গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারিনী মা-বোনদের রোযা না রাখার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?
প্রশ্নঃ ৯২৮৫৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি আলহামদুলিল্লাহ সাত মাসের গর্ভবতী এই অবস্থায় আমি চেষ্টা করছি রোজা ও নামাজ স্বাভাবিক নিয়মে পড়ার,,,, তার জন্য বাড়ির লোক রাগ করছে বাচ্চার ক্ষতি হবে বলে,,, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি পারছি ,, এই অবস্থায় আমার করনীয় কি?
৪ মার্চ, ২০২৫
কুষ্টিয়া
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য যিনি আপনার মনে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে আগ্রহ সৃষ্টি করে দিয়েছেন, আপনাকে সামর্থ্য দিয়েছেন তাঁর আদেশ নিষেধ পালন করার জন্য।
প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!! অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, বর্তমানে কিছু মানুষ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আল্লাহ তায়ালার বিধান পালন করতে গেলে নিজের ক্ষতি হবে মনে করে।
অথচ তারা ভুলে গিয়েছে যে, জীবন-মরণ, সুস্থতা-অসুস্থতা সবকিছু আল্লাহ তাআলারই হাতে।
সুতরাং আল্লাহ তায়ালার বিধান পালন করতে গেলে নিজের ক্ষতি হবে এরকম চিন্তা-ভাবনা করা বোকামি, এবং নেক সুরতে শয়তানের ধোকা ছাড়া আর কিছু নয়।
পূর্বে দেখা গিয়েছে যে, গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারিনী মা-বোনদের অবস্থা অন্যান্য মাস থেকে রমাযান মাসে ভালোই কেটেছে। কারণ সবকিছুই তো আল্লাহ তাআলারই হতে।
প্রিয় দ্বীনী বোন!! সব থেকে বড় কথা হলো, মা যেমন তাঁর সন্তানকে ভালোবাসেন, মহান আল্লাহ্ তা'আলা তার চেয়েও বেশি বান্দাদের ভালোবাসেন। তাহলে কি আমরা সন্তানের ক্ষতি হবে বলে রোজা না রেখে আল্লাহ তায়ালা থেকে ভালোবাসা বেশি দেখাচ্ছি না? যা কখনো সম্ভব নয়। সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং: ৪২৯৩
তবে যারা বাস্তবিকভাবেই দুর্বল, তাদের ব্যাপারে ইসলাম ছাড় দিয়েছে।
★★ গর্ভবতী ★★
রোযা রাখার কারণে গর্ভবতী মহিলা নিজের কিংবা সন্তানের প্রাণহানী বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানীর প্রবল আশঙ্কা করলে তার জন্য রোযা ভঙ্গ করা জায়েয। পরে এ রোযা কাযা করে নিবে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى وَضَعَ عَنِ الْمُسَافِرِ الصَّوْمَ وَشَطْرَ الصَّلاَةِ وَعَنِ الْحَامِلِ أَوِ الْمُرْضِعِ الصَّوْمَ أَوِ الصِّيَامَ "
অর্থ : আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য রোযার হুকুম শিথিল করেছেন এবং আংশিক নামায কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনীর জন্যও রোযার হুকুম শিথিল করেছেন।-জামে তিরমিযী- ৭১৫,
حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ الدِّمَشْقِيُّ حَدَّثَنَا الرَّبِيعُ بْنُ بَدْرٍ عَنْ الْجُرَيْرِيِّ عَنْ الْحَسَنِ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ رَخَّصَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم لِلْحُبْلَى الَّتِي تَخَافُ عَلَى نَفْسِهَا أَنْ تُفْطِرَ وَلِلْمُرْضِعِ الَّتِي تَخَافُ عَلَى وَلَدِهَا
হযরত আনাস ইবন মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে গর্ভবর্তী মহিলা নিজের জীবনের আশংকা করে এবং যে স্তন্যদানকারী মহিলা নিজের সন্তানের জীবনের উপর আশংকা করে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এদের উভয়ের জন্য সাওম ছেড়ে দেওয়ার অবকাশ দিয়েছেন। সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস নং: ১৬৬৮
شرح مختصر الطحاوی للجصاص۔۔ :
"قال أبو جعفر: (وإذا خافت الحامل والمرضع على ولديهما: أفطرتا، وكان عليهما القضاء، ولا إطعام عليهما مع ذلك)، وذلك لأنهما معذورتان في الإفطار."
(شرح مختصر الطحاوی للجصاص: كتاب الصيام (2/ 437)،ط. دار البشائر الإسلامية - ودار السراج، الطبعة: الأولى 1431 هـ - 2010 م)
حاشیة الطحطاوی علی مراقی الفلاح ۔۔ :
"قوله: "ويجوز الفطر لحامل"......."ومرضع" هي التي شأنها الإرضاع فتسمى به ولو في غير حال المباشرة."
(حاشية الطحطاوي على مراقي الفلاح: كتاب الصوم ، باب ما يفسد الصوم ويوجب القضاء، فصل في العوارض(ص: 684)،ط. دار الكتب العلمية بيروت،الطبعة: الطبعة الأولى 1418هـ - 1997م)
فتاوی تاتارخانیہ ؛ :
"وقال في الاصل: إذا خافت الحامل أو المرضع على أنفسهما أو على ولدهما جاز الفطر و عليهما القضاء". ( ٢/ ٣٨٤، إدارة القرآن و العلوم الإسلامية)
★★ দুগ্ধদানকারিনী ★★
দুগ্ধদানকারিনী মা রোযা রাখলে যদি সন্তান দুধ না পায় আর ঐ সন্তান অন্য কোনো খাবারেও অভ্যস্ত না হয়, ফলে দুধ না পাওয়ার কারণে সন্তানের মৃত্যুর বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানীর আশঙ্কা হয়, তাহলে তিনি রোযা ভাঙ্গতে পারবেন এবং পরে কাযা করে নিবেন। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى وَضَعَ عَنِ الْمُسَافِرِ الصَّوْمَ وَشَطْرَ الصَّلاَةِ وَعَنِ الْحَامِلِ أَوِ الْمُرْضِعِ الصَّوْمَ أَوِ الصِّيَامَ "
অর্থ : আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য রোযার হুকুম শিথিল করেছেন এবং আংশিক নামায কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনীর জন্যও রোযার হুকুম শিথিল করেছেন।-জামে তিরমিযী- ৭১৫,
حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ الدِّمَشْقِيُّ حَدَّثَنَا الرَّبِيعُ بْنُ بَدْرٍ عَنْ الْجُرَيْرِيِّ عَنْ الْحَسَنِ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ رَخَّصَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم لِلْحُبْلَى الَّتِي تَخَافُ عَلَى نَفْسِهَا أَنْ تُفْطِرَ وَلِلْمُرْضِعِ الَّتِي تَخَافُ عَلَى وَلَدِهَا
হযরত আনাস ইবন মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে গর্ভবর্তী মহিলা নিজের জীবনের আশংকা করে এবং যে স্তন্যদানকারী মহিলা নিজের সন্তানের জীবনের উপর আশংকা করে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এদের উভয়ের জন্য সাওম ছেড়ে দেওয়ার অবকাশ দিয়েছেন। সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস নং: ১৬৬৮
شرح مختصر الطحاوی للجصاص۔۔ :
"قال أبو جعفر: (وإذا خافت الحامل والمرضع على ولديهما: أفطرتا، وكان عليهما القضاء، ولا إطعام عليهما مع ذلك)، وذلك لأنهما معذورتان في الإفطار."
(شرح مختصر الطحاوی للجصاص: كتاب الصيام (2/ 437)،ط. دار البشائر الإسلامية - ودار السراج، الطبعة: الأولى 1431 هـ - 2010 م)
حاشیة الطحطاوی علی مراقی الفلاح ۔۔ :
"قوله: "ويجوز الفطر لحامل"......."ومرضع" هي التي شأنها الإرضاع فتسمى به ولو في غير حال المباشرة."
(حاشية الطحطاوي على مراقي الفلاح: كتاب الصوم ، باب ما يفسد الصوم ويوجب القضاء، فصل في العوارض(ص: 684)،ط. دار الكتب العلمية بيروت،الطبعة: الطبعة الأولى 1418هـ - 1997م)
والله اعلم بالصواب
আরিফুর রহমান
মুফতী, ফাতাওয়া বিভাগ, মুসলিম বাংলা
গবেষক, হাদীস বিভাগ, মুসলিম বাংলা
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১