আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

শিরক কি? শিরক থেকে কি ভাবে বাঁচবো?

প্রশ্নঃ ৭৯৪৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, শিরক কি?শিরক থেকে কি ভাবে বাঁচবো

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
কুমিল্লা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


শিরক শব্দের আভিধানিক অর্থ- অংশীদারিত্ব, অংশীবাদ, মিলানো, সমকক্ষ করা, অংশীস্থির করা, সমান করা, ভাগাভাগি, সম্পৃক্ত করা। ইংরেজীতে Poytheism (একাধিক উপাস্যে বিশ্বাস), Sharer, Partner, Associate।

পারিভাষিক পরিচিতি-

• “শরীয়তের পরিভাষায় যেসব গুনাবলী কেবল আল্লাহর জন্য নির্ধারিত সেসব গুনে অন্য কাউকে গুনান্বিত ভাবা বা এতে অন্য কারো অংশ আছে বলে মনে করাই শিরক্।”

• “শিরক্ হচ্ছে বান্দাহর আল্লাহর সাথে তাঁর রুবুবিয়্যাত সংক্রান্ত কর্ম কিংবা তাঁর জাত ও আসমা ওয়াস সিফাতে তথা নাম ও গুনাবলী অথবা উলুহিয়্যাতে (ইবাদতে) কাউকে শরীক করা”।

• শিরক্ হচ্ছে আল্লাহর সাথে এমন বিষয়ে সমকক্ষ স্থির করা যেটা আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য। যেমন- আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করা, অন্য কারো নিকট আশা করা, আল্লাহর চাইতে অন্য কাউকে বেশী ভালবাসা, অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদতের কোন একটি অন্যের দিকে সম্বোধন করাকে শিরক্ বলে।

• তাওহীদুল্লাহ হচ্ছে আল্লাহর সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত মানুষের সকল বিশ্বাস, কথা ও কাজে আল্লাহর এককত্বের উপলব্দি ও মেনে চলা। পক্ষান্তরে শিরক্ হচ্ছে এর সম্পূর্ণ বিপরীত।

• ইমাম কুরতুবী বলেন, শিরক্ হল আল্লাহর নিরংকুশ প্রভূত্বে কারো অংশীদারিত্বের আক্বীদা পোষণ করা।

• আক্বীদার পরিভাষায়, শিরক্ হচ্ছে আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট ও সীমাবদ্ধ কোন বিষয় আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো জন্য করা।

• “শিরকের ক্ষেত্রে একটা বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, এতে দু‘শরীকের অংশ সমান হওয়া আবশ্যক নয়। বরং শতভাগের একভাগের অংশীদার হলেও তাকে অংশীদার বলা হয়। তাই আল্লাহতা‘য়ালার হকের সামান্যতম অংশ অন্যকে দিলেই তা শিরকে পরিণত হবে।এতে আল্লাহর অংশটা যতই বড় রাখা হোক না কেন।”

ছোট শিরক: আর তা হলো (সামান্য) লোক দেখানোর নিয়তে নেক কাজ করা। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী : “সুতরাং যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে সে যেন নেক কাজ করে এবং তাঁর প্রভুর ইবাদতের সাথে অন্য কাউকে শরিক না করে।” [সূরা আল-কাহ্‌ফ: ১১০]

গোপন (সূক্ষ্ম) শিরক: এর প্রমাণ হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী : “এ [মুসলিম] জাতির মধ্যে শিরক অন্ধকার রাত্রিতে কালো পাথরের উপর কালো পিপড়ার বেয়ে উঠার মতই সূক্ষ্ম বা গোপন।”

শিরক্ করলে জান্নাত হারাম এবং জাহান্নাম অবধারিত-

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা বলেনঃ “হে বনী ইসরাইল! তোমরা আমার রব এবং তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদত কর। কেউ আল্লাহর শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম।” (সূরা, মায়েদা-৫:৭২)

রাসুল (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে শরীক্ করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, সে জাহান্নামে যাবে।” (মুসলিম)

শিরক্ করলে সব আমল বাতিল হয়ে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়-

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা বলেনঃ “তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই এই ওহী হয়েছে তুমি আল্লাহর সাথে শরীক্ করলে তোমার আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং অবশ্য তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্থ।” (সূরা যুমার, ৩৯:৬৫)

সূরা আনফালের ৮৩-৮৭ আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়লা ১৮ জন নবীর নাম নিয়ে তাদের ব্যাপারে বলেছেন-

“এটি আল্লাহর হেদায়েত, নিজ বান্দাহদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তিনি এটি দ্বারা সৎপথে পরিচালিত করেন। তারা যদি শিরক্ করতো তবে তাদের কৃতকর্ম নিস্ফল হত।” (সূরা, আন‘আম-৬:৮৮)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়লা আরও বলেনঃ “আমি তাদের আমলের প্রতি মনোনিবেশ করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকনায় পরিণত করে দেব।” (সূরা, ফোরক্বান-২৫:২৩)

শিরক্ করলে কাফের-মুশরিকে পরিণত হয়ে যায়-
ঈমান আনার পরেও কেউ যদি আল্লাহর সাথে শিরক্ করে তবে সে কাফের এবং মুশরিক হয়ে যায়। ইসলামী শরী‘য়া অনুযায়ী তাকে ‘মুর্তাদ’ বলা হয়। তার হুদুদ (শাস্তি) মৃত্যুদন্ড। রাসুল (সঃ) বললেন- “তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক ও সর্বনাশা গুনাহ থেকে বিরত থাক।’’ অত:পর শিরকের কথা বললেন। অত:পর বললেন- যে ব্যক্তি নিজের দ্বীনকে পরিবর্তন করে(অর্থাৎ ইসলামকে ত্যাগ করে) তাকে হত্যা কর।” (বুখারী, আহমাদ)

আল্লাহ সুবতানাহু ওয়াতা‘য়ালা বলেনঃ “যদি তোমরা তাদের (মুশরিকদের) কথামত চল তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হবে।” (সূরা, আন‘আম ৬ঃ১২১)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ সুবতানাহু ওয়াতা‘য়ালা মুসলিমদেরকে সাবধান করে দিয়েছেন যদি তারা মুশরিকদের আক্বীদা-বিশ্বাস, কাজ-কর্মে আনুগত্য করে তাহলে তারা মুশরিক হয়ে যাবে।

ছোট-বড় এবং প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য শিরক থেকে বাঁচার দোয়া:

اللَّهمَّ إنِّي أَعوذُ بكَ أنْ أُشرِكَ بكَ وأنا أَعلَمُ، وأَستغفِرُكَ لِمَا لا أَعلَمُ"

অর্থাৎ : “হে আল্লাহ আমি জেনে-শুনে তোমার সাথে কোন কিছুকে শরিক করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আর আমার অজ্ঞাত বিষয়াদির জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।”

والله اعلم بالصواب

ইসহাক মাহমুদ মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর