আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মহররম মাসের ফজিলত ও আমাল

প্রশ্নঃ ৮০১৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মহররম মাসের ফজিলত ও আমাল জানালে অনেক উপকার হই,

৮ জুলাই, ২০২৪

Q৬VQ+Q৪৮

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


মুহাররম মাসের ফজিলত ও কিছু আমালঃ

১. মুহাররম ‘হারাম’ বা সম্মানিত মাস হিসাবে পরিগণিত

আবূ বাকরাহ্ রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ثَلاثٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ

বারো মাসে বছর। তার মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক : যিলকদ, যিলহজ্ব, মহররম আর চতুর্থটি হল রজব, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস। (সহীহ বুখারী ২/৬৭২)

২. রামাযানের পরেই মুহাররমের রোজার অবস্থান

আবূ হুরায়রাহ্ রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيْضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ

রামাযানের পরে সর্বোত্তম রোজা হল মুহাররম মাসের রোজা (অর্থাৎ আশূরার রোজা) এবং ফরয নামাজ পরে সর্বোত্তম নামাজ হল রাতের নফল নামাজ। (মুসলিম হা/১১৬৩)

৩.আশুরা (মুহাররমের দশম দিন ) একটি মহান দিন

ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ “‏ مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي تَصُومُونَهُ ‏”‏ ‏.‏ فَقَالُوا هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ أَنْجَى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ فَصَامَهُ مُوسَى شُكْرًا فَنَحْنُ نَصُومُهُ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ ‏”‏ فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ ‏”‏ ‏.‏ فَصَامَهُ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ ‏

রাসূলুল্লাহ ﷺ মদীনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদীরা আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন্ দিন যে তোমরা রোজা পালন করছ? তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিবস যেদিন আল্লাহ মুছা আ. ও তার সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন মুছা আ. শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে রোজা পালন করেছেন। এ কারণে আমরাও রোজা পালন করে থাকি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “তোমাদের চেয়ে আমরা মুছা আ. এর অধিকতর ঘনিষ্ট ও নিকটবর্তী।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ রোজা পালন করলেন ও অন্যদেরকে রোজা পালনের নির্দেশ দিলেন।( মুসলিম হা/ ১১৩০)

৪.আশুরা একটি ভাল দিন

মুসলিমের বর্ণনা هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ এটি একটি মহান দিন; পক্ষান্তরে সহীহ বুখারীর বর্ণনায় আছে, هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌএটি একটি ভাল দিন। (সহীহ বুখারী ১৮৬৫)

৫. এই দিন আল্লাহ মুছা আ. ও তাঁর সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন
أَنْجَى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ
এই দিন আল্লাহ মুছা আ. ও তাঁর সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন।(প্রাগুক্ত)

৬.এই দিন নূহ আ.-এর কিশতি জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল

ইমাম আহমাদ সামান্য বর্ধিতাকারে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেখানে আছে,
وهو اليوم الذي استوت فيه السفينة على الجودي فصامه نوح شكراً
এটি সেই দিন যাতে নূহ আ.-এর কিশতি জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল, তাই নূহ আ. আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ার্থে সেদিন রোজা রেখেছিলেন।(ফাতহুল বারী ৫/৪৩৯)
৭.এই দিনে মুছা আ. ও নূহ আ. রোজা রেখেছিলেন
فصامه موسى شكرا মুছা আ. শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে রোজা পালন করেছেন।فصامه نوح شكراً নূহ আ. আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ার্থে এদিন রোজা রেখেছিলেন।(প্রাগুক্ত)
৮.এই দিনের অপেক্ষা করতেন নবীজী ﷺ
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلّا هَذَا الْيَوْمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ
আমি নবী করিম ﷺ-কে রোজা রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখি নি যত দেখেছি এই দিন অর্থাৎ আশুরার দিন এবং এই মাস অর্থাৎ রমজান মাসের রোজার প্রতি। (সহীহ বুখারী ১৮৬৭)
৯.এই দিনের রোজায় এক বছরের গোনাহ থেকে মুক্তিলাভ হয়

আবু কাতাদাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

صِيامُ يومِ عاشُوراءَ، إِنِّي أحْتَسِبُ على اللهِ أنْ يُكَفِّرَ السنَةَ التِي قَبْلَهُ

আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। ( মুসলিম হা/১৯৭৬)

১০.আশুরার সাথে তাসুআ তথা নবম তারীখের রোজাও মুস্তাহাব।

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাযি. বর্ণনা করেন,

حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : “فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ”. قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আশুরার রোজা রাখলেন এবং (অন্যদেরকে) রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটিতো এমন দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বড় জ্ঞান করে, সম্মান জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আগামী বছর এদিন আসলে, আমরা নবম দিনও রোজা রাখব ইনশাল্লাহ। বর্ণনাকারী বলছেন, আগামী বছর আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর ওফাত হয়ে গিয়েছে।( মুসলিম হা/১৯৪৬)

মোটকথা, এ মাসের করণীয় বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে, তওবা-ইস্তেগফার, নফল রোযা এবং অন্যান্য নেক আমল। এসব বিষয়ে যত্নবান হওয়া এবং সব ধরনের কুসংস্কার ও গর্হিত রসম-রেওয়াজ থেকে বেঁচে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক চলাই মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

১৩৯৬৮

সন্তানদের বিয়ের ব্যাপারে নববী নির্দেশনা


২৮ জানুয়ারী, ২০২৫

সুবর্ণচর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ

৩২৫১৬

তারাবীহ নামাজের কাজা পড়ার বিধান


১০ এপ্রিল, ২০২৩

Cairo Governorate 4454511

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

১১৯৫৪

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম,জুমার দিনেক বিশেষ কোনো আমল থাকলে বলবেন এবং বিশেষ কোনো দুরুদ

২৫ ডিসেম্বর, ২০২১

৪০ ৩ B St - Umm Suqeim - Umm Suqeim ৩ - Dubai - সংযুক্ত আরব আমিরাত

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

১৪৯২৮

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, লাইলাতুল বরাত এর কোনো বিশেষ আমল । আছে ।

১০ মার্চ, ২০২২

রংপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy