আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

স্বামীর জন্য তার স্ত্রী থেকে সর্বোচ্চ কতদিন দূরে থাকতে পারবে?

প্রশ্নঃ ৯৭২৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হযরত মুফতী সাহেব, আমি একটা মাদ্রাসায় খেদমত করি, এই মাদ্রাসার নিয়ম হল এক বন্ধ থেকে আরেক বন্ধ পর্যন্ত কোন হুজুর ছুটি কাটাতে পারবে না৷ এই হিসেবে একজন শিক্ষকের আড়াই থেকে তিন মাস কোন কোন সময় সাড়ে তিন মাস পর্যন্ত হয়ে যায় তারা নিজ স্ত্রী সন্তানের কাছে যেতে পারে না৷ এখন আমার প্রশ্ন হলো একজন স্বামী তার স্ত্রীর কাছে তার হক আদায় করার জন্য কত দিন পরে যাওয়া ওয়াজিব সুন্নাত বা মুস্তাহাব? দ্বিতীয় প্রশ্ন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ যে আইন করেছে এটা কি জুলুম হবে কিনা? কারণ একজন স্বামী স্ত্রী সাধারণত বর্তমান সময়ে এক মাসের চেয়ে বেশি সময় আলাদা থাকাটা তাদের উভয় জনের জন্য চরম কষ্টকর। এবং তারা উভয়ে জনে যৌনকষ্ট সহ্য করে৷ উল্লেখ্য এখান থেকে আমি বিদায় নিয়ে চলে গেলেও ওপর যে আসবে তার উপর এই আদেশ থাকবে৷ তৃতীয়তঃ আল্লাহ না করুক যদি কেহ অন্য কোন গুনাহ জড়িয়ে পড়ে তাহলে তার পাশাপাশি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে কিনা? দয়া করে দলিল প্রমান সহ সমাধান দিলে উপকৃত হব। আল্লাহ আপনার ইলেমে আমলে বরকত দান করুক।

২৪ জুন, ২০২৪
ঢাকা ১২১৬

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


(১) একজন স্বামীর জন্য তার স্ত্রী থেকে চার মাসের অধিক সময় দূরে থাকা শরিয়তসম্মত নয়। আলামা ইবনে আবিদিন শামি রহ. চার মাসের ভিতর কমপক্ষে একবার স্ত্রীর সাথে সহবাস করা ওয়াজিব। তা বর্ণনা করতে গিয়ে উমর রাযি এর নিম্নোক্ত নির্দেশনামা উল্লেখ করে লিখেন,
وَيُؤَيِّدُ ذَلِكَ أَنَّ عُمَرَ - رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ - لَمَّا سَمِعَ فِي اللَّيْلِ امْرَأَةً تَقُولُ: فَوَاَللَّهِ لَوْلَا اللَّهُ تُخْشَى عَوَاقِبُهُ لَزُحْزِحَ مِنْ هَذَا السَّرِيرِ جَوَانِبُهُ فَسَأَلَ عَنْهَا فَإِذَا زَوْجُهَا فِي الْجِهَادِ، فَسَأَلَ بِنْتَه حَفْصَةَ: كَمْ تَصْبِرُ الْمَرْأَةُ عَنْ الرَّجُلِ: فَقَالَتْ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ، فَأَمَرَ أُمَرَاءَ الْأَجْنَادِ أَنْ لَا يَتَخَلَّفَ الْمُتَزَوِّجُ عَنْ أَهْلِهِ أَكْثَرَ مِنْهَا، وَلَوْ لَمْ يَكُنْ فِي هَذِهِ الْمُدَّةِ زِيَادَةُ مُضَارَّةٍ بِهَا لَمَا شَرَعَ اللَّهُ تَعَالَى الْفِرَاقَ بِالْإِيلَاءِ فِيهَا.
অনুবাদঃউমর রাযি রাত্রে একদিন এক মহিলাকে বিরহের কবিতা গাইতে শুনলেন,যে কবিতার মাধ্যমে সে বলতেছিলো-

"আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহর শাস্তির ভয় না থাকতো,

তাহলে এখন আমার খাটের চারপাশ প্রকম্পিত হতো"

উমর রাযি ঐ মহিলাকে তার স্বামী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন,তখন ঐ মহিলা জানালো যে তার স্বামী বর্তমানে জিহাদে আছে,তখন উমর রাযি উনার মেয়ে হাফসা রাযি কে জিজ্ঞাসা করলেন,একজন মহিলা স্বামী ব্যতীত কতদিন পর্যন্ত সবর করতে পারে?হাফসা রাযি বললেনঃ চার মাস।এর পর সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের কাছে সংবাদ প্রেরণ করলেন,কোনো বিবাহিত মুজাহিদ সেনা যেন চার মাসের বেশী সময় নিজ পরিবার(স্ত্রী) থেকে দূরে না থাকে।

তবে কেউ যদি প্রয়োজনে এরচেয়ে বেশি সময় দূরে থাকতে চায় তাহলে তার স্ত্রী থেকে অনুমতি নিতে হবে। স্ত্রী যদি অনুমতি দেয় এবং এ সময়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে এবং বাস্তবেও তেমনটি দেখা যায় তাহলে স্বামী এরচেয়েও বেশি সময় দূরে থাকতে পারবে।

উল্লেখ্য, যদি স্ত্রী থেকে দূরে থাকার কারণে স্বামী বা স্ত্রী কোনো গুনাহে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে চার মাসের কম সময়ও স্ত্রী থেকে দূরে থাকতে পারবে না।

(২) মাদরাসা কর্তৃপক্ষের এই আইনকে শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে জুলুম বলা না গেলেও নৈতিক, মানবিক এবং পারিপার্শিক দিক বিচেনা করে বিষয়টি নিয়ে তারা আরো ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কেননা এখানে যারা কর্মরত তারাও মানুষ। তাদেরও শারীরিক, যৌবিক কিছু চাহিদা আছে। আছে পরিবার, বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান। সাথে সাথে ভাবতে হবে বর্তমান সময়ের কথাও। সময়ের এই ক্রান্তিকালেও যারা নিজেদের একান্ত দ্বিনের খেদমতে নিয়োজিত করেছেন কঠোরতার পরিবর্তে তারা কোমালতা পাওয়ার অধিক হকদার। তবে সর্বত্র নিয়মনীতির পাবন্দ হওয়া আবশ্যক।

(৩) আপনার বর্ণনামতে দুই ছুটির মাঝে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন মাসের দূরত্ব হয়। সেহিসেবে শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত জুলুমের সীমার মধ্যে পড়ে না। আর বিষয়টিকে যদি জুলুমের পর্যায়েও গণ্য করা হয় তবুও অন্যের গুনাহের দায়ভার তাদের ওপর বর্তাবে কেন? বা তারা জবাবদিহিতার আওতাভূক্ত হবে ন কেন? বরং এখানে সকলেই স্বাধীন।

তাছাড়া মাদরাসা কর্তৃপক্ষ কি কাউকে ওই শর্ত মেনে সেখানে খেদমাত করতে বাধ্য করেছে? নিশ্চয়ই না!! কাজেই তাদের শর্ত মেনে যারা থাকতে পারবে তারাই সেখানে থাকবে। অন্যদের সেখানে থেকে অযথা কষ্ট ভোগ করা, নিজের ইমান-আমল নষ্ট করা অর্থহীন। সুতরাং আপনার জন্য পরামর্শ থাকবে ভিন্ন কোনো কিছু চিন্তা করা। কারণে গুনাহে লিপ্ত হয়ে দ্বিনের কাজ করা দ্বিন নয়। বরং যেখানে গেলে গুনাহমুক্ত থাকা যাবে সম্ভব হলে সেখানে গিয়ে আমি দ্বিনের কাজ করব।

উল্লেখ্য, আমাদের কথাগুলো একপেশে মনে করা ভুল হবে। বরং আমার করনীয় আমিই ঠিক করব। আর মাদরাসার কর্তৃপক্ষের করণীয় কি হওয়া উচিত উত্তরের দ্বিতীয় পয়েন্টে আমরা সেটাও আলোচনা করেছি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দ্বিন এবং ইমাম আমল হেফাজতের তাওফিক দান করুন। আমিন।

والله اعلم بالصواب

মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর