আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৭৬৫৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, অজু করার সময় যদি পরিচিত কোনো মানুষ তামাসার সহিত অজুর পানি অন্যর শরীরে ছিটিয়ে দেয় তাতে কি অজুর কোনো ক্ষতি হবে..?শুনেছি অজু করার সময় নাকি কথা বলা লাগে না কারণ, অজু করার সময় আল্লাহর পক্ষ হতে চার জন ফিরিস্তার মাধ্যমে একটি রহমতের চাদর দিয়ে চারজন চার কোনে ধরে বান্দাকে রহমতের ছায়াতলে আবৃষ্ট করে রাখে যখন বান্দা একটা কথা বলে এক কোনের একজন ফিরিস্তা রহমতের চাদর ছেড়ে চলে যা এই রোকম ভাবে কথা বলতে থাকলে সকলেই চলে যায় ফলে ঐ বান্দা অজুর সময় আল্লাহর রহমত থেকে বন্ঞ্চিত হয় কথাটি কুরান হাদিসের আলোকে কতটুকু সত্যে রেফারেন্স সহ বর্ণনা করবেন...?হঠাৎ কোনো একদিন অথবা মাঝে মাঝে সামান্য কিছু পরিমাণ পেটের ভিতরের অপদ্রব্য টক ঢেকুর উঠে গলার উপরি ভাগ পর্যন্ত চলে আসে প্রায় মুখের ভিতর আসবে এরোকম ভাব হয় কিন্তু চেপে ধরে রাখার কারনে তা পেটের ভিতর চলে যায় যদি নামাযরত অবস্থায় হয় নামায নষ্ট হবে কি আর নামায ব্যাতিত অজুরত অবস্থায় থাকলে অজু নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি কুরআন হাদিসের রেফারেন্স সহ বলবেন...??,

২৯ জুলাই, ২০২১

নামবিহীন রাস্তা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم




১- প্রশ্নোক্ত কারণে অজুর কোনো ক্ষতি হবে না।
ওযু হয়ে যাবে।
আর যে ঘটনাটির কথা আপনি বললেন, আমাদের জানামতে এ কথাটা হাদীসের প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহে নেই।
অতএব, এসব বলা ও প্রচার করা থেকে বিরত থাকা চাই।
জানা না থাকলে জেনে বলি, তবুও ভুল ও অসত্য না বলি। আল্লাহ তাওফীক দিন।

২- প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী চেপে রাখার কারনে পেটের ভিতর চলে গেলে নামায বা ওযু কোনটাই ভাঙ্গবে না।
এটা অযু ভঙ্গের কারণের মধ্যে পরবে না।

মৌলিকভাবে অযু ভঙ্গের কারণ ৭টি। যথা-

১. পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। যেমন বায়ু, পেশাব পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। (হেদায়া-১/৭)

এর দলিল হল, আল্লাহ তাআলা বলেন,

أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ

তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে [তাহলে নামায পড়তে পবিত্রতা অর্জন করে নাও]। (সূরা মায়িদা ৬)

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

إِنَّمَا الْوُضُوءُ مِمَّا خَرَجَ ، وَلَيْسَ مِمَّا دَخَلَ

শরীর থেকে যা কিছু বের হয় এ কারণে অযু ভেঙ্গে যায়, প্রবেশের দ্বারা ভঙ্গ হয় না। (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী ৫৬৮)

২. রক্ত, পূঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। (হেদায়া-১/১০)

এর দলিল হল,

أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا رَعَفَ، انْصَرَفَ فَتَوَضَّأَ

আব্দুল্লাহ বিন উমর রাযি.-এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝরতো, তখন তিনি ফিরে গিয়ে অযু করে নিতেন। (মুয়াত্তা মালিক ১১০)

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ يُفْتِي الرَّجُلَ إِذَا رَعَفَ فِي الصَّلَاةِ، أَوْ ذَرَعَهُ قَيْءٌ، أَوْ وَجَدَ مَذِيًّا أَنْ يَنْصَرِفَ فَيَتَوَضَّأُ

আব্দুল্লাহ বিন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি যদি কারো নামাযরত অবস্থায় নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তো, বা বমি হতো, বা মজি বের হতো তাহলে তাকে ফিরে গিয়ে অযু করার ফাতওয়া প্রদান করতেন। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক ৩৬১০)

৩. মুখ ভর্তি বমি অর্থাৎ বেশি পরিমাণে বমি হলে। এর দলিল হল,

আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَنْ أَصَابَهُ قَيْءٌ أَوْ رُعَافٌ أَوْ قَلَسٌ أَوْ مَذْيٌ، فَلْيَنْصَرِفْ، فَلْيَتَوَضَّأْ

যে ব্যক্তির বমি হয়, অথবা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে, বা মজি বের হয়, তাহলে ফিরে গিয়ে অযু করে নিবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১২২১)

مُغِيرَةُ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: سَأَلْتُهُ عَنِ الْقَلْسِ، فَقَالَ: ذَلِكَ الرَّسْعُ، إِذَا ظَهَرَ فَفِيهِ الْوُضُوءُ

ইবরাহীম নাখয়ী রহ.-কে বমির ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলেন মুগীরাহ রহ.। তখন তিনি উত্তরে বললেন, যদি তা মুখ ভরে হয়, তাহলে অযু করতে হবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৪৩৩)

বমি ছাড়াও রক্ত, পিত্ত, খাদ্য অথবা পানি মুখ ভরে নির্গত হলেও ওযু ভঙ্গ হবে। এ সমস্ত বস্তু অল্প অল্প করে কয়েকবার নির্গত হলেও ওযু ভঙ্গ হবে যদি সব বারের টা একত্রে হলে মুখ ভরা পরিমাণ হত বলে মনে হয় ।
তবে নির্গত না হলে ওযু নষ্ট হবে না।

৪. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া। এর দলিল হল,

عَنِ الْحَسَنِ فِي رَجُلٍ بَزَقَ فَرَأَى فِي بُزَاقِهِ دَمًا، أَنَّهُ لَمْ يَرَ ذَلِكَ شَيْئًا حَتَّى يَكُونَ دَمًا غَلِيظًا، يَعْنِي فِي الْبُزَاقِ

হাসান বসরী রহ. বলেন, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে তাহলে থুথুতে রক্ত প্রবল না হলে তার উপর অযু করা আবশ্যক হয় না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৩৩০)

عَنْ إِبْرَاهِيمَ فِي الرَّجُلِ يَبْزُقُ فَيَكُونُ فِي بُزَاقِهِ الدَّمُ، قَالَ: إِذَا غَلَبَتِ الْحُمْرَةُ الْبَيَاضَ تَوَضَّأَ، وَإِذَا غَلَبَ الْبَيَاضُ الْحُمْرَةَ لَمْ يَتَوَضَّأْ

ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে, তাহলে সাদার উপর লাল রঙ বেশি থাকে, তাহলে অযু করবে, আর যদি লালের উপর সাদার আধিপত্য থাকে, তাহলে অযু লাগবে না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৩৩২)

عَنِ ابْنِ سِيرِينَ فِي الرَّجُلِ يَبْصُقُ دَمًا قَالَ: إِنْ كَانَ الْغَالِبُ عَلَيْهِ الدَّمُ تَوَضَّأَ

ইবনে সীরীন রহ. বলেন, যদি থুথুতে রক্তের আধিক্য হয়, তাহলে অযু করা আবশ্যক। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক ৫৬০)

৫. ঘুমানো- চিৎ হয়ে; কাত হয়ে; হেলান দিয়ে কিংবা কোনো কিছুর সঙ্গে ঠেস দিয়ে ঘুমালে যা সরিয়ে ফেললে ঘুমন্ত ব্যক্তি পড়ে যাবে। এর দলিল হল,

ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

لَيْسَ عَلَى مَنْ نَامَ سَاجِدًا وُضُوءٌ، حَتَّى يَضْطَجِعَ، فَإِنَّهُ إِذَا اضْطَجَعَ، اسْتَرْخَتْ مَفَاصِلُهُ

সেজদা অবস্থায় ঘুমালে অযু ভঙ্গ হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে, কেননা, চিৎ বা কাত হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়। [ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে]। (মুসনাদে আহমাদ ২৩১৫ আবু দাউদ ২০২)

৬.পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে। এর দলিল হল,

عَنْ حَمَّادٍ قَالَ: إِذَا أَفَاقَ الْمَجْنُونُ تَوَضَّأَ وُضُوءَهُ لِلصَّلَاةِ

হাম্মাদ রহ. বলেন, যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ হয়, তখন নামাযের জন্য তার অযু করতে হবে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক ৪৯৩)

৭. নামাযে উচ্চস্বরে হাসি দিলে। এর দলিল হল, ইমরান বিন হুসাইন রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে,

مَنْ ضَحِكَ فِي الصَّلَاةِ قَرْقَرَةً ، فَلْيُعِدِ الْوُضُوءَ وَالصَّلَاةَ

যে ব্যক্তি নামাজে উচ্চস্বরে হাসে, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে।

হাসান বিন কুতাইবা রহ. বলেন,

إِذَا قَهْقَهَ الرَّجُلُ أَعَادَ الْوُضُوءَ وَالصَّلَاةَ

যখন কোনো ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসি দেয়, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। (সুনানে দারা কুতনি ১/১৫৬)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৭১৮৮

সিজদায় ঘুমের ভাব আসলে অজু ভঙ্গ হবে কি?


৩০ ডিসেম্বর, ২০২২

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৮৯১৫৬

পিরিয়ড চলাকালীন অজু অবস্থায় থাকার লাভ


১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

চট্টগ্রাম ৪২১৭

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

২৫০৯১

পেশাব ঝরার সন্দেহ হলে করণীয় কী?


১৬ নভেম্বর, ২০২২

নাঙ্গলকোট

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৪৩২০১

অজুর সময় কথা বলা


১৭ অক্টোবর, ২০২৩

Narayanganj, Bangladesh

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy