আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৭০৭১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ইশরাকের নামাজ কি কেন পড়তে হয় এবং কিভাবে পড়তে হয়?এই নামাজের ফযিলত কি?,

৮ জুলাই, ২০২১

ঢাকা ১২০৫

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


السلام عليكم ورحمة الله وبركاته



মূলত ইশরাক ও চাশতের নামাযের ব্যাপারে হাদীসে "সালাতুত দোহা" শব্দ এসেছে। সূর্যোদয়ের পর হতে সূর্য মধ্য আকাশে আসার পূর্ব পর্যন্ত সময়কে "দোহা" বলা হয়। এ সময়ের মধ্যে ২ থেকে ১২ রাকাআত নামাযের কথা হাদীসে এসেছে। এর নাম "সালাতুত দোহা" বা "সালাতুল আওয়াবীন"। কিন্তু সাধারণত সকালের দিকে পড়া হলে তাকে "ইশরাকের নামায" এবং আরো পরে পড়া হলে তাকে "চাশতের নামা" বলা হয়ে থাকে।

সূর্য উদয়ের পর যে ২ বা ৪ রাকাআত নফল নামায পড়া হয় তাকে ইশরাকের নামায বলে। এই নামায দ্বারা এক হজ্ব ও উমরার সওয়াব পাওয়া যায়। এই নামায দ্বারা গুনাহ মাফ হয়। এই নামায অনেক নেক আমলের জন্য যথেষ্ট হয়।
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُعَاوِيَةَ الْجُمَحِيُّ الْبَصْرِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا أَبُو ظِلاَلٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ‏.‏ قَالَ وَسَأَلْتُ مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَاعِيلَ عَنْ أَبِي ظِلاَلٍ فَقَالَ هُوَ مُقَارِبُ الْحَدِيثِ ‏.‏ قَالَ مُحَمَّدٌ وَاسْمُهُ هِلاَلٌ ‏.‏

আনাস ইবনু মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামা’আতে আদায় করে, তারপর সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহ তা’আলার যিকর করে, তারপর দুই রাক’আত নামায আদায় করে- তার জন্য একটি হাজ্জ ও একটি উমরার সাওয়াব রয়েছে।
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পূর্ণ, পূর্ণ, পূর্ণ (হাজ্জ ও উমরার সাওয়াব)।
—জামে' আত-তিরমিজী, হাদীস নং ৫৮৬

অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে—

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ الْمُرَادِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَيُّوبَ، عَنْ زَبَّانَ بْنِ فَائِدٍ، عَنْ سَهْلِ بْنِ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ الْجُهَنِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ قَعَدَ فِي مُصَلاَّهُ حِينَ يَنْصَرِفُ مِنْ صَلاَةِ الصُّبْحِ حَتَّى يُسَبِّحَ رَكْعَتَىِ الضُّحَى لاَ يَقُولُ إِلاَّ خَيْرًا غُفِرَ لَهُ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ أَكْثَرَ مِنْ زَبَدِ الْبَحْرِ ‏"‏ ‏.‏

সাহল ইবনু মু’আয ইবনু আনাস আল-জুহানী (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে থেকে বর্ণিত:
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ কোন ব্যক্তি ফাজ্‌রের সলাত আদায় শেষে চাশতের সলাত আদায় পর্যন্ত তার জায়গাতে বসে থাকলে এবং এ সময়ে উত্তম কথা ছাড়া অন্য কিছু না বললে তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হয়্ যদিও গুনাহের পরিমাণ সমুদ্রের ফেনারাশির চেয়ে অধিক হয়।
—সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১২৮৭

অন্য আরেক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে—

حَدَّثَنَا أَبُو جَعْفَرٍ السِّمْنَانِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو مُسْهِرٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ بَحِيرِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ، عَنْ جُبَيْرِ بْنِ نُفَيْرٍ، عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، وَأَبِي، ذَرٍّ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ عَنِ اللَّهِ، عَزَّ وَجَلَّ أَنَّهُ قَالَ ابْنَ آدَمَ ارْكَعْ لِي مِنْ أَوَّلِ النَّهَارِ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ أَكْفِكَ آخِرَهُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ‏.‏

আবূ দারদা ও আবূ যার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হে আদম সন্তান! দিনের প্রথম ভাগে আমার জন্য চার রাক‘আত নামায আদায় কর, আমি তোমার দিনের শেষ পর্যন্ত প্রয়োজন পূরণ করে দিব।
—জামে' আত-তিরমিজী, হাদীস নং ৪৭৫

অন্য আরেক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে—

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ أَسْمَاءَ الضُّبَعِيُّ، حَدَّثَنَا مَهْدِيٌّ، - وَهُوَ ابْنُ مَيْمُونٍ - حَدَّثَنَا وَاصِلٌ، مَوْلَى أَبِي عُيَيْنَةَ عَنْ يَحْيَى بْنِ عُقَيْلٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ يَعْمَرَ، عَنْ أَبِي الأَسْوَدِ الدُّؤَلِيِّ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ‏ "‏ يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلاَمَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى ‏"‏ ‏.

আবূ যার রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি দিন শুরু হওয়ার সাথে সাথে তোমাদের প্রত্যেকের প্রতিটি অস্থি-বন্ধনী ও গিঁটের উপর সদাক্বাহ্‌ ওয়াজিব হয়। সুতরাং প্রতিটি তাসবীহ্‌ অর্থাৎ ‘সুবহানাল্ল-হ’ বলা সদাক্বাহ্‌ হিসেবে গন্য হয়। প্রতিটি তাহমীদ অর্থাৎ ‘আলহম্‌দুলিল্লা-হ’ বলা তার সদাক্বাহ্‌ হিসেবে গন্য হয়। প্রতিটি ‘আল্ল-হু আকবর’ তার জন্য এবং ‘নাহী আনিল মুনকার’ অর্থাৎ খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার প্রতিটি প্রয়াসও তার জন্য অনুরুপ সদাক্বাহ বলে গন্য হয়। তবে ‘যুহা’ বা চাশ্‌তের মাত্র দু রাক‘আত সলাত যদি সে আদায় করে তাহলে তা এ সবগুলোর সমকক্ষ হতে পারে।
—সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৫৬

* সূর্যোদয়ের আনুমানিক ১৫ মিনিট পর থেকে ইশরাকের ওয়াক্ত আরম্ভ হয় এবং দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত ওয়াক্ত বাকি থাকে। তবে ওয়াক্তের শুরুতেই পড়ে নেয়া উত্তম।

* ফজরের নামায আদায়ের পর সেই স্থানে বসে দোয়া-দরুদ, যিকির-আযকার ও তাসবীহ, কুরআনুল কারীমের তিলাওয়াতে লিপ্ত থাকবে। দুনিয়াবী কোন কথা বা কাজে লিপ্ত হবে না। সময় হয়ে গেলে ইশরাকের নামায আদায় করবে। এভাবে ইশরাকের নামায আদায় করাতে সওয়াব বেশি। দুনিয়াবী কথাবার্তা বা কাজে লিপ্ত হয়ে গেলেও সময় হওয়ার পর ইশরাকের নামায আদায় করা যায়। তবে তাতে সওয়াব কিছু কমে যায়।

* ইশরাকের নামায যেকোন সূরা বা কিরাআত দিয়ে পড়া যায়।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৫৯৮৫২

আশহুরে হজে উমরায় গেলে কি হজ ফরজ হয়ে যায়?


৩০ এপ্রিল, ২০২৪

ঢাকা ১২১৫

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৮৫৯৭৬

স্ত্রীর সাথে কথা বন্ধ রাখা


২২ জানুয়ারী, ২০২৫

১৭০২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

৫১২৪৩

শুধু আল্লাহ আল্লাহ বলে জিকির করা যাবে?


৯ জানুয়ারী, ২০২৪

হাজী আব্দুল মতিন সড়ক

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৬৬৮১৩

নবীজির নাম কতটি?


৮ জুলাই, ২০২৪

চট্টগ্রাম

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy