আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

ভোট একটি আমানত

প্রশ্নঃ ৭২০৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের যে নির্বাচন হয়ে থাকে, সেটা যে পর্যায়েরই হোক না কেন, সেই ভোট দেওয়া ইসলামের শরিয়াহ কী বলে?,

২২ মে, ২০২৪

Kahaloo, Bangladesh

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


ভোট কী?
হযরত মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. এ সংক্রান্ত একটি পুস্তিকায় লিখেছেন যে,ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে তিনটি বিষয়ের সমষ্টি। ১. সাক্ষ্য প্রদান ২. সুপারিশ ও ৩. প্রতিনিধিত্বের অথরিটি প্রদান।

কুরআন-সুন্নাহ সম্পর্কে ওয়াকিফহাল সকলেরই জানা রয়েছে যে, শরীয়তে উপরোক্ত তিনটি বিষয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা তৈরির এবং রাষ্ট্র্পরিচালনার জন্য প্রতিনিধিত্বের সনদ দেওয়ার মানে হচ্ছে প্রতিনিধিত্ব দানকারী (ভোটার) তার ভবিষ্যত সকল কার্যকলাপের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিচ্ছে। এমনিভাবে সুপারিশের বিষয়টিও প্রনিধানযোগ্য। কুরআনুল কারীমের ভাষায় ‘যে ভালো সুপারিশ করবে সে তার নেকীর ভাগী হবে। আর যে মন্দ সুপারিশ করবে সেও মন্দের হিস্যা পাবে।’ -সূরা নিসা, আয়াত ৮৫

ভোট ও সাক্ষ্য

ভোটের মধ্যে যে তিনটি (সাক্ষ্য প্রদান, সুপারিশ, প্রতিনিধিত্বের সনদপ্রদান) বিষয় রয়েছে এর মধ্যে ‘শাহাদত’ বা সাক্ষ্যের বিষয়টি মৌলিক। অর্থাৎ কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ হল, তার ব্যাপারে এ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, লোকটি ভালো এবং যোগ্য। এখন যদি যথাযথ জায়গায় সীল দিয়ে এ সাক্ষ্য প্রদান করা হয় তবে সে হবে সত্য সাক্ষী অন্যথায় হবে মিথ্যা সাক্ষী। আর মিথ্যা সাক্ষ্য যে কত বড় কবীরা গুনাহ ও হারাম কাজ তা কি কারো অজানা রয়েছে? অবশ্য বর্তমান বে-দ্বীনি ও বস্ত্তবাদিতার যুগে অনেকের কাছেই মিথ্যা কোনো বিষয়ই নয়। কথায়, লিখায়, ক্ষমতায়, আদালতে, বই-মিডিয়ায়, বক্তৃতা-ভাষণে সব জায়গাতেই মিথ্যার সয়লাব। অথচ মানবতার মুক্তির দূত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠিন ভাষায় মিথ্যা ও মিথ্যা সাক্ষ্যের নিন্দা করেছেন। সহীহ বুখারীর একটি বর্ণনায় হযরত আবু বকর রা. বলেন যে, রাসূলুল্লাহ একদা এক জায়গায় হেলান দিয়ে বসা অবস্থায় তিন তিনবার সাহাবীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহগুলোর মধ্যে বড় কবীরা গুনাহের কথা বলব? সাহাবীগণ হ্যাঁ সূচক উত্তর দেওয়ার পর তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্যতা (এ দুটি কথা বলার পর তিনি সোজা হয়ে বসলেন) এবং বললেন, শুনে নাও! মিথ্যা সাক্ষ্য অনেক বড় কবীরা গুনাহ।

সুনানে তিরমিযীর একটি হাদীসে মিথ্যা সাক্ষ্যকে শিরকের সমান অপরাধ বলা হয়েছে। সু-বিখ্যাত হাদীস বিশারদ শামসুদ্দীন যাহাবী রাহ. মিথ্যা সাক্ষ্যকে চারটি বড় গুনাহের সমষ্টি বলে আখ্যা দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে : নিজে মিথ্যা ও অপবাদ আরোপ করছে ২) যার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিচ্ছে তার উপর যুলুম করছে ৩) যার পক্ষে মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছে তার উপরও প্রকৃতপক্ষে যুলুম করছে কারণ, সে যা কিছু পাওয়ার যোগ্য ছিল না এ ব্যক্তি মিথ্যা সাÿÿ্যর মাধ্যমে তাকে এর অধিকারী করে তুলছে এবং এভাবে তাকে করছে জাহান্নামী ৪) মিথ্যা সাক্ষ্যদাতার একটি হালাল কাজকে হারাম বানিয়ে নেওয়া।

মিথ্যা ও অবাস্তব সাক্ষ্যের ক্ষতি ও খেসারত বলে শেষ করার মতো নয়। হকদার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া, অযোগ্য ও অপদার্থের উত্থান, দুর্নীতিবাজ ও শোষকশ্রেণীর লোকদের ক্ষমতায়ন- এসবই মিথ্যা সাক্ষ্যের ক্ষতি। এর কারণে ইনসাফপছন্দ এবং যোগ্য ও সৎ-আমানতদার ব্যক্তিগণ নিরবতা পালন করে রাষ্ট্র ও জনগণের খেদমত থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখতে বাধ্য হন।

ভোট অবশ্যই দিতে হবে

উপরোক্ত আলোচনা পড়ে প্রশ্ন আসতে পারে যে, তা হলে তো বর্তমান সমাজে অধিকাংশ আসনের লোকদের ভোট দেওয়াই সম্ভব হবে না। কারণ, এমন লোক তো পাওয়া যাবে না, যার সপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করা যায় এবং এ কারণে অনেকে ভোট দেওয়া থেকে বিরতও থাকেন, এমনকি বহু লোক ভোটার হতেও আগ্রহী হন না। সাধারণ বিবেচনায় এ চিন্তা যুক্তিযুক্ত মনে হলেও এক্ষেত্রে কিন্তু মুদ্রার ভিন্ন পিঠও রয়েছে। তা হচ্ছে, মন্দের ভালো বা তুলনামূলক কম ক্ষতিকে বেছে নেওয়া এবং অধিক ক্ষতি থেকে বাঁচার চেষ্টা করা। বর্তমানে ভোটকে এ দৃষ্টিকোণ থেকেই বিবেচনায় আনতে হবে এবং ভোটের মাধ্যমে অধিক ÿতি থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে। কোনো আসনে একজন লোককেও যদি সাক্ষ্য ও ভোট দেওয়ার উপযুক্ত মনে না হয় তবে তাদের মধ্যে যে জন নীতি-নৈতিকতা, চিন্তা-চেতনা ও কাজে-কর্মে অন্য প্রার্থীর তুলনায় কম খারাপ তাকেই ভোট দিতে হবে। কারো ব্যাপারে যদি খোদাদ্রোহিতা, ইসলাম-দুশমনী, রাষ্ট্র্ ও জনগণের স্বার্থ-বিরোধী হওয়ার সুস্পষ্ট আলামত থাকে তবে ঐ অসৎ ব্যক্তির বিজয় ঠেকানোর চেষ্টা করতে হবে ভোটারাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে।

মোটকথা, গণতন্ত্র ও বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতির যতই ত্রুটি থাকুক এর কারণে ভোট দানে বিরত থাকা সমীচীন হবে না; বরং বুদ্ধি-বিবেচনা খরচ করে, ভেবে-চিন্তে ভোটারাধিকার প্রয়োগ করতে হবে ভাল-মন্দের ভালো অথবা অন্তত কম মন্দের পক্ষে। এ ক্ষেত্রে শরীয়তের দৃষ্টিতে কাউকে ভোটদানের অর্থ হবে, এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, লোকটি তার প্রতিদ্বন্দ্বিদের তুলনায় কিছুটা হলেও ভালো। (মাসিক আলকাউসার)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৭৬৪৭৫

মসজিদের টাকা দিয়ে আজীবন সদস্যদের খাবারের ব্যবস্থা করা


২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৯০২৩৩

তোমাদের সন্তানদের সন্ধ্যায় ঘরে আটকিয়ে রাখ এবং কিছু সময়ের পর ছেড়ে দিও এটা কোরান বা হাদীসের কোথাও কি আছে?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৯০০৫৫

হিফজের ছাত্রীদের পিরিয়ড অবস্থায় তেলাওয়াত


১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সিলেট

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯০৪৪৭

কবরস্থানে গিয়েই কি কবর যিয়ারত করতে হবে?


২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সিলেট

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy