আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৯১১৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুয়ালাইকুম,সম্মানিত মুফতি সাহেবের কাছে আমার প্রশ্ন জমজমের পানি খাওয়ার সুন্নত গুলো কি কি বা কি নিয়তি কিভাবে জমজমের পানি খেতে হয়? জাযাকাল্লাহ,

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

চট্টগ্রাম

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم






যমযমের পানি পান করার সুন্নাত ও আদবঃ

যমযমের পানি পান করার কয়েকটি আদব রয়েছে। যমযম পান করার সময় সে আদবগুলোর প্রতি সবার যত্নশীল হওয়া উচিত।

১. কিবলামুখী হয়ে পান করা।

২. তিন শ্বাসে পান করা।

৩. প্রত্যেকবার বিসমিল্লাহ পড়া।

৪. প্রতি শ্বাসের পর আলহামদু লিল্লাহ বলা।

৫. ডান হাতে পান করা।

৬. পান করার সময় দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভের দুআ করা।

৭. পেট ভরে পরিতৃপ্ত হয়ে বেশি বেশি পান করা। -ফাদলু মায়ী যামযাম পৃ. ১৯২-১৯৪

শেষ আদবটির প্রতি হজ্ব ও উমরাকারীদের বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার। মনে রাখতে হবে, যমযম পেট ভরে পান করা কাম্য। আল্লাহ তাআলা আমাদের যমযমের যাবতীয় কল্যাণ দান করুন।


মনোবাসনা পূরণে আবে যমযম

মানুষের মনে কত ধরনের স্বপ্নই তো থাকে। কত ধরনের তামান্না মানুষ হৃদয়ে পোষণ করে। তবে মানুষের সব স্বপ্ন সব সময় পূরণ হয় না। সব তামান্না বাস্তবতার আলো দেখতে পায় না। এরপরও মানুষ দিলে তামান্না রাখে। হৃদয়ে স্বপ্ন পোষে। মনের বাসনা ও জীবনের স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে যমযম পানের আলাদা বরকত রয়েছে। হযরত জাবের রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-

مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ.

যে উদ্দেশ্যে যমযম পান করা হবে তা পূর্ণ হবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৪৮৪৯

হাকীম তিরমিযী রাহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় লেখেন, কেউ যদি ক্ষুধা নিবারণের জন্য এ পবিত্র পানি পান করে আল্লাহ তার ক্ষুধা দূর করেন। পিপাসা নিবারণের জন্য পান করলে আল্লাহ তার পিপাসা নিবারণ করেন। সুস্থতার জন্য পান করলে আল্লাহ সুস্থ করে দেন। চারিত্রিক সৌন্দর্য অর্জনের জন্য পান করলে আল্লাহ তাকে সচ্চরিত্রবান করেন। হৃদয়ের সংকীর্ণতা দূর করার জন্য পান করলে আল্লাহ হৃদয় প্রশস্ত করে দেন। কলবের অন্ধকার দূর করার জন্য পান করলে আল্লাহ তা আলো-উদ্ভাসিত করে দেন।...

মোটকথা, যে কোনো ভালো ও কল্যাণের নিয়তে এ পানি পান করুক, আল্লাহ তার মাকছাদ ও উদ্দেশ্য পূরণ করে দেন। -নাওয়াদিরুল উসূল, পৃ. ৩৪১

যমযমের পানি যে যে উদ্দেশ্যে পান করবে আল্লাহ তার সে নিয়ত পুরা করেন। একারণে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম ও আল্লাহভীরু মুমিনগণ যমযম পানের সময় বিভিন্ন নিয়ত করতেন, যা পূরণ হওয়ার অসংখ্য ঘটনা ইতিহাসের পাতায় বিদ্যমান।

হযরত ওমর রা.-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, তিনি যমযম পানের সময় এ দুআ পড়তেন-

اللهم إني أشربه لظمأ يوم القيامة.

হে আল্লাহ কিয়ামতের দিনের পিপাসা নিবারণের উদ্দেশ্যে আমি এ পানি পান করছি। -আলজাওহারুল মুনায্যাম, পৃ. ৪২ (ফাদলু মায়ি যামযামের সূত্রে, পৃ. ১৩৫)

হযরত ইবনে আব্বাস রা. যমযম পানের সময় এ দুআ পড়তেন-

اللّهُمَّ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا وَاسِعًا، وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ.

হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে উপকারী ইলম, প্রশস্ত রিযিক ও সবধরনের রোগ থেকে সুস্থতা চাই। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৭৩৯

আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রাহ. একবার যমযম পানি নিয়ে কাবামুখি হয়ে বলেন, হে আল্লাহ! ইবনে আবীল মাওয়াল আমাকে মুহাম্মাদ ইবনে মুনকাদিরের সূত্রে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন-

مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ.

(যে উদ্দেশ্যে যমযম পান করা হবে তা পূর্ণ হবে।) এরপর এ দুআ করেন-

أشربه لعطش يَوْم الْقِيَامَة.

হে আল্লাহ! কিয়ামতের দিন তুমি আমার পিপাসা নিবারণ করবে- এজন্য আমি তা পান করছি।

এরপর তিনি যমযম পান করেন। -আত্তারগীব ওয়াততারহীব, ২/২১০, হাদীস ১৮১৭; তারীখে বাগদাদ, ১০/১১

ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেন, আমি তিনটি নিয়তে যমযম পান করেছি। ১. আমি যেন নিপুণভাবে তীর নিক্ষেপ করতে পারি। (আমার এ উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে) ফলে কখনো আমি দশটার মধ্যে দশটা আবার কখনো দশটার মধ্যে নয়টা লক্ষ্য ভেদ করতে পারি। ২. ইলমের জন্য। আর এতে আমার অবস্থা তো তোমরা দেখছই। ৩. জান্নাতে প্রবেশের জন্য। আশা করি আমার এ উদ্দেশ্যও পূরণ হবে। (নাশরুল আস-এর সূত্রে, ফাদলু মায়ি যামযাম, পৃ. ১৩৭)

একবার ইমাম ইবনে খুযায়মাকে জিজ্ঞেস করা হল আপনি কীভাবে এত ইলম অর্জন করলেন? তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ.

(যে উদ্দেশ্যে যমযম পান করা হবে তা পূর্ণ হবে।) তাই যমযম পানের সময় আমি আল্লাহর কাছে ইলমে নাফে চেয়েছি। -সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৪/৩৭০; তাযকিরাতুল হুফ্ফায, ২/৭২১

হাফেয ইবনে হাজার রাহ. বলেন, হাদীস অন্বেষণের প্রাথমিক অবস্থায় একবার যমযম পানের সময় নিয়ত করেছিলাম, আল্লাহ যেন আমাকে যাহাবী রাহ.-এর মত হাদীস মুখস্থ করার শক্তি দেন। এর বিশ বছর পর আমি হজ্বে যাই। তখন আমার মনে হয়েছিল হয়ত এর চেয়ে উঁচু স্তর আমি অর্জন করেছি। আমি আল্লাহর কাছে (পুনরায়) দুআ করলাম, আরো উঁচু থেকে উঁচু মরতবা তিনি যেন আমাকে দান করেন। আশা করি, আমার এ তামান্নাও পূরণ হবে।

হাফেয সাখাবী রাহ. বলেন, আল্লাহ তাআলা তার এ আশাও পূরণ করেছেন। -আলজাওয়াহির ওয়াদদুরার ১/১৬৬

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

১২৮৯৭

এটাস্ট বাথরুমে অজুর দোয়া পড়া যাবে?


১৩ নভেম্বর, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

১১৮৫৩

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ওজুতে ব্যবহারকৃত পানি টয়লেটে ফেললে কি গুনাহ হবে?

২১ ডিসেম্বর, ২০২১

দোহার

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

৩৯১৬৩

বৃষ্টির পানি স্পর্শ করা কি সুন্নত এবং বৃষ্টির সময় নাকি দোয়া কবুল হয় ?


২৮ আগস্ট, ২০২৩

ঢাকা ১২০৫

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy