আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

কোনো নবী কি শেষ নবী স. এর উম্মত হওয়ার আবেদন করেছিলেন?

প্রশ্নঃ ৭২৬৬৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ওয়ারাহমাতুল্লাহ, আামার পশ্ন হলো যে আমরা বলি আামাদের নবীজির পুর্বে যে নবী আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে পাঠায়ছেন তারা আল্লাহ তায়ালার কাছে দুয়া কোরছেন যে আমাকে নবী নাবায়া শেষ নবীর উম্মত বানালে ভালো হতো?? এটা কতো সত্যি,

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ঘাটাইল

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


কোন গ্রহণযোগ্য মারফূ বর্ণনা দ্বারা একথা প্রমাণিত নয় যে, পূর্বেকার নবীগণ উম্মতে মুহাম্মদী হবার আকাঙ্খা করেছেন। কিছু কিতাবে এ ধরণের বর্ণনা পাওয়া যায়, কিন্তু তা চূড়ান্ত পর্যায়ের দুর্বল, কিংবা বানোয়াট অথবা ইজরাইলী বর্ণনা। যার উপর নির্ভর করার সুযোগ নেই।

যেমন শায়েখ আবূ নুয়াইম আলইস্ফাহানী রহঃ এর দালায়েন নুবুয়্যাহ কিতাবের ৬৮ নং পৃষ্ঠার বর্ণনা নং ৩১ এবং হিলয়াতুল আওলিয়া কিতাবের ৩ নং খণ্ডের ৩৭৬ নং পৃষ্ঠায় একটি বর্ণনা এসেছে। যাতে এসেছে যে, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম তাওরাত কিতাবে যখন উম্মতে মুহাম্মদীর ফযীলত দেখলেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে দুআ করলেন। যেন এ উম্মত তাকে দেয়া হয়। তখন উত্তরে আল্লাহ তাআলা বললেন যে, تلك امة احمد صلى الله عليه وسلم অর্থাৎ এটি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত। তখন তিনি দুআ করলেন যেন, তাকে উম্মতে মুহাম্মদীর অন্তর্ভূক্ত করা হয়।

দালায়েলুন নবুয়্যাহ কিতাবে উদ্ধৃত বর্ণনাটির সনদ হলো:

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْحَسَنِ، قَالَ: ثنا مُحَمَّدُ بْنُ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي شَيْبَةَ، قَالَ: ثنا جُبَارَةُ بْنُ الْمُغَلِّسِ، قَالَ: ثنا الرَّبِيعُ بْنُ النُّعْمَانِ، عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

এ বর্ণনায় একজন রাবী আছেন। যার নাম হলো জুবারাহ বিন মুগাল্লিছ। যার ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের মন্তব্য হলো:

يحيى ابن معين يقول: جبارة كذاب

ইয়াহইয়া বিন মাঈন রহঃ বলেন, জুবারাহ একজন কাজ্জাব তথা চরম মিথ্যুক। [আলজরহু ওয়াত তা’দীল-২/৫৫০, রাবী নং-২২৮৪]

এ বর্ণনা আনার পর লেখক আবূ নুয়াইম রহঃ মন্তব্য করেন:

وَهَذَا الْحَدِيثُ مِنْ غَرَائِبِ حَدِيثِ سُهَيْلٍ، لَا أَعْلَمُ أَحَدًا رَوَاهُ مَرْفُوعًا إِلَّا مِنْ هَذَا الْوَجْهِ

এটি সুহাইল এর গরীব তথা বিরল প্রজাতির বর্ণনার একটি। আমি এমন কাউকে জানি না, যিনি এ সূত্রটি ছাড়া এটিকে মারফূ তথা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সূত্রবদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। [দালায়েলুন নবুয়্যাহ-১/৬৮]

হিলয়াতুল আওলিয়া কিতাবে উদ্ধৃত বর্ণনাটির সনদ হলো:

حدثنا أحمد بن اسحاق وعبدالله بن محمد قالا: ثنا أبو بكر بن أبي عاصم ثنا أيوب الجبابري ثنا سعيد بن موسى ثنا رباح بن زيد عن معمر عن الزهري عن أنس بن مالك قال: قال رسول الله صلى الله عليه و سلم

এ সনদে একজন রাবী আছেন। যার নাম আইয়ুব জাবারী। যার ব্যাপারে আবূ নুয়াইম বর্ণনা আনার পর নিজেই মন্তব্য করেছেন:

وَالْجَبَابِرِيُّ فِي حَدِيثِهِ لِينٌ وَنَكَارَةٌ

আর জাবারীর হাদীসের মাঝে দুর্বলতা এবং মুনকার বিষয় রয়েছে। [হিলয়াতুল আওলিয়া-৩/৩৭৫]

এর সনদে আরেকজন রাবী আছেন। যার নাম হলো: সাঈদ বিন মুসা।

যার ব্যাপারে মুহাদ্দিগণের মন্তব্য হলো:

سعيد بن موسى عن مالك اتهمه ابن حبان بوضع الحديث، وله عن رباح بن زيد موضوعات (المغنی في الضعفاء:1/124،ط:مکتبة مشكاة)

ইমাম যাহাবী রহঃ বলেন, সাঈদ বিন মুসা মালেক থেকে বর্ণনা করেছেন। তাকে ইবনে হিব্বান রহঃ হাদীস জালকারী বলেছেন। আর রাবাহ বিন জায়েদের সূত্রে তার জাল বর্ণনা রয়েছে। [আলমুগনী লিজ জুআফা-১/১২৪]

আলোচিত বর্ণনাটিও সাঈদ বিন মুসা রাবাহ বিন জায়েদ থেকেই বর্ণনা করেছেন।

সুতরাং এ বর্ণনা জাল হওয়ার মাঝে কোন সন্দেহ বাকি থাকে না।

اتهمه ابن حبان بالوضع

ইবনে হিব্বান রহঃ তাকে জাল বর্ণনাকারী বলেছেন। [মীযানুল ই’তিদাল-২/১৫৯, রাবী নং-৩২৮০, লিসানুল মীযান-৩/৪৪, রাবী নং-১৭২]

এমনিভাবে হযরত ইলিয়াস আলাইহিস সালামের ব্যাপারে একই ধরণের দুআ মুস্তাদরাকে হাকেমের ২ খণ্ডের ৬৭৪ পৃষ্ঠায় এবং দালায়েলুন নুবুয়্যাহ লিলবায়হাকীর ৫ নং খণ্ডের ৪২১ নং পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত হয়েছে। যেটিকে ইমাম যাহাবী রহঃ তালখীসে মুস্তাদরাক কিতাবে জাল বর্ণনা বলে অভিহিত করেছেন।

কিছু বর্ণনায় হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের উম্মতে মুহাম্মদী হওয়ার দুআ কবুলের কথা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত বর্ণনাও বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়। ফাতহুল বারীতে ইবনে হাজার সূত্রবিহীন তা উল্লেখ করার পর তাকে মারজূহ বলে মন্তব্য করেছেন। [ফাতহুল বারী-৬/৪৯৩]

সুতরাং বুঝা গেল যে, এসব কথা বলে উম্মতে মুহাম্মদীর বানোয়াট ফযীলত বলা থেকে বিরত থাক প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব। কুরআনে কারীমে উম্মতে মুহাম্মদীকে সবচে’ উত্তম উম্মত বলা হয়েছে। [সূরা আলে ইমরান-১১০]

সহীহ হাদীসের মাঝেও এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্বের কথা আসছে। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৭৬৩]

সেসব কথা রেখে জাল ও বানোয়াট কথা বলা কিছুতেই কোন দ্বীনের দাঈর কাজ হতে পারে না। তাই এসব কথা পরিহার করা আবশ্যক।

আরো জানতে দেখুন:

দারুল উলুম দেওবন্দের ফাতাওয়া নং- Fatwa:597-62T/L=07/1440

জামিয়া বিন্নুরিয়া করাচির ফাতাওয়া নং- 144106201170

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০৫১৯

মেসেঞ্জারে বিবাহ করলে‌ কি তা হয়


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Gazirchat

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮৩৬৫৯

কোন নামাজে কোন সূরা


৪ জানুয়ারী, ২০২৫

চাঁদপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শফিকুল ইসলাম হাটহাজারী

৯০৪৯৪

হারাম টাকায় পোষাক বানিয়ে তা পরে ইবাদত করলে ইবাদত কবুল হবে?


২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

G৯FW+M৫W

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৯০৫৮৩

ভিন্ন দেশ থেকে ৩০ রোযা রেখে বাংলাদেশে গেলে রোযা রাখতে হবে? রাখলে ৩১টা হয়ে যায়। করণীয় কি?


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

대한민국 경기도 파주시 월롱면 통일로৬২০번길 ৮৯-৫৩ (KR)

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy