আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

১২ রবিউল আউয়ালের আমল

প্রশ্নঃ ৯৬৫৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসছে ১২ রবিউল আউয়াল এই দিন আমরা কি আমল করতে পারি এই দিন কি আমরা নফল রোজা রাখব দয়া করে জানাবেন

২১ আগস্ট, ২০২৪
ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


মিলাদুন্নাবীর সঠিক পদ্ধতি: নিঃসন্দেহে হুজুর (সাঃ)এর আগমন শুধু মুসলমানদের জন্যে’ই নয়। বরং সারা পৃথিবীর জন্য এক বিশেষ রহমত স্বরুপ। যা সংকীর্ণমনা ও বিদ্ধেষাভাবাপন্ন ব্যক্তিরা ব্যতীত সকলেই মানতে প্রস্তুত। মুসলমান হিসেবে আনুগত্য স্বীকারকারী প্রত্যেক ব্যক্তি সহ সারাবিশ্বের জন্য হুজুর (সাঃ) এর জন্ম এক বিশেষ নেয়ামত ও আনন্দের বিষয়।
মো’মিন কোন কাজ নিজের মনগড়া মত করে না। বরং তাঁর প্রত্যেক কাজই হয় সুন্দর, সুশৃঙ্খলও নবীজীর আদর্শনুযায়ী। যেমনিভাবে মো’মিনদেরসম্মোধন করে আল্লাহ পাকের ঘোষণা-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
অর্থাৎ- অবশ্যই রাসূলের জিন্দেগীতে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ।
(সূরা-আহযাব-২১)
সুতরাং-নবীজীর জন্মের আনন্দের ক্ষেত্রেও মোমিন নবীজীর আদর্শের বাইরে যেতে পারে না। তাই মোমিনের জন্য করণীয় হলো এ ক্ষেত্রে রাসূল (সাঃ)এর আদর্শ কি ছিল? তা খুঁজে বের করা এবং রাসূলের দেখানো সেই আদর্শানুসারে'ই রাসুলের জন্মের এই আনন্দ পালন করা। রাসূল (সাঃ)এর জন্মের আনন্দের ক্ষেত্রে রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামগণের আমল কি ছিল তা আমরা সংক্ষেপে পূর্বে আলোচনা করেছি। তদুুপরিস্পষ্টতার জন্য কিছু আলোকপাত করা যাচ্ছে।
হযরত কাতাদাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত মুসলিম শরীফের এক হাদীসে আছে- তিনি বলেন! রাসূল (সাঃ) থেকে সোমবারের-রোযা রাখা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে উত্তরে তিনি বলেন-
ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ
অর্থাৎ : এদিনে আমি জন্ম লাভ করেছি এবং এদিনেই আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে।(মুসলিম-১/৩৬৮ মেশকাত-১/১৭৯পৃঃ)

সুতরাং-রাসূলের আগমনের উদ্দেশ্যে যদি কেউ খুশি হয়ে শোকরিয়া আদায় করতে ও আনন্দ প্রকাশ করতে চায় তবে, তাঁকে রাসুলের আদর্শনুযায়ী সোমবারে রোযা রাখার মাধ্যমে এই আনন্দ ও তার শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ।

উপরন্তু ‘মিলাদুন্নাবী’ তথা (রাসুলের জন্ম) এটা পালন করার বিষয় নয়। কেননা রাসূলের জন্ম ও তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট মো’জেযা সমূহ, রাসুলের শিশুকাল, বাল্যকাল ইত্যাদি এগুলোর মধ্যে পালনীয় কিছু নেই বরং এগুলো আলোচনার বিষয়, যাতে করে মানুষের দীলে হুজুর (সাঃ)এর আজমত ও মহাব্বত সৃষ্টি হয় এবং মানুষ দ্বীনের প্রতি ধাবিত হয়, এবং ইহাই ছিল সাহাবায়ে কেরামগণের আদর্শ। যেমনি ভাবে হাদীস শরীফে আছে- একবার নবী করীম (সাঃ) হুজরা থেকে বের হয়ে মসজিদে গেলেন এবং এক দল সাহাবাকে মসজিদের এক কোনায় বসে কিছু আলোচনা করতে দেখতে পেলেন। রাসূল (সাঃ) তাঁদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি করতে ছিলে। তাঁরা উত্তর দিলেন আমরা আপনার জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করতে ছিলাম। তা শুনে হুজুর (সাঃ) তাঁদের জন্য দো’য়া করলেন।

সুতরাং-মিলাদুন্নাবী তথা (নবীজীর জন্ম) এটা পালন করার বিষয় নয় বরং ইহা আলোচনা করবে, কেননা সাহাবায়ে কেরাম থেকে এই শিক্ষাই আমরা পাই। তাছাড়া ‘মিলাদুন্নাবী’ পালন করা অন্যদের পক্ষে সম্ভবপরও নয়। কেননা আমাদের কেউ নবীজীর জন্মগ্রহণ করার ন্যায় জন্মগ্রহন করতে পারবে না, তিনি মায়ের গর্ভে থাকাবস্থায় তাঁহার মায়ের যেরূপ কোন কষ্টানুভব হয়নি, অদৃশ্য থেকে অনেক প্রকার সহযোগিতা পাওয়া, হালিমার (রাঃ)এর গৃহে তাঁর বিভিন্ন মো’জেযা প্রকাশ পাওয়া, বাল্যকালে তাঁর সিনা চাক তথা বক্ষ বিদীর্ণ করে হিংসা-বিদ্বেষসহ সকল প্রকার খারাপ অভ্যাস থেকে দীলকে ধৌত করা, মোট কথা- তাঁর জন্মের আগ থেকে নবুওয়্যাতীর আগ পর্যন্ত যত কিছু আছে এগুলো আমাদের ক্ষেত্রে পালন করা সম্ভব নয় বরং আলোচনা সম্ভব। অপর দিকে নবুওয়্যাতীর পর থেকে নিয়ে ইন্তেকালের পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত যে আদর্শগুলো রয়েছে তা আমাদের পালন করা সম্ভব এবং এগুলোকে পালন করতে’ই হবে। আর তজ্জন্যে প্রয়োজন রাসূল (সাঃ)এর জিন্দেগীর আলোচনা করা, যাতে করে মানুষ তা শ্রবণ করে দ্বীনের উপর চলার জন্য অনুপ্রাণিত হয়। আর তখন’ই পূর্ণ হবে মিলাদুন্নাবীর উদ্দেশ্য। কেননা এ ধরাতে মিলাদুন্নাবী (তথা রাসূল (সাঃ)এরজন্ম) শুধু আলোচনার জন্য’ই নয়, বরং সকল প্রকার শিরক-বিদ’আতের অন্ধকার থেকে মানুষকে বের করে দ্বীনের আলোয় তাদের জীবনকে আলোকিত করার উদ্দেশ্যেই তাঁর জন্ম। সুতরাং- তাহাঁর জন্মের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তাহাঁর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করার মাধ্যমে’ই সফল হতে পারে মিলাদুন্নাবীর মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু শুধু মাত্র মিলাদুন্নাবীর আলোচনার মাধ্যমে যেমনিভাবে হুজুর (সাঃ)এর আগমনের উদ্দেশ্য সফল হতে পারে না, তেমনিভাবে শুধু মাত্র সিরাতুন্নাবীর নামে ইহা থেকে বিমুখ থাকাও ঠিক হবে না। বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি মূহূর্তে ‘সিরাতুন্নাবীর’ (তথা নবীজির আদর্শ)কে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং মিলাদুন্নাবীর আলোচনাকে ব্যাপক করতে হবে। এবং এই মিলাদুন্নাবীর আলোচনা কোন দিন-ক্ষণ এর সাথে সীমাবদ্ধ নয় এবং এমনও নয় যে, কেবল মাত্র রবিউল আউয়াল মাস আসলেই ইহা করতে হবে, বরং সারা বছর’ই মিলাদুন্নাবীর আলোচনা প্রয়োজন, এবং তা খুবই জরুরী। তবে হ্যাঁ এ ক্ষেত্রে খুব লক্ষ্য রাখতে হবে যে, ‘মিলাদুন্নাবী’ (নবীজির জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করা) ও ‘প্রচলিত মিলাদ’ এক নয়। তেমনি ভাবে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের এজেন্ট কর্তৃক উদ্ভাবিত, শিয়াদের সাথে সামঞ্জস্যশীল প্রচলিত ‘ঈদে মিলাদুন্নাবী’ও আমাদের আলোচ্য ‘মিলাদুন্নাবী’ এক নয়। শুধু ‘মিলাদ’ ও ‘ঈদে মিলাদুন্নাবী’ উভয়টি সম্পূর্ণ বিদ’আত, যা অবশ্যই পরিতাজ্য (এবং ‘মিলাদুন্নাবী’ (তথা নবীজির জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করা) সম্পূর্ণ জায়েয এবং অত্যান্ত জরুরী। যার বিস্তারিত আলোচনা আমরা পূর্বে করেছি। তাই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য উচিৎ মিলাদ, মিলাদুন্নাবী ও ঈদে মিলাদুন্নাবীর মধ্যকার সুন্নাত-বিদ’আতের প্রার্থক্যগুলো ভালোভাবে বুঝা এবং বিদ’আতকে বর্জন করে সুন্নাতানুযায়ী আমল করা। আল্লাহ পাক প্রত্যেককে সুন্নাত ও বিদ’আতকে বুঝে সে অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন-আমীন।

والله اعلم بالصواب

মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস, শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন