প্রবন্ধ
তারাবী বিষয়ক দুটি প্রশ্ন ও তার উত্তর
প্রশ্ন : আমাদের এলাকায় একটি লিফলেট বিতরণ করা হয়। তারাবীর নামায বিশ রাকাআত না আট রাকাআত এবং এ বিষয়ে ১ লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ করা হয়। এ সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : এটাতো অনেক পুরানো কাগজ। এখনো তারা এটাই বিলি করছে! প্রায় পাঁচ বছর আগে মাওলানা আবু তোরাব সাহেব এটার বিস্তারিত উত্তর লিখেছেন, যার শিরোনাম হল : বিভ্রান্তি থেকে সতর্ক থাকুন, হাদীস ও সুন্নাহর আলোকে তারাবী বিশ রাকাআত, আট রাকাআত নয়। এটি আলআবরার ট্রাস্ট, বাংলা বাজার থেকে ছাপা হয়েছে।
পরবর্তীতে যখন মাসিক আলকাউসারের প্রকাশনা শুরু হয় তখন তার অক্টোবর ও নভেম্বর ২০০৫ ঈ. সংখ্যায় এ বিষয়ে আমার একটি বিশ্লেষণধর্মী ও প্রামাণ্য প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো আপনি সংগ্রহ করে বারবার পড়ুন, ইনশাআল্লাহ সকল সন্দেহ দূর হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : কেউ কেউ বলেন যে, তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একই নামায। রমযানে রাতের শুরুভাগে এক নামায (তারাবীহ) আর শেষভাগে আরেক নামায (তাহাজ্জুদ) এটা কোনো দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়। কথাটা কি সঠিক?
উত্তর : এটাই আমাদের গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের প্রথম চাল বা প্রথম ভুল। যেহেতু আট রাকাআত তারাবীহ কোনোভাবেই হাদীসে দেখানো সম্ভব নয় তাই তাহাজ্জুদের হাদীস দিয়ে তারাবীহর রাকাআত-সংখ্যা প্রমাণ করার জন্য তাদের এই অনর্থক কসরত। আল্লাহ সহীহ সমঝ নসীব করুন।
তাহাজ্জুদের বিধান ইসলামের বিধান। ইসলামের প্রথম যুগেই কুরআন মজীদের সূরায়ে মুযযাম্মিল অবতীর্ণ হয়, রমযানের রোযা ফরয হওয়ার অনেক আগে। ইতিহাস সাক্ষী, রমযানের রোযা ফরয হয়েছে হিজরতের পর। আর তখন রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
كتب الله عليكم صيامه وسننت لكم فيه قيامه
‘আল্লাহ তাআলা এই মাসের রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন এবং এই মাসে রাত জেগে নামায পড়াকে সুন্নত করেছি।-নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ
লক্ষ করুন, এ হাদীসে যে কিয়ামে রমযানকে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্নত করেছেন, তা দ্বারা উদ্দেশ্য যদি তাহাজ্জুদই হয় তাহলে বাণীটিই অনর্থক সাব্যস্ত হবে। কারণ তাহাজ্জুদের বিধান তো পুরো বছরের জন্য আগ থেকেই আছে। রোয ফরয হওয়ার আগে কত রমযান গত হয়েছে তখন কি রমযানে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম তাহাজ্জুদ পড়তেন না?
আরো লক্ষ্য করুন, তাহাজ্জুদের বিধান আল্লাহ রাববুল আলামীন সরাসরি কুরআন মজীদে অবতীর্ণ করেছেন। তাহলে এ ব্যাপারে হাদীসের এ বাণীটি-(আমি কিয়ামে রমযান অর্থাৎ তারাবীহকে সুন্নত করেছি) কিভাবে প্রযোজ্য হতে পারে? এটি এমন নামাযের ব্যাপারেই প্রযোজ্য হবে যার বিধান কুরআন মজীদের মাধ্যমে নয়; বরং হাদীসের মাধ্যমেই এসেছে। আর তা হল তারাবীহর নামায।
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ যে ভিন্ন ভিন্ন নামায তা আরো অনেক দলিল দ্বারা প্রমাণিত। বিস্তারিত জানার জন্য ফকীহুন নফস, মুহাদ্দিসে দাওয়ান হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহীর ফাতাওয়ায়ে রশীদিয়া পৃ. ৩০৬-৩২৩ দেখা যেতে পারে। তাছাড়া এই ভাইদেরকে আমাদের আরেকটি কথা বলার আছে। তারা ইমাম বুখারী রাহ.-এর অনুসরণের খুব দাবি করে থাকে। ইমাম বুখারী রাহ. কিন্তু তারাবীহ ও তাহাজ্জুদকে ভিন্ন ভিন্ন নামাযই মনে করতেন। রাতের প্রথম ভাগে তারাবীহ পড়তেন আর শেষভাগে তাহাজ্জুদ পড়তেন।
তারাবীহর প্রতি রাকাআতে বিশ আয়াত করে পড়তেন এবং এভাবে তারাবীহতে কুরআন খতম করতেন। নির্ভরযোগ্য সনদে তারীখে বাগদাদে বিষয়টি (খ. ২, পৃ. ১২) বর্ণিত হয়েছে এবং মুকাদ্দামায়ে ফাতহুল বারীতে তা উদ্ধৃত আছে।
এই ঘটনা থেকে যেমন একথা প্রমাণিত হয় যে, ইমাম বুখারী রাহ. অন্যান্য উলামায়ে সালাফের মতো তারাবীহকে তাহাজ্জুদ থেকে ভিন্ন নামায মনে করতেন সাথে সাথে একথাও প্রমাণিত হয় যে, ইমাম বুখারী রাহ. তারাবীহ আট রাকাআত নয় বেশি (বিশ রাকাআত) পড়তেন। কারণ তারাবীহ আট রাকাআত পড়লে রমযান মাস ত্রিশ দিনের হলেও প্রতি রাকাআতে বিশ আয়াত করে পড়ে কুরআন খতম করা সম্ভব নয়।
মনে রাখবেন, গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের এ দাবির পিছনে কোনো দলীল নেই। তাই সহীহ হাদীস এবং উলামায়ে সালাফের তরিকা মতে রমযানে তারাবীহর প্রতি গুরুত্ব দিন, পূর্ণ বিশ রাকাআত পড়ুন এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়ুন।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
সুবহে সাদিক ও ফজরের সময় কখন শুরু? : একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর
ভূমিকা মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى، أما بعد! সময়মতো নামায আদ...
সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা
সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখাঃ ইবাদত-বন্দেগীর মধ্যে দুটি প্রকার রয়েছে : এক. যা অবশ্য পালনীয়, দুই. ...
মাহে রমযান কেন্দ্রিক প্রচলিত কিছু বিদআত ও রুসম
আরবীতে রোজার নিয়ত জরুরী মনে করা ইসলামে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রত্যেক ইবাদতের আগে নিয়তের গুরুত্...
রোযা ও যাকাত : প্রচলিত কয়েকটি মাসআলা
প্রসঙ্গ : রোযা একস্থানে রোযা শুরু করে অন্যস্থানে যাওয়ায় রোযা কম-বেশি হলে ধরে নেওয়া যাক, কোনো ব্যক...