আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৯২০৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হজরত,জুমার খুতবা কেন আরবিতেই হতে হবে? একটু বিস্তারিত জানতে চাই,ইমাম আবু হানিফা রঃ নাকি বলেছেন ফার্সিতে দিলেও হবে?,

৫ অক্টোবর, ২০২১

কলাপাড়া

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


وعليكم السلام و رحمة الله ،
আরবী ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় খুতবা প্রদান করা বিদ’আত ও মাকরূহে তাহরীমি। কারণ তা রাসূলুল্লাহ (সা.), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবেতাবেঈন এবং গোটা মুসলিম উম্মাহর সর্বযুগে সর্বসম্মত আমলের পরিপন্থী। জুমু’আর নামাযের আগে নবী করিম (সা.) দুটি খুতবা দিতেন। দুই খুতবার মাঝখানে অল্প সময় বসতেন। (মুসলিম শরীফ, ১/২৮৩, হাদীস-১৪২৬) রাসূল (সা.)-এর উভয় খুতবা সর্বদাই আরবী ভাষায় হতো।

অতএব, দুই খুতবা আরবী ভাষায় হওয়া সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। জুমু’আর দিন খুতবার আগে স্থানীয় ভাষায় যে দ্বীনি আলোচনা করা হয়, তা খুতবায়ে মাসনুনাহ বলে গণ্য হবে না। কিছু কিছু মানুষ এই দ্বীনি আলোচনাকেও জুমু’আর খুতবা মনে করেন। তাঁদের ধারণা সঠিক নয়। খুতবা আরবী ভাষাতেই হতে হবে, তার প্রমাণসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
খুতবা আরবী ভাষায় দেওয়া রাসূলুল্লাহ (সা.), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবেতাবেঈনসহ আজ পর্যন্ত উম্মতের ধারাবাহিক আমল। অতএব তার বিপরীত আমল করা বিদ’আত ও মাকরূহে তাহরীমি তথা নাজায়েয।
উপমহাদেশের বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ.) তাঁর রচিত মুয়াত্তায়ে মালেকের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মুসাফফায় উল্লেখ করেন:
لما لا حظنا خطبة النبى صلى الله عليه وسلم وخلفائه رضى الله عنهم وهلم جرا فنجد فيها وجوذ اشياء، منها الحمد والشهادتان والصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم والامر بالتقوى وتلاوة آية والدعاء للسملمين والمسلمات وكون الخطبة عربية
অর্থ: রাসূলুল্লাহ (সা.), খুলাফায়ে রাশেদীন, তাবেঈন, তাবেতাবেঈন এবং পরবর্তী যুগের ফুকাহায়ে কেরাম ও উলামায়ে দ্বীনের খুতবাসমূহ লক্ষ করলে দেখা যায় যে তাঁদের খুতবায় নিম্নের বিষয়গুলো ছিল।
যথা :
আল্লাহ তাআলার হামদ, শাহাদাতাইন (অর্থাৎ তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করা) রাসূল (সা.)-এর প্রতি দরূদ, তাকওয়ার আদেশ, পবিত্র কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত, মুসলমানদের জন্য দু’আ। তাঁরা সকলেই আরবী ভাষায় খুতবা দিতেন। গোটা মুসলিম বিশ্বের বহু অঞ্চলের ভাষা আরবী নয়, তবুও সর্বত্র আরবী ভাষায়ই খুতবা দেওয়া হতো। (মুসাফফা, ১/১৫৪)
সুতরাং রাসূল স., খুলাফায়ে রাশেদীন, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈনের খুতবার উপর ভিত্তিকরে ফুকাহায়ে কিরাম বলেন- খুতবাতে নিম্নের বিষয়গুলো থাকা সুন্নাত।
যথা:.
১. হামদ ২.সানা ৩.শাহাদাতাইন ৪.রাসূল স. এর উপর দরুদ ৫.তাকওয়ার আদেশ মূলক কুরআনের আয়াত ৬.আরবী ভাষায় ওয়াজ নসীহত ৭.দুই খুতবার মাঝে বসা ৮.দ্বিতীয় খুতবায় পুনরায় হামদ, সানা, শাহাদাতাইন ও দরুদ পাঠ করা। ৯.সকল মুসলমানদের জন্য দুআ করা। ১০.উভয় খুতবা নামাযের তূলনায় সংক্ষিপ্ত হওয়া ইত্যাদি।
আল্লামা কাসানী র. বলেন-
وصح الاقتصار في الخطبة علي ذكرخالص لله تعالي نحو تسبيحة أو تحميدة أو تهليلة او تكبيرة مع الكراهة لترك السنة عند الامام وقالا: لابد من ذكر طويل يسمي خطبة واقله قدر التشهد. (حاشية الطحطاوي: ص৫১৩، وكذا في البدائع: ১/৫৯০)
এমন মনে করা ঠিক নয় যে, রাসূল (সা.) ও সাহাবীদের যুগে অনারবী ভাষায় খুতবা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। কারণ, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শেষ যামানায় দলে দলে লোক ইসলামে প্রবেশ করতে থাকে। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন,
وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا
অর্থ : ‘আর আপনি দেখবেন লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করছে।’ (সূরা নাছর, আয়াত-২)
উক্ত আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পেছনে বিভিন্ন ভাষার মানুষ নামায আদায় করত। খুতবা ছাড়া দ্বীনি শিক্ষার অন্য কোনো মাধ্যমও তেমন ছিল না। তারপরও রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্য ভাষায় খুতবা অনুবাদের ব্যবস্থা করেননি। তদ্রুপ সাহাবীগণের যুগে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সম্পর্কে বুখারী শরীফ ১/১৩ তে বর্ণিত আছে, তিনি নিজের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য দোভাষী ব্যবহার করতেন। তবুও তিনি স্থানীয় ভাষায় খুতবা দেওয়া বা খুতবার অনুবাদের ব্যবস্থা করেননি। খুতবাকে দুই রাক’আত নামাযের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। তাই নামাযে যেমন ক্বেরাত আরবী ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় আদায় করা যায় না, খুতবাও আরবী ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় দেওয়া যাবে না।
আল্লামা আবু বকর ইবনে শাইবা (রহ.) উল্লেখ করেন,
عن عمر بن الخطاب أنه قال: إنما جعلت الخطبة مكان الركعتين
অর্থ: হযরত উমর (রা.) বলেন, জুমু’আর খুতবাকে দুই রাক’আত নামাযের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, হাদীস-৫৩২৪)
অন্যত্র হযরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে,
عن عمر بن الخطاب قال: كانت الجمعة اربعا فجعلت ركعتين من أجل الخطبة
অর্থ: হযরত উমর (রা.) বলেন, জুমু’আর নামায চার রাক’আত ছিল। এরপর খুতবার কারণে দুই রাক’আত করা হয়েছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, হাদীস-৫৩৩১)
ইমাম বায়হাকী (রহ.) আস-সুনানুল কুবরা গ্রন্থে ৫৭০৩ নং হাদীসে উল্লেখ করেন,
كانت الجمعة اربعا فجعلت الخطبة مكان الركعتين
অর্থ : জুমু’আর নামায চার রাক’আত ছিল। খুতবাকে দুই রাক’আতের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে খুতবাকে যিকর বলা হয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন.
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (৯)
অর্থ : হে মুমিনগণ, যখন জুমু’আর দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরীনগণ লিখেছেন, এখানে ‘যিকর’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ‘খুতবা’। এ ব্যাপারে নিম্নে কয়েকটি তাফসীরের উদ্ধৃতি পেশ করা হলো :
১। তাফসীরে রুহুল মাআনী, খ- ১৩, পৃষ্ঠা ৭০২-এ উল্লেখ আছে,
والمراد بذكر الله الخطبة الصلاة
অর্থ: আল্লাহর যিকর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, খুতবা ও নামায।
২। ইমাম রাযী (রহ.) আত-তাফসীরুল কাবীর গ্রন্থে লেখেন, (খ- ৯, পৃষ্ঠা ৩০)
الذكر هو الخطبة عند الأكثر من اهل التفسير
অর্থ : অধিকাংশ মুফাসসিরগণের নিকট যিকর দ্বারা খুতবা উদ্দেশ্য।
৩। আহকামুল কোরআন খ-৩, পৃষ্ঠা ৫৯৬-এ বর্ণিত আছে,
ويدل على ان المراد بالذكر ههنا الخطبة، ان الخطبة هى اللتى تلى النداء، وقد امر بالسعى اليه
অর্থ : যিকর থেকে যে খুতবাই উদ্দেশ্য, তার প্রমাণ আল্লাহ তা’আলা বলেন, আযান হলে যিকিরের দিকে আসো। আর আযানের সাথে সাথে খুতবাই প্রদান করা হয়।
৪। তাফসীরে ইবনে কাসীরে খ- ৯, পৃষ্ঠা ৪৫৬-এ উল্লেখ আছে,
فان المراد من ذكر الله الخطبة
অর্থ : আল্লাহর যিকর দ্বারা খুতবাই উদ্দেশ্য। হাদীস শরীফেও খুতবাকে ‘যিকর’ বলা হয়েছে। সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত একটি হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنِ اغْتَسَلَ يَوْمَ الجُمُعَةِ غُسْلَ الجَنَابَةِ ثُمَّ رَاحَ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَدَنَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّانِيَةِ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَقَرَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّالِثَةِ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ كَبْشًا أَقْرَنَ، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الرَّابِعَةِ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ دَجَاجَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الخَامِسَةِ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَيْضَةً، فَإِذَا خَرَجَ الإِمَامُ حَضَرَتِ المَلاَئِكَةُ يَسْتَمِعُونَ الذِّكْرَ
অর্থ : হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন জানাবাতের গোসল করে সর্বপ্রথম রওনা হলো, সে যেন একটি উট কোরবানী করল। দ্বিতীয় পর্যায়ে যে ব্যক্তি উপস্থিত হলো, সে যেন একটি গরু কোরবানী করলো। তৃতীয় নম্বরে যে উপস্থিত হলো, সে যেন একটি বকরি কোরবানী করল। চতুর্থ নম্বরে যে ব্যক্তি উপস্থিত হলো, সে যেন একটি মুরগি সদকা করল। পঞ্চম নম্বরে যে উপস্থিত হলো, সে যেন একটি ডিম সদকা করল। এরপর যখন ইমাম (খুতবার) জন্য বের হয়ে আসেন, ফেরেশতারা উপস্থিত হন, তাঁরা মন দিয়ে যিকর (খুতবা) শ্রবণ করেন।
(বুখারী শরীফ, ১/১২৭, হাদীস-৮৩২, মুসলিম শরীফ, হাদীস-১৪০৩, তিরমিযী শরীফ, হাদীস-৪৫৯, নাসায়ী শরীফ, হাদীস-১৩৭১, আবু দাউদ শরীফ, হাদীস-২৯৭)
ফুকাহায়ে কেরামও খুতবাকে যিকর বলেন।
যেমন শামছুল আইম্মা সারাখছী (রহ.) বলেন
ولنا ان الخطبة ذكر
অর্থ : আমাদের নিকট খুতবা একটি বিশেষ যিকর। (আল-মাবসুত, ২/৪২) যখন এ কথা প্রমাণিত যে, খুতবা একটি বিশেষ যিকর, আর যিকর আরবী ভাষাতেই হতে হয়, তাই খুতবাও আরবীতেই হতে হবে। ‘খুতবা নামাযের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এ কারণেই হাদীস শরীফে খুতবার জন্য এমন কিছু শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে, যা শুধু নামাযের জন্য প্রযোজ্য যেমন :)-ক) নামাযের জন্য যেমন ওয়াক্ত নির্ধারিত রয়েছে, খুতবার জন্যও ঠিক ওই ওয়াক্তই নির্ধারিত। ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে বা পরে খুতবা দিলে তা সহীহ হয় না।
খ) জুমু’আর নামাযে যেমন ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাত রয়েছে, জুমু’আর খুতবার জন্যও তদ্রুপ ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাত রয়েছে।
.
গ) নামাযের জন্য যেমন পবিত্রতা শর্ত, তদ্রুপ খুতবার জন্যও পবিত্রতা জরুরি। ওজুবিহীন খুতবা দেওয়া মাকরূহ। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)-এর মতে নাজায়েয।
ঘ) নামাযের পূর্বে ইকামত দিতে হয়, তদ্রুপ খুতবার পূর্বে আযান দিতে হয়।
ঙ) নামাযের মধ্যে সালাম-কালাম করা যায় না । খুতবাতে ও সালাম-কালাম করা যায় না। নামাযে কারো হাঁচির উত্তর দেওয়া যায় না, সালামের জবাবও দেওয়া যায় না। তেমনিভাবে খুতবাতেও কারো হাঁচি ও সালামের জবাব দেওয়া যায় না।
চ) নামায যেমন দাঁড়িয়ে পড়া হয়, খুতবাও তেমনি দাঁড়িয়ে দেওয়া হয়। হাদীস শরীফে আরো উল্লেখ আছে, ইমাম সাহেব যখন খুতবা দেওয়ার জন্য হুজরা থেকে বের হবেন, তখন কোনো নামায ও কথাবার্তা বলা নিষেধ। (আবু দাউদ শরীফ, ১১১২)
অন্যত্র বর্ণিত আছে, জুমু’আর দিন ইমামের খুতবা প্রদানকালে যদি কেউ অন্যকে বলে, চুপ করো, তবে সেটাও অন্যায় হবে।
(নাসায়ী শরীফ, হাদীস – ১৪০১, আবু দাউদ, হাদীস-১১১২)
যেহেতু খুবতা নামাযের মতো, অতএব নামাযে যেমন আরবী ছাড়া অন্য কোনো ভাষা ব্যবহার করা জায়েয নেই, তদ্রুপ খুতবার মধ্যেও আরবী ছাড়া অন্য কোনো ভাষা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। খুতবা ইসলামের একটা প্রতীক। অর্থাৎ আযান, ইকামত, নামায, তাকবীর এগুলো যেমন ইসলামের প্রতীক, তেমনি খুতবাও একটি প্রতীক। আযান-ইকামত যেমন অন্য ভাষায় দেওয়া যায় না, তেমনি খুতবাও অন্য ভাষায় দেওয়া যাবে না। ‘আরবী ভাষা মুসলমানদের ধর্মীয় ভাষা। এ ভাষা শিক্ষা করা ফরজে কেফায়া। কারণ কোরআন-হাদীস বোঝা আমাদের কর্তব্য । কোরআন-হাদীস বোঝার জন্য আরবী জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এই আরবী শেখার প্রতি উৎসাহিত করার জন্য আরবীতে খুতবা দেওয়া হয়। একজন আরবী না জানা ব্যক্তির সামনে যখন প্রতি সপ্তাহে আরবীতে খুতবা দেওয়া হবে, তখন তার সামনে নিজের অক্ষমতা বারবার স্পষ্ট হয়ে ধরা দেবে। যা তাকে আরবী শিখতে উৎসাহিত করবে।
আরবী ভাষায় খুতবা জরুরি হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো, পুরো মুসলিম উম্মাহর মাঝে তাওহীদ ও ঐক্যের প্রতীক হলো খুতবা। মুসলমান পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাক, প্রতি জুমু’আয় আরবী ভাষার খুতবা তাদের মাঝে সেতু বন্ধনের কাজ করবে। সব জায়গায় যদি নিজ নিজ মাতৃভাষায় খুতবা হতে থাকে, তাহলে কোনো এলাকায় আগন্তুক ব্যক্তি অন্যান্য বিষয়ের মত ইবাদতেও নিজেকে একজন অপরিচিত ভাবতে থাকবে। ‘খুতবা আরবীতে হওয়ার আরেকটি হিকমত হলো, ভাষার প্রভাব সর্বত্র বিরাজমান। শাইখুল ইসলাম আল্লামা হাফেয ইবনে তাইমিয়া (রহ.) তাঁর কিতাব ‘ইকতেযা-উস-সিরাতিল মুসতাকীম’ ১/৪২৪-এ উল্লেখ করেন-
واعلم ان اعتياد اللغة يؤثر فى العقل والخلق، والدين تأثير قويا بينا
.
অর্থ: জেনে রাখা উচিত যে, কোনো বিশেষ ভাষায় অভ্যস্ত হওয়া চিন্তাচেতনা, আখলাক-চরিত্র ও দ্বীন-ধর্মের মধ্যে শক্তিশালী ও স্পষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। এ জন্য রাজা-বাদশাহগণ তাঁদের দেশে নিজ নিজ ভাষার প্রচলন করার চেষ্টা করেন। আর সে কারণেই যেসব এলাকা সাহাবীদের হাতে বিজিত হয়েছে, সেগুলো আজ মামালেকে আরাবিয়া তথা আরব দেশ বলে গণ্য হয়ে আসছে। কেননা, সেসব দেশে যখন সব বিষয়ে আরবী ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটেছে, তখন সবাইকে বাধ্য হয়েই আরবী ভাষা শিখতে হয়েছে। সাহাবীদের পরে যেসব এলাকা বিজিত হয়েছে, সেগুলো আরব দেশ বলে গণ্য হয়নি। সাহাবীগণ তাঁদের শত বছরের ইতিহাসে কোনো দিন আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেননি। সাহাবীদের যুগে বহু অনারব দেশ বিজয় হয়ে মুসলমানদের কর্তৃত্বে এসেছিল, যেগুলোর অনেক স্থানেই ভিন্ন ভাষা প্রচলিত ছিল। তখন দ্বীনের তাবলীগ ও মাসলা-মাসায়েলের তালীম দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্থানীয় ভাষায় জুমু’আর খুতবা প্রদানের প্রয়োজন ছিল বেশি।
কেননা, খুতবা ছাড়া মাসলা-মাসায়েল শিক্ষা-দীক্ষার জন্য কোনো কিতাবাদী রচিত হয়েছিল না। তখন বেশ কিছু সাহাবী ও তাবেয়ী অনারবী বিভিন্ন ভাষায় অত্যন্ত দক্ষও ছিলেন। তবুও তাঁরা আরবী ভাষাতেই খুতবা প্রদান করতেন। এমনকি হযরত সালমান ফারসী (রা.) তাঁর মাতৃভাষা ফারসী হওয়া সত্ত্বেও পারস্যের এক যুদ্ধে সেনাপতি থাকাকালে সেখানকার ফারসী ভাষাভাষী লোকদের সাথে আরবীতে কথা বলেছেন। দোভাষী তার অনুবাদ করেছে। একপর্যায়ে দোভাষীর অনুবাদ যথার্থ না হওয়ার আশংকায় হযরত সালমান ফারসী (রা.) নিজেই কোরআন শরীফের একটি বাক্যের ফারসী অনুবাদ করেন ।
( তিরমিযী শরীফ, হাদীস-১৫৪৮)
এ হাদীস দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবীগণ শুধুমাত্র জুমু’আর খুতবাই নয়, বরং যে সকল স্থানে বিপক্ষের নিকট মুসলমানদের মর্যাদা প্রকাশের বিষয় জড়িত ছিল, সেখানে আরবী ভাষাই ব্যবহার করতেন।
সারকথা, রাসূলুল্লাহ (সা.), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাবেতাবেঈনের যামানা হতে আজ পর্যন্ত উম্মতের ধারাবাহিক আমল হলো আরবী ভাষায় খুতবা প্রদান করা। তাঁরা কখনো আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেননি। সুতরাং আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেওয়া বা আরবীতে খুতবা পাঠ করে নামাযের পূর্বে অন্য ভাষায় তার অনুবাদ করা বিদ’আত ও নাজায়েয।
যেমন নিম্নক্ত কিতাব গুলোতে উল্লেখ আছে,
.
ولا شك فى ان الخطبة بغير العربية خلاف السنة المتوارثة من النبى والصحابة، فيكون مكروها تحريما
অর্থ: অনারবী ভাষায় খুতবা দেওয়া রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের ধারাবাহিক সুন্নাত আমলের পরিপন্থী। অতএব, তা মাকরূহে তাহরীমি হবে। (উমদাতুর রিআয়া, ১/২০০, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া, ১২/৩৫৮, আহসানুল ফাতাওয়া, ৪/১৫০, জাওয়াহিরুল ফিক্বহ, ১/৩৫২)
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ
অর্থ: হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মে নেই এমন বিষয় ধর্মীয় বিষয় বলে আবিষ্কার করে, তা পরিত্যাজ্য।
(বুখারী শরীফ, হাদীস-২৪৯৯, মুসলিম শরীফ, হাদীস-৩২৪২, ইবনে মাযাহ শরীফ, হাদীস-১৪, আবু দাউদ শরীফ, হাদীস-৩৯৯০)
হযরত ইরবায বিন সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন,
مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا، وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ (২) بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ “
অর্থ : তোমাদের মাঝে আমার পর যারা জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতভেদ দেখবে। তখন তোমাদের ওপর আমার এবং আমা র হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত আঁকড়ে ধরা জরুরি। সেটিকে মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে রাখবে। আর সাবধান থাকবে, নব উদ্ভাবিত ধর্মীয় বিষয় থেকে। কেননা, ধর্ম বিষয়ে প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদ’আত। আর প্রতিটি বিদ’আতই গোমরাহী। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস-১৬৫২১)

একটি সন্দেহ ও তার নিরসনঃ
কেউ কেউ বলেন, মাতৃ ভাষায় খুতবা দিতে হবে। তাদের ভাষ্য হচ্ছে- খুতবা শুধু একটি বয়ান বা বক্তৃতার নাম। আর বয়ান ও বক্তৃতা দ্বারা উদ্দেশ্য থাকে শ্রোতারা তা বুঝা এবং উপদেশ গ্রহণ করা। যদি আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া হয়, তাহলে অনারবী শ্রোতারা তা থেকে কীভাবে উপকৃত হবে ? তাই মাতৃ ভাষায় খুতবা দিতে হবে। আরবী ভাষায় খুতবা দেয়া যাবে না।
নিরসন:
তাদের এই ধারণাটি সঠিক নয়। কেননা, খুতবা ওয়াজ বা বক্তৃতার নাম নয়; বরং খুতবা হলো জুমআর নামাযের সংশ্লিষ্ট একটি ইবাদত, যা দুই রাকাত নামাযের স্থলাভিষিক্ত। খুতবা যে শুধু বক্তৃতার নাম নয়; বরং একটি বিশেষ ইবাদত এর স্বপক্ষে নিম্ন কয়েকটি প্রমাণ উল্লেখ করা হলো:
১. বক্তৃতাকে আরবীতে ‘তাযকীর’ বলা হয়, অথচ কুরআন ও হাদীসে খুতবাকে ‘যিকির’ বলা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ (سورة الجمعة: ৯)
অর্থ: হে মুমিনগণ ! জুমআর দিন যখন সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও। (সূরা: জুমআ: ৯) এখানে যিকির দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জুমআ।
২. সকল ফুকাহায়ে কিরাম জুমআর নামায সহীহ হওয়ার জন্য খুতবাকে শর্ত বলেছেন-
ويشترط لصحتها سبعة اشياء الرابع: الخطبة فيه. (الدر المختار: ৩/১৯)
وكونها شرطا لانعقاد الجمعة . (بدائع الصنائع: ১/৫৮৯) ( وكذا في فتح القدير: ২/৫৫) (حاشيةالطحطاوي: ص৫১৩)
যদি খুতবা দ্বারা ওয়াজ করাই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে এটাকে জুমআর নামায সহীহ হওয়ার পূর্বশর্ত বলা অর্থহীন।
৩. জুমআর খুতবা জুমআর নামাযের ওয়াক্তে হওয়া শর্ত। যেমনটি ফুকাহায়ে কিরাম লিখেন-
فلو خطب قبله وصلي فيه لم تصح. (الدر الختار: ৩/১৯)
অর্থ: যদি জুমআর নামাযের ওয়াক্ত আসার পূর্বে খুতবা দেয়া হয়। আর ওয়াক্ত আসার পর নামায পড়ে তাহলে জুমআ সঠিক হবে না। (বাদায়ে: ২/২৫৬, হিন্দিয়া: ১/১৬৮)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, যদি খুতবা দ্বারা উদ্দেশ্য ওয়াজ বা বক্তৃতা হতো, তাহলে জুমআর নামাযের ওয়াক্ত হওয়া শর্ত করা হতো না; বরং যে কোন সময় কিছু ওয়াজ নসিহত করাই যথেষ্ট হতো। সময় নির্ধারণই প্রমাণ বহন করে এটি একটি ইবাদত। শুধুমাত্র ওয়াজ বা নসিহত নয়।
৪. জুমআর নামায সহীহ হওয়ার জন্য খুতবা পাঠ করা শর্ত। আর খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। তবে যদি উপস্থিত মুসল্লিদের সকলেই বধীর বা ঘুমন্ত থাকে এবং তাদের সামনে খুতবা দেয়া হয়, তাহলেও তা জুমআ আদায়ের জন্য যথেষ্ট হবে। যেমন,
আল্লামা শামী র. বলেন-
كونها قبلها بحضرة جماعة ينعقد الجمعة بهم ولو كانوا صما او نياما. (حاشية ابن عابدين: ৩/১৯، البحر الرائق: ২/১৫৭)
অর্থ: জুমআ বিশুদ্ধ হতে কম পক্ষে তিন জন লোকের সম্মুখে নামাযের পূর্বে খুতবা দেয়া শর্ত। যদিও মুসল্লিগণ বধীর বা ঘুমন্ত হোক। যদি খুতবা ওয়াজ বা বক্তৃতা-ই হতো তাহলে বধীর ও ঘুমন্ত লোকদের সামনে খুতবা দেয়ার কি অর্থ?
৫. খুতবা দেয়ার পর যদি খতীব সাহেব কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং তাতে দীর্ঘ সময় বিলম্ব হয়ে যায়, তাহলে পূনরায় খুতবা দিতে হবে। যদিও শ্রোতা প্রথম বারের শ্রোতারা-ই হোক না কেন ।
ولو خطب ثم رجع الي بيته فتغدي او جامع واغتسل ثم جاء استقبل الجمعة وكذا في المحيط. (البحر الرائق: ২/২৫৮).
যদি খুতবা দ্বারা ওয়াজ বা নসিহত করাই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে একবার খুতবা দেয়ার পর বিলম্ব হওয়ার কারণে পূর্বের শ্রোতাদের সামনে পূনরায় খুতবা দেয়ার কি অর্থ ?
৬. খুতবা শুধু ওয়াজ বা বক্তৃতার নাম নয়। এর বড় প্রমাণ হলো, ইমাম আবু হানিফা র.-এর মতে শুধু আলহামদু লিল্লাহ বা সুবহানাল্লাহ পড়ার দ্বারা খুতবা আদায় হয়ে যায়।
واذا خطب بتسبيحة واحدة او بتهليل وبتحميد اجزائه لقول ابي حنيفة رح. (المبسوط: ২/৪৭)
অথচ ‘সুবহানাল্লাহ’ বা ‘আলহামদু লিল্লাহ’ কে কেউ ওয়াজ বা বক্তৃতা বলে না।
উপরোক্ত প্রমাণগুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝে আসে যে, খুতবা ওয়াজ বা বক্তৃতার নাম নয়; বরং একটি বিশেষ ইবাদত বা যিকির। তবে খুতবা নামক ইবাদতে আরবী ভাষায় ওয়াজ, নসিহত থাকা একটি স্বতন্ত্র সুন্নাত।
সুতরাং যখন প্রমাণিত হলো, খুতবার উদ্দেশ্য ওয়াজ নসিহত নয়; বরং ইবাদত। তাই অনারবী শ্রোতাদের সামনে আরবী ভাষায় খুতবা দেয়ার দ্বারা কি ফায়দা ? এ ধরণের প্রশ্নের কোন অবকাশ নেই। যদি কেউ এমন প্রশ্ন করে, তাহলে সর্ব প্রথম নামায ও কুরআনের ব্যাপারে করতে হয়। যখন কুরআন বা নামাযের ব্যাপারে এই ধরণের প্রশ্ন নেই। তাহলে খুতবার ব্যাপারে প্রশ্ন করাও অনর্থক।
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) নামাযে ফারসী ভাষায় ক্বেরাত পাঠকে বৈধ বলেছেন। অতএব, আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেওয়াও বৈধ হবে।
আমাদের জবাব : উক্ত যুক্তিটির দুটি জবাব নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১. ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর উক্ত মতামত থেকে তিনি পরবর্তীতে রুজু (মত প্রত্যাহার) করেছেন। সুতরাং তার এই বর্জিত মতামতটি দলিল হিসেবে পেশ করা বোকার পরিচয় দেওয়া। যেমন হেদায়া কিতাবে ১/১০২ উল্লেখ আছে,
ويروى رجوعه فى اصل المسئلة إلى قولهما وعليه الاعتماد، والخطبة والتشهد على هذا الاختلاف
২. ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর প্রথম মতামত অনুযায়ী খুতবা অনারবী ভাষায় দেওয়া জায়েয দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল মাকরূহে তাহরীমির সাথে জায়েয। (শামী, ২/১৮৩, বাহরুর রায়েক , ১/ ৫৩৫ , তাতারখানিয়া, ২/৭৪, সিআয়া, ২/১৫৫)
এ ছাড়া ফিকহে হানাফীর অধিকাংশ কিতাবেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, আবু হানীফা (রহ.)-এর মতে অনারবী ভাষায় খুতবা জায়েয দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মাকরূহে তাহরীমির সাথে জায়েয।
৩. ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর পূর্ববর্তী মতটির উদ্দেশ্য হলো, অনারবী ভাষায় খুতবা দ্বারা যদি আল্লাহর যিকর আদায় হয়ে যায়, তাহলে জুমু’আহ সহীহ হবে। কিন্তু খুতবার সুন্নাত আরবী ভাষা পরিত্যাগ করার কারণে তা মাকরূহ হবে। যেমন খুতবা দাঁড়িয়ে পবিত্র অবস্থায়, শ্রোতাদের দিকে মুখ করে, পূর্ণ লেবাস পরিধান করে পাঠ করা সুন্নাত। কেউ যদি ওযর-কারণ ছাড়া বসে বসে, কিবলামুখী হয়ে, শুধু সতর ঢেকে খুতবা দেয়, তা জায়েয, কিন্তু সুন্নাত পরিপন্থী ও মাকরূহে তাহরীমি হবে।
অতএব, অনারবী ভাষায় খুতবা প্রদান করার ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর পূর্বের মতটিকে দলিল হিসেবে পেশ করা কখনো সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না। শ্রোতাদের ভাষায় খুতবার প্রবক্তা বন্ধুগণ নিম্নের সমস্যাটির নকলী বা আকলী সমাধান পেশ করবেন কি?
= সমস্যা :
একটি মসজিদে জুমু’আর দিন খুতবার সময় দশ জন ইংরেজি ভাষী, দশ জন উর্দূ ভাষী, দশ জন ফারসী ভাষী, দশ জন আরবী ভাষী ও দশ জন বাংলা ভাষী মুসল্লি উপস্থিত রয়েছেন। এমতাবস্থায় খতীব সাহেব শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে কোন ভাষায় খুতবা পেশ করবেন?
আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় জুমআর খুতবা দেয়া বিদআত
জুমআর খুতবা অন্য কোন ভাষায় প্রদান করা বিদআত। আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় খুতবা প্রদান করা রাসূল সাঃ এবং পরবর্তীতে কোন সাহাবী থেকেই প্রমাণিত নয়।
নবীজী সাঃ এর মৃত্যুকালের শেষ সময়ে আরবের বাহিরের অনেক অনারবী মুসলমানই মসজিদে নববীতে এসে নামায পড়তো। কিন্তু কোনদিনও কোন জুমআর খুতবা অন্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়নি।
সাহাবায়ে কেরামের জমানায় এর কোন নজীর পাওয়া যায় না। হযরত উমর রাঃ এর জমানায় অনারবী মানুষে ভরে গিয়েছিল মদীনা। কিন্তু কোনদিন মসজিদে নববীতে জুমআর খুতবা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় দেয়া হয়েছে বা দোভাষী দিয়ে অন্য ভাষায় তা অনুবাদ করা হয়েছে এর কোন নজীর নেই।
সেই সাথে সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন দেশে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে গেছেন। সেসব রাষ্ট্রে ইসলামের আলো ছড়িয়েছেন। কিন্তু অনারবী রাষ্ট্রে এসে আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দিয়েছেন বা তাদের আরবী খুতবা অন্য ভাষায় অনুবাদ করে জুমআর সময় শুনানো হয়েছে এর কোন নজীর নেই।
যে কাজ রাসূল সাঃ করেননি, বা পরবর্তী সাহাবায়ে কেরাম করেননি। সে কাজ দ্বীন হিসেবে করা সুনিশ্চিতভাবেই বিদআত। এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই জুমআর খুতবা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় প্রদান করা বিদআত। এটি পরিত্যাজ্য।
নামাযের কিরাত যেমন আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় পড়া বিদআত। ঠিক তেমনি জুমআর খুতবা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় দেয়া বিদআত।
যারা এ বিদআতি কাজটি করে যাচ্ছেন, তাদের কাছে এ বিষয়ে রাসুল সাঃ থেকে এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকে সহীহ হাদীসের দলীল চান। তাহলেই দেখবেন, দলীল নয় মনের খাহেশাতই হচ্ছে তাদের দলীল।
সুতরাং এ বিদআতি কাজ থেকে সকলেরই বিরত থাকতে হবে।
হযরত ইরবাস বিন সারিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন,
مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ يَرَى بَعْدِي اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
তোমাদের মাঝে আমার পর জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতভেদ দেখবে। তখন তোমাদের উপর আমার এবং আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত আঁকড়ে ধরবে। সেটিকে মাড়ির দাত দিয়ে কামড়ে রাখবে। আর সাবধান থাকবে নব উদ্ভাবিত ধর্মীয় বিষয় থেকে। কেননা ধর্ম বিষয়ে প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৪৪}
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ»
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মে নেই এমন বিষয় ধর্মীয় বিষয় বলে আবিস্কার করে তা পরিত্যাজ্য। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭১৮, বুখারী, হাদীস নং-২৬৯৭}

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস,
শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

১৮৬৩৭

কোনো রাকাতে ভুলে এক সেজদা করলে..


২১ আগস্ট, ২০২৪

বাঁশখালী

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম

১৫৮৯০

শিক্ষককে দাঁড়িয়ে সালাম করা


১২ মে, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy