আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

উপার্জনের জন্য কয়েকটি পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া

প্রশ্নঃ ৮৫৬৯১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, উপার্জনের কয়েকটি পদ্ধতির ব্যাপারে আমার অবস্থান সঠিক কিনা জানতে চাই। আমি স্থানীয় একটি জামে মসজিদে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করি। মসজিদ থেকে যে বেতন পাই তা দিয়ে চলা কঠিন। তাই ইমামতির পাশাপাশি অন্য কোন উপায়ে উপার্জন করতে চাই । এক্ষেত্রে আমার বন্ধুদের অবলম্বিত কয়েকটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করছি । ১. কয়েকজন আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষকতা করেন। ২. দুইজন দুইটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক। যারা ছাত্র হাজীরা, শিক্ষক হাজীরা, পরীক্ষা নেওয়া সহ যাবতীয় অফিসিয়াল কার্যক্রম শুধুমাত্র কাগজে-কলমে মেন্টেন করেন বাস্তবে তাদের মাদ্রাসা বন্ধ। ৩. একজন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধিনে পরিচালিত দারুল আকরামের প্রধান শিক্ষক । যাঁর মাদ্রাসায় ছাত্র হাজীরা, পরীক্ষা নেওয়া সহ যাবতীয় অফিসিয়াল কার্যক্রম শুধুমাত্র কাগজে-কলমে মেন্টেন করেন বাস্তবে তাদের মাদ্রাসায় শুধুমাত্র একটি জামাতের ক্লাস হয়। ৪. অনেকেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধিনে পরিচালিত ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য এক বছর মেয়াদী সহজ কোরআন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এ প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর নতুন ৩৫ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোর্স সম্পন্ন করার নিয়ম থাকলেও এলাকায় পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না থাকায় তারা শিক্ষার্থীদের বয়স ও পরিচয়ের ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেন । এবং মাসিক মিটিং এর নিয়ম থাকায় তারা কোনো মিটিং না করেই প্রতি মাসে মিথ্যা রেজুলেশন সংরক্ষণ করেন। যেখানে তারা মিটিং এ উপস্থিত সদস্যদের স্বাক্ষর, মিটিং এর সিদ্ধান্ত সহ জাতীয় বিষয় উল্লেখ করেন। ৫. একজন একটি ক্বওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। যেখানে তিনি নিজে পড়ান না। বরং শিক্ষক রেখে পরিচালনা করেন। শিক্ষার্থীদের বেতন ও কমিটির মাধ্যমে এলাকায় অর্থ কালেকশন করে এ প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বহন করেন। মাদ্রাসা পরিচালনা করে যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে তা তার ব্যবসা হিসেবে নিজে গ্রহণ করেন । ৬. কেউ কেউ শুধু শিক্ষার্থীদের থেকে বেতন নিয়ে ক্বওমী মাদ্রাসা পরিচালনা করেন তারা বাহিরে কানেকশন করেন না। মাদ্রাসা পরিচালনা করে যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে তা তারা ব্যবসা হিসেবে নিজেরা গ্রহণ করেন । ১ নং , ২ নং ও ৩ নং ক্ষেত্রে সহশিক্ষা কার্যক্রম আমি নাজায়েজ মনে করি। ২ নং ৩ নং ও ৪ নং ক্ষেত্রে তারা ঘুষ দিয়ে চাকরি গ্রহণ করেছেন। তাদের যুক্তি হলো, যেহেতু দেশে ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না এবং দেশে ইসলামী সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত নেই। তাই যে চাকরির জন্য ঘুষ দিচ্ছে সে চাকরির যোগ্যতা থাকলে ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয়া নাজায়েজ হবে না। আমি জানতাম ঘুষ দেয়া নেয়া নাজায়েজ। ৬ নং পদ্ধতি ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠান সমূহে শিক্ষকদের মিথ্যা বা ধোঁকার আশ্রয় নিতে দেখা যায়। এবং পর্দার ব্যাপারে এদেরকে অনেককেই শৈথিল্য প্রদর্শন করতে দেখা যায়। আমি তা গুনাহের কাজ মনে করি। তবে যারা এ প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে সম্পৃক্ত তারা প্রত্যেকে আলেম। কেউবা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফিকাহ বিভাগ থেকে কামিল পাস। কেউবা কওমি মাদ্রাসা থেকে ইফতা পাস। তাদের যুক্তি হলো যেহেতু দেশে ইসলামী সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত নেই এবং এ সকল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ম নীতি সঠিক নয়। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই চাকরি রক্ষার্থে আমাদের এভাবে করতে হয়। তাই উল্লেখিত পদ্ধতিগুলো জায়েজ নাজায়েজের ব্যাপারে আমি কিছুটা সন্দিহান হয়ে পরেছি। ৬ নং পদ্ধতি জায়েজ নাজায়েজের ব্যাপারে আমি সন্দিহান। মসজিদে খেদমতের পাশাপাশি আমার জন্য উপর উল্লেখিত পদ্ধতির কোনটি গ্রহণ করার অবকাশ আছে কি না ? তাছাড়া আমি একজন মসজিদের খতিব হিসেবে এ সকল বিষয়ে অনেকের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এবং দেশের অনেক আলেমরাই এ সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত তাই এ সকল বিষয়ে সঠিক আকিদা ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পেলে আমি সহ দেশের অনেক মুসলিম উম্মাহ উপকৃত হব। جَزَاكم اللهُ خَيْرًا كَثِيرًا,

২৩ মার্চ, ২০২৫

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


মুহতারাম খতিব সাহেব,
আপনার প্রশ্নে উপার্জনের অনেকগুলো মাধ্যমের কথা উল্লেখ করেছেন। এর সবগুলোই শিক্ষাদান বিষয়ক।

শরীয়তের মূলনীতি হলো, আল্লাহ যা হালাল করেছেন সেটা হালাল। আর যা হারাম করেছেন সেটা হারাম। মানুষ হারামকে হালাল বলে গ্রহণ করলে হালাল হয়ে যায় না। এমনকি ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যদি কেউ হারামের পথ বেছে নেয়, আর ঐ হারামকে সমাজে হালাল বলে প্রচার করে বেড়ায়, তাতেও ঐ হারাম হালাল হয়ে যায় না।
সুতরাং
১. সহশিক্ষার ঐ হারামের পথ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করার সুযোগ নেই।

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাতে এসেছে,

فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك

সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা জায়েয হবে না যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিবাকের জন্য জায়েয হবে না তাকে এর অনুমতি দেয়া। (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১২/১৫৬)

২. ধোকাবাজি করে আয় উপার্জন করা জায়েজ নয়।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ
وَمَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا
যে ব্যক্তি আমাদের ধোকা দিবে সেও আমাদের দলভূক্ত নয়।
—মুসলিম ১০১

৩. মিথ্যা এটি কবিরা গুনাহ, মিথ্যার মাধ্যমে উপার্জনের সুযোগ নেই। মিথ্যার মাধ্যমে যে উপার্জন হবে সেটা হারাম উপার্জন হবে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ

إِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ كَذَّابًا

তোমরা মিথ্যা পরিহার করবে। কেননা, মিথ্যা মানুষকে খারাপ কাজে লিপ্ত করে, আর অপকর্ম মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। যখন কোন ব্যক্তি মিথ্যা বলা শুরু করে, তখন বার–বার মিথ্যা বলার কারণে, আল্লাহর নিকটে তার নামটি ’মিথ্যাবাদী’ হিসাবে লিখিত হয়।
—আবু দাউদ ৪৯৮৯

৪. এই পন্থাটিও হারাম। কেননা এখানেও আছে মিথ্যা ও প্রতারণা।

৫. লোকটি যদি নিজের অর্থ ব্যয় করে স্থাপনা তৈরি করে অথবা ভাড়া নেয় এবং শিক্ষা সামগ্রী (টেবিল, কিতাবাদী) সংগ্রহ করে। এরপর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পারিশ্রমিক নিয়ে শিক্ষা দান করে। সেক্ষেত্রে ব্যয়ের পর যত সামান্য টাকা থাকবে সেটা সে নিতে পারবে।
কিন্তু আপনি প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন, লোকটি ছাত্রদের শিক্ষা দীক্ষার কথা বলে এলাকায় টাকা কালেকশন করে। আর মানুষজন কালেকশনে টাকা দান করে শিক্ষার্থীদের জন্য। কালেকশনের টাকাগুলো শিক্ষার্থীদের পিছনে ব্যয়ের পর যা অবশিষ্ট থাকবে সেগুলো অবশ্যই আমানত। আমানতকে যথাস্থানে ব্যয় করা ঈমানদারী। বিপরীত করা আমানতের খিয়ানত।
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীম ইরশাদ করেন-

اِنَّ اللّٰہَ یَاۡمُرُکُمۡ اَنۡ تُؤَدُّوا الۡاَمٰنٰتِ اِلٰۤی اَہۡلِہَا

(হে মুসলিমগণ!) নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করছেন যে, তোমরা আমানতসমূহ তার হকদারকে আদায় করে দেবে।
—সূরা নিসা ৫৮

৬. এ নম্বরে যে পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন, তা অবৈধ হবে না ইনশাআল্লাহ। কেননা শিক্ষার্থীদের সাথে তার চুক্তি থাকে তাদেরকে সে শিক্ষা প্রদান করবে। আর তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে পারিশ্রমিক নিবে। এজন্য তাদের কাছ থেকে গৃহীত টাকা প্রয়োজনীয় জায়গাতে ব্যয়ের পর অবশিষ্ট টাকা পারিশ্রমিক হিসেবে নিতে পারবে।
(উল্লেখ্য, নিঃসন্দেহে এ কথা সর্বজন স্বীকৃত, সেটা হল দ্বীনি শিক্ষা বিনা পারিশ্রমিকে শেখানো উত্তম)

وقال علماء اللجنة الدائمة للإفتاء :

"يجوز لك أن تأخذ أجراً على تعليم القرآن ؛ فإن النبي صلى الله عليه وسلم زوَّج رجلا امرأة بتعليمه إياها ما معه من القرآن ، وكان ذلك صداقها ، وأخذ الصحابي أجرة على شفاء مريض كافر بسبب رقيته إياه بفاتحة الكتاب ، وقال في ذلك النبي صلى الله عليه وسلم : ( إن أحق ما أخذتم عليه أجرا كتاب الله ) أخرجه البخاري ومسلم ، وإنما المحظور : أخذ الأجرة على نفس تلاوة القرآن ، وسؤال الناس بقراءته" انتهى .

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া
খতীব, নবোদয় সি ব্লক জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর
ইমাম, বায়তুল ওয়াহহাব জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৭৯৩৮৪

টাকা দিয়ে মিথ্যা ব্যাংক স্টেটমেন্ট বানানো কি জায়েয?


২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Narayanganj

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৯১০৫৯

মৃত্যুর পর কি শরীর এর কোনো অঙ্গ মানুষকে দান করা যাবে


২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Sylhet ৩১০০

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৭১৩২১

গ্যাসের ফি বিলম্বে দেয়া কি জায়েজ? নাকি সুদ?


২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Nayakanda

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৭৭৭৮৭

জিমেইল ফেসবুক আইডি বিক্রি প্রসঙ্গ


২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

গাজীপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy