অর্থাৎ তোমরা বিলাসিতা ও অমুসলিমদের রীতি, পোশাক পদ্ধতি, ফ্যাশন পরিত্যাগ কর।

(মুসনাদে আহমদ; হা. নং ৩০১, শাইখ শুআইব আল আরনাউত্ব হাফিযাহুল্লাহু তা'আলা হাদীসের সনদ সম্পর্কে বলেন, অর্থাৎ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম রহ. এর শর্তানুসারে সহীহ, বায়হাকী; হা.নং ১৯৫২২, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; হা নং ২৪৮৬৯।)

পোশাক-পরিচ্ছদেও পুণ্যবানদের অনুসরণ, অনুকরণ প্রশংসনীয় ও পালনীয়, আর কোন অমুসলিম পাপী ব্যক্তির অনুকরণ নিন্দনীয় ও বর্জনীয়। তাই তাদের কোন বিশেষ পোশাক বা পোশাকের বিশেষ ডিজাইন কোনভাবেই গ্রহণ করা যাবে না। যারা কুফরী সংস্কৃতির কাছে মানসিকভাবে পরাজিত হয়ে গিয়েছে, তাদের নিকট কাফের মুশরিক ও খোদাদ্রোহী পাপীদের স্টাইল চাল-চলন তৃপ্তিদায়ক, সেগুলো তাদের নিকট সুন্দর ও স্মার্ট মনে হয়, আর উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. আলী ইবনে আবী তালিব রাযি. বিলাল রাযি. এর অনুকরণ তাদের নিকট বাজে, নোংরা, অসুন্দর ও আপত্তিকর মনে হয়। বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও অজুহাত দিয়ে তারা সেগুলোকে বাদ দিতে চায়। তারা একথা ভাবেন না যে, তাদের পোশাক আশাক দেখে আল্লাহ তা'আলা কতটুকু খুশি হবেন, তারা ভাবেন কুফরী সংস্কৃতির ধারকেরা অথবা তাদের মত পরাজিত মানসিকতার লোকেরা তাদেরকে কি বলবে? তারা ভালো বলবে? স্মার্ট বলবে এবং প্রশংসা করবে কি না? তবে কোন পোশাক যদি বিজাতির বিশেষ পোশাক বা বিশেষ ডিজাইনের অন্তর্ভুক্ত না হয় এবং কোন পাপী সমাজেরও বিশেষ ফ্যাশন না হয়, তাদের মতো দেখা যাওয়ার ইচ্ছাও পোশাক গ্রহণকারীর না হয়, এমনিতেই তাদের মতো হয়ে যায়, দৃশ্যত তাদের মতো হওয়ার কোন ইচ্ছা নেই, ছিল না, তাহলে একে শরীয়তের পরিভাষায় মুশাবাহাত বলে। এটিও পরিহারযোগ্য। এ অনাকাঙ্ক্ষিত মুশাবাহাত বা সাদৃশ্য থেকে বেঁচে থাকা উচিত। এটি যদিও শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়েয নয় কিন্তু অবশ্যই অনুত্তম/মাকরূহ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, خالفوا المشركين অর্থাৎ (লেবাস- পোশাকের ক্ষেত্রেও) মুশরিকদের রুচি বৈশিষ্ট্যের বিরুদ্ধাচারণ কর। (সহীহ বুখারী [লেবাস অধ্যায়] হা. নং ৫৫৫৩, সহীহ মুসলিম; হা.নং ২৫৯)

অন্যত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,  فرق ما بيننا وبين المشركين العمائم علي القلانس অর্থাৎ আমাদের এবং মুশরিকদের মাঝে পার্থক্য টুপির উপর পাগড়ি পরিধান করা। মুশরিকরা পাগড়ির নিচে টুপি পড়ে না, আমরা পড়ে থাকি। (সুনানে আবূ দাউদ; [লেবাস অধ্যায়] হা. নং ৪৪/৮, আস্সুনান লিততিরমিযী; হা.নং ১৭৮৪, তাবারানী; হা.নং ৪৬১৪, বাইহাকী; হা. নং ৬২৫৮)

মোটকথা কোনভাবেই যেন মুসলিমগণ অমুসলিমদের সঙ্গে একাকার না হয়ে যায়, সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে, মুসলমান স্বতন্ত্রজাতি; লেবাস পোশাকে তা প্রকাশ পেতে হবে।


তৃতীয় মূলনীতি : নারীদের পোশাক পুরুষদের পোশাক-সদৃশ না হওয়া আর পুরুষদের পোশাক নারীদের পোশাক- সদৃশ না হওয়া।

আবূ দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন ঐ পুরুষকে যে মহিলার পোশাক পরে এবং ঐ মহিলাকে যে পুরুষের পোশাক পরে। (সুনানে আবূ দাউদ; হা. নং ৪০৯৮, মুসনাদে আহমাদ ২/৩২৫)

সমাজে যে পোশাক পুরুষের পোশাক হিসেবে পরিচিত বা পুরুষেরা যে ধরণ বা ডিজাইনের পোশাক পরিধান করে, মহিলারা তা পরিধান করবে না। অনুরূপ মহিলাদের জন্য পরিচিত পোশাক বা ডিজাইন, রঙ, কাটিং পুরুষেরা ব্যবহার করবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,


ليس منا من تشبه بالرجال من النساء ولا من تشبه بالنساء من الرجال 


অর্থাৎ যে নারী পুরুষদের অনুকরণে সাজসজ্জা করে আর যে পুরুষ নারীদের অনুকরণে সাজসজ্জা করে তারা আমাদের (মুসলিম সমাজের) মধ্যে গণ্য নয়। (মুসনাদে আহমাদ ২/১৯৯ মুহাক্বিক শুআইব আরনাউত দা.বা. বলেন, مرفوعه صحيح আল্লামা হাইসামী রহ. বলেন, رواه أحمد، والهذلى لم أعرفه، وبقية رجاله ثقات، ورواه الطبراني باختصار، وأسقط الهذلي المبهم فعلى هذا رجال الطبراني كلهم ثقات. মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/১০৩।) 

সুতরাং পুরুষের জন্য নারীদের পোশাক পরিধান করা হারাম। অনুরূপ কোন নারীর জন্য পুরুষের মতো পোশাক পরিধান করা হারাম। কিন্তু আফসোসের বিষয়, বর্তমানে মেয়েরা এ বিষয়ের কোন তোয়াক্কাই করছে না। আধুনিক হওয়ার প্রতিযোগিতায় আজকাল মেয়েরা প্যান্ট, শার্ট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।


চতুর্থ মূলনীতি : পুরুষদের জন্য টাখনু ঢেকে যায় এমন পোশাক পরিধান করা হারাম।

স্বাভাবিকভাবে দাঁড়ানো অবস্থায় উপর হতে ঝুলন্ত পোশাক যা দ্বারা পায়ের টাখনু ঢেকে যায় এমন পোশাক পরা যাবে না। চাই তা প্যান্ট হোক, লুঙ্গি- পাজামা হোক বা জুব্বা হোক। জাহেলী যুগে অহঙ্কারী লোকেরা মাটিতে কাপড় হেঁচড়ে চলত। আমাদের সমাজের অনেকেই প্যান্ট, লুঙ্গি ইত্যাদি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরে থাকেন। অহঙ্কারবশত হলে তো এটি মারাত্মক কবীরা গুনাহ আর শুধু অভ্যাস বা রেওয়াজের কারণে হলেও তা নাজায়েয এবং সর্বাবস্থায় পরিতাজ্য। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, «مَا أَسْفَلَ مِنَ الكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِ فَفِي النَّارِ» লুঙ্গির যে অংশ টাখনুর নিচে যাবে তা অর্থাৎ টাখনুর নিচের সে স্থান জাহান্নামে জ্বলবে। (সহীহ বুখারী; হা. নং ৫৪৫০, সুনানে নাসায়ীঃ হা. নং ৫৩৩০ ) 

অন্যত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ مِنَ الْخُيَلاَءِ، لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত মাটিতে কাপড় হেঁচড়ে চলে, আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন তার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না। অর্থাৎ তার উপর রাগান্বিত থাকবেন, রহমতের দৃষ্টি দেবেন না। (সহীহ বুখারী; হা. নং ৩৪৬৫, সহীহ মুসলিম, হা. নং ২০৮৫, মুসনাদে আহমাদ; হা. নং ৪৮৮৪, সুনানে আবূ দাউদ; হা. নং ৪০৮৫, সুনানে তিরমিযী; হা. নং ১৭৩০, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন হাদীসটি হাসান সহীহ, সুনানে নাসায়ী; হা. নং ৫৩২৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হা. নং ৩৫৬৯, আব্দুর রাযযাক ফিল জামে' মা‘মার সূত্রে; হা.নং ১৯৯৮৪, তাবারানী কাবীর; হা. নং ১৩১৭৮, ওয়াল আওসাত; হা. নং ১৪৭৭)

হযরত উমর ফারূক রাযি. এক ব্যক্তিকে টাখনুর নিচে লুঙ্গি পরতে দেখে তাকে তিরস্কার করলেন। এরপর একটি ছুরি দিয়ে লুঙ্গির নিচের অংশ কেটে দিলেন। (হাদীসটির আরবী ইবারত নিম্নরূপ-  عَنْ خَرَشَةَ، أَنَّ عُمَرَ: " دَعَا بِشَفْرَةٍ فَرَفَعَ إِزَارَ رَجُلٍ عَنْ كَعْبَيْهِ، ثُمَّ قَطَعَ مَا كَانَ أَسْفَلَ مِنْ ذَلِكَ দেখুন মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; হা. নং ২৪৮২৯।)

বলা বাহুল্য, পোশাক মানুষের দেহকে আবৃত করে রাখে এবং তার অভ্যন্তরীণ অনুভূতিগুলো নিয়ন্ত্রিত ও পরিশীলিত করে। এজন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন পোশাক পরিধানের নির্দেশ দিয়েছেন যা বিনয় ও সরলতার প্রকাশক এবং অহমিকা প্রকাশের বিপরীত। আর যে পোশাকে অহমিকা, গর্ব, অহঙ্কার ইত্যাদি আত্মবিরোধী অনুভূতি জাগ্রত হয় সেগুলোকে নীতিগতভাবেই কঠিন হারাম ঘোষণা করেছেন। বর্তমানে অনেকেই এ অভিশপ্ত কাজটি করে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ অমুসলিম সংস্কৃতিতে প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন যুক্তিও পেশ করে থাকে। যেমন বলে, অহঙ্কার করে পোশাক টাখনুর উপর ঝুলিয়ে দিলে তা অন্যায়, কিন্তু অহঙ্কার ছাড়া কেউ এরূপ করলে দোষ নেই। প্রশ্ন হলো, অহঙ্কার না থাকলে পোশাক টাখনুর নিচে নামানোর প্রয়োজনটা কি?

এর উত্তর হল, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ মতো টাখনু পর্যন্ত প্যান্ট, পোশাক পরিধান করলে দেখতে খারাপ দেখায়, সেকেলে মনে হয় বা স্মার্টনেস পরিপূর্ণ হয় না। কিন্তু কথা হল 'স্মার্ট দেখানো', সেকেলে দেখানো থেকে রক্ষা পাওয়া ইত্যাদি অনুভূতির নামই অহমিকা বা অহঙ্কার। অতএব ইচ্ছাকৃতভাবে যারা নিজের পাজামা, প্যান্ট, লুঙ্গি ইত্যাদি টাখনু আবৃত করে তৈরি করেন বা পরেন তারা নিঃসন্দেহে অহমিকার কারণেই পোশাক নিচু করে পরিধান করেন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. এক ব্যক্তিকে টাখনুর নীচে কাপড় পরতে দেখে বললেন, যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে নামায পড়ে আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দিবেন না। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক; হা.নং ৩৬৩৫)


পঞ্চম মূলনীতি : পুরুষদের জন্য রেশমী পোশাক না হওয়া।


إن هذين حرام على ذكور أمتي حل لإناثهم يعنى الذهب والحرير


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের পুরুষের জন্য রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ হারাম করা হয়েছে। আর তা হালাল করা হয়েছে নারীদের জন্য। 

(বিভিন্ন শব্দে অসংখ্য হাদীসের কিতাবে এ অর্থের বিভিন্ন হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে। উপরোল্লিখিত হাদীসটি দুইজন সাহাবী থেকে বর্ণিত। এক. হযরত আলী রা. দুই. হযরত ইবনে আমর রা.। আলী রা. এর হাদীসটি বর্ণনা করেছেন: মুসনাদে আহমদ; হা. নং ৭৫০, সুনানে আবূ দাউদ; হা.নং ৪০৫৭, সুনানে তিরমিযী: হাঃ নং ১৭২০, সুনানে নাসায়ী; হাঃ নং ৫১৪৪, সুনানে ইবনে মাজাহ; হা. নং ৩৫৯৫, সুনানে বায়হাকী; হা.নং ৪০১৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; হা. নং ২৪৬৫৯, মুসনাদে বাযযার; হা. নং ৮৮৬, মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: হা. নং ২৭২, সহীহ ইবনে হিব্বান; হা. নং ৫৪৩৪।

ইবনে আমর রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন: সুনানে ইবনে মাজাহ: হা. নং ৩৫৯৭, মুসনাদে আবূ দাউদ ত্বয়ালিসী; হা.নং ২২৫৩, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; হা. নং ২৪৬৬২।)

অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা রেশমের কাপড় পরিধান করো না। কেননা, যে ব্যক্তি (পুরুষ) দুনিয়াতে রেশম পরিধান করবে সে আখেরাতে তা হতে বঞ্চিত হবে। 

(এই হাদীসটিও দু'জন সাহাবী থেকে বর্ণিত। (এক) উমর রা. (দুই) আনাস রা.। উমর রা. এর হাদীসটি বর্ণনা করেছেন: সহীহ বুখারী; হা. নং ৫৪৯৬, সহীহ মুসলিম: হা. নং ২০৬৯, সুনানে তিরমিযী; হা.নং ২৮১৭, সুনানে নাসায়ী; হা. নং ৫৩০৬, মুসনাদে আহমদ; হা. নং ২৫১, আবু আওয়ানাহ; হা. নং ৮৫১১।

আনাস রাযি. এর হাদীসটি বর্ণনা করেছেন: সহীহ বুখারী: হা. নং ৫৪৯৪, সহীহ মুসলিম; হা. নং ২০৭৩, মুসনাদে আহমদ: হা. নং ১২০০৪, নাসায়ী ফিলকুবরা ৫/৪৬৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: হা. নং ৩৫৮৮।)

মূলত পুরুষের পোশাক পুরুষোচিত আর নারীর পোশাক নারীর উপযোগী হওয়াই শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। স্বভাবগতভাবেই পুরুষকে শক্তি ও দৃঢ়তা দেয়া হয়েছে। কারণ, তার কর্মক্ষেত্র ঘরের বাইরের জগত। তাই কোমল পোশাক, বর্ণিল সাজসজ্জা, পুরুষ-প্রকৃতি ও তার দায়িত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। পক্ষান্তরে নারীকে আল্লাহ তা'আলা দিয়েছেন কোমলতা ও কমনীয়তা। পোশাকের ক্ষেত্রেও শরীয়তের নির্দেশনা তার প্রকৃতির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

তাকওয়ার লেবাস, লেবাসের তাকওয়া

...

মাওলানা যাকারিয়া আব্দুল্লাহ
১০ নভেম্বর, ২০২৪
২২৫০ বার দেখা হয়েছে

পোশাকের ইসলামী রুচি

...

মাওলানা মীযান হারুন
১০ নভেম্বর, ২০২৪
১১৯৬ বার দেখা হয়েছে

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →

আল্লামা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহঃ

শাহ আব্দুল আযীয দেহলভী রহঃ

শাইখুল ইসলাম আল্লামা কাসেম নানুতুবী রহঃ

মাওঃ উবাইদুল্লাহ সিন্ধী রহঃ

সায়্যিদ সাবেক রহঃ

আল্লামা আব্দুল মজীদ নাদীম রহঃ

মাওলানা আসলাম শাইখুপুরী

শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী রহঃ

মাওঃ আবু আম্মার যাহেদ রাশেদী

মাওঃ নুরুল হাসান রাশেদ কান্ধলভী

মুফতী হাবীবুর রহমান খাইরাবাদী

আল্লামা আবুল কালাম আযাদ রহঃ

মাওলানা সাঈদ আহমদ

মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন দাঃ

হযরত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী রহঃ

মাওলানা হাবীবুর রহমান খান

মাওলানা সাঈদ আহমাদ বিন গিয়াসুদ্দীন

মাওঃ আবু বকর সিরাজী

শায়েখ আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনে উমার [রহ.]

মাওঃ এনামুল হাসান