প্রবন্ধ

ইসলামের শাশ্বত বিশ্বাস ‘খতমে নবুওয়্যাত’ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন-উত্তর

লেখক:বিবিধ
১৭ মে, ২০১৮
৩১০৪ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

আমরা সকল মুসলমান জানি এবং বিশ্বাস পোষণ করি যে, আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল; তাঁর পরে আর কোন নবীর আগমন ঘটবে না। ইসলামী শরীয়তে বিষয়টিকে ‘আকীদায়ে খতমে নবুওয়্যাত’ বলে উল্লেখ করা হয় এবং এটি দীনের অপরিহার্য একটি আকীদা বা বিশ্বাস। খতমে নবুওয়্যাত অস্বীকার করলে ঈমান থাকে না।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ‘কাদিয়ানী-আহমদিয়া জামাত’ নামে একটা গোষ্ঠী ‘খতমে নবুওয়্যাতের আকীদা’ অস্বীকার করা সত্তে¡ও নিজেদেরকে ‘মুসলিম জামাত’ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এরা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর অনুসারী, যে কিনা নিজেকে ইমাম মাহদী, ঈসা-মসীহ এমনকি নবী বলেও দাবী করেছে। অনুরূপভাবে এই কাদিয়ানী-আহমদিয়া জামাত ইসলামের স্বকীয়তাজ্ঞাপক পরিভাষা যথা: ‘ইসলাম’, ‘মুসলিম’, ‘মসজিদ’, ‘উম্মুল মু‘মিনীন’, ‘সাহাবী’, ‘কালিমা তায়্যিবা’, প্রভৃতি ব্যবহার করে সহজ-সরল মুসলমানদেরকে প্রতারিত ও বিভ্রান্ত করে মুসলমানদের ঈমান ও আমল বরবাদ করার জঘন্য চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।

এমতাবস্থায় মুসলমান ভাই-বোনদের বিশুদ্ধ আকীদা এবং সহীহ ঈমান-আমল হেফাযত করার লক্ষ্যে ‘খতমে নবুওয়্যাতের আকীদা’ বিষয়ক সুস্পষ্ট বিবরণ জাতির সামনে তুলে ধরে ‘কাদিয়ানী আহমদিয়া-মুসলিম জামাতে’র ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার বিষয়টি সকলের কাছে পরিষ্কার করা অত্যন্ত জরুরী। এ উদ্দেশ্যে নি¤œলিখিত কয়েকটি প্রশ্নের দলীলসহ জবাব প্রদান করে মুসলিম উম্মাহর ঈমান-আমল সংরক্ষণে আপনাদের বলিষ্ঠ রাহনুমায়ী প্রত্যাশা করছি। 

প্রশ্নগুলো এইÑ

এক. ‘খতমে নবুওয়্যাত’ সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের বক্তব্য কী?

দুই. কাদিয়ানী ধর্মমত ও ইসলামের মাঝে পার্থক্য কী?

তিন. কাদিয়ানী ধর্মমতের অনুসারীদের সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের বিধান কী?

চার. কাদিয়ানীরা কি নিজেদের দাওয়াতী কর্মকাÐে ও লেখা-লেখনীতে ‘ইসলাম’, ‘মুসলিম’, ‘মসজিদ’, ‘উম্মুল মু‘মিনীন’, ‘সাহাবী’, ‘কালেমা তায়্যিবা’ প্রভৃতি পরিভাষাসমূহ ব্যবহার করার অধিকার রাখে?

প্রথম প্রশ্নের উত্তর :

‘খতমে নবুওয়্যাত’-এর অর্থ হলোÑ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁর মাধ্যমে নবুওয়্যাতের ধারাবাহিকতার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। তাঁর পরে নতুন করে আর কেউ নবী বা রাসূল হবে না।

‘খতমে নবুওয়্যাত’ এটি ইসলামী শরীয়তের একটি মৌলিক আকীদা বা শাশ্বত বিশ্বাস। এই আকীদাটি শরীয়তের দলীল চতুষ্টয় তথা ‘কুরআন’, ‘সুন্নাহ’, ‘ইজমায়ে উম্মত’ এবং ‘কিয়াস’ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। এ আকীদা-বিশ্বাসের অস্বীকারকারীর কাফের হওয়ার ব্যাপারে সর্বকালের সকল হক্কানী উলামায়ে কেরামের ঐকমত্য সুপ্রতিষ্ঠিত।

কুরআনে কারীমের আলোকে ‘খতমে নবুওয়্যাত’:

কুরআন মাজীদের প্রায় কুাধিক আয়াত দ্বারা ‘আকীদায়ে খতমে নবুওয়্যাত’ প্রমাণিত। তন্মধ্যে কয়েকটি আয়াত এইÑ

আয়াত নং-১


ما كان محمد أبا أحد من رجالكم ولكن رسول الله وخاتم النبيين. 

(অর্থ:) মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের পুরুষদের মধ্য হতে কারো পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহ তা‘আলার রাসূল এবং খাতামুন্নাবিয়্যীন। (সূরা আহযাব-৪০)

‘খাতামুন্নাবিয়্যীন’-এর ব্যখ্যা:

আয়াতে কারীমায় উল্লিখিত خاتم  শব্দটি দুইভাবে পাঠ করা যায়। (ক) ‘তা’ অক্ষরটি যবরযুক্ত করে। (খ) ‘তা’ অক্ষরটি যেরযুক্ত করে। এইخاتم  শব্দের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে যদি কুরআনে পাকের অন্যান্য আয়াত, হাদীস শরীফের সুস্পষ্ট বর্ণনা, সাহাবায়ে কেরামের তাফসীর এবং আইম্মায়ে সালাফের ব্যাখ্য ও ভাষ্যের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে শুধু আরবী আভিধানিক বিশ্লেষণের উপরও ছেড়ে দেয়া হয়, তবুও উভয় পাঠপদ্ধতি অনুযায়ী خاتم শব্দের আভিধানিক বিশ্লেষণের সারাংশ এটাই দাঁড়ায় যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সর্বশেষ নবী, তাঁর পর আর কেউ নবী হবে না।

خاتم শব্দের আভিধানিক অর্থ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কিছু গ্রন্থের বক্তব্য দেখুন

ইমাম রাগেব ইস্পাহানী রহ. (মৃ. ৫০২হি.) বলেনÑ

وخاتم النبيين لأنه ختم النبوة اى تتمها بمجيئه.

অর্থাৎ, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এজন্য খাতামুন্নাবিয়্যীন বলা হয় যে, তিনিই নবুওয়্যাতের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন অর্থাৎ তিনি স্বীয় আগমনের মাধ্যমে নবুওয়্যাতের ধারা পূর্ণ করেছেন। (মুফরাদাতুল কুরআন; পৃষ্ঠা ১৪২)

আরব-আজম সকলের নিকট সমাদৃত ও সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য আরবী অভিধান ‘লিসানুল আরব’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছেÑ

وختام القوم وخاتمهم وخاتمهم: آخرهم؛ عن اللحياني؛ ومحمد صلى الله عليه وسلم، خاتم الأنبياء، عليه وعليهم الصلاة والسلام. 

অর্থাৎ, লিহয়ানী থেকে বর্ণিত আছে যে, যবরযুক্ত হোক বা যেরযুক্ত উভয় অবস্থাতেই خاتم  শব্দের অর্থ হবে দল বা জাতির সর্বশেষ ব্যক্তি। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘খাতামুল আম্বিয়া’ তথা (নবী হিসেবে আগমনকারী) সর্বশেষ নবী। (লিসানুল আরব ১২/১৬৪)

হাদীসের শব্দসমূহের গ্রহণযোগ্য বিশ্লেষণ সংবলিত লুগাতে হাদীস-এর অনবদ্য গ্রন্থ ‘মাজমাউ বিহারিল আনওয়ার’-এ উল্লেখ রয়েছেÑ

الخاتم و الخاتم من أسمائه صلى الله عليه و سلم، بالفتح إسم أى آخرهم، و بالكسر إسم فاعل. 

অর্থাৎ, خاتم শব্দটির ‘তা’ হরফটি যবরযুক্ত হোক বা যেরযুক্ত উভয় অবস্থাতেই এটি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম। ‘তা’ হরফটি যবরযুক্ত হলে এটি হবে ইস্ম বা বিশেষ্য, যার অর্থ সর্বশেষ। আর ‘তা’ হরফটি যেরযুক্ত হলে এটি হবে ইসমে ফায়েল বা কর্তা, যার অর্থ পরিসমাপ্তকারী। (মাজমাউ বিহারিল আনওয়ার ২/১১)

বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা আলূসী বাগদাদী রহ. (মৃ. ১২৭০হি.) লিখেছেনÑ

والخاتم اسم آلة لما يختم به كالطابع لما يطبع به فمعنى خاتم النبيين الذي ختم النبيون به ومآله آخر النبيين.

অর্থাৎ,خاتم  (‘তা যবরযুক্ত’) শব্দটি এমন জিনিসের নাম যার দ্বারা মহর লাগানো হয় বা সমাপ্ত করা হয়, যেমন طابع এমন জিনিস যার মাধ্যমে সীল লাগানো হয়। সুতরাং ‘খাতামুন্নাবিয়্যীন’ এর অর্থ হবেÑ ঐ ব্যক্তি যার মাধ্যমে নবুওয়্যাতের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। ফলে তিনি হলেন সর্বশেষ নবী।

তিনি আরো লিখেছেনÑ

والمراد بكونه عليه الصلاة والسلام خاتمهم انقطاع حدوث وصف النبوة في أحد من الثقلين بعد تحليه عليه الصلاة والسلام بها في هذه النشأة، 

অর্থাৎ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাতামুন্নাবিয়্যীন হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হলÑ নবীজীর নবুওয়্যাতের গুণে গুণান্বিত (তথা নবী) হওয়ার পর জি¦ন ও ইনসানের মধ্য থেকে কারো জন্য এই গুণে গুণান্বিত (তথা নবী) হওয়ার সুযোগ সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ হয়ে গেছে। (রূহুল মা‘আনী ১১/২১৩)

আল্লামা আহমাদ মোল্লা জিঊন রহ. خاتم শব্দের তাফসীরে উল্লেখ করেছেনÑ

والمآل على كل توجيه هو المعنى الآخر، ولذلك فسر صاحب المدارك قراءة عاصم بالآخر وصاحب البيضاوى كل القراءتين بالآخر.

অর্থাৎ, ( تযবরযুক্ত হোক বা যেরযুক্ত) উভয় অবস্থাতেই خاتم শব্দের অর্থ হবে সর্বশেষ। আর একারণেই তাফসীরে মাদারেক-এর গ্রন্থকার, আসেম রহ.-এর ক্বিরা‘আত (অর্থাৎ خاتم যবরযুক্ত) এর তাফসীর آخر তথা ‘সর্বশেষ’ দ্বারা করেছেন। আর আল্লামা বায়যাবী রহ. (خاتم যবর এবং যেরযুক্ত) উভয় ক্বিরাত (পাঠরীতি)-এর এই একটাই তাফসীর করেছেন। (অর্থাৎ آخر তথা ‘সর্বশেষ’)। (তাফসীরে আহমাদী)

সীরাতের বিখ্যাত কিতাব ‘আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ’ আল্লামা যারক্বানী রহ. (মৃ. ১১২২হি.) লিখেছেনÑ

ومنها: أنه خاتم الأنبياء والمرسلين" كما قال تعالى: وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمُ النَّبِيِّينَ، أي: آخرهم الذي ختمهم أوختموا به على قراءة عاصم بالفتح، وروى أحمد([() أخرجه الإمام أحمد فى مسنده (رقم ১৩৮২৪) بلفظ- ... عن أنس بن مالك، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "إن الرسالة والنبوة قد انقطعت، فلا رسول بعدي ولا نبي"، قال: فشق ذلك على الناس، قال: قال: "ولكن المبشرات"، قالوا: يا رسول الله، وما المبشرات؟ قال: "رؤيا الرجل المسلم، وهي جزء من أجزاء النبوة" 

وقال المحقق شعيب الأرنؤوط فى تعليقه: إسناده صحيح على شرط مسلم، رجاله ثقات رجال الشيخين غير المختار بن فلفل، فمن رجال مسلم.]) والترمذي([() والترمذي فى سننه (رقم ২২৭২)

وقال: هذا حديث صحيح غريب من هذا الوجه من حديث المختار بن فلفل.]) والحاكم([() والحاكم فى المستدرك على الصحيحين (رقم ৮১৭৮) 

وقال: هذا حديث صحيح الإسناد على شرط مسلم ولم يخرجاه

وقال الذهبى فى تلخيصه: (هذا الحديث) على شرط مسلم]) بإسناد صحيح عن أنس مرفوعًا: "إن الرسالة والنبوة قد انقطعت فلا رسول بعدي ولا نبي"، 

অর্থাৎ, নবীজী আলাইহিস সালামের বৈশিষ্ট্যাবলীর মধ্য থেকে এটিও একটি যে, তিনি সর্বশেষ নবী ও রাসূল; যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেনÑ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمُ النَّبِيِّينَ যার মর্ম হলো, ‘সর্বশেষ নবী’ যিনি নবীদের ধারাবাহিকতা পরিসমাপ্ত করেছেন, অথবা আসেম রহ. এর ক্বিরাত অনুযায়ী ت যবরযুক্ত পড়লে উদ্দেশ্য হবে, ঐ নবী যার আগমনের মাধ্যমে নবীদের ধারাবাহিকতা পরিসমাপ্ত করা হয়েছে। আর ইমাম আহমাদ, তিরমিযী এবং হাকেম রহ. বিশুদ্ধ সূত্রে হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, নবীজী আলাইহিস সালাম বলেছেনÑ নবুওয়্যাত ও রিসালাতের ধারাবাহিকতা শেষ হয়ে গেছে। আমার পরে না কোনো রাসূল আছে, না কোনো নবী। (শরহুয যারক্বানী ৭/২৩৫)

আয়াত নং-২

اليوم أكملت لكم دينكم وأتممت عليكم نعمتي ورضيت لكم الإسلام دينا 

(অর্থ:) আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামতকে পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়িদাহ-৩)

হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত আছেÑ

عن ابن عباس رضى الله عنه قال لم ينزل بعد هذه الآية حلال ولا حرام ولا شيئ من الفرائض والسنن والحدود والأحكام 

অর্থাৎ ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, এই আয়াত নাযিল হওয়ার পরে হালাল-হারাম, ফরয-সুন্নাত, দÐবিধি বা হুকুম-আহকাম সম্পর্কিত আর কোনো আয়াত অবতীর্ণ হয়নি। (তাফসীরে মাযহারী ২/২৭২)

কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথী রহ. লিখেছেনÑ এই আয়াত বিদায় হজ্জের সময় শুক্রবার আরাফার দিন অবতীর্ণ হয়। এরপর নবীজী আলাইহিস সালাম ৮১ দিন জীবিত ছিলেন। তবে এই ৮১ দিনের মধ্যে হুকুম আহকাম সম্পর্কিত আর কোন আয়াত নাযিল হয়নি।[() التفسير المظهرى ২/২৭৩ ط د.ك.ع.] এর দ্বারা সুস্পষ্টভাবে একথা প্রমাণিত হয় যে, দীনে ইসলাম পরিপূর্ণ ও মুকাম্মাল হয়ে গেছে। বিদায় হজ্জের থেকে আজ পর্যন্ত না কোনো আহকামের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, আর না কিয়ামতের আগ পর্যন্ত হবে, আর না তার কোনো প্রয়োজন রয়েছে।

আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী রহ. (মৃ. ৬০৬হি.) উক্ত আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করেছেনÑ

الثالث: وهو الذي ذكره القفال وهو المختار: أن الدين ما كان ناقصا البتة، بل كان أبدا كاملا، يعني كانت الشرائع النازلة من عند الله في كل وقت كافية في ذلك الوقت، إلا أنه تعالى كان عالما في أول وقت المبعث بأن ما هو كامل في هذا اليوم ليس بكامل في الغد ولا صلاح فيه، فلا جرم كان ينسخ بعد الثبوت وكان يزيد بعد العدم، وأما في آخر زمان المبعث فأنزل الله شريعة كاملة وحكم ببقائها إلى يوم القيامة، فالشرع أبدا كان كاملا، إلا أن الأول كمال إلى زمان مخصوص، والثاني كمال إلى يوم القيامة فلأجل هذا المعنى قال: اليوم أكملت لكم دينكم. 

অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আনীত দীনে ইসলামকে পরিপূর্ণ বললে এই সন্দেহের সৃষ্টি হতে পারে যে, ‘তবে কি পূর্বেকার নবীদের আনীত দীন অসম্পূর্ণ ছিল?’ তারই ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল্লামা রাযী রহ. তিনটি মত উল্লেখ করেছেন এবং তৃতীয় মতকে সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য বলে ব্যক্ত করেছেন; তা হলোÑ

‘পূর্বেকার কোনো দীনে ইলাহী কখনো অসম্পূর্ণ ছিল না, বরং প্রত্যেক দীনই নিজ নিজ যুগ অনুযায়ী পরিপূর্ণ এবং যথেষ্ট ছিল, কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা পূর্ব থেকেই জানতেন যে, যে দীন আজ পরিপূর্ণ এবং যথেষ্ট, কাল তা যথেষ্ট এবং কল্যাণকর থাকবে না। আর তাই নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করার পর (পরবর্তী দীনের মাধ্যমে) পূর্ববর্তী দীনকে রহিত করে দিতেন। কিন্তু নবুওয়্যাতের শেষ যুগে আল্লাহ তা‘আলা এমন এক স্বয়ংসম্পূর্ণ দীন প্রদান করলেন, যা সকল যুগের জন্য পরিপূর্ণরূপে উপযোগী এবং এই দীনকেই কিয়ামত পর্যন্ত বহাল রাখার ব্যাপারে হুকুম জারী করলেন। 

মোটকথা হল, পূর্বেকার শরীয়তও পূর্ণ ছিল, তবে তা ছিল একটা সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। আর এই শরীয়তে মুহাম্মাদী কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য পরিপূর্ণ এবং যথেষ্ট। একথা বুঝানোর জন্যই আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেনÑ اليوم أكملت لكم دينكم  অর্থাৎ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।’ (তাফসীরে কাবীর ১১/২৮৭)

সুতরাং নবীজী আলাইহিস সালামের ওফাতের পর থেকে আজ পর্যন্ত যেহেতু কোনো হুকুম-আহকাম অবতীর্ণ হয়নি এবং কিয়ামতের আগে  হবেও না, কাজেই নতুন করে কোনো নবী আগমনের প্রশ্নও ওঠে না।

আয়াত নং-৩

قل ياأيها الناس إني رسول الله إليكم جميعا الذي له ملك السماوات والأرض 

অর্থ: হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনি বলে দিন হে লোকসকল! আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছি, যিনি সমগ্র আসমান যমিনের অধিপতি। (সূরা আ’রাফ-১৫৮)

উক্ত আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাসীর রহ. (মৃ. ৭৭৪হি.) উল্লেখ করেনÑ

يقول تعالى لنبيه ورسوله محمد صلى الله عليه وسلم {قل} يا محمد: {يا أيها الناس} وهذا خطاب للأحمر والأسود، والعربي والعجمي، {إني رسول الله إليكم جميعا} أي: جميعكم، وهذا من شرفه وعظمته أنه خاتم النبيين، وأنه مبعوث إلى الناس كافة، كما قال تعالى: {قل الله شهيد بيني وبينكم وأوحي إلي هذا القرآن لأنذركم به ومن بلغ} [الأنعام:১৯] وقال تعالى: {ومن يكفر به من الأحزاب فالنار موعده} [هود:১৭] وقال تعالى: {وقل للذين أوتوا الكتاب والأميين أأسلمتم فإن أسلموا فقد اهتدوا وإن تولوا فإنما عليك البلاغ} [آل عمران:২০] والآيات في هذا كثيرة، كما أن الأحاديث في هذا أكثر من أن تحصر، وهو معلوم من دين الإسلام ضرورة أنه، صلوات الله وسلامه عليه، رسول الله إلى الناس كلهم. 

অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় নবীকে বলছেন, আপনি সাদা-কালো, আরব-অনারব সকলকে সম্বোধন করে বলে দিন যে, আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছি। আর নবীজী আলাইহিস সালামের সম্মান ও গুণাবলীর মধ্য থেকে এটিও একটি যে, তিনি খাতামুন্নাবিয়্যীন এবং তিনি নির্দিষ্ট কোন কওম বা জাতি-গোষ্ঠীর নবী নন বরং তিনি সমগ্র জগৎবাসীর নবী। যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা নিজেই কুরআনে হাকীমে বলেছেনÑقل الله شهيد بيني وبينكم...

(অর্থ:) হে নবী! আপনি বলুন আমার এবং তোমাদের মাঝে সাক্ষী হলেন আল্লাহ। আর এই কুরআন ওহীযোগে আমার নিকটে প্রেরণ করা হয়েছে যাতে আমি তোমাদেরকে ভয় দেখাই, সতর্ক করি। (সূরা আনআম-১৯) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেনÑومن يكفر به من الأحزاب..... (অর্থ:) আর যে কেউ এই নবীকে অস্বীকার করবে জাহান্নামই তার ঠিকানা হবে। (সূরা হুদ-১৭) আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র ইরশাদ করেনÑ وقل للذين أوتوا الكتاب والأميين... (অর্থ:) হে নবী! আপনি আহলে কিতাব এবং উম্মীদেরকে বলুন ‘তোমরা কি ইসলাম গ্রহণ করেছো?’ যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে তবে হেদায়েত পাবে। আর যদি তারা (ইসলাম গ্রহণ না করে আপনাকে) পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে তাহলে আপনি পেরেশান হবেন না, আপনার দায়িত্ব তো কেবল পৌঁছানো। (সূরা আলে ইমরান-২০) মোটকথা নবীজী আলাইহিস সালাম যে সমগ্র জগৎবাসীর জন্য নবী ছিলেন, সে সম্পর্কে কুরআন মাজীদে আরো বহু আয়াত রয়েছে। (বোঝার জন্য মাত্র কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো) এবং এ ব্যাপারে অসংখ্য হাদীসও বর্ণিত রয়েছে। আর এই কয়টি আয়াতেই বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় প্রত্যুজ্জল ও সুস্পষ্ট হয় যে, দীনে ইসলামের অবশ্যমান্য বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত আকীদা হলো, নবী আলাইহিস সালাম সকলের নবী। (কেউ এর থেকে ব্যতিক্রম নয়।) (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৮৯)

আয়াত নং-৪

تبارك الذي نزل الفرقان على عبده ليكون للعالمين نذيرا 

(অর্থ:) পূত ও পবিত্র ঐ সত্তা যিনি ফুরকান (তথা কুরআন) স্বীয় বান্দা (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর নাযিল করেছেন যাতে তিনি সমগ্র জাহানের অধিবাসীদেরকে আল্লাহ তা‘আলার আযাবের ভয় দেখান। (সূরা ফুরকান-১)

আয়াত নং-৫ وأرسلناك للناس رسولا 

(অর্থ:) আর (হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!) আমি (আল্লাহ) আপনাকে গোটা মানবগোষ্ঠীর জন্য রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছি। (সূরা নিসা-৭৯)

উল্লিখিত আয়াতগুলো দ্বারা একথা স্পষ্ট হয় যে, নবীজী আলাইহিস সালাম পূর্ব-পশ্চিম, আরব-আজম সকলের নবী। চাই সে নবীজীর যুগে জন্মগ্রহণ করুক বা নবীজীর ইন্তেকালের পর কিয়ামতের পূর্বে জন্ম গ্রহণ করুক। নবীজী আলাইহিস সালামের হাদীস থেকেও বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি করা যায়। তিনি বলেনÑ

عن الحسن قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أنا رسول من ادركت حيا ومن يولد بعدى، 

অর্থাৎ যাদেরকে আমি আমার জীবদ্দশায় জীবিত পেয়েছি আমি তাদের রাসূল এবং যারা আমার মৃত্যুর পরে কিয়ামতের আগ পর্যন্ত জন্মগ্রহণ করবে তাদেরও রাসূল। (আত-তাবাকাতুল কুবরা ১/১৫০) 

তো যখন নবী আলাইহিস সালামের আগমনের পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত জন্মগ্রহণকারী সকল মানুষ তাঁরই উম্মত এবং নবুওয়্যাতের এই ব্যাপকতা নবীজীর এমন এক বৈশিষ্ট্য যা অন্যান্য নবীদের থেকে নবীজীকে আলাদা করে দেয়, তখন নবীজীর পরে অন্য কেউ নতুন করে নবী হলে নবীজীর এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য আর বাকী থাকবে না, যে বৈশিষ্ট্যের কথা নবীজী নিজেই বর্ণনা করেছেন।[() عن جابر بن عبد الله، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " أعطيت خمسا لم يعطهن أحد من الأنبياء قبلي: نصرت بالرعب مسيرة شهر، وجعلت لي الأرض مسجدا وطهورا، وأيما رجل من أمتي أدركته الصلاة فليصل، وأحلت لي الغنائم، وكان النبي يبعث إلى قومه خاصة، وبعثت إلى الناس كافة، وأعطيت الشفاعة (صحيح البخارى-৪৩৮)] সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা নবীজীকে যে মর্যাদায় ভ‚ষিত করেছেন তা কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে; এর ব্যতিক্রম কল্পনাও করা যায় না।

সারকথা, ‘খাতামুন্নাবী’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী। তাঁর মাধ্যমে নবুওয়্যাতের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁর পরে নতুন করে আর কেউ নবী হবে না। কাজেই আখেরী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে ‘বুরূজী নবী’, ‘যিল্লী নবী’, ‘শরীয়তবিহীন নবী’, ‘উম্মতী নবী’ বা যে কোনো ধরনের নামধারী নবীই মিথ্যাবাদী ও ভÐ বিবেচিত হবে।

হাদীসে পাকের আলোকে ‘খতমে নবুওয়্যাত’:

হাদীসে নববীর ভাÐারে ‘আকীদায়ে খতমে নবুওয়্যাত’ সম্পর্কে এই পরিমাণ বর্ণনা রয়েছে, যার সবগুলো এ ছোট পরিসরে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। তবে ‘আকীদায়ে খতমে নবুওয়্যাত’ সম্পর্কে হাদীসে নববীর এই বিশাল ভাÐার দেখে একথা অবশ্যই মানতে হয় যে, এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অর্থাৎ খতমে নবুওয়্যাতের বর্ণনা সংবলিত হাদীসসমূহ নবীজীর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে এতো পরিমাণ লোক বর্ণনা করে আসছে যে, এতগুলো লোক একসাথে মিথ্যা বলতে পারে এটা কোনো সুস্থবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি বিশ্বাস করবে না। আইনী দৃষ্টিকোন থেকে এ ধরনের হাদীসের উপর ঈমান রাখা তেমনই ফরয যেমন কুরআনের উপর ঈমান রাখা ফরয।

এখানে আকীদায়ে খতমে নবুওয়্যাত বিষয়ে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো:

হাদীস নং-১

عن جابر بن عبد الله، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " أعطيت خمسا لم يعطهن أحد من الأنبياء قبلي: وكان النبي يبعث إلى قومه خاصة، وبعثت إلى الناس كافة، وأعطيت الشفاعة 

(অর্থ:) হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস দান করা হয়েছে যা পূর্ববর্তী কোনো নবীকে দেয়া হয়নি। এগুলোর অন্যতম হলÑ আমি সমগ্র জাহানের নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৪৩৮)

হাদীস নং-২

عن أبي هريرة، رضي الله عنه، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: إن مثلي ومثل الأنبياء من قبلي كمثل رجل بنى بيتا، فأحسنه وأجمله، إلا موضع لبنة من زاوية، فجعل الناس يطوفون به، ويعجبون له، ويقولون: هلا وضعت هذه اللبنة؟ قال: فأنا اللبنة، وأنا خاتم النبيين.

(অর্থ:) হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার এবং পূর্ববর্তী নবীদের উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মতো যে একটি বাড়ী বানালো এবং এক কোণের একটি ইঁটের জায়গা ব্যতীত পুরা বাড়িটা চাকচিক্য ও সৌন্দর্যমণ্ডি ত করল। অতঃপর লোকেরা তা প্রদক্ষিণ করতে লাগলো। বাড়িটা তাদের খুবই পছন্দ হলো এবং বলতে লাগলো হায়! যদি এই ইঁটটাও লাগানো হতো! আর আমিই হলাম সেই অপূর্ণ ইঁট, আর আমিই খাতামুন্নাবিয়্যীন।[. ‘খাতামুন্নাবিয়্যীন’-এর ব্যাখ্যা পূর্বে ২০ নং পৃষ্ঠায় আতিবাহিত হয়েছে।] (সহীহ বুখারী; হা.নং ৩৫৩৫ সহীহ মুসলিম; হা.নং ২২৮৬)

হাদীস নং-৩

عن محمد بن جبير بن مطعم، عن أبيه رضي الله عنه، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لي خمسة أسماء: وأنا العاقب

অর্থ: হযরত জুবাইর ইবনে মুতইম রাযি. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নবীজী আলাইহিস সালাম ইরশাদ করেন, আমার পাঁচটি বিশেষ গুণবাচক নাম আছে; ...তার মধ্যে একটি হলো ‘আকিব’। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৩৫৩২)

মা’মার ইবনে রাশেদ রহ. (মৃ. ১৫৩ হি.) স্বীয় কিতাবে উল্লিখিত হাদীস উল্লেখ করে ‘আকিব’ শব্দের নি¤œলিখিত ব্যাখ্যা করেছেনÑ

عن محمد بن جبير بن مطعم، عن أبيه، قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: إن لي أسماء أنا أحمد، وأنا محمد، وأنا الماحي: الذي يمحو الله بي الكفر، وأنا الحاشر: الذي يحشر الناس على قدمي، وأنا العاقب قال معمر: قلت للزهري: وما العاقب؟ قال: الذي ليس بعده نبي،

অর্থাৎ ... মা’মার রহ. বলেন, আমি ইমাম যুহরী রহ. থেকে এই হাদীসটি শোনার পর তাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘আকিব’ কী? উত্তরে তিনি বললেন, ‘আকিব’ মানে যার পরে কোনো নবী নেই। (জামে’ মা’মার বিন রাশেদ; হা.নং ১৯৬৫৭)

হাদীস নং-৪

عن سعيد بن المسيب: أن أبا هريرة، قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم، يقول: لم يبق من النبوة إلا المبشرات قالوا: وما المبشرات؟ قال: الرؤيا الصالحة

(অর্থ:) হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. বলেন, আমি আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, (আমার আগমনের পরে) নবুওয়্যাতের  কোনো অংশ বাকী নেই ‘মুবাশ্শিরাত’ ব্যতীত। সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ‘মুবাশ্শিরাত’ কী জিনিস? জবাবে নবীজী আলাইহিস সালাম বললেন, ‘মুবাশ্শিরাত হলো ভালো স্বপ্ন। (যা কোনো মুসলমান নিজে দেখে বা অন্য কেউ তার জন্য দেখে।) (সহীহ বুখারী; হা.নং ৯৯০, মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ২৪৯৭৭)

হাদীস নং-৫

عن سعد بن أبي وقاص، قال: خلف رسول الله صلى الله عليه وسلم علي بن أبي طالب في غزوة تبوك فقال: يا رسول الله تخلفني في النساء والصبيان؟ فقال: أما ترضى أن تكون مني بمنزلة هارون من موسى؟ غير أنه لا نبي بعدي

(অর্থ:) হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাযি. বলেন, তাবুক যুদ্ধে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রাযি.-কে খলীফা নিযুক্ত করলেন। তখন আলী রাযি. আরয করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে নারী ও শিশুদের মাঝে ছেড়ে যাচ্ছেন? উত্তরে নবীজী বললেন, তুমি কি এতে খুশী নও যে, হযরত হারূন আলাইহিস সালাম হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে যেমন ছিলেন তুমিও আমার সঙ্গে তেমন হয়ে যাও? তবে (হযরত হারূন নবী ছিলেন আর) আমার পরে কোনো নবী নেই। (সহীহ মুসলিম; হা.নং ২৪০৪)

এই হাদীসে নবীজী আলাইহিস সালাম হযরত আলী রাযি.-কে নবী ভাবার সুযোগটুকু পর্যন্ত বাকী রাখেননি। সেখানে কেউ নতুন করে কিভাবে নবী হতে পারে।

হাদীস নং-৬

عن فرات القزاز، قال: سمعت أبا حازم، قال: قاعدت أبا هريرة خمس سنين، فسمعته يحدث عن النبي صلى الله عليه وسلم، قال: كانت بنو إسرائيل تسوسهم الأنبياء، كلما هلك نبي خلفه نبي، وإنه لا نبي بعدي، وسيكون خلفاء فيكثرون قالوا: فما تأمرنا؟ قال: فوا ببيعة الأول فالأول، أعطوهم حقهم، فإن الله سائلهم عما استرعاهم

(অর্থ:) আবূ হাযিম রহ. বলেন, আমি আবূ হুরাইরা রাযি.-এর সান্নিধ্যে পাঁচ বছর ছিলাম। আমি তাকে নবীজী আলাইহিস সালামের ইরশাদ বয়ান করতে শুনেছি যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বনী ইসরাঈলদের রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ তাদের নবীরাই আঞ্জাম দিতেন। কোনো নবীর ইন্তেকাল হয়ে গেলে আল্লাহ তা‘আলা অন্য কোনো নবীকে তার খলীফা বানিয়ে পাঠাতেন। তবে আমার পরে কোনো নবী নেই, অবশ্য অনেক খলীফা হবে। এ কথা শুনে সাহাবীগণ (রাযি.) আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ঐ সকল খলীফার ব্যাপারে আমাদের জন্য আপনার নির্দেশনা কী? জবাবে নবীজী আলাইহিস সালাম বললেন, একের পর এক সকল খলীফার হাতে বাই‘আত হবে এবং পরিপূর্ণভাবে তাদের অনুসরণ করবে। কেননা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৩৪৫৫)

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী রহ. (মৃ. ৮৫২হি.) লিখেছেনÑ

قوله تسوسهم الأنبياء أي أنهم كانوا إذا ظهر فيهم فساد بعث الله لهم نبيا يقيم لهم أمرهم ويزيل ما غيروا من أحكام التوراة 

অর্থাৎ বনী ইসরাঈলের মধ্যে যখন ফাসাদ সৃষ্টি হতো তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য কোনো নবীকে প্রেরণ করতেন যিনি তাদের উদ্ভ‚ত সমস্যা সমাধান করতেন এবং তারা তাওরাতের মধ্যে যে বিকৃতি ঘটিয়েছে তা ঠিক করে দিতেন। (ফাতহুল বারী ৬/৪৯৭)

এর দ্বারা বুঝা যায়, বনী ইসরাঈলের মধ্যে আগত নবী নতুন শরীয়ত নিয়ে আসতেন না; বরং হযরত মূসা আলাইহিস সালামের শরীয়তেরই অনুসরণ করতেন। আর এটাকেই মির্যা কাদিয়ানী ‘শরীয়তবিহীন’ নবী বলে আখ্যায়িত করেছে এবং নিজেকে এই পর্যায়ের নবী বলে দাবী করেছে। অথচ উক্ত হাদীসে নবীজী আলাইহিস সালাম সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, আমার শরীয়তে এই ধরনের নবুওয়্যাতেরও কোনো সুযোগ নেই।

‘আকীদায়ে খতমে নবুওয়্যাত’-এর উপর উম্মতের ইজমা তথা ঐকমত্য

উম্মতে মুহাম্মাদীর একটি অনন্য ও অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এই উম্মতের উলামায়ে কেরামকে কুরআনে হাকীমে এবং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র যবান মুবারকে বিশেষ মূল্যায়ন দেয়া হয়েছে এবং ইসলামী শরীয়তে তাদের ইজমা তথা ঐকমত্যের উপর আমল করা কুরআন-হাদীসের স্পষ্ট বিধি-বিধানের উপর আমল করার মতই ওয়াজিব সাব্যস্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনÑ 

عن ابن عمر، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لن تجتمع أمتي على الضلالة أبدا، فعليكم بالجماعة فإن يد الله على الجماعة

(অর্থ:) হযরত ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মত কখনোই ভ্রষ্টতার উপর একমত হবে না। সুতরাং তোমাদরে জন্য জরুরী হলো, তোমরা উম্মতের অধিকাংশের গৃহীত সিদ্ধান্তের উপর আমল করবে। কেননা জামা‘আতের (অধিকাংশের) সাথে আল্লাহর সাহায্য রয়েছে। (আল মু’জামুল কাবীর লিত-তাবারানী; হা.নং ১৩৬২৩)

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (মৃ. ৭২৮হি.) বলেনÑ

وإجماعهم حجة قاطعة يجب اتباعها بل هي أوكد الحجج وهي مقدمة على غيرها، وليس هذا موضع تقرير ذلك، فإن هذا الأصل مقرر في موضعه، وليس فيه بين الفقهاء بل ولا بين سائر المؤمنين الذين هم المؤمنون خلاف، 

অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরামের ঐকমত্য শরীয়তের এমন অকাট্য প্রমাণ, যার উপর আমল করা ওয়াজিব; বরং তা শরীয়তের অন্যান্য প্রমাণাদির চেয়েও বেশী গুরুত্ববহ এবং অগ্রগণ্য। ... এবং এ ব্যাপারে সকল ফকীহ (ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ) এমনকি সকল মুসলমানের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই। (ফাতাওয়ায়ে কুবরা ৬/১৬২)

সুতরাং যে ব্যাপারে এই উম্মতের উলামায়ে কেরামের ইজমা তথা ঐকমত্য সংঘটিত হবে তা মানা ওয়াজিব এবং কেউ তার বিরুদ্ধাচারণ করলে সে ইসলামের গণ্ডি  থেকে বের হয়ে যাবে। আর ‘আকীদায়ে খতমে নবুওয়্যাত’-এর উপর এই উম্মতের ইজমা সংঘটিত হয়ে গেছে। 

বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা আলূসী বাগদাদী রহ. (মৃ. ১২৭০হি.) বলেনÑ

وكونه صلى الله عليه وسلم خاتم النبيين مما نطق به الكتاب وصدعت به السنة وأجمعت عليه الأمة فيكفر مدعي خلافه ويقتل إن أصر. 

অর্থাৎ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাতামুন্নাবিয়্যীন হওয়া ঐ সকল আকীদার অন্তর্ভুক্ত যে সকল আকীদার কথা খোদ কুরআন বলেছে, সুন্নাহ যে ব্যাপারে সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছে এবং সকল উম্মত যার উপর ঐকমত্য পোষণ করেছে। সুতরাং কেউ আকীদায়ে খতমে নবুওয়্যাতের বিপরীত কিছু দাবী করলে সে কাফের বিবেচিত হবে এবং তাওবা না করে নিজ ভ্রান্ত আকীদায় অটল থাকলে তাকে হত্যা করা হবে। (রূহুল মা‘আনী ১১/২১৯)

সুতরাং কুরআন সুন্নাহ এবং ইজমায়ে উম্মতের মাধ্যমে একথা প্রমাণিত হলো যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী তার পরে নতুন করে যিল্লী, বুরূজী, বা শরীয়তবিহীন কোনো প্রকারের নবী জন্ম নেবে না। এটাকে ‘আকীদায়ে খতমে নবুওয়্যাত’ বলা হয়, যার অস্বীকারকারী শরীয়তের অকাট্য দলীল-প্রমাণ দ্বারা কাফের সাব্যস্ত হবে।

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর :

কাদিয়ানী ও ইসলাম ধর্মের মধ্যকার পার্থক্যটা কোন শাখাগত বিষয়ে নয়, বরং এমন সব মৌলিক আকীদাগত বিষয়ে, যে আকীদা উভয়ের মাঝে ইসলাম ও কুফ্রের ব্যবধান তৈরি করে দেয়। তন্মধ্যে কাদিয়ানীদের একটি মারাত্মক ভ্রান্ত আকীদা হলোÑ আখেরী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শেষ নবী বলে স্বীকার না করা এবং মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীকে নবী মনে করা (নাউযুবিল্লাহ)।

কাদিয়ানীরা ইসলাম ধর্মের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে গিয়ে এক নতুন ধর্ম আবিষ্কার করেছে, যা বাহ্যত ইসলাম-সদৃশ হলেও তাদের আকীদা-বিশ্বাস কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী। কাদিয়ানী এবং অন্যান্য কুফুরী ধর্মের মধ্যে রিসালাত (তথা নবীজীর রাসূল হওয়া)-এর আকীদার ক্ষেত্রে পার্থক্য এতটুকু যে, কাফের-মুশরিকরা নবীজীর রিসালাতকে অস্বীকার করে, আর কাদিয়ানীরা নবীজীর রিসালাতকে স্বীকার করলেও তার ‘খাতামুন্নাবিয়্যীন’ হওয়াকে অস্বীকার করে। নবীজীকে রাসূল বলে স্বীকার করা এবং শেষ নবী বলে স্বীকার করা এই উভয়টি ইসলামের এমন শাশ্বত আকীদা যে, এর কোন একটি অস্বীকার করার কারণে অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাফের হয়ে যায়। এ সম্পর্কে দলীলভিত্তিক আলোচনা পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে।

একনজরে ইসলাম ও কুরআন-হাদীস বিরোধী কাদিয়ানী ধর্মের কিছু আকীদা

এক. 

ইসলাম: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাতামুন্নাবী। (সূরা আহযাব-৪০)

কাদিয়ানী: গোলাম আহমদ কাদিয়ানী খাতামুন্নাবী। (কাদিয়ানীদের পত্রিকা; আলে ফজল ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯১৫)

দুই. 

ইসলাম: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামত পর্যন্ত আসন্ন সকলের নবী। (সূরা নিসা-৭৯)

কাদিয়ানী: ঈসায়ী ১৪ শতাব্দী থেকে কাদিয়ানী সকলের রাসূল। (কাদিয়ানী-দের কিতাব; ‘তাযকিরা’; পৃষ্ঠা ৮৩)

তিন. 

ইসলাম: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই রাহমাতুল্লিল আলামীন। (সূরা আম্বিয়া-১০৭)

কাদিয়ানী: গোলাম আহমদ কাদিয়ানী রাহমাতুল্লিল আলামীন। (কাদিয়ানীদের কিতাব; ‘তাযকিরা’; পৃষ্ঠা ৮৩)

চার.

ইসলাম: নবীজী আলাইহিস সাল্লামের উপর ঈমান আনার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা সকল নবী থেকে ওয়াদা নিয়েছেন। (সূরা আলে ইমরান-৮১)

কাদিয়ানী: কাদিয়ানীর উপর ঈমান আনার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা সকল নবী থেকে ওয়াদা নিয়েছেন। (কাদিয়ানী মাযহাব; পৃষ্ঠা ৩৪২)

পাঁচ.

ইসলাম: আল্লাহ তা‘আলার কোন সন্তান নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। (সূরা ইখলাস)

কাদিয়ানী: কাদিয়ানী আল্লাহ তা‘আলার সন্তানের ন্যায়। (কাদিয়ানীদের কিতাব- তাযকিরা; পৃষ্ঠা ৪১২)

ছয়.

ইসলাম: আল্লাহ তা‘আলা কোনো মাখলুকের মত নন। (সূরা শূরা-১১)

কাদিয়ানী: কাদিয়ানী হলো আল্লাহ তা‘আলার আত্মপ্রকাশ। (তাযকিরা; পৃষ্ঠা ৫৯৬)

সাত.

ইসলাম: ফাতহে মুবীন (মহা বিজয়) কাদিয়ানীকে নয় বরং নবীজীকেই দেয়া হয়েছিলো। (সূরা ফাতহ-১)

কাদিয়ানী: ফাতহে মুবীন (মহা বিজয়) কাদিয়ানীকে দেয়া হয়েছিলো, আর নবীজী আলাইহিস সালামকে দেয়া হয়েছিলো ছোট বিজয়। (কাদিয়ানীদের কিতাব- খুৎবায়ে ইলহামিয়া; পৃষ্ঠা ১৭৭)

আট.

ইসলাম: ‘কুন ফায়াকুন’-এর মালিক কেবল আল্লাহ তা‘আলাই। (সূরা ইয়াসীন-৮২)  

কাদিয়ানী: কাদিয়ানী ‘কুন ফায়াকুন’-এর মালিক। (কাদিয়ানীদের কিতাব- তাযকিরা; পৃষ্ঠা ৫২৫)

নয়.

ইসলাম: নাজাত ও মুক্তি কেবল নবীজীর অনুসরণের মধ্যে এবং তিনি যাদেরকে অনুসরণ করতে বলেছেন তাদের অনুসরণের মধ্যে। [কুরআন-সুন্নাহর কোথাও কাদিয়ানীকে অনুসরণ করতে বলা হয়নি।] (সূরা নিসা-৫৯)

কাদিয়ানী: নাজাতের ভিত্তি কেবল কাদিয়ানীর অনুসরণের মধ্যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লামের অনুসরণের মধ্যে নয়। (কাদিয়ানীদের কিতাব; আরবাঈন; পৃষ্ঠা ৭)

দশ.

ইসলাম: কুরআন মাজীদ সর্বশেষ আসমানী কিতাব। (সূরা বাকারা-৪)

কাদিয়ানী: কুরআন নয়, বরং কাদিয়ানীর ওহীসমগ্র ‘তাযকিরা’-ই সর্বশেষ আসমানী কিতাব।

(অবশিষ্ট দুই প্রশ্নের উত্তর আগামী সংখ্যায় ছাপা হবে ইনাশাআল্লাহ।)

তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর :

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বশেষ নবীর মাধ্যমে সর্বশেষ ধর্ম ইসলাম প্রেরণ করে স্পষ্ট ঘোষণা করে দিয়েছেনÑ 

ومن يبتغ غير الإسلام دينا فلن يقبل منه.. 

(অর্থ:) আর যে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো পথকে দীনরূপে গ্রহণ করবে আল্লাহ তা‘আলা কস্মিনকালেও তার থেকে সেই দীন গ্রহণ করবেন না। (সূরা আলে ইমরান-৮৫)

উল্লিখিত আয়াতের তাফসীরে ইমাম রাযী (মৃ.৬০৬হি.) রহ. বলেনÑ

وأن كل دين سوى الإسلام فإنه غير مقبول عند الله، لأن القبول للعمل هو أن يرضى الله ذلك العمل، ويرضى عن فاعله ويثيبه عليه، ولذلك قال تعالى: إنما يتقبل الله من المتقين [المائدة: ২৭] ثم بين تعالى أن كل من له دين سوى الإسلام فكما أنه لا يكون مقبولا عند الله، فكذلك يكون من الخاسرين، والخسران في الآخرة يكون بحرمان الثواب، وحصول العقاب، 

অর্থাৎ ইসলাম ব্যতীত কোনো ধর্মই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা আমল কবুল হওয়ার অর্থ হলো ঐ আমল আল্লাহ তা‘আলার পছন্দ হওয়া এবং আমলকারীকে তার জন্য নেকী প্রদান করা। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনÑ (অর্থ:) আল্লাহ তা‘আলা শুধুমাত্র মুত্তাকী-পরহেযগারদের থেকে আমল কবুল করেন। (সূরা মায়িদা-২৮) অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যে কেউ ইসলাম ভিন্ন কোনো দীনকে গ্রহণ করবে, তো একদিকে যেমন এই দীন আল্লাহ তা‘আলার নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না অপরদিকে সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। অর্থাৎ ইসলাম ভিন্ন অন্য ধর্ম গ্রহণ করার কারণে সে আখেরাতে কোনো সওয়াব তো পাবেই না বরং আযাবে গ্রেফতার হবে। (তাফসীরে কাবীর খ. ৮ পৃ. ২৮২)

আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. (মৃ.৭৭৪হি.) বলেনÑ

 فالمؤمنون من هذه الأمة يؤمنون بكل نبي أرسل، وبكل كتاب أنزل، لا يكفرون بشيء من ذلك بل هم مصدقون بما أنزل من عند الله، وبكل نبي بعثه الله. ثم قال تعالى: {ومن يبتغ غير الإسلام دينا فلن يقبل منه} أي: من سلك طريقا سوى ما شرعه الله فلن يقبل منه {وهو في الآخرة من الخاسرين} كما قال النبي صلى الله عليه وسلم في الحديث الصحيح: "من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد.([() أخرجه الإمام مسلم فى صحيحه (برقم ১৮১৭) عن عائشة، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد وبوب به الإمام البخارى (باب إذا اجتهد العامل أو الحاكم، فأخطأ خلاف الرسول من غير علم، فحكمه مردود لقول النبي صلى الله عليه وسلم: من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد) ولم يخرجه (صحيح البخاري ৯/ ১০৭ رقم الحديث ৭৩৫০ طـ دار طوق النجاة،)]) 

অর্থাৎ উম্মতে মুহাম¥াদীর মধ্যে যারা মুমিন হবে তারা আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত সকল নবী এবং আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সকল কিতাবের উপর ঈমান রাখবে। এ সবের কোনো কিছুই তারা অস্বীকার করবে না বরং আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সকল কিতাব এবং প্রেরিত সকল রাসূলকে সত্য মনে করবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেনÑ (অর্থ:) ‘যে কেউ ইসলাম ভিন্ন কোনো দীনকে গ্রহণ করবে আল্লাহ তা‘আলা কস্মিনকালেও তার থেকে সেই দীন গ্রহণ করবেন না।’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি এমন পন্থা অবলম্বন করবে যার অনুমোদন আল্লাহ তা‘আলা দেননি, সে পন্থা আল্লাহ তা‘আলা কখনোই গ্রহণ করবেন না। আর সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শামিল হবে, যেমনটি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনÑ (অর্থ:) যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করলো যে ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়নি তাহলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর খ. ২ পৃ. ৭০)

সুতরাং ইসলামকে ছুঁড়ে ফেলে ‘আহমদিয়া..... জামাত’ নামে নব্যগঠিত কাদিয়ানী ধর্ম-মতও উল্লিখিত আয়াত অনুযায়ী অগ্রহণযোগ্য। কেননা তারা নবীজী আলাইহিস সালামকে শেষ নবী না মানার দরুন সুস্পষ্ট কাফের। আর ‘আহমদিয়া..... জামাত-এর অনুসৃত ভÐ নবী-দাবীদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মত মিথ্যুকদের ব্যাপারে তো নবীজী আলাইহিস সালাম ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেনÑ

عن أبي هريرة رضي الله عنه، عن النبي صلى الله عليه وسلم، قال: ... ولا تقوم الساعة حتى يبعث دجالون كذابون، قريبا من ثلاثين، كلهم يزعم أنه رسول الله

(অর্থ:) হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ... ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যাবৎ না প্রায় ত্রিশজনের মত কট্টর মিথ্যুকের আবির্ভাব হবে, যাদের প্রত্যেকেই মনে করবে যে, সে আল্লাহর রাসূল। (সহীহ বুখারী; হা.নং ৩৬০৯)

(তাছাড়াও মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী কর্তৃক গঠিত ‘কাদিয়ানী’ ধর্মের অনুসারী ‘আহমদিয়া.......জামাত’-এর লোকেরা যেহেতু ‘আকীদায়ে খতমে নবুওয়্যাত’কেও অস্বীকার করে, কাজেই তাদের ব্যাপারেও কুরআন-সুন্নাহর এই একই বক্তব্য, যে বক্তব্য খতমে নবুওয়্যাত অস্বীকারকারীদের ব্যাপারে প্রদত্ত হয়েছে।)

চতুর্থ প্রশ্নের উত্তর :

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মুনাফিকগোষ্ঠী কর্তৃক মসজিদে যিরার নির্মাণের ঘৃণ্য উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম একটি উদ্দেশ্য ছিল মুমিন-মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি 

সৃষ্টি করা এবং পরস্পরে লড়াই বাধিয়ে দেয়া।

আল্লামা তাবারী রহ. (মৃ. ৩১০ হি.) বলেনÑ

قال أبو جعفر: فتأويل الكلام: والذين ابتنوا مسجدا ضرارا لمسجد رسول الله صلى الله عليه وسلم، وكفرا بالله لمحادتهم بذلك رسول الله صلى الله عليه وسلم، ويفرقوا به المؤمنين، ليصلي فيه بعضهم دون مسجد رسول الله صلى الله عليه وسلم، وبعضهم في مسجد رسول الله صلى الله عليه وسلم، فيختلفوا بسبب ذلك ويفترقوا، 

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা হলো, মুনাফিকরা কুবায় একটি মসজিদ নির্মাণ করে এই লক্ষ্যে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদের (মসজিদে কুবা’র) ক্ষতি সাধন করবে, এর মাধ্যমে নবীজীর সঙ্গে টক্কর দিয়ে আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্বকে অস্বীকার করার মিশন সফল করবে এবং মুমিনদেরকে বিভক্ত করে দিবে। আর তার পদ্ধতি হলোÑ কিছু মুসলমান নবীজীর মসজিদে নামায পড়বে আর কিছু তাদের মসজিদে। এভাবে মুসলমানদের মাঝে মতানৈক্য তৈরী হবে, ফলে তারা পরস্পরে বিভক্ত হয়ে পড়বে। (তাফসীরে তাবারী খ. ১৪ পৃ. ৪৬৯)

নবীজী আলাইহিস সালাম বিষয়টি জানতে পেরে মসজিদ নামক ঐ ষড়যন্ত্রের আখড়াটিকে গুড়িয়ে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন এবং ঐ স্থানটিকে ডাস্টবিনে পরিণত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কেননা মুনাফিকরা ইসলামের প্রতীক ব্যবহার করে মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিচ্ছিলো।

আল্লামা আলূসী রহ. (মৃ. ১২৭০ হি.) উল্লেখ করেনÑ

وذكر البغوي من حديث ذكره الثعلبي- كما قال العراقي- بدون سند أن النبي صلى الله عليه وسلم أمر بعد حرق المسجد وهدمه أن يتخذ كناسة يلقي فيها الجيف والنتن والقمامة إهانة لأهله لما أنهم اتخذوه ضرارا،

অর্থাৎ কুবায় মুনাফিক কর্তৃক নির্মিত মসজিদে যিরারকে ভেঙ্গে পুড়িয়ে দেয়ার পর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে ডাস্টবিন বানিয়ে ময়লা-অবর্জনা ফেলার নির্দেশ দিলেন মুনাফিকদেরকে লাঞ্চিত করার জন্য। কেননা তারা এই স্থানকে মুসলমানদের ক্ষতিসাধনের মাধ্যম বানিয়েছিলো। (তাফসীরে রূহুল মা‘আনী; খ. ৬ পৃ. ১৮)

মুসলমানদের বেশ-ভ‚ষা ধারণ করে লোকদেরকে ধোঁকা দেয়ার কারণে একবার তো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর খুৎবার সময় মিম্বরে দাঁড়িয়ে মুনাফিকদের নাম ধরে ধরে মসজিদ থেকে বের করে দিয়েছিলেন। 

আল্লামা আলূসী রহ. লিখেছেনÑ

أخرج ابن أبي حاتم والطبراني في الأوسط([() أخرجه الإمام الطبرانى فى معجمه الأوسط (برقم ৭৯২) عن ابن عباس في قوله: وممن حولكم من الأعراب منافقون ومن أهل المدينة مردوا على النفاق لا تعلمهم نحن نعلمهم سنعذبهم مرتين ثم يردون إلى عذاب عظيم قال: قام رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم جمعة خطيبا، فقال: قم يا فلان فاخرج، فإنك منافق، اخرج يا فلان، فإنك منافق ، فأخرجهم بأسمائهم، ...]) وغيرهما عن ابن عباس رضي الله تعالى عنهما قال: قام رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم جمعة خطيبا فقال قم يا فلان فاخرج فإنك منافق اخرج يا فلان فإنك منافق فأخرجهم بأسمائهم 

(অর্থ:) হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, একবার নবীজী আলাইহিস সালাম জুমু‘আর দিন খুৎবা দিতে দাঁড়ালেন। অতঃপর বললেনÑ হে অমুক! বের হও কারণ তুমি মুনাফিক; হে অমুক তুমিও বের হও কারণ তুমিও মুনাফিক। এভাবে একে একে তাদের নাম ধরে ধরে মসজিদ থেকে বের করে দিলেন। (তাফসীরে রূহুল মা‘আনী খ. ৬ পৃ. ১২)

সুতরাং বুঝা গেলো, ইসলাম বা মুসলমানদের বেশ-ভ‚ষা কাজে লাগিয়ে কেউ ইসলামের ক্ষতি করতে চাইলে তাকে সে সুযোগ কখনোই দেয়া যাবে না। কাজেই কাফের কাদিয়ানীদের জন্য কালিমা, সাহাবা, মুসলিম, উম্মুল মুমিনীনÑ এর মত ইসলামের শি‘আর ও স্বকীয়তাজ্ঞাপক পরিভাষা ব্যবহার করার যেমন অধিকার নেই, তেমনি মুসলমানদের জন্য তাদেরকে এ সকল পরিভাষা ব্যবহারের সুযোগ প্রদানেরও কোনো অবকাশ নেই। 

তাছাড়া ইসলাম, মুসলিম, মসজিদ, মুমিন, কালিমায়ে তায়্যিবা প্রভৃতি ইসলামের স্বকীয়তাজ্ঞাপক-পরিভাষাসমূহ একান্তই ইসলামের অধিকার এবং সকলেই এই পরিভাষা দ্বারা ঐ সকল ব্যক্তিবর্গকে বুঝে থাকে, যারা আকীদায়ে খতমে নবুওয়্যাতে বিশ্বাসী। অপরদিকে আহমদিয়া..... জামাতের অনুসারীরা যেহেতু কাফের তাই এটা কখনোই ইনসাফের দাবী হতে পারে না (বরং এটা স্পষ্টত যুলুম বটে) যে, যারা মুসলমান নয় তাদেরকে মুসলমানদের পরিভাষা ব্যবহারের অধিকার দেয়া হবে।

‘মাহ্নামা বায়্যিনাত’ নামক পত্রিকায় জামি‘আতুল উলূমিল ইসলামিয়া, বানূূরী টাউন, করাচী, পাকিস্তান-এর ফাতাওয়া বিভাগ থেকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত দুটি ফতওয়া নি¤েœ প্রদত্ত হলোÑ

سوال : مساجد میں خدا اور اس کے ذکر سے اور رسول خدا کے ذکر سے احمدیوں کو روکنا اور ہم سے یہ کہنا کہ آپ مساجد کی شکل مندر کی طرح بنائیں اور مسجد میں خدا اور اس کے رسول کانام نہ لیں کیا یہ سب کچھ آپ کے نزدیک اسلامی طریقہ ہے ؟

جواب: سنعذبھم مرتین ، کے تحت متعدد احادیث روح المعانی میں مذکورہیں کہ آنحضرت صلی اﷲعلیہ وسلم نے منافقین کو مسجد سے نکالا اس لئے یہ عمل تو عینِ سنتِ نبوی ہے 

سوال:  احمدیوں کو مسجدیں بنانے سے جبرا ًروکا جارہا ہے کیا یہ اسلام میں آپ کے نزدیک جائزہے؟

جواب :  آنحضرت انے مسجد ضرار کے ساتھ کیا کیا تھا ؟اور قرآن کریم نے اس کے بارے میں کیا ارشاد فرمایا ہے ؟شاید جناب کے علم میں ہوگا ،اس کے بارے میں کیا ارشاد ہے ۔آپ حضرات دراصل رنج کی وجہ سے معقول بات پر بھی اعتراض فرماتے ہیں دیکھئے اس بات پر تو غور ہوسکتا تھا (اور ہوتا بھی رہا ہے ) کہ آپ کی جماعت کے عقائد مسلمانوں کے سے ہیں یا نہیں ؟اور یہ کہ اسلام میں ان عقائد کی گنجائش ہے یا نہیں؟ لیکن جب یہ طے ہوگیا کہ آپ کی جماعت کے نزدیک مسلمان ،مسلمان نہیں اور مسلمانوں کے نزدیک آپ کی جماعت مسلمان نہیں ؟تو خود انصاف فرمائیے کہ آپ مسلمانوں کو اور مسلمان آپ کو اسلامی حقوق کیسے عطا کرسکتے ہیں ؟اور ازروئے عقل وانصاف کسی غیر مسلم کو اسلامی حقوق دینا ظلم ہے ؟یا اس کے برعکس نہ دینا ظلم ہے ؟ میرے محترم !بحث جبرواکراہ کی نہیں ،بلکہ بحث یہ ہے کہ آپ نے جو عقائد اپنے اختیار وارادہ سے اپنائے ہیں ان پر اسلام کا اطلاق ہوتا ہے یانہیں ؟اگر ان پر اسلام کا اطلاق ہوتا ہے تو آپ کی شکایت بجا ہے ،نہیں ہوتا تو یقینا بے جا ہے ۔اس اصول پر تو آپ بھی اتفا ق کریں گے اور آ پ کوکرنا چاہیئے ۔اب آپ خود ہی فرمائیے کہ آپ کے خیال میں اسلام کس چیز کانام ہے ؟اورکن چیزوں کے انکار کردینے سے اسلام جاتا رہتا ہے اس تنقیح کے بعد آپ اصل حقیقت کو سمجھ سکیں گے جو غصہ کی وجہ سے اب نہیں سمجھ رہے ۔ فتاوی بینات  ১/২১৫-২১৬  ( ط -مکتبۂ بینات)

কাদিয়ানীদের ব্যাপারে মুসলিম বিশে^র সিদ্ধান্ত।

মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর অনুসারী ‘আহমদিয়া ..... জামাত’-এর খপ্পর থেকে সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আমল হেফাজত করার লক্ষ্যে তাদের ঈমান বিধ্বংসী আকীদার কারণে বিশে^র বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইতোমধ্যেই তাদেরকে কাফের বলে ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে। 

১৯৭৪ সালে বিশ^ মুসলিম সংস্থা ‘রাবেতায়ে আলমে ইসলামী’র উদ্যোগে পবিত্র মক্কা মুকাররমায় আয়োজিত কনফারেন্সে ১৪৪টি মুসলিম রাষ্ট্র এই মর্মে ঘোষণা দেয় যে, ‘কাদিয়ানীরা কাফের, তাদের তাফসীর বিকৃত এবং তারা মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে ও পথভ্রষ্ট করছে।’

১৯৮৮ সালে ওআইসি’র উদ্যোগে ইরাকে সকল মুসলিম দেশের ধর্মমন্ত্রীদের নিয়ে আয়োজিত এক সম্মেলনে প্রত্যেক মুসলিম দেশে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণার জন্য লিখিত প্রতিশ্রæতি নেয়া হয়। সে মতে সৌদী, ইরাক, ইরান, কুয়েত, মালয়েশিয়া-সহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে।

পাকিস্তান গণপরিষদও ১৯৭৪ ঈসায়ীর ৭ সেপ্টেম্বর আইনগত এবং শাসনতান্ত্রিকভাবে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম সম্প্রদায় বলে ঘোষণা দিয়েছে। তবে দুর্ভাগ্যবশত সংখ্যাগরিষ্ঠ-মুসলিম দেশ হওয়া সত্তে¡ও বাংলাদেশে এখনো কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়নি। তবে উলামা-মাশায়েখ এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাদিয়ানীদের প্রোপাগাÐা প্রতিরোধ করতে সোচ্চার রয়েছেন।

সমাজের যে সকল মুসলমান ‘কুফর’ এবং ‘বাতিলে’র বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে অংশগ্রহণ করবে না, তাদেরকে মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে পাকড়াও করা হবে বলে হাদীস শরীফে ধমকি এসেছে।

হযরত জারীর রাযি. বর্ণনা করেন,

عن عبيد الله بن جرير عن أبيه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: "ما من رجل يكون في قوم يعمل فيهم بالمعاصي يقدرون على أن يغيروا عليه ولا يغيروا إلا أصابهم الله بعقاب قبل أن يموتوا" 

(অর্থ:) আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, সমাজের কোন লোক নাফরমানীতে লিপ্ত হলে, ঐ সমাজের লোকেরা তাকে বাধা দেওয়ার সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও যদি বাধা না দেয়, তবে আল্লাহ তা‘আলা সে সমাজের লোকদেরকে তাদের মৃত্যুর পূর্বেই শাস্তি প্রদান করবেন। (সুনানে আবূ দাউদ; হা.নং ৪৩৩৯, সহীহ ইবনে হিব্বান; হা.নং ৩০০)

কাদিয়ানী-ধর্মান্তরের ফেতনা; উম্মতের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

অতএব বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের সকলের জন্য জরুরী হলো, কাদিয়ানীরা যে খতমে নবুওয়্যাতের মনগড়া ব্যাখ্যা করে এবং কালিমায়ে তায়্যিবা, মুমিন, মুসলমান জাতীয় ইসলামের স্বকীয়তাজ্ঞাপক পরিভাষা ব্যবহার করার মতো অনধিকার চর্চার মাধ্যমে মুসলমানদেরকে কাফের বানানোর ষড়যন্ত্র করছে, তাদের এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এবং ঐক্যবদ্ধভাবে বল প্রয়োগ করে, প্রয়োজনে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ অপকর্ম বন্ধের ব্যবস্থা করা, সাথে সাথে কাদিয়ানী মতবাদের বিরোধিতা এবং এর মূলৎপাটোনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন

كنتم خير أمة أخرجت للناس...

(অর্থ:) তোমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত; মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং অসৎ কাজে বাধা দাও এবং আল্লাহর উপর ঈমান রাখ। (সূরা আলে ইমরান-১১০]

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনÑ

من رأى منكم منكرا فليغيره بيده، فإن لم يستطع فبلسانه، فإن لم يستطع فبقلبه، وذلك أضعف الإيمان

(অর্থ:) তোমাদের কেউ শরীয়তবিরোধী কোন কাজ দেখলে সে যেন হাত দ্বারা তা প্রতিহত করে। (অর্থাৎ বাধা দেয়।) যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে মুখ দ্বারা। (অর্থাৎ মৌখিকভাবে প্রতিহত করে।) তাও সম্ভব না হলে যেন অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে। আর এটা ঈমানের দুর্বলতম স্তর। (সহীহ মুসলিম; হা.নং ৭৮)

উল্লিখিত হাদীসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী ক্বারী রহ. (মৃ. ১০১৪ হি.) বলেনÑ

وقيل: المعنى إنكار المعصية بالقلب أضعف مراتب الإيمان، لأنه إذا رأى منكرا معلوما من الدين بالضرورة فلم ينكره ولم يكرهه، ورضي به واستحسنه كان كافرا،

অর্থাৎ অনেক উলামায়ে কেরাম বলেছেন, পাপাচারে সরাসরি বাধা না দিয়ে শুধুমাত্র অন্তরে ঘৃণা করাকে হাদীস শরীফে ঈমানের দুর্বলতম স্তর বলার কারণ হলো, যখন কেউ শরীয়তের অবশ্যমান্য বিষয় লঙ্ঘিত হতে দেখেও তাতে বাধা না দেয় এবং অন্তর দিয়ে ঘৃণাও না করে বরং সে তাতে খুশী হয় এবং কাজটিকে ভালো মনে করে তখন তার ঈমান থাকে না, বরং সে কাফের হয়ে যায়। (মিরকাত খ. ৯ পৃ. ৩২৩)

কাজেই সর্বাত্মকভাবে কাদিয়ানীদেরকে কাফের প্রচার করা এবং তাদের ধর্মপ্রচারে বাধা প্রদান করা আমাদের সকলের ঈমানী দায়িত্ব। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলের ঈমান-আমল হেফাযতের তাওফীক দান করুন। আমীন। 

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →