আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

উম্মাহাতুল মুমিনীনদের সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা

প্রশ্নঃ ৯৫৩৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ১.উম্মাহাতুল মুমিনীনদের সম্পর্কে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা কি? রেফারেন্স সহ জানালে খুবই উপকৃত হব।২.আশারায়ে মুবাশশারা ব্যতিত বাকি সব সাহাবা দের কেও কি নিশ্চিত জান্নাতি হওয়ার ব্যাপারে আকিদা রাখতে পারি? কেননা বর্তমানে কিছু যুবক ভাইয়েরা এই বিষয়টি মানতে অস্বীকার করে।এই বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা কি? প্রশ্ন দু'টোর উত্তর রেফারেন্স সহ জানালে খুবই উপকৃত হই। জাযাকাল্লাহু খইরন....,

২৯ অক্টোবর, ২০২৩

চট্টগ্রাম

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


রাসূলুল্লাহ সা.এর স্ত্রীদের ব্যাপারে আমাদের এই অকিদা রাখতে হবে-

১. নবীপত্নীগণের মর্যাদা পৃথিবীর সকল নারী থেকে শ্রেষ্ঠ ।
তাদের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, বলেন,

يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ

হে নবীর স্ত্রীগণ তোমরা জগতের অন্য কোন নারীর মত নও’ (আহযাব ৩৩/৩২)। নবীপত্নীগণের উচ্চ মর্যাদায় স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত এই অনন্য সনদ নিঃসন্দেহে গৌরবের এবং একই সাথে মুসলিম উম্মাহর জন্য নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয় বিষয়।
২. আল্লাহ নবীপত্নীগণকে নিষ্কলংক ঘোষণা করেছেন এবং তাদের গৃহকে সকল প্রকারের আবিলতা ও পংকিলতা থেকে মুক্ত বলেছেন। আল্লাহ বলেন,

إِنَّمَا يُرِيدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

হে নবী পরিবার! আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র করতে’ (আহযাব ৩৩/৩৩)।

৩. আল্লাহ নবীপত্নীগণের গৃহগুলোকে অহীর অবতরণ স্থল
(مَهْبِطُ الْوَحْيِ) হিসাবে ঘোষণা করেছেন। যা তাঁদের মর্যাদাকে শীর্ষ স্থানে পৌঁছে দিয়েছে।
আল্লাহ বলেন,
وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلَى فِي بُيُوتِكُنَّ مِنْ آيَاتِ اللهِ وَالْحِكْمَةِ إِنَّ اللهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا
আল্লাহর আয়াতসমূহ এবং হিকমতের (হাদিসের) কথাসমূহ, যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, সেগুলি তোমরা স্মরণ রাখ। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতীব সূক্ষ্মদর্শী ও সকল বিষয়ে অবহিত’ (আহযাব ৩৩/৩৪)।

৪. নবীর মৃত্যুর পরে তাঁরা সকলের জন্য ‘হারাম’ এবং তাঁরা ‘উম্মতের মা’(وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ) হিসাবে চিরদিনের জন্য বরণীয় হয়েছেন (আহযাব ৩৩/৫৩; ৩৩/৬)। সরাসরি আল্লাহ কর্তৃক ঘোষিত এই মর্যাদা পৃথিবীর কোন মহিলার ভাগ্যে হয়নি। অতএব সত্যিকারের মুমিন সেই ব্যক্তি যিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে নিজের জীবনের চাইতে ভালবাসেন এবং তাঁর স্ত্রীগণকে মায়ের মর্যাদায় সম্মান প্রদর্শন করেন।

৫. প্রথমা স্ত্রী খাদীজা (রাঃ) ছিলেন বিশ্বসেরা চারজন সম্মানিতা মহিলার অন্যতম। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
أَفْضَلُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ خَدِيجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ وَفَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ وَمَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَآسِيَةُ بِنْتُ مُزَاحِمٍ امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ
‘জান্নাতী মহিলাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হ’লেন খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ, মারিয়াম বিনতে ইমরান ও ফেরাঊনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে মুযাহিম’ আহমাদ হাদিস নং- ২৬৬৮, তিরমিযী হাদিস নং- ৩৮৭৮; মিশকাত হাদিস নং-৬১৮১।

(ক) খাদীজা (রাঃ) ছিলেন সেই মহীয়সী মহিলা যাকে জিব্রীল নিজের পক্ষ থেকে ও আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সা. -এর মাধ্যমে সালাম দেন এবং জান্নাতে তাঁর জন্য বিশেষভাবে নির্মিত মুক্তাখচিত প্রাসাদের সুসংবাদ দেন।-বুখারী হাদিস নং-১৭৯২, ৩৮২০; মুসলিম হাদিস নং- ২৪৩৩; মিশকাত হাদিস নং- ৬১৭৬।
(খ) স্ত্রী আয়েশা রা. কে জিবরাইল রাসূলুল্লাহ সা. এর মাধ্যমে সালাম পাঠান এবং তিনিও তার সালামের জবাব দেন
(বুখারী হাদিস নং- ৬২০১)। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট সর্বাধিক প্রিয় (বুখারী হাদিস নং- ৩৬৬২)।

সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে আকিদা

সাহাবায়ে কেরামের সকলেই জান্নাতি। তাদের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর অকিদা হলো, সাহাবীদের পরস্পরের মধ্যে মর্যাদা হিসেবে স্তরভেদ থাকতে পারে, কিন্তু পরবর্তী যুগের কোন মুসলমানই তাদের কারো সমমর্যাদা লাভ করতে পারবে না। কারণ এই সাহাবীরাই রাসূল (ﷺ) ও তাঁর উম্মতের মধ্যে প্রথম মধ্যসূত্র। অর্থাৎ পরবর্তী উম্মত তাঁদের সূত্রেই দ্বীনের যাবতীয় বিষয় জানতে পেরেছে।সুতরাং এই প্রথম সূত্র উপেক্ষা করলে,বাদ দিলে অথবা তাদের প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টি হলে দ্বীন, শরিয়তের মূল ভিত্তিই ধসে পড়ে। কোরআন ও হাদিসের প্রতি অবিশ্বাস দানা বেঁধে ওঠে।কোনো কোনো সাহাবির জীবদ্দশায় রাসুল (ﷺ) তাদের জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তবে মুসলিম আলেমরা সাহাবিদের সবাইকেই জান্নাতি বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।ইবনে হাজার ‘আল ইসাবা’ গ্রন্থে স্পেনের ইমাম ইবনে হাজামের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আস-সাহাবাতু কুল্লুহুম মিন আহলিল জান্নাতি কাতআন।’ অর্থাৎ, ‘সাহাবিদের সবাই নিশ্চিতভাবে জান্নাতি।’ সাহাবিদের গালি দেয়া বা হেয় প্রতিপন্ন করা কিংবা সমালোচনা করা সম্পূর্ণ হারাম।রাসুল (ﷺ) বলেছেন, ‘আঁমার পরে তোমরা তাদের সমালোচনার লক্ষ্যে পরিণত করো না।তাদের যারা ভালোবাসে, আঁমার মহব্বতের খাতিরেই তারা ভালোবাসে,আর যারা তাদের হিংসা করে,আঁমার প্রতি হিংসার কারণেই তারা তা করে।’(মিশকাতুল মাসাবিহ)

হাফিয ইবনে আবদিল বার’ সাহাবীদের মর্যাদা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর সুহবত ও তাঁর সুন্নাতের হিফাযত ও ইশায়াতের দুর্লভ মর্যাদা আল্লাহ্ তা’আলা এইসব মহান ব্যক্তির ভাগ্যে লিখে রেখেছিলেন। এ কারণেই তাঁরা ‘খায়রুল করুন’ ও ‘খায়রু উম্মাতিন’ এর মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন
★১. মহান মহান আল্লাহ তা’আলা
ইরশাদ করেন:
وَمَا لَكُمْ أَلَّا تُنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ لَا يَسْتَوِي مِنْكُمْ مَنْ أَنْفَقَ مِنْ قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِنَ الَّذِينَ أَنْفَقُوا مِنْ بَعْدُ وَقَاتَلُوا ۚ وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

অর্থঃ তোমাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কিসে বাধা দেয়, যখন আল্লাহই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উত্তরাধিকারী? তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে,সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যাদা বড় তাদের অপেক্ষা,যারা পরে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে। তবে আল্লাহ উভয়কে কল্যাণের (জান্নাতের) ওয়াদা দিয়েছেন।তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।
[সূরা হাদীদঃ আয়াত নং ১০]
★২. সাহাবায়ে কেরাম এঁর ইমানের গ্রহণযোগ্যতা এবং যারা সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে উপহাস করেছে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

oو إذا قيل لهم امنوا كما امن الناس قالوا أنؤمن كما امن السفهاء ألا إنهم هم السفهاء و لكن لا يعلمون

অর্থাৎ, যখন তাদেরকে বলা হয়, মানুষরা অর্থাৎ সাহাবীরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন। তখন তারা বলে আমরাও কি বোকাদের মতো ঈমান আনব? মনে রেখো প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা; কিন্তু তারা তা বোঝে না।
[সূরা বাক্বারা,আয়াত নং ১৩]

এ আয়াতে এটাই বলা হয়েছে যে, যার ঈমান সাহাবা-ই কেরামের ঈমানের মত নয়,সে মুনাফিক এবং বড় বোকা।এ আয়াতসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,কোন সাহাবী কাফের হতেই পারেন না,তাছাড়া আল্লাহ তাআলা এখানে নির্দেশ দিচ্ছেন সাহাবিদের মত ইমান আনায়নের জন্য এবং সকল সাহাবীর জন্য আল্লাহ তা’আলা জান্নাতের ওয়াদা করেছেন।আবার এটাও প্রমাণিত হল যে,নেক্কার বান্দাদের মন্দ বলা মুনাফিকদের কুপ্রথা।

★৩. আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআন শরীফে ইরশাদ করেন
رضي اللّٰه عنهم ورضوا عنه
আল্লাহ তাদের উপর রাজী হলেন,তারাও আল্লাহর উপরে রাজী হলেন।
[সূরা আল-বায়্যিনা,আয়াত নং ৮]
সুতরাং স্পষ্টত:সাহবীদের উপর আল্লাহ তআলা রাজী, আর সাহাবীরা আল্লাহর উপরে রাজী।কিন্তু বর্তমানে কিছু ভাই হযরত আলী (রা:) ও আমিরে মোআবিয়া (রা:) এর মধ্যকার ইজতিহাদী মতবেদকে কেন্দ্র করে আমিরে মোআবিয়া (রা:) কে গালিগালাজ করে,যা সত্যিই দুঃখজনক।অথচ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম বলেছেন আঁমার সাহাবীদের মতবেদ রহমত স্বরুপ।আফসোস: সাহাবী বানালেন নবিজী আর হিসেব নিচ্ছি আমরা!!!

★৪. আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন:

مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنْجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآَزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا ﴿২৯﴾ سورة الفتح

মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তার
সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্ট কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদার প্রভাবের চি‎হ্ন পরিস্ফুট থাকবে। তাওরাতে তাদের বর্ণনা এরূপ। আর ইঞ্জিলে তাদের বর্ণনা হল যেমন একটি চারাগাছ, যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অত:পর তা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং কাণ্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে,যা চাষীকে আনন্দে অভিভূত করে যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন।
(সূরা আল ফাতহ,আয়াত নং ২৯)

★৫. সাহাবাহ কেরাম রাদিয়াল্লহু আ’নহুমদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়া’লা আরও ইরশাদ করেন

مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّـهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا

অর্থঃ ঐ সকল মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা আল্লহর সাথে যে ওয়াদা করেছিলো তাতে সত্য প্রমানিত হয়েছে। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে, যারা নিজ মানত পূর্ণ করেছে (অর্থাৎ শহীদ হয়ে গিয়েছে।) আর কিছু তাদের মধ্য হতে এর জন্য আগ্রহী এবং অপেক্ষায় আছে (এখনও শহীদ হয়নি) এবং নিজেদের ইচ্ছার মধ্যে কোনরূপ পরিবর্তন ও রদ-বদল ঘটায়নি।
[সূরা আহযাব,আয়াত নং ২৩]

★৬. আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ﴿১০০﴾ سورة التوبة

মুহাজির ও আনসারদের প্রথম অগ্রবর্তী দল এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। আর তিঁনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাত,যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত।সেখানে তারা চিরকাল থাকবে,এটাই মহা সাফল্য (সূরা তওবা,আয়াত নং ১০০)

★৭. সূরা নিসার ৯৫নং ও সূরা হাদীদের ১০নং আয়াতে সাহাবায়ে কেরামের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وكلا وعد الله الحسنى
অর্থাৎ,তাদের (মধ্যে পারস্পরিক তারতম্য থাকা সত্ত্বেও) সবাইকে আল্লাহ তা‘আলা হুসনা তথা উত্তম পরিণতির (জান্নাত ও মাগফিরাতের) ওয়াদা দিয়েছেন।
★এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সাহাবায়ে কেরামের জন্য হুসনা এর ওয়াদা করেছেন।

সূরা আম্বিয়ার ১০১নং আয়াতে হুসনা লাভকারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে,
إن الذين سبقت لهم منا الحسنى أولئك عنها مبعدون
অর্থাৎ,যাদের জন্য আঁমার পক্ষ থেকে পূর্বেই হুসনার ওয়াদা হয়ে গেছে,তাদেরকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে।
★৮. সূরা হুজুরাতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
o لكن الله حبب إليكم الإيمان و زينه في قلوبكم و كره إليكم الكفر و الفسوق و العصيانط أولئك هم الراشدون
অর্থাৎ,কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের অন্তরে ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন।পক্ষান্তরে কুফর, শিরক,পাপাচার ও নাফরমানির প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন।তারাই (সাহাবীগণ) সৎপথ অবলম্বনকারী।
[সূরা হুজুরাত,আয়াত নং ৮]

★সূরা হুজুরাতের ১৫ নং আয়াতে আরও ইরশাদ হয়েছে,
oإنما المؤمنون الذين امنوا بالله و رسوله ثم لم يرتابوا و جهدوا بأموالهم و أنفسهم في سبيل اللهط أولئك هم الصدقون
অর্থাৎ,তারাই মুমিন,যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করে। তারাই (সাহাবীগণ) সত্যনিষ্ঠ (বা সত্যবাদী)।
[সূরা হুজুরাত,আয়াত নং ১৫]

★৯. পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে
فإن آمنوا بمثل ما آمنتم به فقد اهتدىوا وإن تولوا فإنما هم فى شقاق
অর্থঃ “অতএব তারা যদি ঈমান আনে,তোমাদের ঈমান আনার মত, তবে তারা সুপথ পাবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়,তবে তারাই হঠকারিতায় রয়েছে। সুতারং এখন তাদের জন্যে আঁপনার পক্ষ থেকে আল্লাহই যথেষ্ট।

★উক্ত আয়াতে “তোমাদের ঈমান আনার মত”এর দ্বারা রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এবং সাহাবায়ে কেরামকেই বুঝানো হয়েছে। আয়াতে তাঁদের ঈমানকে আদর্শ ঈমানের ও সত্যের মাপকাঠি সাব্যস্ত করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ও স্বীকৃত ঈমান হচ্ছে সে রকম ঈমান, যা রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এঁর সাহাবায়ে কেরাম অবলম্বন করেছেন। সে ঈমান ও বিশ্বাস থেকে যদি চুল পরিমাণও ভিন্ন হয়,তাহলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নহে।
★১০. অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন:
لِلْفُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيارِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا وَيَنْصُرُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ ﴿৮﴾ وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ﴿৯﴾ سورة الحشر

এ সম্পদ অভাবগ্রস্ত মুহাজিরগণের জন্য যারা নিজেদের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি হতে উৎখাত হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে। তারাই সত্যবাদী। আর এ সম্পদ তাদের জন্যও, যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে এ নগরীতে বসবাস করেছে এবং ঈমান এনেছে। তারা মুহাজিরদেরকে ভাল-বাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তার জন্য তারা অন্তুরে ঈর্ষা পোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে নিজেদের উপর অগ্রাধিকার দেয়। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।
[সূরা-হাশর,আয়াত নং ৮-৯]

★১১. অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে–
لَّقَدْ رَضِيَ اللَّـهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লহ তায়া’লা ঐ সকল মুসলমানদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন (যাহারা আপনার সফর সঙ্গী), যখন তাঁহারা আপনার সাথে গাছের নিচে অঙ্গীকার করছিলো এবং তাঁদের অন্তরে যা কিছু (ইখলাস ও মজবুতি) ছিল তাও আল্লাহ তায়া’লার জানা ছিল,আর আল্লাহ তায়া’লা তাঁদের অন্তরে প্রশান্তি সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন এবং তাদেরকে একটি নিকটবর্তী বিজয় দান করলেন। (এর দ্বারা খায়বরের বিজয় কে বুঝানো হয়েছে, যা একেবারে নিকটবর্তী সময়ে হয়েছে) আর প্রচুর গনিমতও দান করলেন।
[সূরা ফাতহ,আয়াত নং ১৮]

★১২. আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন,
وألزمهم كلمة التقوى وكانوا أحق بها
অর্থাৎ, (আল্লাহ তা‘আলা) তাদের (অর্থাৎ সাহাবীদের) জন্য কালিমায়ে তাক্বওয়া তথা সংযমের দায়িত্ব অপরিহার্য করে দিলেন। বস্তুতঃ তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত।
[সূরা ফাত্হ,আয়াত নং ২৬]

★১৩. পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে
الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ أَعْظَمُ دَرَجَةً عِنْدَ اللَّهِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ
অর্থঃ যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে এবং আল্লাহর রাহে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জেহাদ করেছে, তাদের বড় মর্যাদা রয়েছে আল্লাহর কাছে আর তারাই সফলকাম।
[সূরা আত-তাওবাহ্‌,আয়াত নং ২০]

★আরও ইরশাদ হয়েছে
يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُمْ بِرَحْمَةٍ مِنْهُ وَرِضْوَانٍ وَجَنَّاتٍ لَهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُقِيمٌ
অর্থঃ তাদের সুসংবাদ দিচ্ছেন তাদের পরওয়ারদেগার স্বীয় দয়া ও সন্তোষের এবং জান্নাতের, সেখানে আছে তাদের জন্য স্থায়ী শান্তি।
[সূরা আত-তাওবাহ্‌,আয়াত নং ২১]

♦কোরআন ও হাদিসের আলোকে সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা ও তাঁদের সমালোচনা করা কুফরী-২য় পর্ব
★১৪. আল্লাহ তা’আলা আরও ইরশাদ করেন
كنتم خير أمة أخرجت للناس الخ
অর্থাৎ -“তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত,মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে।
[সুরা আলে-ইমরান,আয়াত নং ১১০]


তাফসীরে তাবারীতে আয়াতের ব্যাখায় হযরত ওমর (রাঃ) এঁর একটি উক্তি তুলে ধরা হয়েছে
“لو شاء الله لقال انتم فكنا كلنا ولكن قال كنتم فى خاصة من أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم
অর্থাৎ “যদি আল্লাহ পাক ইচ্ছা করতেন তাহলে কুনতুম না বলে “আনতুম খায়রা উম্মাতিন”বলতে পারতেন এবং সেক্ষেত্রে আমরা সকলেই এ আয়াতের আওতায় চলে আসতাম। কিন্তু! আল্লাহ পাক এখানে সাহাবাদের মধ্যে বিশেষ জামায়াতকে সম্বোধণ করেছেন।
[তাফসীরে তাবারী ৪র্থ খন্ড,পৃষ্টা নং ৬৩]


তাফসীরে ইবনে কাসীরে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এঁর এই রিওয়ায়াতটি বর্ণিত আছে,
“كنتم خير أمة أخرجت للناس قال هم الذين هاجروا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم من مكة إلى مدينة
অর্থাৎ- “খায়রে উম্মত” দ্বারা ঐ সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম যারা মক্কা হতে মদিনাতে হিজরত করেছিলেন। নিঃসন্দেহে তাঁরা সাহাবায়ে কেরাম।[তাফসীরে ইবনে কাসীর,১ম খন্ড, পৃষ্টা নং ৫০৯]

★১৫. আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন
وكذالك جعلناكم أمة وسطا لتكونوا شهداء على الناس ويكون الرسول عليكم شهيدا
অর্থাৎ “এমনিভাবে আঁমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় বানিয়েছি। যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে এবং যাতে রাসুল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্যে।
[সুরা বাক্বারাহ,আয়াত নং ১৪৩]

উল্লেখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা নসফী (রাঃ) وسطا “ওসাতানের” অর্থ خيارا ‘পছন্দনীয়’ এবং “উদুল” বা معيار حق (সত্যের মাপকাঠি) করেছেন। অর্থাৎ -“আমি তোমাদেরকে উম্মতের জন্য পছন্দনীয় এবং সত্যের মাপকাঠি বানিয়েছি।
[তাফসীরে মাদারিক ১ম খন্ড,পৃষ্টা নং ৬৪,তাফসীরে ইবনে কাসীর-১ম খন্ড,পৃষ্টা ৫১০,২৫০,২৫১]

★১৬. পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে
والسابقون الأولون من المهاجرين والأنصار والذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم ورضوا عنه وأعدلهم جنت تجرى تحتها الأنهار خالدين فيها أبدا ذالك الفوز العظيم

অর্থাৎ “আর যে সব মুহাজির ও আনছার(ঈমান আনয়নে) অগ্রবর্তী এবং প্রথম,যে সব লোক সরল অন্তরে তাঁদের অনুগামী,আল্লাহ তাঁদের প্রতি রাজি হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি রাজি হয়েছেন। আর আল্লাহ পাক তাঁদের জন্যে এমন উদ্যান সমুহ প্রস্তুত করে রেখেছেন যার তলদেশ দিয়ে নহর সমুহ প্রবাহিত হইতে থাকবে। সেখানে তাঁরা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান সফলতা।
[সুরা তওবা,আয়াত নং ১০০]


আয়াতে কারীমায় আল্লাহপাক সাহাবায়ে আনছার ও মুহাজিরদের উচ্চ মর্তবা ও ফজিলত বয়ান করার পাশাপাশি তাঁদেরকে মহান আদর্শ বানিয়েছেন ঐ সমস্ত সাহাবিদের জন্য যারা মর্তবার দিক দিয়ে তাঁদের তুলনায় কম এবং উম্মতের মধ্যে যারা নেককার দ্বীনদার শ্রেণী।

শাআবী (রাঃ) বলেন যে,মুহাজির ও আনছারদের মধ্যে অগ্রবর্তী ও প্রথম তাঁরাই যাঁরা হুদায়বিয়ায় বায়আ’তে রিযওয়ানের মর্যাদা লাভ করেছিলেন।

মুহাম্মদ ইবনে কা’ব আল কারাসী (রাঃ) বলেন যে,ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এমন একজন লোকের পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন যিনি এই আয়াতটি পাঠ করছিলেন-“”
والسابقون الأولون من المهاجرين والأنصار الخ
তখন ওমর (রাঃ)তাঁর হাতখানা ধরে জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘কে তোমাকে এটা এরুপে পাঠ করালেন?” লোকটি উত্তরে বললেনঃ “উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ)”। তখন ওমর (রাঃ)বললেন চলো আমরা উবাই ইবনে কা’বের কাছে যাই এবং এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি। অতঃপর উবাই ইবনে কা’বের কাছে গিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ আপনি কি এই আয়াতটি এভাবে পড়তে বলেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন ওমর (রাঃ)তাঁকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ আপনি কি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে এভাবেই পড়তে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। ওমর(রাঃ) বললেনঃ “তাহলে দেখা যাচ্ছে যে,আমরা এমন এক মর্যাদা লাভ করেছি যা আমাদের পরে কেউ লাভ করতে পারবেনা”।এ কথা শুনে উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) বলেন যে,এই আয়াতের সত্যতা প্রমাণকারী সুরায়ে জুমাআ’র প্রথম দিকের আয়াতটিও বটে। তা হচ্ছে-
وأخرين منهم لمل يلحقوا بهم وهو العزيز الحكيم
অর্থাৎ “আর (উপস্থিতরা ব্যতিত) অন্যান্ন লোকদের জন্যেও,যারা তাদের সাথে শামিল হবে,কিন্তু এখনও শামিল হয়নি,আর তিনি মহাপরাক্রান্ত,প্রজ্ঞাময়।
★১৭. আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,
oأولئك هم المؤمنون حقا لهم درجت عند ربهم و مغفرة و رزق كريم
অর্থাৎ, এমন সব লোকই (সাহাবীরা) সত্যিকারের মুমিন (যাদের ভেতর ও বাহির এক রকম এবং মুখ ও অন্তর ঐক্যবদ্ধ)। তাদের জন্য রয়েছে স্বীয় পরওয়ারদিগারের নিকট সুউচ্চ মর্যাদা ও মাগফিরাত এবং সম্মানজনক রিয্ক।
[সূরা আনফাল,আয়াত নং ৪]
✌আরও ইরশাদ হয়েছে
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوْا وَنَصَرُوا أُولَٰئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا ۚ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
অর্থঃ আর যারা ঈমান এনেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ী ছেড়েছে এবং আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য-সহায়তা করেছে, তাঁরা হলো সত্যিকার মুসলমান। তাঁদের জন্যে রয়েছে, ক্ষমা ও সম্মানজনক রুযী।
[সূরা আল আনফাল আয়াত: ৭৪]
✌উক্ত সূরাতে আরও ইরশাদ হয়েছে
“والذين آمنوا من بعد وهاجروا وجاهدوا معكم فألئك منكم
অর্থাৎ “আর যারা (নবী ﷺ এঁর হিজরতের)পরবর্তীকালে ঈমান এনেছে,হিজরত করেছে, এবং তোমাদের সাথে একত্রে জিহাদ করেছে,বস্তুতঃ তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত”।
[সুরা আনফাল,আয়াত নং ৭৫ ]
✌ইবনে জারীর (রাঃ) এটা রিওয়ায়াত করেছেন এবং বলেছেন যে,হাসান বসরী (রাঃ) انصار ‘আনছার’ শব্দটিকে পেশ দিয়ে পড়তেন এবং السابقون الأولون-এর উপর عطف করতেন। তখন অর্থ দাঁড়াবেঃ “মুহাজিরদের মধ্যে যারা অগ্রবর্তী ও প্রথম এবং আনছার ও তাদের অনুসারীদের প্রতি আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট”।
★১৮. সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করা কুফরী।
٣٧- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَبَّ اَصْحَابِي فَعَلَيْهِ لَعْنَةُاللهِ و المَلائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعينَ
অনুবাদঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন,নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করেন,যে ব্যক্তি আঁমার সাহাবীদের নিয়ে সমালোচনা করে তার উপর আল্লাহর,ফেরেস্তাদের এবং সকল মানব জাতির অভিসম্পাদ।
*****দলিল*****
*১. তাবরানী কৃত মুজামুল কাবির, ১২/১৪২, হাঃ ১২৭০৯
*২. ফাযায়েলে সাহাবা, আহমাদ বিন হাম্বলকৃত, হাদীস নং-৮
*৩. মুজামুল আউছাতে আবু সাঈদ খুদরী (رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ) সুত্রে, ৫/৯৪ হাঃ ৪৭৭১
*৪. মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৬/৪০৫, হাঃ ৩২৪১৯
✌হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﻋﻨﮧ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﮧ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠّﻢ ﺍﺫﺍ ﺭﺍﯾﺘﻢ
ﺍﻟﺬﯾﻦ ﯾﺴﺒّﻮﻥ ﺍﺻﺤﺎﺑﯽ ﻓﻘﻮﻟﻮﺍ ﻟﻌﻨۃ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯽ
ﺷﺮّﮐﻢ –
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- “যখন
তোমরা এ ধরনের লোক দেখবে, যারা আঁমার সাহাবীকে মন্দ বলে, তখন তাদের উদ্দ্যেশে বলে
দাও,তোমাদের অনিষ্টের উপর
আল্লাহর অভিশাপ হোক”।
[তিরমিযী ২য় খন্ড-২২৫ পৃঃ ‏]
✌হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে
عَن ابْنِ عُمَر؛ أَن النَّبِيّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم قَالَ: مَنْ سَبَّ أَصْحَابِي فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ.
হযরত ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে আঁমার সাহাবীকে মন্দ বলে,তার উপর আল্লাহর অভিশাপ।
*****দলিল*****
*১. মুসনাদুল বাজ্জার,হাদীস নং- ৫৭৫৩
*২. আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৪৭৭১
★১৯.হাদিস শরীফে আরও বর্নিত হয়েছে
من سب نبيًّا فاقتلوه ومن سب أصحابى فاضربوه
হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি নবীকে [ছাব্ব] মন্দ বলে,তাকে হত্যা কর। আর যে সাহাবীকে [ছাব্ব] মন্দ বলে তাকে প্রহার কর।
******দলিল*****
*১. জামেউল আহাদীস,হাদীস নং-২২৩৬৬
*২. জমউল জাওয়ামে,হাদীস নং-৫০৯৭
*৩. দায়লামী-৩/৫৪১,হাদীস নং- ৫৬৮৮
*৪. আস সারেমুল মাসলূল-৯২
👏এবার দেখা যাক অভিধানে ছাব্ব এর অর্থ কি?
অভিধানে ছাব্ব সরাসরি গালিকে বলে না, বরং গালির দিকে ধাবমান নিন্দাবাদকে বলে।
[মুজামুল ফারকুল লাগাবিয়্যাহ, নং-১১৭৪]
✌ইবনে তাইমিয়া বলেন-যে কথা সমাজে খারাপ ও দোষ এবং ত্রুটি হিসেবে বলা হয় তা’ই ছাব্ব।
[আস সারেমূল মাসলূল-৫৩৪]
✌আরবীতে গালি বুঝাতে ব্যবহৃত হয় شتم শব্দ। “শাতাম” অর্থ হল গালি। ছাব্ব অর্থ সরাসরি গালি নয়। বরং যথার্থ অর্থ হল,মন্দ বলা,খারাপ বলা ইত্যাদি।
✌হাদীসে সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে মন্দ বলা, তাদের কটুক্তি করা, তাদের সমালোচনা করতে পরিস্কার নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে। এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “শাতাম” তথা গালি শব্দ ব্যবহার না করে ব্যবহার করেছেন “ছাব্ব” তথা মন্দ বলা।
😍অর্থাৎ সাহাবাগণকে মন্দ বলা, তাদের নিন্দাবাদ করাই বৈধ নয়। গালি দেয়াতো বহু দূরের বিষয়।
♦কোরআন ও হাদিসের আলোকে সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা ও তাঁদের সমালোচনা করা কুফরী-৩য় পর্ব
★২০. রহমাতুল্লীল আলামীন, হুজুরপূর নূর (ﷺ) ইরশাদ করেন-
لا تسُبّوا أصحابي،فلو أنّ أحدكم انفق مثل أحد ذهبا ما بلغ مدّ أحدهم،ولا نصيفه
আঁমার সাহাবাদেরকে গালি দিয়োনা।যদি তোমাদের মধ্য থেকে কেউ উহুদ পাহাড় বরাবর স্বর্ণ ব্যায় করে দাও তবুও তাদের কোন একজনের সের বা তার অর্ধেক বরাবর পৌঁছতে পারবেনা।
******দলিল******
*১. সহীহ বুখারী-কিতাুব ফাদায়েলীস সাহাবা,হাদিস নং ৩৪৭০
*২. মুসলিম শরীফ -কিতাবু ফাদায়েলীস সাহাবা,হাদিস নং ২৫৪০;
*৩. তিরমিযি শরীফ-কিতাবুল মানাকেব,হাদিস নং ৩৮৬১
*৪. আবু দাউদ-কিতাবুস সুন্নাহ, হাদিস নং ৪৬৫৮
✌আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত,রাসুল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা আঁমার সাহাবিগণকে গালমন্দ কর না। কেননা তারা এমন শক্তিশালী ইমান ও সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী, তোমাদের কেউ যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনাও আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর, তবুও তাদের এক মুদ (৩ ছটাক প্রায়) কিংবা অর্ধমুদ যব খরচের সমান সাওয়াবে পৌঁছতে পারে না।(বুখারি)
✌আল্লামা শামী (রাঃ)বলেন-এক মুদ ২৬০ দিরহামের সমপরিমাণ।
[দ্রষ্টব্যঃ আওযানে শরিয়্যাহ]
★২০. হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত।রাসুল (ﷺ) ইরশাদ করেন, ‘জাহান্নামের আগুন সে মুসলমানকে স্পর্শ করতে পারে না,যে আঁমাকে দেখেছে অর্থাৎ আঁমার সাহাবিরা কিংবা আঁমাকে যারা দেখেছে তাদের দেখেছে অর্থাৎ তাবেয়িরা।’
[তিরমিজি : ৩৮০১]
✌বায্যায সূত্রে মুফতী শফী’ মাআ’রিফুল ক্বুরআনে উল্লেখ করেছেন।হযরত জাবির (রা:) এঁর এক হাদীসে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-আল্লাহ তা‘আলা সারা জাহান থেকে আঁমার সাহাবীগণকে পছন্দ করেছেন।
عن جابررض عن النبي قال لا تمس النار مسلما راني أو راى من راني (ترمذي ص২২৫)
হযরত জাবির (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, জাহান্নামের আগুন সে মুসলমানকে স্পর্ষ করতে পারে না,যে আঁমাকে দেখেছে (অর্থাৎ আঁমার সাহাবীরা) কিংবা আঁমাকে যারা দেখেছে তাদেরকে দেখেছে (অর্থাৎ তাবেয়ীরা)।
******দলিল******
*(ক.) তিরমিযী-২য় খন্ড,২২৫ পৃ: হাদিস নং-৩৮০১
*(খ.) মিশকাত-৫৯১ পৃ:
★২১. হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে
عن عبد الله بن مغفلرض قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ………من آذاهم فقد آذاني و من آذاني فقد آذى الله و من آذى الله فيوشك أن يأخذه (ترمذي ص২২৫)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল (রা:) থেকে বর্ণিত,রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন…… যে আঁমার সাহাবীদেরকে কষ্ট দিল সে যেন আঁমাকে কষ্ট দিল; যে আঁমাকে কষ্ট দিল সে যেন আল্লাহকে কষ্ট দিল; যে আল্লাহকে কষ্ট দিল অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন।
******দলিল******
*১. তিরমিযী-২য় খন্ড,২২৫পৃ: হাদিস নং-৩৭৯৭
*২. মুসনাদে আহমদ-হাদিস নং ১৯৬৬৯ও১৯৬৪১
*৩. মিশকাত-৫৫৪ পৃ:
★২২. রাসূলের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ: সাহাবীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলে,তা স্বয়ং নবীজীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণের নামান্তর। নিম্নবর্ণিত হাদীসাংশ তা-ই বলে।
عن عبد الله بن مغفلرض قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ………. فمن أحبهم فحبي أحبهم و من أبغضهم فبغضي أبغضهم (مشكاة ৫৫৪)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল (রা:) থেকে বর্ণিত,রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, ………..যারা (আঁমার) সাহাবাকে ভালোবাসল,তারা আঁমার ভালোবাসায় তাদেরকে ভালোবাসল এবং যারা তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল, তারা আঁমার প্রতি বিদ্বেষের কারণে তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করল।
******দলিল*****
*(ক.) তিরমিযী-২য় খন্ড,২২৫পৃ.; হাদীস নং-৩৭৯৭
*(খ.) মুসনাদে আহমদ-হাদীস নং-১৯৬৬৯ ও ১৯৬৪১
*(গ.) মিশকাত-৫৫৪ পৃঃ
★২৩. হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﮧ ﺑﻦ ﺍﻟﻤﻐﻔﻞ ﺭﺿﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻨﮧ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﮧ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﯽ ﺍﺻﺤﺎﺑﯽ ﻻ
ﺗﺘﺨﺬﻭ ﺍﻧﺘﻢ ﻋﺮﺿﺎ ﻣﻦ ﺑﻌﺪﯼ ﻓﻤﻦ ﺍﺣﺒﮭﻢ ﻓﺒﺤﺒﯽ
ﺍﺣﺒﮭﻢ ﻭﻣﻦ ﺍﺑﻐﻀﮭﻢ ﻓﺒﺒﻐﻀﯽ ﺍﺑﻐﻀﮭﻢ –
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,‘আঁমার সাহাবীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো,আল্লাহকে ভয় কর।আঁমার পরবর্তীকালে তোমরা তাঁদের সমালোচনার নিশানায় পরিণত করো না। কারণ,যে তাঁদের ভালোবাসবে সে আঁমার মুহাব্বতেই তাঁদের ভালোবাসবে। আর যে তাঁদের অপছন্দ করবে সে আঁমাকে অপছন্দ করার ফলেই তাঁদের অপছন্দ করবে। আর যে তাঁদের কষ্ট দেবে সে আঁমাকেই কষ্ট দেবে। আর যে আঁমাকে কষ্ট দেবে সে যেন আল্লাহকেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহকে কষ্ট দেবে অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন।’
******দলিল******
*(ক.) তিরমিযী : ৪২৩৬
*(খ.) সহীহ ইবনে হিব্বান-৭২৫৬
★২৪. সাহাবাদের মর্যাদা সম্মন্ধে নবিজী (ﷺ) কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেনঃ
الله الله فى أصحابى لا تتخذوهم غرضا من بعدى فمن أحبهم فبحبى أحبهم ومن أبغضهم فببغضى أبغضهم
অর্থাৎ-সাবধান!তোমরা আঁমার সাহাবীগণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। আঁমার পরে তোমরা তাঁদেরকে (তিরস্কারের) লক্ষ্যবস্তু বানাইও না। যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে সে আঁমার প্রতি ভালোবাসা বশেই তাঁদেরকে ভালোবাসে। আর যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে সে আঁমার প্রতি বিদ্বেষবশতঃ তাঁদের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে”।
*****দলিল*****
*১. তিরমিযী-৩৮৬১
*২. ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ২২৮৪ *৩. মুসনাদে আহমদ,৪র্থ খন্ড,পৃ:৮৭ *৪. আস-সুন্নাহ,ইবনে আবি আসেম, হাদিস নং ৯৯২
★২৫. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এঁর কঠোর হুশিয়ারীঃ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ
إذا ذكر أصحابى فامسكوا
অর্থঃ “যখন আঁমার সাহাবাদের আলোচনা হয় তখন তোমরা তোমাদের জিহ্বার উপর লাগাম দিও।
[জামে সগীর,পৃঃ-২৬]
★২৬. সাহাবীদেরকে সম্মান করতে হবে,তাদের সমালোচনা করা যাবে না—–কারনঃ নবীজী সাল্লাল্লাহু-আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন “তোমরা আঁমার সাহাবীদের সম্মান করবে (কারণ তারাই তোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ); তাদের পর পরবর্তী যুগের মানুষদের (তাবেঈ), এবং এরপর তাদের পরবর্তী যুগের মানুষদের (তাবে- তাবেঈন)।। আর এরপর মিথ্যা প্রকাশিত হবে।।”
****দলিল****
*১. সুনান নাসাঈ- ৫/৩৮৭
*২. শরহে মা’আনিল আসার ত্বাহাবী- ৪/১৫০
*৩. মুসনাদ এ হুমাইদী- ৩৭ পৃষ্ঠা
[হাদিসটির সনদ সহিহ]
উল্লেখ্য:সাহাবীদেরকে মহব্বত করা ঈমানের অংশ।তাদের সাথে বিদ্বেষ রাখা বা তাদের সমালোচনা করা হারাম এবং তা ঈমানের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
✌হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : خير أمتي قرني ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم
হযরত ইমরান বিন হুসাইন (রা:) থেকে বর্ণিত,রাসূল (ﷺ) বলেন, আঁমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম তারা যারা আঁমার যুগে রয়েছে। অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত (তথা তাবেয়ীগনের যুগ) অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত। (অর্থাৎ, তাবয়ে তাবেয়ীনের যুগ)।
******দলিল******
*১. বুখারী ৪/২৮৭- ২৮৮
*২.:মুসলিম ৪/১৯৬৪
★২৭. হযরত উমর (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) বলেন,
اكرموا أصحابى فإنهم خياركم
অর্থাৎ-তোমরা আঁমার সাহাবীগণকে সম্মান কর। কেননা তাঁহারা তোমাদের মধ্যকার উত্তম মানব।
[মুসনাদে আহমাদ,১ম খন্ড,পৃ: ১১২
তাহকীক, আহমাদ শাকের,নাসায়ী, হাকেম, মেশকাত,৩য় খন্ড,পৃ:১৬৯৫]
★২৮. হযরত আবু বুরদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে,রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন:
عن أبى بردة رضي الله عنه قال : قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم – النجوم أمنة للسماء فإذا ذهبت النجوم أتى السماء ما توعد ، وأنا أمنة لأصحابي فإذا ذهبت أتى أصحابي ما يوعدون ، وأصحابي أمنة لأمتي فإذا ذهب أصحابي أتى أمتي ما يوعدون.
অর্থঃ নক্ষত্র সমুহ আসমানের জন্য আমানত স্বরুপ। যখন নক্ষত্রগুলি বিলুপ্ত হয়ে যাবে,তখন আসমানকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কেয়ামত চলে আসবে। এবং আঁমি আঁমার সাহাবীদের জন্য আমানত স্বরুপ। অতএব যখন আঁমি ইহকাল ত্যাগ করব তখন তাঁদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাঁদের (সাহাবাদের) মধ্যে ইজতেহাদি মতানৈক্য দেখা দিবে। এবং আঁমার সাহাবীরা উম্মতের জন্য আমানত স্বরুপ। অতএব যখন তাঁদের যুগের অবসান ঘটবে তখন আঁমার উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন রকমের ফেতনা-ফ্যাসাদের সুত্রপাত ঘটবে। [মুসলিম শরীফ, হা.২৫৩১]
★২৯. ইরবায ইবনে সারিয়া(রাঃ)হতে বর্ণিত যে,রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ
قال النبى صلى الله عليه وسلم: عليكم بسنتى وسنة خلفاء الراشدين المهدين
অর্থঃ আঁমার এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীন (রা:) এঁর সুন্নতকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে।
*****দলিল******
*(ক.) আবু দাউদ হাদিস-৪৬০৭
*(খ.) তিরমিযী-২৮৯১
*(গ.) ইবনে মাজাহ [ভূমিকা, ৪২]
*(ঘ.) মুসনাদে আহমদ হাদিস-১৭৬০৬
*(ঙ.) মুসনাদে বাযযার
*(চ.) ইবনে হিব্বান
*(ছ.) মুসতাদরাক লিল-হাকিম
*(জ.)তারীখে দিমাশক লি-ইবনে আসাকির
*(ঝ.) আল-মু’জামুল কাবীর,হাদিস ৬২৩
*(ঞ.) আল-আওসাত
*(ট.) আল-কাবীর লিত্তাবরানী
★৩০. রাসুলে কারীম (ﷺ) সমস্ত উম্মতকে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলে গেছেনঃ
ستفترق أمتى ثلاثا وسبعين فرقة كلهم فى النار إلا واحدة : قالوا من هى يا رسول الله! قال: ما أ نا عليه وأصحابى
অর্থঃ“ অতিশীঘ্র আঁমার উম্মত তেহাত্তর (৭৩) ফের্কায় বিভক্ত হয়ে পড়বে। তন্মধ্যে মাত্র একটি দলই মুক্তিপ্রাপ্ত এবং জান্নাতী হবে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেনঃ সেই মুক্তিপ্রাপ্ত সৌভাগ্যশালী দলটি কারা এবং এত বড় সৌভাগ্য লাভের ভিত্তি কোন নীতি বা আদর্শের উপর ? উত্তরে নবী (ﷺ) বললেন,যে নীতি,তরীকা ও আদর্শের উপর আঁমি এবং আঁমার সাহাবায়ে কেরাম আছেন।
*****দলিল*****
*১. তিরমিজী শরীফ,হাদিস:২৬৪০ *২. ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪৭৯
*৩. মুসনাদে আহমদ,৪র্থ খন্ড,পৃ:১০২
*৪. আল-মুসতাদরাক,১ম খন্ড,পৃ.১২৮
♦কোরআন ও হাদিসের আলোকে সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা ও তাঁদের সমালোচনা করা কুফরী-৪র্থ পর্ব
★৩১. হযরত আনাস (রা:)থেকে বর্ণিত।রাসূল (ﷺ) বলেন,
آية الإيمان حب الأنصار ، وآية النفاق بغض الانصار
অর্থ: ঈমানের নিদর্শন হলো, আনসারী সাহাবীদের মহব্বত এবং মুনাফেকীর নিদর্শন হলো, আনসারীদের প্রতি বিদ্বেষপোষণ।
******দলিল*****
*(ক.) বোখারী শরীফ,৭ম খন্ড,পৃ.১১৩
*(খ.) মুসলিম শরীফ,হাদিস-৭৪, ইমান অধ্যায়
★৩২. রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,
لا تزالون بخير ما دام فيكم من رآني وصحبني، والله لا تزالون بخير ما دام فيكم من رأي من رآني وصاحبني
অর্থ: তোমরা ততোদিন পর্যন্ত কল্যাণের মাঝে থাকবে যতক্ষণ তোমাদের মাঝে আঁমাকে যারা দেখেছে এবং আঁমার সংস্পর্শে থেকেছে তারা বর্তমান থাকবে। আল্লাহর শপথ,তোমরা কল্যানের মাঝে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের মাঝে এমন লোক থাকবে, যারা আঁমার সাহাবী ও সংস্পর্শ অবলম্বনকারীদেরকে দেখেছে।
*****দলিল****
*১. মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা,১২ তম খন্ড,পৃ:১৭৮
*২. ত্ববরানী ফিল কাবির,২২ তম খন্ড,পৃ.৮৫
*৩. ফাতহুল বারী,৫ম খন্ড,পৃ.৭
★৩৩.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ): হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর সাহাবায়ে কেরাম উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম জামায়াত,সর্বাধিক পবিত্র চরিত্র ও নম্র স্বভাবের অধিকারী, দ্বীনের ভিত্তি মজবুত করার জন্য এবং রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এঁর সঙ্গী বানানোর জন্য তাঁদেরকে নির্বাচন করেছেন। তাঁদের মর্যাদা উপলব্ধি কর। তাঁদেরকে অনুসরন কর। তাঁদের সীরাত ও চরীত্রকে জীবনের সম্বল বানিয়ে নাও। কারন তাঁরা আল্লাহর কাছ থেকে হিদায়াত প্রাপ্ত।[মিশকাত-২য় খন্ড,পৃঃ ৩২]
★৩৪. হযরত আনাস রাদ্বিআল্লাহু তা’লা আনহু থেকে বর্ণিত….তিনি বলেন আল্লাহ্’র প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু তা’লা আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
ইরশাদ করেন: নিশ্চই আল্লাহ তা’লা আঁমাকে নির্বাচন করেছেন.
এবং আঁমার সাহাবীগণকে নির্বাচন করেছেন।অতঃপর তাদের মধ্যে থেকে আঁমার শ্বশুড় ও জামাতা বানিয়েছেন এবং তাদেরকে আঁমার আনসার তথা সাহায্যকারী বানিয়েছেন।নিশ্চই অচিরেই শেষ যামানায় এমন সম্প্রদায়ের আগমন ঘটবে।যারা আঁমার সাহাবীদের সমালোচনা করবে৷সাবধান !এমন লোকদের সাথে বিবাহের সম্পর্ক করবেনা এবং তাদের নারীদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেনা
সাবধান!! তাদের সাথে নামায পড়বেনা। সাবধান! তাদেরকে সালাম দিবেনা, তাদের উপড় লানত অভিশাপ অবতীর্ণ হয়েছে৷
[হাকীম সৈয়দ আহমাদুল্লাহ্ নদভী
-তারীখে হাদীস ওয়া মুহাদ্দিসীন
উর্দু খন্ড ১ম-পৃষ্ঠা – ১৯৬]
★৩৫. ইমাম মালেক (রহ.) বলেন,
إنما هؤلاء أقوام أرادوا القدح في النبي صلى الله عليه وسلم فلم يمكنهم ذلك ، فقدحوا في أصحابه حتى يقال رجل سوء و لو كان رجلاً صالحاً لكان أصحابه صالحين
অর্থ: যারা সাহাবাদের ব্যপারে কুৎসা রটনা করে এবং তাদেরকে গালি দেয় এরা মূলত: রসূল (ﷺ) এঁর বিরুদ্ধেও কুৎসা রটাতে চেয়েছিলো, কিন্তু তাদের দ্বারা তা সম্ভব হয়নি। তাই তারা সাহাবাগণের ব্যাপারে মিথ্যা রটিয়েছে এবং বলেছে, অমুক সাহাবী নিকৃষ্ট লোক ছিল, অমুকে এমন ছিল তেমন ছিল ইত্যাদি। রাসূল (ﷺ) যদি নেককার ও সৎ হয়ে থাকেন, তবে তাদের নিকট তার সাহাবীরাও সৎ ও নেককার বিবেচিত হতো।
[আস-সরিমূল মাসলূল, পৃ: ৫৫৩]
★৩৬. ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেন,
إذا رأيت رجلا يذكر أحدا من الصحابة بسوء فاتهمه على الإسلام
অর্থাৎ যদি কাউকে রাসূল (ﷺ) এঁর কোন সাহাবীর সমালোচনা করতে দেখো, তবে তার ইসলামের ব্যাপারে সংশয় পোষণ করো।
[আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৮ম খন্ড, পৃ.১৪২]
★৩৭. আবূ যুর’আ (রহ.) বলেন,
فإذا رأيت الرجل ينتقص أحدا من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فأعلم انه زنديق، وذلك ان الرسول صلى الله عليه وسلم عندنا حق، والقرآن حق، وإنما أدى إلينا هذا القرآن والسنة أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم، وإنما يريدون أن يجرحوا شهودنا ليبطلوا الكتاب والسنة، والجرح بهم اولى وهم زنادقة
বলেন, তোমরা যখন কাউকে কোন সাহাবীর অবমাননা করতে দেখ, তখন বিশ্বাস করে নাও যে, সে যিন্দীক ও বির্ধমী। তা এ জন্য যে, আমাদের নিকট রাসূল (ﷺ) সত্য নবী,পবিত্র কুরআন সত্য; কুরআন হাদীস তথা পুরা দ্বীন যা আমাদের পর্যন্ত পৌছেছে, তার প্রথম যোগসূত্র হলেন সম্মানিত এ জামাত। সুতরাং যে ব্যক্তি সাহাবাগণের সমলোচনা করবে, সে আমাদের বিশ্বস্ত সাক্ষীদের সমালোচনার মাধ্যমে সম্পূর্ণ দ্বীনকে অগ্রাহ্য বলে ঘোষণা করতে চায়। অর্থাৎ ইসলামের মূল ভিত্তি ধ্বংস করে দিতে চায়। সুতরাং এজাতীয় লোকদের সমালোচনা করা উত্তম বরং এরা হলো যিন্দিক।
[আল-কিফায়া,খতীব বাগদাদী,পৃ.৯৭]
★৩৮. ইমাম আবূ আমর ইবনুস সালাহ (রহ.) বলেন, কুরআন হাদীস ও উম্মতের ইজমা হতে এ বিষয়টি সিদ্ধান্তকৃত যে, কোন সাহাবী রাযি. এর পূত- পবিত্রতা সম্পর্কে প্রশ্ন করারও সুযোগ নেই।
[উলূমুল হাদীসঃ ২৬৪]
★৩৯. ইমাম ইবনে হুমাম (রহ.) বলেন-আহলুস-সুন্নাত ওয়াল-জামা’আতের আকীদা হল,সমস্ত সাহাবায়ে কিরাম (রা:) কে পূত ও পবিত্র মনে করা, তাঁদের উপর আপত্তি উত্থাপন থেকে বেঁচে থাকা এবং তাদের প্রশংসা করা ওয়াজিব।
[মুসায়েরা- ১৩২পৃঃ]
★৪০. সকল সাহাবা (রাযি:) এঁর
সঙ্গে ভালবাসা পোষণ করা এবং তাঁদের মাঝে পারস্পরিক যে সকল ঘটনা সমূহ সংঘটিত হয়েছে তা লিখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করা, অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা করা,শ্রবণ
করা এবং করানো হতে বিরত
থাকা এবং তাঁদের সুনাম-সুখ্যাতি আলোচনা করা, তাঁদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা এবং তাঁদের প্রতি ভালবাসা রাখা,তাঁদের প্রতি কোন প্রকার আপত্তি প্রর্দশন থেকে বেচে থাকা ফরয।
[শরহে আকীদায়ে সাফারানীঃ ২/৩৮৬]
★৪১. আকীকাদাতু তাহাবী নামক কিতাবে বর্ণিত আছে, সাহাবাগণের প্রতি মুহাব্বত রাখা দ্বীন-ঈমান ও ইহসান। তাদের প্রতি বিদ্বেষ রাখা কুফর, মুনাফিকী ও সীমালংঘন [আকীদাতুত তহাবী ১৪০]
★৪২. ইমামকুল শিরোমনি ইমাম আবু হানিফা(রাঃ): আমি ইসতেদলালের(দলিল তালাশ করা) ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম কোরানকে অনুসরন করি। যদি কোরানে না পাই তাহলে রাসুলের (রাঃ) হাদিসকে অনুসরণ করি। অন্যথায় সাহাবায়ে কেরামের আছারকে (ছাহাবীদের কথা,কাজ ও সমর্থনকে বলা হয়) গ্রহন করি। [তাহযিবুত তাহযীব:১০ম খন্ড,পৃঃ ৪৮০]
★৪৩. ইমামুল মুহাদ্দিসীন ইমাম বুখারী(রাঃ):- সাহাবায়ে কেরাম শরীয়াতে মুহাম্মদীর বুনিয়াদ বা মূল-ভিত্তি।
✌ইমাম আবু দাউদ(রাঃ):-খোলাফায়ে রাশেদীনের(রাদিয়াল্লাহু আনহুম)জীবন চরিতই প্রকৃত ইসলাম।
✌ইবনে মাজাহ্:- সাহাবায়ে কেরামের জামায়াতই দ্বীনের মূল ভিত্তি।
✌ইমাম মুহিউদ্দিন আবু জাকারিয়া ইবনে শারফ আন্-নববী (রাঃ):-সাহাবায়ে কেরামের সত্যবাদিতা ও ন্যায়-পরায়ণতার উপর সমস্ত উম্মতের ঐক্যমত।
[শরহে মুসলিম,২য় খন্ড,পৃঃ-২৭২]
✌ইমামুল কালাম ইবনে হুমাম(রাঃ)-সমস্ত ইমামদের ঐক্যমতে সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি।
[তাক্বরীরুল উসুল-২য় খন্ড,পৃঃ-২৬]
✌ইমাম সুবুকি(রাঃ): সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি।
✌শাহ্ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দেসে দেহলবী(রাঃ): সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম সত্য ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্টিত।(ইজালাতুল খাফা)
✌ইমাম তাহাবী(রাঃ): আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ঐক্যমতে সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি। তবে আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে,তাঁরা মাসুম(নিস্পাপ)নন,তবে মাহফুজ(সমালোচনার উর্দ্ধে)। তাঁদের দ্বারা ভুল হওয়া স্বাভাবিক। তাঁরা মুজতাহিদ(দ্বীনের সংস্কারক)ছিলেন। ইজতেহাদি ভুলের কারনে তাঁদের মধ্যে যে (মুশাজারাত) মতানৈক্য দেখছিল এ ব্যাপারে সুকুত (নিরব) থাকাটাকে প্রাধন্যতা দেওয়া হয়েছে। আর ইজতিহাদের ক্ষেত্রে সঠিক হলে দ্বীগুন পুরস্কার পাবেন আর ভুল হলে একগুন। তবে তাঁদের সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি আল্লাহপাক মাফ করার ঘোষণা করে দিয়েছেন।
[আক্বিদাতুত তাহাবিয়্যাহ]
★৪৪. ইবনে তাইমীয়া বলেন,
وَمِنْ أُصُولِ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ سَلَامَةُ قُلُوبِهِمْ وَأَلْسِنَتِهِمْ لِأَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمَا وَصَفَهُمُ اللَّهُ بِهِ فِي قَوْلِهِ تَعَالَى: ﴿وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ وَطَاعَةُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قَوْلِهِ «لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيفَهُ»
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আরো একটি মূলনীতি হলো, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের প্রতি তাদের অন্তর ও জবান পবিত্র রাখে। অন্তর দিয়ে তাদেরকে ভালবাসে, তাদের প্রতি কোন প্রকার ঘৃণা রাখেনা এবং জবান দিয়ে তাদের সমালোচনা ও কুৎসা রটনা করেনা। যেমন আল্লাহ তাআলা তাঁর এই বাণীতে সাহাবীদের গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿وَالَّذِينَ جَاءُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ﴾
‘‘এবং যারা এসব অগ্রবর্তী লোকদের পরে এসেছে, তারা বলেঃ হে আমাদের রব, আমাদেরকে এবং আমাদের সেই সব ভাইকে মাফ করে দাও, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে৷ আর আমাদের মনে ঈমানদারদের জন্য কোন হিংসা-বিদ্বেষ রেখোনা৷ হে আমাদের রব, তুমি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু’’। [সূরা হাশরঃ ১০]
✌আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আরেকটি মূলনীতি হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীসের আনুগত্য করা। তিনি বলেন,
«لَا تَسُبُّوا أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِي فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَوْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا أَدْرَكَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيفَهُ»
‘‘তোমরা আমার কোন সাহাবীকে গালি দিয়োনা। তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ স্বর্ণও খরচ করে তাদের একজনের এক মুদ বা অর্ধ মুদ পরিমাণ দান করার সমান ছাওয়াবও পাবেনা’’।
[মানা,না মানা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ]

(সংগৃহিত: ইষৎ পরিবর্তিত)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩১৫২৫

ফেরেশতাদের মধ্যে কি নারী-পুরুষ আছে?


২৮ মার্চ, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

১৮৭৬০

বিবাহের ওয়াদা দিলে তার বিধান


২৯ নভেম্বর, ২০২২

কেরানীগঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy