প্রবন্ধ

অভিভাবক সমীপে তালিবে ইলমের অভিভাবকদের দায়-দায়িত্ব ও সচেতনতা

লেখক:মুফতী সাঈদ আহমাদ ( রাহমানিয়া )
২২ জানুয়ারী, ২০২২
৩৯৩৬ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

গত ২৯শে জুন শনিবার জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়ায় শিক্ষারত তালিবে ইলমদের অভিভাবক সম্মেলনে প্রদত্ত বয়ান।

হামদ ও সালাতের পর...

সম্মানিত অভিভাবকবৃন্দ! আপনারা প্রিয় সন্তানের সুন্দর আগামী ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনায় আজকের এই অভিভাবক সম্মেলনে সমবেত হয়েছেন এবং দীর্ঘক্ষণ কষ্ট বরদাশত করে জামি‘আর আসাতিযায়ে কেরামের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা শ্রবণ করেছেন। ইনশাআল্লাহ এই কষ্ট ও মুজাহাদা একসময় আপনাদের সন্তানের উন্নত ভবিষ্যত গঠনে সহায়ক হবে।

দেখুন! কোন অভিভাবক সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তি করে দিয়েই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যায় না; সন্তানের জন্য নিয়মিত চোখের পানি ফেলে দু‘আ করতে হয়। তার সুস্থতা ও নিরাপদ যিন্দেগীর জন্য দান-সদকা করতে হয়। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সন্তানের উস্তাদ ও উলামায়ে কেরামকে যথার্থ ইজ্জত-সম্মান করতে হয়। অতঃপর অভিভাবকের আচার-আচরণ, নিয়ত-ইখলাস সব কিছু মিলিয়ে আল্লাহ তা‘আলা সন্তানকে আশানুরূপ সাফল্য দান করেন।

আমরা কিতাবে পড়েছি, হযরত শামসুল আইম্মা হালওয়ায়ী রহ. পঞ্চম শতাব্দির একজন বিখ্যাত আলেম ও প্রাজ্ঞ ফকীহ ছিলেন। লোকেরা এখন যেমন মিষ্টি বা মিষ্টিদ্রব্যের ব্যবসা করে, শামসুল আঈম্মা হালওয়ায়ী রহ.-এর পিতাও সে যুগে তেমনি মিষ্টি ব্যবসায়ী ছিলেন। আরবীতে মিষ্টিকে ‘হালওয়া’ বলে। এই হালওয়া শব্দ থেকেই তাদের বংশীয় উপাধী ‘হালওয়ায়ী’ হয়ে যায়। তার পিতার ব্যাপারে জনশ্রæতি আছে, তিনি যখন নিজ সন্তান হযরত শামসুল আইম্মা রহ.-কে ইলমে দীন হাসিলের জন্য দীনী প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করেন, তখন থেকে তার কাছে যত লোক মিষ্টি ক্রয় করতে আসতো তাদেরকে তিনি প্রাপ্য মিষ্টির চেয়ে কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে বলতেন, ‘আমার সন্তানকে দীন শেখার জন্য দিয়েছি, তার জন্য দু‘আ করবেনÑ আল্লাহ যেন তাকে যোগ্য আলেম বানিয়ে দেন।’

শামসুল আইম্মা হালওয়ায়ীর পিতার এই মানোবাসনাকে আল্লাহ তা‘আলা এমনভাবে কবুল করেছেন যে, কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের জন্য হযরত শামসুল আইম্মা হালওয়ায়ী রহ. একজন অনুসরণীয় আলেম ও নির্ভরযোগ্য ফকীহে পরিণত হয়েছেন। তার রচিত ও সংকলিত কিতাবগুলো যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞ আলেমদের কাছে প্রামাণ্য ও তথ্যসূত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

এ জন্যই বলছিলাম যে, পিতা-মাতা বা অভিভাবকের জন্য শুধু অর্থের যোগান দেয়াই যথেষ্ট নয়; বরং সন্তান যেন তার আশানুরূপ বরং ততোধিক যোগ্য, প্রাজ্ঞ ও হক্কানী আলেম হতে পারে সেজন্য নিজ নিজ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত-অপরিচিত সকলের কাছেই দু‘আ চাইতে হবে যে, আল্লাহ যেন আমার সন্তানকে কবুল করেন, তার যেন দীনের সহীহ বুঝ হাসিল হয়, সে যেন দীনদারীর উপর অটল-অবিচল থাকে। এসব বলে বলে যেখানেই সুযোগ আসে সেখানেই তার জন্য দু‘আ চাইতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত কিছু দান-সদকা করতে হবেÑ আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ রাখেন এবং বালা-মুসীবত থেকে নিরাপদ রাখেন।

সন্তানকে কেন আলেম বানাতে হবে, এ ব্যাপারে আপনারা এতোক্ষণ ধরে আলোচনা শুনছিলেন যে, আলেম সন্তান পরকালে নাজাতের উসীলা হবে। পরকালে সে পিতা-মাতার জন্য মহাদৌলত হয়ে দেখা দিবে। নিজ আমলের কমতির কারণে কোন আত্মীয়-স্বজন যদি জাহান্নামী সাব্যস্ত হয়ে যায়, তাকেও সে জান্নাতে নিয়ে যেতে সুপারিশ করতে পারবে। কবর জীবনে যখন সমস্ত আমলনামা বন্ধ হয়ে যাবে তখন সন্তানের নেক আমলের সওয়াব কবরে থেকেও আপনি পেতে থাকবেন ইত্যাদি, ইত্যাদি। তো এসব হলো পরকালীন স্বার্থ।

তবে সন্তানাদি যদি খাঁটি আলেম, দীনদার ও পরহেযগার হয়, তাহলে দুনিয়াতেও আপনি তার দ্বারা উপকৃত হবেন। আর সন্তান যদি দীনদার না হয় তাহলে শুধু পরকালীন ক্ষতি আর কবরজীবনের উপকার থেকেই বঞ্চিত হবেন না; বরং এ সন্তানের কারণে আপনি লাঞ্চিত-বঞ্চিত ও অপদস্ত হবেন। পূর্বের আলোচনায় হুযূর বলেছেন, সন্তান বদদীন হলে নিজ ব্যস্ততা বাদ দিয়ে বা খাটো করে সে পিতা-মাতাকে কখনোই তাদের প্রাপ্য সময় দিবে না, খোঁজ-খবর নিবে না, মৃত্যুর সময় পাশে থাকবে না, থাকলেও তার দ্বারা পিতা-মাতার কোন উপকার হবে না। এমনকি দাফন-কাফনেও শরীক থাকা তার নসীবে জুটবে না। রইল  পিতা-মাতার জন্য আমল করে ইসালে সওয়াব করাÑ তো এটা সে করবেই কীভাবে, তার তো ‘কুলহুওয়াল্লাহ’ পড়ারই যোগ্যতা নেই? 

আমি তো বলি, শুধুমাত্র এটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, আপনার জীবন চলার পথে সে এক অসহ্য দুর্বিসহ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। আপনি হিং¯্র জানোয়ার থেকে যেটুকু ক্ষতির সম্মুখীন না হবেন, বদদীন সন্তান দ্বারা তার চেয়েও নির্মম ক্ষতির স্বীকার হবেন। বন-জঙ্গলের হিং¯্র প্রাণীকে ছোট অবস্থায় ভিন্নভাবে লালন-পালন করা হলে বাঘ, ভল্লুক, সিংহ, চিতা পর্যন্ত পোষ্য হয়ে যায়, হিং¯্র থাকে না; লোকেরা পরিবারসহ কোলে-পিঠে তুলে ঘুরে বেড়ায়। সেদিনও পত্রিকায় এসেছে, অস্ট্রেলিয়ায় এক আসামীকে গ্রেফতার করতে পুলিশ তার বাড়িতে হানা দেয়। কাউকে খুঁজে না পেয়ে পুলিশ আসামীর পিতার ঘরে গিয়ে দেখেÑ বিছানায় কে যেন কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। পুলিশ ধারণা করেছে, আসামীর পিতা হয়তো তার সন্তানকে লুকিয়ে রেখে হেফাযত করছে। কিন্তু যখনি কম্বল তোলা হলো, দেখা গেলো জ্যান্ত এক চিতা বাঘ, কম্বলের নিচে শুয়ে আছে। পুলিশ ভয়ে পিছু হটে চোখ বড় করে পিতার দিকে তাকিয়ে আছে। বাবা তখন বললেন, সেই ছোট থেকেই চিতাটিকে আদর-যতœ ও লালন-পালন করায় এখন এতোটাই পোষ্য হয়ে গেছে যে, ওর থেকে ক্ষতির কোন আশঙ্কাই নেই।

হিং¯্র প্রাণীও লালন-পালন আর আদর-সোহাগে পোষ্য হয়ে যায়, বিপদমুক্ত, নিরাপদ হয়ে যায়। কিন্তু সন্তান যদি দীনহীন-বদদীন হয়ে যায়, যতোই আদর-সোহাগে তাকে লালন-পালন করা হোক, সেই পোষ্য বাঘের চেয়েও বিশগুণ বেশি যতœ করে বড় করে তোলা হোক দীনহীন সন্তান কিন্তু পোষ্য হবে না। সে ভয়ঙ্কর হিং¯্র জানোয়ারে পরিণত হয়ে যাবে। আজকে সন্তানের লেখা-পড়ার জন্য পিতা-মাতা কতোইনা কষ্ট স্বীকার করে, সেই সকাল হতে শুরু করে রাত পর্যন্ত। বাসা থেকে কোচিং, সেখান থেকে স্কুল। ফের কোচিং সেন্টার হয়ে বাসায়। পিতা-মাতার দফারফা। শুধু কি তাই! প্রত্যহ দুপুরের তীব্র রোদে পুড়ে রাস্তায় পেপার বিছিয়ে আদুরে সন্তানের অপেক্ষায় বসে থাকা, আরো যে কতো কিÑ সেটা বলে শেষ করা যাবে না।

এক দম্পতির একটিমাত্র ছেলে। বাবা-মা দু’জনই সন্তানকে মাদরাসায় পড়াতে রাজি। কিন্তু মা শুধুমাত্র এ কারণে শেষ পর্যন্ত মাদরাসায় দিতে পারেনি যে, তার ছেলে যদি দুষ্টুমি করে বা পড়া না পারে, তাহলে তো শিক্ষক তাকে শাস্তি দিবে। ঐ মায়ের কথা হচ্ছে, আমার ছেলের গায়ে বেত পড়বে এটা আমি কখনোই সহ্য করতে পারবো না। পিতা-মাতা সন্তানকে কতোটা আদর ও সোহাগ দিয়ে বড় করে থাকেÑ এতো আদর-যতেœর সন্তান যদি দীনদার না হয় তাহলে কিন্তু সেই বাঘের চেয়েও হিং¯্র ও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠবে।

বিষয়টি কেমন হলো? আপনি আদর-সোহাগ দিয়ে বনের হিং¯্র বাঘ পোষ মানিয়ে নিলেন আর গর্ভজাত সন্তানকে আদরের নামে দীন না শিখিয়ে বাঘের চেয়ে হিং¯্র বানিয়ে দিলেন। এই সন্তান একসময় আপনার দিকে চাপাতি, দা-বটি নিয়ে ছুটে আসবে। গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করবে। বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতায় কুপিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করবে। কাল্পনিক গল্প বলছি না, এগুলো এখন নিত্যদিনের সংবাদ শিরোনাম এবং এর বহু দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে বিদ্যমান। কারো সন্দেহ হলে যেসব পিতা-মাতার সন্তান বালেগ হয়ে গেছে, কিন্তু দীনদার হয়ে বেড়ে ওঠেনি তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে দেখতে পারেন যে, সন্তানকেন্দ্রীক কী দুর্বিসহ যন্ত্রণা ও নির্যাতন তারা ভোগ করছেন।

যাই হোক, সন্তানকে আলেম বানাতে হবে। আলেম হওয়া ছাড়া মানুষের দীনদারীর বিন্দু পরিমাণ ভরসা নেই। একজন সাধারণ মানুষ একদিকে হয়তো দীনদার কিন্তুঅন্যদিকে সে  খেয়ালে-বেখেয়ালে এমন সব কথা-বার্তা উচ্চারণ করে, যে কথায় তার ঈমান নষ্ট হওয়া নিশ্চিত। 

আমাকে এক ভাই জানালেন, তিনি তার মেয়েকে জেনারেল শিক্ষিত দীনদার পাত্র দেখে বিবাহ দিয়েছেন। মেয়ে-জামাই দাওয়াত ও তাবলীগের নিসবতে পরিপূর্ণ দীনদার। কিন্তু সে এমন এক কাÐ ঘটিয়ে বসেছে, যেটা কোন দীনদার করতে পারে না। সে ভাই বললেন, আমার মেয়ের সাথে ওর সামান্য একটু মনোমালিন্য হয়েছে। আমার মেয়ে ওর সামনেও ছিলো না, সে একদিন রাস্তায় চলছিলো আর মুখে তিন তালাকের কথা উচ্চারণ করছিলো। পরে সে আমাকে বললো, এটাতে কি আর তিন তালাক হবে? আমি তো মনের কথাটাই শুধু মুখে উচ্চারণ করছিলাম।

দেখুন, কত বড় আহম্মক! সে এটাও জানে না যে, মনের কথা মুখে উচ্চারণ করলেও স্ত্রী চিরদিনের জন্য হারাম হয়ে যাবে। সাধারণ মাসআলাটাও সে জানে না যে, কেউ না শুনলেও মুখে উচ্চারণের দ্বারা স্ত্রী তালাক হয়ে যায়। এটাতো একটা ছোট্ট উদাহরণ। এ কারণেই বলেছি যে, যদি আলেম না হয় কিংবা কোন আলেমের দীর্ঘ সোহবত-সংস্পর্শে না থাকে তাহলে সে ব্যক্তির দীনদারীর কোনই ভ্যালু নেই। আমি সেই ভাইকে বললাম, দীনদারী দেখে তো বিবাহ দিয়েছেন, কিন্তু আলেম দেখে বিবাহ দেননি। আজকে যদি আলেম দেখে বিবাহ দিতেন, তাহলে কমপক্ষে সে আলেম জামাই মেয়ের সাথে দুর্ব্যবহার করুক আর সদ্ব্যবহার করুক অন্তত অযথা স্ত্রীকে তালাক দেয়ার কাজটা করতো না। আমরা যারা ভুল করেছিÑ আলেম হতে পারিনি, কিন্তু এখন নিজের ভবিষ্যত ভালো চাই, পরকালীন সফলতা চাই, ছেলে হোক, মেয়ে হোক অবশ্যই সন্তানদেরকে দীনদার বানাতে হবে। অদূর ভবিষ্যতে এমন এক কঠিন ও নাযুক সময় আসছে, যে সময় ঈমান-আমলের মাপকাঠিতে মাঝামাঝিরা টিকতে পারবে না। হয়তো এদিক হতে হবে, নয়তো ওদিক যেতে হবে। মাঝামাঝি থাকা কোনভাবেই চলবে না। অতএব আমরা যেন পাক্কা ঈমানদার ও পরহেযগার থাকতে পারি তার জন্য আমাদের সন্তানদেরকে দীনদার ও আলেম বানানো ছাড়া বিকল্প নেই।

এখন কথা হলো, আমরা তো সন্তানদেরকে আলেম বানানোর জন্য মাদরাসায় দিয়েছি, তারপরও দেখা যায়, কখনো সন্তান বিচ্যুত হয়ে যায়, ব্যর্থ হয়, দীনী প্রতিষ্ঠান থেকে লাইনচ্যুত হয়ে বিপথগামী হয়ে যায়। তো এর কারণ কী? সাধারণত যেসব কারণে দীনী প্রতিষ্ঠানে দেয়ার পরও সন্তান ব্যর্থ হয়, পিতা-মাতার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে নাÑ আমরা যেসব কারণের অল্প কিছু বলার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

এক.

অসৎ সঙ্গ থেকে নিরাপদ না রাখা।

অসৎ সঙ্গের সংস্পর্শ সন্তানকে দীনী লাইন থেকে বিচ্যুত করে দেয়। উলামায়ে কেরামের মাঝে একটি কথার প্রচলন আছে, ‘নতীজা আরযালের তাবে হয়’ অর্থাৎ ভালো আর মন্দ যখন একত্রিত হয়, তখন ফলাফল মন্দ হয়ে থাকে। আপনার সন্তান অসৎ লোকের সঙ্গে গিয়ে তাকে সৎ বানিয়ে দিবে এর চেয়ে বেশি আশঙ্কা হলো সে নিজেই অসৎ হয়ে যাবে। তাই সন্তানের জীবনে যেন অসৎ সঙ্গের সুযোগই না আসে সেদিকে অত্যন্ত সচেতনতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে।

দুই.

শরয়ী পর্দা পালনে শিথিলতা: সন্তান বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ থেকেই পর্দার বিধান পালনের প্রতি সচেষ্ট করে তোলা। এ ব্যাপারে সীমাহীন পর্যায়ের শিথিলতা হয়ে থাকে। অনেকেই মনে করে, আরে, এ-তো সেদিনের ছেলে তার কি আর পর্দা করতে হবে? কিংবা তার সঙ্গে কি আর পর্দা করতে হবে? এর ফলে চাচী, মামী, চাচাতো বোন, মামাতো বোন ও ফুফাতো বোন এদের সাথে পর্দার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সতর্ক থাকা হয় না। আর এতে ছেলে-মেয়ে উভয়ে খুব অল্প দিনেই লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এই পর্দাহীনতাও একপ্রকার অসৎ সঙ্গ। সন্তানকে এ থেকেও বাঁচাতে হবে।

তিন.

বিলাসী জীবন যাপনে অভ্যস্ত হওয়া: আগে তো শুধু অসচ্ছল পরিবারের সন্তানরা মাদরাসায় পড়তো। এখন তো মা-শা-আল্লাহ সচ্ছল পরিবারের সন্তানরাও পড়ছে। কিংবা যারা সন্তানদেরকে মাদরাসায় পড়াচ্ছেন তাদেরকে আল্লাহ পাক সচ্ছল করে দিচ্ছেন। যাই হোক, সম্পদের কারণে ইচ্ছা করলে থাকা-খাওয়া, চলাফেরায় উন্নত ইন্তিজাম করতে পারেন। কিন্তু আপনার খেয়াল রাখতে হবে, আমি তো আমার সন্তানকে আলেম বানাবো। তাকে তো মাদরাসায় থাকতে হবে। আপনার জীবনযাত্রায় যদি বিলাসিতা চলে আসে তাহলে এ সন্তান আর মাদরাসায় থাকবে না; থাকতে পারবেও না। সন্তানকে আপনি এসি রুমের ব্যবস্থা করে দিলেন, একটা গাড়ি কিনে দিলেন, খাওয়া-দাওয়া সবকিছুতেই প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশিতে অভ্যস্ত করে তুললেন, তাহলে সে মাদরাসায় এসে নিজেকে আর মানিয়ে নিতে পারবে না।

সে মাদরাসায় এসে পরের দিনই আপনাকে রিপোর্ট করবে, বাবা! এখানে এতো গরম! এতো মশা!! বাবা! তুমি বুঝতে পারবে না, এখানে যে কী পরিমাণ কষ্ট!!! রুম পরিবর্তন করে আরেক জায়গায় দিবেন সেখানেও থাকবে না; বলবে, এই সমস্যা, সেই সমস্যা। আবার বলবে, আজকে ভাতে পোকা পাওয়া গেছে, ইত্যাদি। পোকার বাহানায় সে ধীরে ধীরে বাসায় যাওয়ার পাকা ব্যবস্থা করবে, তখন আপনার আলেম বানানোর শখ আর তাকে দিয়ে পূরণ হবে না।

আমি এক ভাইয়ের বাড়িতে গেলাম। তিনি পাঁচতলা বাড়ির মালিক। বড় ব্যবসায়ী। অথচ দেখলাম, স্টিলের গøাসে, মেলামাইনের প্লেটে খাওয়া-দাওয়া করছেন। ঘরের অন্যান্য আসবাবও অতি সাধারণ। জিজ্ঞেস করলাম, এমনটি কেন? ততিনি বললেন, আমার সন্তানকে আমি মাদরাসায় পড়ানোর নিয়ত করেছি। আমি যদি এখন আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সবকিছুর ব্যবস্থা করি, তাহলে ছেলেকে আর মাদরাসায় ধরে রাখতে পারবো না। তার এই সতর্কচিন্তা ও চমৎকার কৌশল আমাকে যারপরনাই মুগ্ধ করেছিল।

আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন, দেশের অন্যতম বুযুর্গ ব্যক্তিত্ব হযরত প্রফেসর হামীদুর রহমান সাহেব। তিনি অতি সাধারণ জীবনযাত্রায় বিশ্বাসী। আমি দাওরায়ে হাদীস সমাপন করে যখন পাকিস্তানে লেখাপড়ার ইচ্ছা করি, তখন আমি হযরতের বুয়েট ক্যাম্পাসের বাসায় গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল, হযরতের বড় পুত্র মুফতী রিযওয়ানুর রহমান সাহেব থেকে কিছু পরামর্শ গ্রহণ করবো। বাসায় গিয়ে দেখলাম, উনার ড্রয়িংরুমে চৌকি তো আছে, কিন্তু বিছানা নেই। আমি খুব অবাক হলাম। বুয়েটের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তির বাসার একি অবস্থা! আমার জানামতে এখনো পর্যন্ত প্রফেসর হযরতের জীবনযাত্রা তেমনি আছে। অথচ তিনি চাইলে এরচেয়ে অনেক উন্নত ও শানদার ব্যবস্থা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সাদাসিধে অতি সাধারণ জীবনযাপন বেছে নিয়েছেন। এটা ছিলো সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত এবং এটাকে বলা হয়, মুজাহাদায়ে ইখতিয়ারী বা স্বেচ্ছায় কষ্টাবলম্বন। উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য হলো, সন্তানদেরকে তিনি আলেম বানাবেন, সন্তানরা যেন স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। আল্লাহ তা‘আলা তার ইচ্ছাকেও তেমনি পূরণ করেছেন।

সন্তানের জন্য আপনাকেও আপনার জীবনযাত্রায় অতি সাধারণ অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। আর যেখানেই দেখবেন সন্তানের উচ্চাকাক্সক্ষা, আয়েশী চলাফেরার তামান্না সেখানেই তাকে ব্রেক দিতে হবে। বলতে হবে, দুনিয়ায় আমরা এতোটা আয়েশ করতে চাই না, এতোটা উন্নত জীবনের প্রয়োজন নেই আমাদের। এর বিপরীতে আপনার সামর্থ্য আছে বিধায় আপনি সন্তানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে আবদার করলেন, হুযূর! আমার ছেলের জন্য একটা এক্সট্রা রুম ব্যবস্থা করা যাবে? 

আমাদের প্রতিষ্ঠানে একবার এক ভাই নিজ সন্তানের জন্য প্রস্তাব করেছিলেন যে, হুযূর! আমাকে একটা রুম করে দেয়ার সুযোগ করে দেন। আমার ছেলের লেখাপড়া যখন শেষ হবে তখন সেই রুম ও জায়গা আপনাদের হয়ে যাবে। আমাদের মাদরাসা কর্তৃপক্ষ মুরুব্বিয়ানে কেরাম অভিভাবকের সে প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। কারণ এমনটি হলে তার সন্তান আলেম হতে পারতো না।

আর অনেকে আছে এ ধরণের পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পেরে বাসায় আলাদা শিক্ষক রেখেÑ দারুল উলূম দেওবন্দের সূচনা যেমন একজন উস্তাদ ও একজন ছাত্র দ্বারা হয়েছিল তেমনিÑ স্বপ্ন দেখেন যে, এই পদ্ধতিতে ছেলেকে আলেম বানাবেন। অর্থাৎ একজন হাফেয  রেখে দিবেন, যিনি তার ছেলেকে একা একা পড়িয়ে হাফেয বানিয়ে দিবেন। তারপর একজন মাওলানা সাহেব রাখবেন, তিনিও তাকে পড়াতে পড়াতে মাওলানা বানিয়ে দিবেন। এটা অসম্ভব ব্যাপার; এ রকম সাধারণত হয় না। প্রবাদ আছে, ‘তোলা দুধে পোলা বাঁচে না।’ তেমনি ঘরে পড়িয়ে হাফেয-আলেম হয় না। হয়ে গেলে ভিন্ন কথা। হযরত প্রফেসর হামীদুর রহমান সাহেব দা.বা.-ও সন্তানদের পড়াশোনার প্রথমদিকে এরকম খেয়াল করেছিলেন যে, বাসায় একজন হাফেয সাহেব রেখে ছেলেকে হাফেয বানাবেন। তার এই ইচ্ছা একজন আলেমকে জানালে তিনি তাকে বলেছিলেন, ‘আপনারা সব কামে সমাজ বোঝেন, কিন্তু এ ব্যাপারে সমাজ বোঝেন না কেন?’ অর্থাৎ আর দশজনের সঙ্গে মিলেমিশে একজন তালিবে ইলম যে মান ও পরিমাণের পড়াশোনা করতে পারবে, গৃহিশিক্ষক রেখে একাকী পড়িয়ে সেটা কল্পনাও করা যায় না।  এজন্য এ ব্যাপারটিও ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

চার.

সন্তানের হাতে টাকা-পয়সা দেয়া: শিক্ষার্থী সন্তানের হাতে টাকা-পয়সা দেয়ার পরিবর্তে আপনি নিজে তার প্রয়োজন পুরো করে দেন। খাবার-দাবার, ফল-মূল, ভালোমন্দ যা কিছু দরকার, কষ্টকর হলেও আপনি নিজে কিংবা কারো মাধ্যমে সেগুলোর ব্যবস্থা করে দিন। তবুও সন্তানের হাতে অতিরিক্ত টাকা-পয়সা দেয়া যাবে না। এটা তার বিপথে যাওয়ার অন্যতম কারণ। প্রয়োজনে আপনি তার জরুরত পুরা করার প্রয়োজনীয় টাকাটা তার উস্তাদের কাছে রেখে আসুন, তা-ও সন্তানের হাতে সরাসরি টাকা-পয়সা দেয়া যাবে না।

পাঁচ.

দীনী পরিবার নয় এমন আত্মীয়-স্বজনের সাথে সন্তানকে মিশতে দেয়া: ইতোপূর্বেও আমাদের উস্তাদ হযরতুল আল্লাম মুফতী ইবরাহীম হাসান দা.বা. বলেছেন, সন্তানকে আলেম বানানোর জন্য আত্মীয়-স্বজনও দীনদার হতে হবে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের চাচা-চাচী, মামা-মামী, খালা-খালু, ভগ্নীপতি প্রমুখ আত্মীয়-স্বজন দীনদার নন। তো সন্তানকে এদের সাথে ঢালাওভাবে মিশতে দিলে ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে আনবে। গতকাল এক ভাইয়ের সাথে কথা হলো। তিনি তার মেয়েকে মাদরাসায় দিয়েছেন দীনদার বানানোর জন্য। কিছুদিন পর কানাডা প্রবাসী তার এক ভাই বাচ্চাকাচ্চাসহ তার বাড়িতে এসে ওঠে। দেশে থাকার জন্যই এসেছিলেন, কিন্তু সুবিধা মনে হয়নি; তিনি ছেলে-মেয়েসহ কানাডা চলে গেছেন। ইতোমধ্যে মাদরাসায় মেয়ে দেয়া ভাইটার এই ‘উপকার’ হয়েছে যে, তার ঐ এগারো বছর বয়সী মেয়েটার মাদরাসা ছুটে গেছে। সে মাত্র এই অল্প কয়েকদিন দীনহীন চাচাত ভাই-বোনের সঙ্গে মিশেছে। ব্যস, সে আর মাদরাসায় যাবে না। কোনভাবেই ঐ ভাইটি তার মেয়েকে আর মাদরাসায় দিতে পারেননি। মেয়েটি এই কয়দিনেই আমূল বদলে গেছে। বদদীন আত্মীয়-স্বজনের সাথে সন্তানকে অবাধে মিশতে দেয়া যে কতোটা খতরনাক হয় এ থেকে বুঝে নিন।

হ্যাঁ, আত্মীয়-স্বজন থাকলে তো তাদের সাথে আসা-যাওয়া করতে হয়, আত্মীয়তা রক্ষা করতে হয়। যদিও হযরত ইবরাহীম হাসান সাহেব দা.বা. বলেছেন, এ ধরণের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মেলামেশা না করাটাই শরীয়তের কাম্য। কিন্তু তারপরও কখনো অপারগ হয়ে মিশতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে পড়লে আপনার সন্তানকে একা কখনোই সেখানে পাঠাবেন না। আপনি সঙ্গে যাবেন এবং যতোক্ষণ সেখানে থাকবেন কোনভাবেই ওকে তাদের সঙ্গে একাকী মিশতে দিবেন না, মতবিনিময় করতে দিবেন না। আপনি দেখাবেন যে, আপনি তাকে আদর করে হাতছাড়া করছেন না। কিন্তু আপনার উদ্দেশ্য হবে, তাকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করছেন বা কন্ট্রোল করছেন। বিষয়টা খুবই গুরুত্বের দাবী রাখে। এটাকে হালকা মনে করলে আপনার সন্তান হাতছাড়া হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।

ছয়.

ঘরে পেপার-পত্রিকা রাখা: আমরা তো সাধারণত পত্রিকার প্রধান প্রধান শিরোনাম ও আন্তর্জাতিক পাতায় একটু নজর বুলাই। মুসলিমরা কোথায় কোথায় নির্যাতিত হচ্ছে ইত্যাদি জরুরী বিষয়গুলো শুধু একনজর দেখি। দশ-বারো মিনিটে আমাদের পত্রিকা দেখা শেষ। বিজ্ঞাপন, বিনোদন পাতা, যেখানে মেয়েদের ছবি থাকে, সেগুলো আলহামদুলিল্লাহ আমাদের কখনোই দেখা হয় না বা আমরা দেখি না। কিন্তু আপনি যদি সেই পত্রিকাটা বাসায় নিয়ে যান তাহলে আপনার সন্তান কিন্তু শুধু সেই বিজ্ঞাপন, বিনোদন পাতা ও লাইফস্টাইলের পাতাটিই দেখবে। কারণ, তার আগ্রহই হচ্ছে বিজ্ঞাপন আর বিনোদন পাতা। আমরা তো বলি, সন্তানের মা-ও যেন পত্রিকা না পড়ে। তারও দুনিয়াদারী সম্পর্কে এতো জানার প্রয়োজন নেই। আপনার স্ত্রী বলতে পারে, এতায়াতীরা টঙ্গীতে আমাদের ছাত্রদের উপর এতো বড় হামলা করলো, পত্রিকায় কতো ছবি ছাপা হল, আপনি তো ঘরে একটা পত্রিকাও আনলেন না? একটা পত্রিকা হলে তো আমরাও এক-আধটু জানতে পারতাম! তো এক্ষেত্রে আপনাকে বলতে হবে যে, দরকার নেই, আমরা দেখেছি তাতেই হবে, প্রয়োজনে আমার মুখে শুনে নাও; তবুও তোমাদের পত্রিকা দেখার দরকার নেই। নিয়মিত বাসায় পত্রিকা রাখার তো প্রশ্নই ওঠে না। এমনকি মাঝে-মধ্যেও এসব পত্রিকা ঘরে না রাখা উচিত। দীনী পত্রিকা, যেগুলোতে ছবি নেই বা মুরুব্বীগণ যেসব কিতাব-পুস্তক পড়ার পরামর্শ দেন, সেগুলো ঘরে রাখবো। সন্তান যদি গল্প-উপন্যাসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে তাহলে এতেও সন্তানের দীনদারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সাত.

দীনী শিক্ষার পাশাপাশি জেনারেল শিক্ষার সার্টিফিকেট অর্জন করা: অনেক অভিভাবক মনে করে, আমি জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত, তো ছেলেটাকেও এমন একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করি, যেখানে সে স্বাভাবিক পড়াশোনার পাশাপাশি এসএসসি বা আলিয়াও পরীক্ষা দিতে পারবে। মনে রাখবেন, সে যদি এসএসসি বা আলিয়ায় পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেয়ে যায় তাহলে তাকে আর আপনি মুহাক্কিক ও বা-আমল আলেম বানাতে পারবেন না। সে কিন্তু তখন এই রাস্তা থেকে ওই রাস্তায় চলে যাবে।

এক তালিবে ইলমকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই-বোন কতজন? বললো, তিনজন। কে কী করছে? বললো, দুই ভাই মাদরাসায় আর এক ভাই কলেজে সাইন্স নিয়ে পড়ছে। খটকা লাগল, দুই ভাই মাদরাসায় আর এক ভাই সাইন্স পড়ছে? খোঁজ নিয়ে জানলাম, সেই ভাইটিও মাদরাসায় পড়তো। কিন্তু কোন এক মাদরাসায় পড়াকালীন গোপনে গোপনে আলিয়ায় পরীক্ষা দিয়েছিলো। তখন স্পষ্ট হয়ে গেলো, মাদরাসা লাইন বাদ দিয়ে কেন সে এখন সাইন্স নিয়ে পড়ছে। আপনি নিশ্চিত হতে পারেন, আপনার সন্তান যদি এ জাতীয় কোন পরীক্ষার সুযোগ পেয়ে যায় তাহলে সে আর এই লাইনে থাকবে না। সে তখন আল্লাহর গোলামীর পরিবর্তে সরকার আর মানুষের গোলামী করতে পারাকেই নিজের সফলতা মনে করবে। এ কারণে আপনি ধরে নিতে পারেন যে, সন্তানকে কওমীর পাশাপাশি স্কুলে বা আলিয়ায় পরীক্ষার ব্যবস্থা করলে সে নিশ্চিত লাইনচ্যুত হয়ে যাবে।

আট.

ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষার মাধ্যমে সন্তানদের পরস্পরে বিভক্ত করে রাখা: অর্থাৎ এক সন্তানকে জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত করা আর অন্য সন্তানকে দীন শিক্ষায় নিয়োজিত করা। এক্ষেত্রে যে সন্তানটি দীন শিখছে সে জেনারেল শিক্ষারত সন্তানের প্রভাবে লাইনচ্যুত হয়ে যাবে। সর্বদা সে হীনম্মন্যতায় ভুগবে। একসময় দীন-দুনিয়া কোন শিক্ষাই তার অর্জিত হবে না। এক সন্তানকে ডাক্তার, একজনকে ইঞ্জিনিয়ার, একজনকে প্রফেসর, একজনকে মাওলানা বানানোর স্বপ্ন দেখলে হয়তো আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা প্রফেসর বানাতে পারবেন; কিন্তু তাদের মধ্য থেকে এক সন্তানকে মাওলানা বানানো সম্ভবপর নয়। যদি সন্তানকে আলেম বানাতে চান তাহলে সব সন্তানকেই দীন শিক্ষা করার জন্য দিতে হবে; কোন তারতম্য করা যাবে না। অনেকে ছেলেদেরকে মাদরাসায় দিয়ে দেয়; কিন্তু মেয়েটাকে আলিয়া কিংবা স্কুল-কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়। তারা মনে করে, মেয়েকে বিবাহ-শাদী দিতে হবে, কিছু লেখাপড়া না করালে কিভাবে হবে? এতে অসুবিধা কোথায়! আমার মেয়ে তো পর্দা করেই যাওয়া-আসা করবে! কিন্তু স্কুল-কলেজে গিয়ে মেয়ে যে কতোটা ‘বুঝমান’ হয়ে যাবে এবং তার মনমানসিকতা কতোটা বদলে যাবে আপনি তা কল্পনাও করতে পারবেন না। বোরকা পরিহিত অবস্থায়ই সে এতোটা দূরে চলে যাবে যে, আপনি আর তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন না।

পিতা-মাতারা সাধারণত সন্তানের প্রতি অতি সুধারণা রাখে। তারা মনে করেÑ আজকাল কতো মেয়েরা ‘বয়ফ্রেন্ড’ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, ছেলেদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখে; কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ! আমার মেয়েটা এসবের মধ্যে নেই! এসব বলে বলে গর্ব করে আর তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। সময় হলে দেখা যায়, বাবা-মা মেয়ের বিবাহের জন্য যে ছেলেরই প্রস্তাব আনে, মেয়ে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কৌশলে এড়িয়ে যায়। বাবা জিজ্ঞেস করে, তোর কোন পছন্দ থাকলে বল্? মেয়ে তখন দারুণ এক কূটিল জবাব দেয়Ñ আমার কোন পছন্দ থাকলে কি আর তোমাদেরকে শেয়ার করা ছাড়া থাকবো? পাত্র খুঁজতে খুঁজতে একপর্যায়ে বাবা-মা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, দেখা যায় কোন এক দুপুরে  মেয়ে এসে বাবাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেÑ আব্বু! ওঠো! ওঠো...! হতচকিত বাবা চেয়ে দেখে মেয়ের পাশে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সংকোচহীন মেয়ে বলে ওঠে, বাবা! তুমিতো অনেক সম্বন্ধ আনলা, কোনটাই তো মিল খেলো না; এর সাথে তুমি একটু কথা বলে দেখো তো, পছন্দ হয় কিনা? তার মানে এই ছেলের সাথে তার অনেক আগে থেকেই সম্পর্ক। কিন্তু বাবার কাছে এতোটাই গোপন রেখেছে যে, বাবা মনে করতোÑ আমার মেয়ে তো নিষ্পাপ, বোরকা পরে আসা-যাওয়া করে, তাকে কিভাবে ছেলেরা চিনবে? যার গায়ে রোদ লাগে না, তার পেছনে ছেলে লাগবে কি করে? অথচ সে বোরকার আড়ালে বহু আগে থেকেই ছেলে পুষতো। অবশেষে বাবা-মা হতভম্ব হয়ে যায়, বেকুব বনে যায়।

এক বাবার কথা জানি, এ অবস্থার শিকার হয়ে স্ট্রোক করেছে। সন্তানকেও বয়কট করেছে। কিন্তু অসময়ের এই বয়কটে লাভ কী হবে? সন্তানের মা বলে,  যেভাবেই হোক, যার দোষেই হোক, পরিস্থিতি যখন হাতছাড়া হয়েই গেছে, সম্পর্ক যখন করেই ফেলেছে, তো বিবাহটা দিয়ে দিইÑ অন্তত সামাজিক সম্মানটা রক্ষা পাক। মামারা বলে, কী আর করা, তোমরা বিবাহ দিয়ে দাও। কিন্তু অভিমান কতোদিন ধরে রাখা যায়? প্রবাদ আছে, পানি কাটলে ভাগ করা যায় না। সন্তান তো ঔরসজাত, তাকে আলাদা করে পিতা-মাতা কিভাবে থাকবে?

সুতরাং এই ব্যাপারে খুব খেয়াল রাখতে হবে যে, সন্তানদেরকে যদি দীনের আলেম বানাতে চান তাহলে তাদেরকে দুই জাতীয় শিক্ষালয়ে দিয়ে ভাগ করা যাবে না। সকল সন্তানকে একই দীনী লাইনে দিতে হবে।

নয়.

পিতা-মাতার আপোসের বিরোধ সন্তানদের সামনে প্রকাশ করা:

কোন বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ হতেই পারে। একজন সহজ স্বভাবের আর একজন রুক্ষ মেজাযের, একজন খুবই সচেতন অপরজন ঠিক ততোটাই গাফেল। এসব কারণে প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই কিছুটা অমিল হতে পারে। তাই বলে, সেটা সন্তানের সামনে দৃশ্যমান হতে পারবে না। ওদের সামনে বাক-বিতÐায় লিপ্ত হওয়া যাবে না। আর সন্তানের পড়ালেখার ব্যাপারে পিতা-মাতার দু’রকম সিদ্ধান্ত হতে পারবে না। একজন চায় আলেম বানাতে, অপরজন চায় ভিন্ন কিছু। কিংবা সন্তান অপরাধ করে বাবার কাছে প্রশ্রয় পায় আর মায়ের হাতে মার খায়। সন্তানের সামনে যদি পিতা-মাতার এমন বিরোধ লেগেই থাকে তাহলে সে সন্তানকে আলেম কেনো সাধারণ মানুষও বানানো সম্ভবপর নয়।

দশ.

পিতা-মাতার অতি ব্যস্ততা: সন্তান আলেমরূপে গড়ে না ওঠার এটাও অন্যতম কারণ যে, পিতা-মাতা এতো বেশি ব্যস্ত যে, সন্তানের জন্য চিন্তা-ফিকির করার সুযোগই তার নেই। আচ্ছা, আপনার এতো ব্যস্ততা কিসের জন্য? ছেলে-মেয়ের সচ্ছল ভবিষ্যতের জন্যই তো! তাহলে সন্তানের জন্য চিন্তা-ফিকির করার প্রতিবন্ধক যে ব্যস্ততাÑ আপনি তা কমিয়ে দিনÑ এতে আপনার সম্পদ জমানোয় ক্ষতি হলে হোক, সম্পদ কিছুটা কম আসলে কমই আসুক। আপনাকে মনে রাখতে হবে, সন্তান ও সম্পদ এ দু’টোর মধ্যে সন্তানই আপনার ভবিষ্যতের জন্য অধিক উপকারী এবং  বেশি দামী। তাই সন্তানের পড়ালেখার খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে যদি আপনার কোন ডিগ্রী অর্জন বাদ দিতে হয় অথবা অফিসের অতিরিক্ত ডিউটি বাদ দিতে হয়, দিবেন; তবুও সন্তানের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ ও নজরদারী নিশ্চিত করুন।

এক্ষেত্রেও আবার আমাদের সেই প্রফেসর হযরত হামীদুর রহমান সাহেবের দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে হয়। হযরতের বড় পুত্র মুফতী রিযওয়ানুর রহমান সাহেব যখন হিফযুল কুরআন বিভাগে পড়েন, তখন প্রফেসর হযরতের লন্ডন থেকে উচ্চ ডিগ্রী অর্জনের সুযোগ আসে। কিন্তু তিনি সেই উচ্চ ডিগ্রীর হাতছানি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য লন্ডন যাওয়া বাদ দিলেন। সময় দিলেন সন্তানদের। যার ফলে হযরতের সবগুলো সন্তান আজ যোগ্য ও প্রতিষ্ঠিত আলেমে দীন। আপনার যদি তামান্না থাকে যে, সন্তান ভালো আলেম হোক, হাফেযে কুরআন হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করুক, তাহলে এমন কোন ব্যস্ততা, যার জন্য আপনার সন্তানের দেখ-ভালের কমতি আসে সেটা আপনাকে অবশ্যই বাদ দিতে হবে। আপনার দুনিয়াবী ক্ষতি হোক, কিন্তু আখেরাতের যেন কোন ক্ষতি না হয়, সম্পদের ক্ষতি হোক, কিন্তু সন্তানের যেন কোন ক্ষতি না হয়।

এগারো.

পারিবারিক প্রোগামগুলোর দিন-ক্ষণ নির্ধারণে তালিবে ইলম সন্তানের পড়াশোনাকে অগ্রাধিকার না দেয়া:

আরেকটি বিষয় বলতে চাচ্ছি তা হচ্ছে, আগে আপনার পরিপূর্ণ দীনী বুঝ ছিলো না, ফলে এক সন্তানকে জেনারেল শিক্ষায় দিয়েছেন। এখন দীনের সমঝ্ এসেছে, তো আরেক সন্তানকে মাদরাসায় দিয়েছেন। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, কোনভাবেই যেন আপনার মাদরাসা পড়–য়া সন্তানটি অবহেলার শিকার না হয়। সর্বক্ষেত্রে স্কুল পড়–য়া সন্তানের চেয়ে মাদরাসা পড়–য়া সন্তানটিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মনে করুন, মেয়ের বিবাহের তারিখ ঠিক করবেন, তো সেটা যেন যে সন্তানটি মাদরাসায় পড়ছে তার ক্লাস চলাকালীন কোনভাবেই না পড়ে। একান্ত যদি কোনভাবেই ওর ছুটির সময় মিলানো সম্ভবপর না হয় তাহলে এই প্রোগ্রামের কথা সন্তানকে জানতেই দিবেন না। বিবাহের দিন যদি আপনার আত্মীয়পক্ষ জিজ্ঞেস করেই বসেÑ আপনার সেই সন্তানটি কোথায়? তখন উঁচু গলায় বলে দিবেন, ‘ওর মাদরাসা খোলা যাচ্ছে, সবক বন্ধ রেখে ওকে আনা যাবে না।’ তাহলে দেখবেন, আপনার সন্তানের দিল বড় হবে। ঐ আত্মীয়-স্বজনের অন্তরে আপনার ও আপনার সন্তানের প্রতি আলাদা শ্রদ্ধা পয়দা হবে।

বারো.

উপস্থিত হওয়া সমীচীন নয় এমন দাওয়াতেও সন্তানকে নিয়ে যাওয়া:

অনেক সময় এমন হয় যে, কোন বিশেষ প্রোগ্রামে বাধ্য হয়ে নিজেকে শরীক রাখতে হয়, তাহলে কোনভাবেই সেখানে সন্তানকে নিবেন না। শুধু আপনি হাজিরা দিয়ে প্রয়োজন সেরে চলে আসবেন।

আসলে এক্ষেত্রে দেখা যায়, আপনাকে যিনি দাওয়াত দিয়েছেন তিনি তো দীনদার, কিন্তু তিনি আরো অন্যান্য যাদেরকে দাওয়াত দিয়েছেন তারা সবাই দীনদার নয়। এমতাবস্থায় কোনভাবেই আপনার সেখানে যাওয়া উচিত হবে না। সন্তানের যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।

আমার মনে আছে, আমি যখন করাচিতে পড়াশোনা করি, তখন শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী দা.বা.-এর বড় পুত্রের আকদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। বিবাহের ওলীমার জন্য বিশাল মাঠে বড় বড় দু’টো পার্টিসেন্টার ভাড়া করা হয়। একটা সম্পূর্ণরূপে মেয়েদের জন্য, আর আরেকটা পুরুষদের জন্য। যথার্থ সুন্দর ব্যবস্থা, পর্দা-পুশিদার বিন্দুমাত্র কমতি নেই। অনুষ্ঠানে অনেক বড় বড় ব্যক্তিদেরও দাওয়াত দেয়া হয়েছে। ডক্টর ওয়াহবাহ আব্দুস সাত্তার যুহালী, শাইখ আবূ গুদ্দাহর মতো পৃথিবী বিখ্যাত আলেমগণও উপস্থিত হয়েছেন। আমাদের বিভাগীয় যিম্মাদার ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ সাহেব। তিনি অনুষ্ঠান থেকে এসে বললেন, ব্যবস্থাপনা তো পুরুষ ও মহিলাদের আলাদাই করা হয়েছে, কিন্তু আমাদের পুরুষদের সামিয়ানার সামনে দেখলাম একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি, সে-তো ছেলে না; দিব্যি এক মেয়ে! এটাকেই তিনি তার মতো করে বলেছিলেনÑ

ہم نے تو سمجھا تھا یہ ایک لڑکا ہے لیکن اچھی طرح دیکھا تو وہ ایک لڑکی ہے۔

তো দেখুন! এটা হলো শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী দা.বা.-এর ছেলের ওলীমার ঘটনা। আপনি বর্তমান যামানায় এর চেয়ে বড় আর কোন বুযুর্গ-পুত্রের ওলীমায় যাবেন? আপনি যেখানে যাবেন সে ওলীমায় তো এমন অনেক মেহমান আগমন করবেন, যাদের ব্যাপারে আপনি তো মনে করবেন তারা পুরুষ, কিন্তু মূলত তারা মহিলা।

তাই এসব অনুষ্ঠানে গিয়ে নিশ্চিতভাবেই এমন পরিস্থিতির স্বীকার হতে হবে। তাই আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে বুঝাতে হবে, এসব অনুষ্ঠান তোমার জন্য ক্ষতিকর। আমরা কেবল বাধ্য হয়ে তাতে যাচ্ছি। তোমাদের যাওয়া মোটেও উচিত হবে না।

তেরো. 

অভিভাবকের হারাম উপার্জন: 

অনেক সময় দেখা যায়, সব কিছু ঠিক আছে, কিন্তু সন্তান পড়াশোনায় মনোযোগী হচ্ছে না। বহু চেষ্টা-সাধনা করেও শেষ পর্যন্ত তাকে দীনী প্রতিষ্ঠানে রাখা যাচ্ছে না; মাঝপথেই ঝরে যাচ্ছে অথবা কোনমতে পড়াশোনা শেষ করলেও দীনদার পরহেযগার হয়ে উঠছে না। এদিকে উস্তাদ, অভিভাবক সবাই মিলেও এর কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। উলামায়ে কেরাম বলেছেন, এটা অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকের হারাম উপার্জনের মন্দপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হয়ে থাকে। হাদীস শরীফে এসেছে, যে শরীর হারাম উপার্জন দ্বারা প্রতিপালিত হয়, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তো পিতার  বা অভিভাবকের হারাম উপার্জনের গোনাহ বা দায় যদিও সন্তান বা পোষ্যের ওপর বর্তায় না, কিন্তু এর অন্তর্নিহিত মন্দ প্রভাব থেকেও সে রক্ষা পায় না। এজন্য অভিভাবকের কর্তব্য হল, সন্তানকে আলেম বানাতে চাইলে নিজ আয়-উপার্জন হালাল ও বৈধ রাখা। অন্তত তালিবে ইলম সন্তানের ব্যয়নির্বাহ হালাল মাল দ্বারা সম্পন্ন করা।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে কবুল করুন এবং আমাদের সন্তানদেরকে দীনদার, পরহেযগার ও আলেমে বা-আমল দেখার তাওফীক দান করুন। আমীন।


অনুলিখন : মুফতী আব্দুল হান্নান হাবীব


মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

ভিডিও গেমসঃ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে শিশুদের?

...

মাওলানা মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম
১০ নভেম্বর, ২০২৪
২০২২ বার দেখা হয়েছে

সোশ্যাল মিডিয়া, নাস্তিক্যবাদ ও আমাদের করণীয়

...

শাঈখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী
১০ নভেম্বর, ২০২৪
২৯১১ বার দেখা হয়েছে

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →

মুফতী আতীকুল্লাহ

মাওলানা আইনুল হক ক্বাসেমি

মাওলানা মাসরূর বিন মনযূর

হযরত মাওলানা ইদরীস কান্ধলবী রাহ.

শাইখুল হাদীস যাকারিয়া কান্ধলভী রহ.

আল্লামা ইউসুফ বানুরী রহঃ

মাওলানা মীযান হারুন

আল্লামা আনওয়ার জুনদী রহঃ

মাওঃ আসজাদ কাসেমী

আল্লামা সায়্যিদ সুলাইমান নদবী রহ.

ডঃ নজীব কাসেমী

আল্লামা আতাউল্লাহ শাহ বুখারী রহঃ

মুহাদ্দিছুল আসর আল্লামা হাবীবুর রহমান আ'যমী রহঃ

মাওলানা মুহাম্মাদ আনওয়ার হুসাইন

মাওলানা মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

আল্লামা সাঈদ আহমাদ পালনপুরী রহঃ

শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহঃ

মুফতী শুআইবুল্লাহ খান দাঃ

আল্লামা আব্দুর রাযযাক ইস্কান্দার রহঃ

আল্লামা ডঃ মুহাম্মাদ হামীদুল্লাহ্‌ রহঃ