আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

ক্বারীদের থেমে থেমে পড়া কি সুন্নাহ?

প্রশ্নঃ ৮৫২৯১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ক্বারী সাহেবরা যে থেমে থেমে বা পিছন থেকে আবার পরে বড় শ্বাস নিয়ে বা অর্ধেক পড়ে আবার পিছন থেকে শুরু করে এটা কি সুন্নাত সম্মত? হাওয়ালাসহ জানালে উপকৃত হতাম!,

৪ মার্চ, ২০২৫

নরসিংদী

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


পবিত্র কুরআনকে তার (فصيح) বিশুদ্ধ ভাষায় তাজবীদের নিয়ম মেনে পড়া আবশ্যক, যদি কেউ নিয়ম ভঙ্গ করে পড়ে, তবে সে গুনাহগার হবে। তাই, উচ্চারণের শুদ্ধতা ও বর্ণ-মূলস্থানের (মাখরাজ ও صفات) যথাযথ খেয়াল রেখে স্পষ্টভাবে ধীরস্থিরভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। এটি হয় ترتیل (অর্থাৎ খুব ধীরস্থিরভাবে) অথবা حدر (অর্থাৎ তুলনামূলক দ্রুত গতিতে) যে কোনো শৈলীতে পড়তে পারে। তবে, স্বর বা উচ্চারণ-ভঙ্গির ব্যাপারে কুরআন তিলাওয়াতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্বতন্ত্র পদ্ধতি বা ধরন নেই। হাদিস শরীফে কৃত্রিম সুর ও গানের কৌশল পরিহার করে নিখাদ আরবী (যেমন সহজাতভাবে আরবরা পড়ে) উচ্চারণের প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা রয়েছে যে, আরব উলামাদের উচ্চারণ অনুসরণ করা হবে, নাকি মিশরীয় লহজায় তিলাওয়াত করা হবে। তবে কৃত্রিম অনুকরণ এবং গানের সূক্ষ্মতা ও প্রদর্শনবাদিতা থেকে বিরত থাকা উচিত।

প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই! তিলাওয়াতের সময় থেমে থেমে পড়া, পিছনে ফিরে যাওয়া, বড় শ্বাস নেওয়া – এসবের উদ্দেশ্য ও প্রভাব বিবেচনা করে এগুলো জায়েজ বা নাজায়েজ হবে। যদি তা কুরআনের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে তাজবীদ রক্ষার্থে বা ক্বিরাতের সৌন্দর্য বাড়াতে করা হয়, তবে সমস্যা নেই। তবে নামাজে বা সাধারণ তিলাওয়াতে অযথা থেমে যাওয়া, বারবার ফিরে যাওয়া বা অতিরিক্ত টান দেওয়া হলে তা সুন্নাতসম্মত নয়।

শরঈ দলীল সমসূহ:
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُقَطِّعُ قِرَاءَتَهُ . وَحَدِيثُ لَيْثٍ أَصَحُّ .
উম্মে সালামা (রাযিঃ) তাঁর কিরাআতের বিবরণ দিলেন এবং বললেন যে, তাঁর কিরা’আত ছিল পরিষ্কার, এক এক অক্ষর সুস্পষ্ট। (জামে' তিরমিযী হাদীস নং: ২৯২৩)

حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، قَالَ: سَأَلْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، عَنْ قِرَاءَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «كَانَ يَمُدُّ مَدًّا
কাতাদা (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) কে রাসূল (ﷺ)–এর কিরাআত পাঠ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসূল (ﷺ) দীর্ঘায়িত করে পাঠ করতেন।
(সহীহ বুখারী ,হাদীস নং: ৫০৪৫)

عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «اقرؤوا الْقُرْآنَ بِلُحُونِ الْعَرَبِ وَأَصْوَاتِهَا وَإِيَّاكُمْ وَلُحُونَ أَهْلِ الْعِشْق وَلُحُون أهل الْكِتَابَيْنِ وسيجي بعدِي قوم يرجعُونَ بِالْقُرْآنِ ترجع الْغِنَاءِ وَالنَّوْحِ لَا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ مَفْتُونَهٌ قُلُوبُهُمْ وَقُلُوبُ الَّذِينَ يُعْجِبُهُمْ شَأْنُهُمْ» .
হযরত হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ কোরআন পড় আরবদের স্বরে সুরে এবং দূরে থাক আহলে এশক ও আহলে কিতাবদের স্বর হতে। শীঘ্রই আমার পর এমন লোকেরা আসবে যারা কোরআনে গান ও বিলাপের সুর ধরবে। কোরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না (এবং অন্তরে প্রবেশ করবে না)। তাদের অন্তর হবে দুনিয়ার মোহগ্রস্ত এবং অনুরূপভাবে তাদের অন্তরও যারা তাদের পদ্ধতিকে পছন্দ করিবে।
(মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং ২২০৭)
হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
এখানে 'আহলে এশক’—অর্থ, যারা গান করে মানুষকে প্রেমের ফাঁদে ফেলতে চায় বা বিরহের গান করে। কোরআন বিরহের স্বরে পড়তে পারে না। আহলে কিতাব হল ইহুদী-খৃষ্টানরা।

مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح - (4 / 1505):
"وعن حذيفة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: (اقرءوا القرآن بلحون العرب وأصواتها) عطف تفسيري، أي: بلا تكلف النغمات من المدات والسكنات في الحركات والسكنات بحكم الطبيعة الساذجة عن التكلفات (وإياكم ولحون أهل العشق): أي: أصحاب الفسق (ولحون أهل الكتابين)، أي: أرباب الكفر من اليهود والنصارى فإن من تشبه بقوم فهو منهم، قال الطيبي: اللحون جمع لحن وهو التطريب وترجيع الصوت، قال صاحب جامع الأصول: ويشبه أن يكون ما يفعله القراء في زماننا بين يدي الوعاظ من اللحون العجمية في القرآن ما نهى عنه رسول الله صلى الله عليه وسلم (وسيجيء) : أي سيأتي كما في نسخة (بعدي قوم يرجعون) بالتشديد، أي يرددون (بالقرآن) : أي يحرفونه (ترجيع الغناء) بالكسر والمد بمعنى النغمة (والنوح) بفتح النون من النياحة، والمراد ترديدا مخرجا لها عن موضعها إذا لم يأت تلحينهم على أصول النغمات إلا بذلك، قال الطيبي: الترجيع في القرآن ترديد الحروف كقراءة النصارى (لا يجاوز) : أي قراءتهم (حناجرهم) : أي طوقهم، وهو كناية عن عدم القبول والرد عن مقام الوصول، والتجاوز يحتمل الصعود والحدور، قال الطيبي: أي لايصعد عنها إلى السماء، ولا يقبله الله منهم، ولا يتحدر عنها إلى قلوبهم ليدبروا آياته ويعملوا بمقتضاه (مفتونة) بالنصب على الحالية، ويرفع على أنه صفة أخرى لقوم، واقتصر عليه الطيبي: أي مبتلى بحب الدنيا وتحسين الناس لهم (قلوبهم) بالرفع على الفاعلية، وعطف عليه قوله (وقلوب الذين يعجبهم شأنهم) بالهمز ويعدل: أي يستحسنون قراءتهم، ويستمعون تلاوتهم (رواه البيهقي في شعب الإيمان، ورزين في كتابه) وكذا الطبراني".

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৬১৪৪৭

রূহ এবং নফসের পার্থক্য


১৭ মে, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৬১৩৪১

রাসুলুল্লাহ সা. কবে থেকে নবী?


১৯ মে, ২০২৪

ঢাকা ১২০৮

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৫০৩০৫

শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার উপায়


৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩

চাঁদপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

৪৬০৯৬

ব্যভিচার থেকে তাওবা


১৭ নভেম্বর, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy