আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

ফাতেহায়ে ইয়াজদাহম কি?

প্রশ্নঃ ৮০৭১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ফাতেহায়ে ইয়াযদাহম-এর কোনো শরয়ী ভিত্তি আছে কি? রবিউস সানী’র বিশেষ নামায আছে কি ?,

১৪ অক্টোবর, ২০২৪

গৌরনদী

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


১- রবিউস সানী’র ১১ তারিখে পালিত ফাতেহায়ে ইয়াযদাহম-এর কোনো শরয়ী ভিত্তি নেই।

রসম ও রেওয়াজে অনুরক্ত লোকেরা দীর্ঘদিন থেকে ফাতেহায়ে ইয়াযদাহম নামেও একটি রসম পালন করে থাকে। ‘ইয়াযদাহম’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘একাদশ’। অর্থাৎ রবীউস সানীর এগারো তারিখে কৃত ফাতেহা বা ইসালে ছওয়াব মাহফিল। বলা হয়ে থাকে, এ তারিখে ওলীয়ে কামেল শায়খ আবদুল কাদের জীলানী রহ.-এর ইন্তেকাল হয়েছিল। এজন্য তাঁর ওফাতদিবস পালন করার উদ্দেশ্যে এই রসমের সূচনা করা হয়। ওই আল্লাহর বান্দারা এ বিষয়টি চিন্তা করেনি যে, ইসলামে না জন্মদিবস পালন করা হয়, না মৃত্যুদিবস। না শায়খ জীলানী রহ. তাঁর কোনো শায়খের জন্মদিবস বা মৃত্যুদিবস পালন করেছেন, না তার কোনো খলীফা বা শাগরিদ তা পালন করেছেন। বলাবাহুল্য যে, এই ভিত্তিহীন রসম পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চিন্তা করা আর তাতে ইসালে ছওয়াবের নিয়ত করা বাতুলতা মাত্র।

এদিকে মজার বিষয় এই যে, গিয়ারভীর এই রসম এ তারিখে এ জন্যই পালন করা হয় যে, এটা শায়খ জীলানীর ওফাতদিবস। আল্লাহর কী শান, এই ভিত্তিহীন রেওয়াজের উদযাপন দিবসের জন্যও একটি ভিত্তিহীন তারিখ নির্ধারিত হয়েছে।



যারা এটা পালন করে থাকে তাদের কর্তব্য ছিল ইলমে তারীখ এবং আসমাউর রিজালের দু’চারটি কিতাব উল্টেপাল্টে দেখা যে, সত্যি সত্যিই তাঁর ওফাত এগারো তারিখে হয়েছে কি না?

আমরা তারীখ ও রিজালের অনেক গ্রন্থে শায়খ জীলানীর জীবনালোচনা পড়েছি। কোথাও এগারো রবীউস সানীর কথা নেই। আট, নয় বা দশ রবীউস সানী ৫৬১ হিজরীর কথা উল্লেখিত হয়েছে।

-দেখুন : সিয়ারু আলামিন নুবালা, যাহাবী ১৫/১৮৯; আলমুনাতাযাম ইবনুল জাওযী : ১৮/১৭৩; যায়লু তবাকাতিল হানাবিলা, ইবনে রজব ১/২৫১; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮/৩৯৫; শাজারাতুয যাহাব, ইবনুল ইমাদ ৪/২০২; তারীখুল ইসলাম, যাহাবী ৩৯/৬০

গত কিছুদিন আগে একটি দৈনিক পত্রিকায় দেখতে পেলাম, ফাতেহা ইয়াজদহমের প্রথাগত এক মাহফিলের জনৈক বক্তার কিছু কথা ছাপা হয়েছে। পীরে তরীকত ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের মহাসচিব বলে বক্তার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, শায়েখ জিলানী (রহ.) শরীয়ত ও তাসাউওফ বিষয়ের শিক্ষা পীর আবু সাঈদ মাখজুমী থেকে লাভ করেছেন।

অথচ শায়খের উস্তাদের নাম আবু সাদ মুখাররিমী, আবু সাঈদ মাখজুমী নয়। যাক এটি তো শুধু নামের ভুল।

কিন্তু অবাক হলাম যখন তার বরাতেই একথাও উদ্ধৃত দেখা গেল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে তিনি মৃতকে জীবিত করার ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন।’

যদি কোন সাধারণ লোকের মুখেও এ কথা শোনা যেত তাহলেও অবাক হওয়ার মত ছিল। কারণ তাওহীদে বিশ্বাসী কোন মুসলমানের অজানা নয় যে, জীবন ও মরণ একমাত্র আল্লাহর হাতেই। এটি কোন মাখলুকের সাধ্যে নেই। থাকতেও পারে না। আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করে মানুষ আল্লাহর ওলী হতে পারে, কিন্তু যে বিষয়গুলোর ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই রাখেন সেগুলোর কেউ অধিকারী হতে পারে না।

যদি ‘ফাতেহায়ে ইয়াজদহম’এর মাহফিলে এমন আলোচনা হয়ে থাকে তাহলে তো এটি শুধু রসম-রেওয়াজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং শেরক ও বিদআতের প্রচারকও বটে।

২-

একটি ভিত্তিহীন আমল; রবিউস সানী’র বিশেষ নামায ও আমলঃ

প্রতি সপ্তাহের কিছু আমল এবং প্রতি মাসের কিছু আমল সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতি রোযা রাখা, আইয়ামের বীযের তথা প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ রোযা রাখা ইত্যাদি। এসব আমল রবিউস সানীতেও রয়েছে। এগুলো ছাড়া রবিউল আখির (রবিউস সানী) মাসে শরীয়তে বিশেষ কোনো আমলের কথা বর্ণিত হয়নি; কিন্তু বার চান্দের আমল জাতীয় কিছু কিতাবে রবিউস সানী মাসের আমল হিসাবে কিছু ভিত্তিহীন নামায ও আমল আবিষ্কার করা হয়েছে। কোনো কোনোটিতে রয়েছে-

‘বর্ণিত আছে যে, রবিউস সানীর নতুন চাঁদ দেখে যে ব্যক্তি মাগরীবের নামাযের পর দুই রাকাত করে মোট ৮ রাকাত নফল নামায পড়বে এবং প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা ইখলাস...।”

কোনোটাতে আছে, “যদি কোনো ব্যক্তি এ মাসের শেষ রাতে দু’রাকাআত করে চার রাকাআত নফল নামায এ নিয়মে আদায় করে...।”

কোনোটাতে আছে, “বর্ণিত আছে, যে এ মাসের প্রথম থেকে সূরা মুজ্জাম্মেলের আমল করবে তার খুবই উপকার হবে..” ইত্যাদি।

এসকল নামায ও আমল সবই ভিত্তিহীন। যেহেতু বার চান্দের আমল বিষয়ক বই লেখা হচ্ছে, ফলে আন্যান্য মাসের বিভিন্ন বানোয়াট নামাযের পদ্ধতির সাথে মিল রেখে মনগড়াভাবে কিছু নামায ও আমলের কথা রবিউস সানীর আমল শিরোনামে লিখে দেওয়া হয়েছে। আর রবিউস সানীর নামায ও আমল এমন বানোয়াট বিষয় যে, জালহাদীস বিষয়ক কিতাবেও এ সম্পর্কে তেমন কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। অর্থাৎ হাদীস জালকারীরাও এ বিষয়ে তেমন কিছু জাল করেনি; বরং এগুলো বারো চান্দের আমল জাতীয় কিতাবের কিছু লেখক কর্তৃক জালকৃত। আল্লাহ মাফ করুন। (মাসিক আলকাউসার)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৬১১৮

কালয়ুবী কিতাবে বিবৃত ঘটনাবলীর তাহকীক


১২ ডিসেম্বর, ২০২২

অভয়নগর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

১১২৬২

তাবলিগ জামাত কি হক মেহনত?


২৬ জুলাই, ২০২৪

ঢাকা ১২০৭

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

১১৮৩৩

সন্তান লালন পালনের গাইডবুক


৮ জুন, ২০২৪

Hinguli

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy