আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৯২৮৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মুমূর্ষু ব্যক্তিকে তালকীন (পড়ে শোনানো) করবেلَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مَحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِলাা ইলাহা ইল্লাল্লাাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাাহ।একমাত্র আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত অন্য কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’আলার রাসুল।(সুনান তিরমিজি, হাদীস নং-৯৭৮, মুসলিম ১ : ৩০০,৯১৬)حَدَّثَنَا أَبُو سَلَمَةَ يَحْيَى بْنُ خَلَفٍ قَالَ: حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ المُفَضَّلِ، عَنْ عُمَارَةَ بْنِ غَزِيَّةَ، عَنْ يَحْيَى بْنِ عُمَارَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ» وَفِي البَاب عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، وَأُمِّ سَلَمَةَ، وَعَائِشَةَ، وَجَابِرٍ، وَسُعْدَى المُرِّيَّةِ وَهِيَ امْرَأَةُ طَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ.: «حَدِيثُ أَبِي سَعِيدٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ»আবু সালামা ইয়াইইয়া ইবন খালাফ আল- বাসরী (রা:) ..... আবু সাঈদ খুদরী (সা.) সূত্রে নবী (সা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের মৃত্যুমুখীদের لااله الا الله পড়ে শোনাও। এ বিষয়ে আবু হুরায়রা, উম্মু সালামা, আয়েশা, জাবির ও সু’দালমুরীয়া-তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ (রা.)-এর স্ত্রী (রা.) থেকে ও হাদীছ বর্ণিত আছে। সুনান তিরমিজি, হাদীস নং-৯৭৮হাদীসে লাা ইলাহা ইল্লাল্লাাহু এসেছে আর আপনারা দোয়াতে লাা ইলাহা ইল্লাল্লাাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাাহ যোগ করেছেন, এটা কীভাবে ?,

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم






মাইয়্যেতকে لا اله إلا الله محمد رسول الله এর তালক্বীন করা হলে সেটা হাদীসে বর্ণিত لااله الا الله এর পরিপন্থী হবে না। হাদীসে বর্ণিত لااله الا الله দ্বারা পূর্ণ কালিমাই উদ্দেশ্য। আর তা হলোঃ لا اله إلا الله محمد رسول الله

প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, বিস্তারিত জানতে আপনার জন্য নিম্নের প্রবন্ধটি পেশ করা হলো।

কালিমায়ে তাইয়্যিবাহ নিয়ে সংশয় কেনঃ

لا اله إلا الله محمد رسول الله

এতে স্বীকৃতি হয়েছে আল্লাহর একত্মবাদের। সাথে সাথে মহানবী (সা.)-এর রাসূল হওয়ার স্পষ্ট ঘোষণা। এরই নাম ইসলাম। অন্যান্য যাবতীয় আমল এর উপরেই ভিত্তি ও নির্ভরশীল। এই ভিত্তি সঠিক হলেই সামনে অগ্রসর হওয়ার পালা। তাই ছোট শিশুদেরকে আমরা এই কালিমা শেখাই। সারা জীবন এরই জিকির করি। মরণকালে এই কালিমার তালক্বীন করি। মরতে চাই এই কালিমা জপতে জপতে। জীবনে মোদের এই কালিমা, মরণে থাকবে এই কালিমা, হাশরে মীযানেও চাই এই কালিমা। তাই এ কালিমার গুরুত্ব ইসলামে অপরিসীম অতুলনীয়। আরব আজম বিশ্বজুড়ে সব মুসলমানের অন্তরে মুখে মুখে এই কালিমা।

কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের সাথে ব্যক্ত করতে হয়, সাম্প্রতিককালে কিছু ভাই এই কালিমা নিয়ে প্রশ্ন ও সংশয়ের অবতারণা করেছেন, তাই অনুসন্ধিৎসু পাঠকগণ এ বিষয়ে সঠিক তথ্য জানার আগ্রহ আমাদের কাছে ব্যক্ত করে যাচ্ছেন।

এমতাবস্থায় এই কালিমা সম্পর্কে হাদীসের অবস্থান, আরবী ভাষাগত বিশ্লেষণ ও আরব আজম তথা মুসলিম বিশ্বের অবস্থান উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।

হাদীসে পাকে কালিমায়ে তায়্যিবা :

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” এই কালিমাটি প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি নির্ভরযোগ্য হাদীসে আমার হস্তগত হয়েছে। এর মধ্যে আধা ডজন হাদীসকে হাদীস বিশারদ বিজ্ঞ ইমামগণ সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ছাড়া এক ডজনের মতো আছে হাসান বা উত্তম ও নির্ভরযোগ্য হাদীস। আর অনেকগুলো রয়েছে জয়ীফ হওয়া সত্ত্বেও আমল করার যোগ্য। সব মিলে এর গ্রহণযোগ্যতা আরো অনেক অনেক গুণে বৃদ্ধি পায়। বেড়ে যায় দলিল হিসেবে এর স্বচ্ছতা। নিম্নে কয়েকটি হাদীস শুধু উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হলো।

হাদীস নম্বর এক.

عن انس بن مالك قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: دَخَلْتُ الجَنَّةَ فَرَأيْتُ فِي عارِضَتِي الجَنَّةِ مَكْتُوباً ثلاثة أسطر بالذهب: السطر الأول لا إله إِلَّا الله محمَّدٌ رَسوُلُ الله والسَّطرُ الثَّانِي ما قدمنا وَجَدْنا وَمَا أكَلْنا رَبِحْنا وَمَا خَلَّفْنا خَسِرْنا والسَّطْرُ الثَّالِثُ أُمَّةٌ مُذْنِبَةٌ وَرَبٌّ غَفُورٌ

“হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ইরশাদ করেন, মেরাজকালে আমি বেহেশতে প্রবেশের সময় এর দু’পাশে দেখি তিনটি লাইনে স্বর্ণাক্ষরে লেখা :

এক. লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।

দুই. আমরা যে ভালো কর্ম পেশ করেছি, তা পেয়েছি। যা খেয়েছি তা থেকে উপকৃত হয়েছি। যা ছেড়ে এসেছি, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

তিন. উম্মত হলো গোনাহগার, আর রব হলো ক্ষমাশীল।

(জামেউস সগীর সুয়ূতী ১/৮৭১ হাদীস নং ৪১৮৬, ইমাম সুয়ূতী লেখেন, হাদীসটি সহীহ)

হাদীস নম্বর দুই.

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত লম্বা একটি হাদীসে রাসূল (সা.) তদানীন্তন কাফের ও সত্যিকারের মুসলমানদের অবস্থার বিবরণ দিতে গিয়ে নি¤œবর্ণিত আয়াতের আলোকে বলেন-

إِذْ جَعَلَ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي قُلُوبِهِمُ الْحَمِيَّةَ حَمِيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ فَأَنْزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَى رَسُولِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَأَلْزَمَهُمْ كَلِمَةَ التَّقْوَى وَكَانُوا أَحَقَّ بِهَا وَأَهْلَهَا وهى لا اله إلا الله محمد رسول الله”

কাফেররা মুসলমানদের সাথে সেই অজ্ঞ যুগের বাড়াবাড়িতে লিপ্ত ছিল। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা’আ লা (মুসলমানদের একত্মবাদের ফলে) রাসূল (সা.) ও মুমিনদের ওপর স্বীয় প্রশান্তি অবতরণ করেন। আর তাদের জন্য তাকওয়ার কালিমা আবশ্যক করে দেন। যার সত্যিকার ধারক তারাই। এই তাকওয়ার কালিমাটি হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। (বায়হাকী পৃ. ১৩১ কিতাবুল আসমা ওয়াসসিফাত)

এই হাদীসের সব বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য, হাদীসটি সহীহ।

উল্লেখ্য, এই হাদীসটি মূলত কুরআনে কারীমের সূরায়ে ফাতহ-এর ২৬ নম্বর আয়াতে উল্লিখিত كلمة التقوى (কালিমায়ে তাক্বওয়া)-এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বর্ণিত অসংখ্য হাদীসের একটি মাত্র। এ ছাড়া তাফসীরের প্রায় সব কিতাবে কালিমায়ে তাক্বওয়ার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেছেন, তা হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। প্রায় ৫০টিরও বেশি তাফসীর গ্রন্থ আমরা যাচাই করেছি। বিশেষ কয়েকটি গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/১৬৫, রূহুল মা’আনী ১৩/২৯২, কুরতুবী ১৬/১৯০, তাবারী ১১/৩৬৫, বাগাবী ৫/১১৬)

হাদীস নম্বর তিন.

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন, কুরআনে কারীমের সূরায়ে কাহাফের ৮২ নম্বর আয়াত- “এর নিচে ছিল তাদের গুপ্ত ধন” গুপ্ত ধন বলতে একটি স্বর্ণের বোর্ড, এতে কয়েকটি বিষয় লেখা ছিল। সবশেষে লেখা ছিল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। (তাবরানী কিতাবুদ দু’আ হাদীস নং ১৬২৯, বায়হাকী যুহদ, হাদীস নং ৫৪৪, সুয়ূতী আদদুররুল মনসূর ৯/৬০০)

এই হাদীসের সব বর্ণনাকারী পরিপূর্ণ নির্ভরযোগ্য বা ثقة শুধু বুশাইর নামক একজন যাকে صدوق বা গ্রহণযোগ্য

বলা হয়েছে। তাই হাদীসটি হাসান বা অন্যান্য হাদীসের সমন্বয়ে সহীহ।

হাদীস নম্বর চার.

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: «كَانَتْ رَايَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَوْدَاءَ وَلِوَاؤُهُ أَبْيَضُ، مَكْتُوبٌ عَلَيْهِ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ»

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঝাণডাটি ছিল কালো এবং পতাকাটি ছিল সাদা রঙের। এই পতাকায় লেখা ছিল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। (আল মু’জামুল আওসাত তাবরানী ১/১২৫ হাদীস নং ২২১, শামায়েলে ইমাম বাগাবী হাদীস নং ৮৯৪) এই হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য। একজন বর্ণনাকারী “হাইয়্যান” কেউ কেউ অপরিচিত বলে আপত্তি করার সুযোগ খুঁজেছেন। কিন্তু এতে এমন কোনো সুযোগ নেই। তার সম্পর্কে হাদীস বিশারদ ইমাম আবু হাতেম (রহ.) বলেন صدوق নির্ভরযোগ্য। এ ছাড়া ইমাম বাযযার (রহ.) তাকে সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস বলে অবি হত ক রে ন। ( অ াল জা রহ ওয়াত্তা’দিল ৩/২৪৬)

হাদীস নম্বর পাঁচ.

عن يوسف بن صهيب، عن عبد اللَّه بن بريدة، عن أبيه، قال: انطلق أبو ذر ونعيم ابن عم أبي ذر، وأنا معهم يطلب رسول اللَّه صلّى اللَّه عليه وآله وسلّم وهو مستتر بالجبل، فقال له أبو ذر: يا محمد، أتيناك لنسمع ما تقول، قال: أقول لا إله إلا اللَّه محمد رسول اللَّه، فآمن به أبو ذر وصاحبه.

বুরাইদা (রা.) বলেন, আবুজর ও নুআইম তারা দুজন রাসূল (সা.)-এর খুঁজে বের হন। আমি তাঁদের সাথে ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন এক পাহাড়ের আড়ালে ছিলেন। তখন আবুজর তাঁকে বলেন, হে মুহাম্মদ আপনি কি বলেন আমরা শুনতে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি বলি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। (আল ইসাবা ইবনে হাজর ৬/৩৬৫, হাদীস নং

৮৮০৯, যিয়াদাতুল মাগাযী ইউনুস ইবনে বুকাইর)

এই হাদীসের সনদ সহীহ, সব বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।

** সংশয়ের অবতারণা :

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) এই কালিমা আরব আজম বিশ্বজুড়ে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এতে কারো কোনো সংশয় বা মতভেদ নেই। সাম্প্রতিক কালে গুটি কয়েকজন চিহ্নিত ব্যক্তিবর্গ জনমনে নানান সন্দেহের বীজ বপন করে যাচ্ছে। এদের অন্যতম দুটি সংশয় নি¤œরূপ :

সংশয় এক.

বর্তমানে কতিপয় ব্যক্তিবর্গ বলে বেড়াচ্ছে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” কলিমাটি এভাবে কোনো

হাদীসে নেই। এসব মিথ্যা কাহিনী। (ইসলামের মূলমন্ত্র কলিমায়ে তায়্যিবাআব্দুল্লাহ ফারুক ৪৩, ৪৭)
সম্মানিত পাঠক! আশা করি উপরোল্লিখিত হাদীসগুলোর আলোকে আপনারা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছেন যে, তাদের এই দাবি সম্পূর্ণ অবাস্তব ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

সংশয় দুই.

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” এই কলিমাটিতে দুটি বাক্য আছে। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- একটি বাক্য। আর মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ দ্বিতীয় বাক্য। সব ভাষাতেই দুটি বাক্যের মাঝে পৃথক করার কোনো না কোনো বিভাজন শব্দ ব্যবহার করতে হয়। আরবীতে حرف عطف বা বিভাজন শব্দের ব্যবহার আছে। তাই এই দুটি বাক্যের মধ্যে বিভাজন শব্দ

থাকার প্রয়োজন ছিল। অন্যথায় দুটি বাক্য এক হয়ে এতে শিরকের অর্থ সৃষ্টি হবে। বিষয়টি বোঝার জন্য মনে করেন মুহসিন ও চোর বললে দুজনকে বোঝায়। আর ‘ও’ ব্যতীত মুহসিন চোর বললে একই ব্যক্তি বা যে মুহসিন সেই চোর এবং যে চোর সেই মুহসিন বোঝাবে।

এভাবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’-এর মধ্যে কোনো বিভাজন শব্দ না থাকায় দুটি বাক্য একই অর্থে রূপান্তরিত হবে, যা শিরক ব্যতীত আর কিছুই না। তাই যারা এই কলিমা পড়বে ও এ অনুযায়ী আমল করবে তারাও মুশরিক। বরং তাদের ভাষ্যে যারা এই কালিমা পড়ে তারা আল্লাহ ও রাসূলকে দু’ভাইয়ে পরিণত করে থাকে। (নাউজু বিল্লাহ) (কালিমায়ে তাইয়্যিবা – আব্দুল্লাহ ফারুক ১০)

নিরসন :

প্রিয় পাঠক! আরবী ভাষা, বাংলা ভাষাসহ সব ভাষাতেই বিভাজন শব্দ আছে ঠিক। কিন্তু যেকোনো দুটি শব্দের মধ্যে অথবা যেকোনো দুটি বাক্যের মধ্যে বিভাজন শব্দ ব্যবহার করতেই হবে এমন দাবি সম্পূর্ণরূপে ভুল। এর কোনো ভিত্তি নেই। বরং তা আরবী ভাষায় فصاحت ও بلاغت বা আরবী ভাষার সৌন্দর্য এবং মাধুর্যপূর্ণ ধারাবাহিকতা ও বর্ণনা বিন্যাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গ্রন্থসমূহে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পেশ করা হয়েছে। জানার বিষয়, পাঁচটি স্থান আছে, যেখানে বিভাজন শব্দ ব্যবহার না করাই সৌন্দর্য ও মাধুর্যতা। তার পরও দুটি শব্দ বা দুটি বাক্য ভিন্ন ভিন্ন অর্থে গণ্য হবে। এমন স্থানগুলোর অন্যতম হলো-

ان يكون بين الجملتين تباين تام…. بأن لا يكون بينهما مناسبة فى المعنى كقولك على كاتب الحمام طائر

দুটি শব্দ বা বাক্য যদি অর্থগতভাবে সম্পূর্ণ বিপরীত বা ভিন্ন ভিন্ন হয় তাহলে এর মধ্যে বিভাজন শব্দ ছাড়াই স্পষ্ট

বিভাজন বোঝা যায়। যেমন আলী লিখক পাখিটি উড়ন্ত। (দুরুসুল বালাগা ১৪৭, মুখতাসারুল মা’আনী ২/২৩৮) এইভাবে আগুন পানি, আকাশ-পাতাল, আসমান-জমীন, ইত্যাদি বহুল প্রচলিত বিপরীতমুখী শব্দ বা বাক্যের মাঝে বিভাজন শব্দ না হওয়াই ভাষার
মাধুর্যতা। এগুলোতে বিভাজন শব্দ না থাকা সত্ত্বেও দুটিকে কেউ এক গণ্য করবে না। তেমনিভাবে আল্লাহ রাসূল দুটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। আল্লাহ হলেন ¯্রষ্টা রাসূল হলেন সৃষ্টি। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এই বাক্যে আল্লাহর একত্মবাদের আলোচনা আর মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ এই বাক্যে রাসূল (সা.)-এর রিসালাত বা রাসূল হওয়ার আলোচনা হয়েছে। তাই ¯্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে যেমন ব্যবধান ও বৈপরীত্ব, ঠিক তেমনি বাক্য দুটিতে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। এ জন্য দুটি বাক্যের মধ্যে কোনো বিভাজন শব্দ حرف عطف না থাকা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিভাজন বোঝা যাচ্ছে। তাই এই দুই বাক্যের মধ্যে বিভাজনমূলক শব্দ ব্যবহার না করাই ভাষার সৌন্দর্য ও মাধুর্যতা বৃদ্ধি করে।

ইজমা :

মুসলিম বিশ্বে আরব ও আজমে এই কালিমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এতে কারো কোনো মতভেদ নেই। দ্বিধা নেই। নেই কোনো ভুল বুঝাবুঝি ও সংশয়ের লেশমাত্র। আজ থেকে প্রায় একশত বছর পূর্বে বাদশা সাউদ সৌদি আরবে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। সে দিন তাঁর ধর্মবিষয়ক প্রাইম উপদেষ্টা ছিলেন কট্টর সালাফী ও আহলে হাদীসপন্থী নেতা বর্তমান সালাফীদের ইমাম আব্দুল ওয়াহাব নজদী। সেসময়েও আরবের জাতীয় পতাকায় খচিত ছিল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। আজো তা বহাল আছে।

আরব বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গবেষক আহলে হাদীস মতবাদের মান্যবর ইমাম, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) লিখেন

دين الاسلام مبنى على اصلين، من خرج عن واحد منها فلا عمل له ولا دين: ان نعبد الله وحده ولا نشرك به شيئا وعلى ان نعبد بما شرع، لا بالحوادث والبدع هو حقيقة قول: “لا اله إلا الله محمد رسول الله:

ইসলামের মূল ভিত্তি দু’টি। যে এর কোনো একটি পরিত্যাগ করবে তার যাবতীয় আমল বৃথা। তার কোনো দ্বীন ধর্ম নেই। আল্লাহর কোনো শরীক না করে তাঁর ইবাদত করা এবং বিদআত ও কুসংষ্কার পরিহার করে রাসূল (সা.) আনীত দ্বীন গ্রহণ করা। যা এক বাক্যে : “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। (আর রাদ্দু আলাল বিকরি-৫৩, তরজামানুস সুন্নাহ ২/৪৫)

এ পরিসরে আব্দুল ওয়াহাব নজদীর একটি বাক্য নিম্নে উল্লেখ করছি। তিনি লিখেন-

قاتل ابو بكر مانعى الزكاة وهم يقولون : لا اله إلا الله محمد رسول الله

যাকাত আদায় না করার ফলে তাদের সাথে আবু বকর যুদ্ধ করেন, অথচ তারা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” পড়ত। এখানে আব্দুল ওয়াহাব নাজদী একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। তবে এতে তিনি কালিমাটি পরিপূর্ণ লিখেছেন। তার কোনো আপত্তি থাকলে তিনি তা উল্লেখ করতেন। তাই যারা ইমাম ইবনে তাইমিয়া ও আব্দুল ওয়াহাব নজদীর অনুসারী বলে দাবি করে তাদের আরো ভেবে দেখা প্রয়োজন। (মাজমূআতুত তাওহীদ-৪)

আফগানিস্তানের পতাকায় এই কালিমা অঙ্কিত দেখেছি। দেখেছি কা’বা ঘরের গিলাফেও অঙ্কিত আছে এই কালিমা।সৌদী আরবের পতাকায়ও এ কালিমা অংকিত আছে।

মোট কথা, আরব আজম ও সমগ্র বিশ্বে কোনো ধরনের মতানৈক্য ছাড়াই এ কালিমা চলে আসছে। তাই বলা যায় এই কালিমা বিশুদ্ধতার ব্যাপারে সমগ্র উম্মতের ঐক্যমত বা ইজমা চলে আসছে। আর ইজমা হলো শরীয়তে ইসলামিয়ার একটি প্রমাণ্য দলিল।

মোট কথা, কালিমায়ে তায়্যিবার ইঙ্গিত কুরআনে কারীমে উল্লেখ আছে। তাফসীর গ্রন্থসমূহে এর উদ্ধৃতি আছে।

সহীহ হাদীসে এর সুস্পষ্ট বর্ণনা আছে। আছে আরবী ভাষার রূপমাধুর্যে এর শ্রেষ্ঠতম সাবলীলতা। আরো আছে, আরব আজম মুসলিম বিশ্বের অনড় ঐক্যমত ও ইজমায়ে উম্মত।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৪৯৪৩০

সফর ও মুসাফিরের নামাজ


২২ ডিসেম্বর, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৬৬৫৮০

শেষ রাতে ঘুম থেকে ওঠার কুরআনী আমল।


৬ জুলাই, ২০২৪

সাভার

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

৬৬৫৩৫

অন্যের ঘরে প্রবেশের জন্য অনুমতি গ্রহণ


৫ জুলাই, ২০২৪

ওয়েস্ট বেঙ্গল ৭০০১৩৫

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৬০৯৭৫

শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে করণীয়


১২ মে, ২০২৪

নামবিহীন রাস্তা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy