আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৭০১৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, এক বুড়ি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাওয়ার পথে খাড়া দিয়ে রাখত............ সোলায়মান (আ) নাকি একবার সাগরের সমস্ত মাছ দেরকে দাওয়াত দিয়ে একবার খাওয়াই ছিল...........এই গল্পগুলো আমরা সবাই শুনেছি এবং জেনেছি এই গল্প গুলো আসলে কি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত বিস্তারিত আমার মতামত জানতে চাই,

২৯ জুন, ২০২১

Jeddah ২২৩৪২ ২৬০৩

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


দুটো ঘটনার কোনটিই হাদিসের কোন নির্ভরযোগ্য কিতাবে পাওয়া যায়নি।
বিস্তারিত বর্ণনাঃ
১- এ বিষয়ক প্রসিদ্ধ ঘটনাটি হাদিসের কোন নির্ভরযোগ্য কিতাবে পাওয়া যায়নি।
তবে আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামীলের ব্যপারে কিছু বর্ণনায় এসেছে, সে নবীজী ও সাহাবাদের পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো তথাপি নবীজী সাঃ তাকে কিছুই বলেননি, এটা নবীজী সাঃ এর ক্ষমা ও মহানুভবতার অন্যতম নিদর্শন।
তবে আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামীল এতো কিছুর পরও ইসলাম গ্রহণ করেনি।(তাফসীরে তাবারী)
আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর ব্যপারে সুরা লাহাব অবতীর্ণ হয়।
তাফসীরে তাবারীর আরবী ইবারতঃ
واختلف أهل التأويل، في معنى قوله: (حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) فقال بعضهم: كانت تجيء بالشوك فتطرحه في طريق رسول الله صلى الله عليه وسلم، ليدخل في قدمه إذا خرج إلى الصلاة.
* ذكر من قال ذلك:
حدثني محمد بن سعد، قال: ثني أبي، قال: ثني عمي، قال: ثني أبي، عن أبيه، عن ابن عباس، في قوله: (وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) قال: كانت تحمل الشوك، فتطرحه على طريق النبي صلى الله عليه وسلم، ليعقره وأصحابه، ويقال: (حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) : نقالة للحديث.
حدثنا أبو كُرَيب، قال: ثنا وكيع، عن إسرائيل، عن أبي إسحاق، عن رجل من همدان يقال له يزيد بن زيد، أن امرأة أبي لهب كانت تلقي في طريق النبيّ صلى الله عليه وسلم الشوك، فنزلت: (تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ ... وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) .
حدثني أبو هريرة الضبعي، محمد بن فراس، قال: ثنا أبو عامر، عن قرة بن خالد، عن عطية الجدلِّي. في قوله: (حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) قال: كانت تضع العضاه على طريق رسول الله صلى الله عليه وسلم، فكأنما يطأ به كثيبا.
حُدثت عن الحسين، قال: سمعت أبا معاذ يقول: ثنا عبيد، قال: سمعت الضحاك يقول، في قوله: (وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) كانت تحمل الشوك، فتلقيه على طريق نبي الله صلى الله عليه وسلم ليعقِره.
حدثني يونس، قال: أخبرنا ابن وهب، قال: قال ابن زيد، في قوله: (وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ) قال: كانت تأتي بأغصان الشوك، فتطرحها بالليل في طريق رسول الله صلى الله عليه وسلم.

২- লোকমুখে প্রসিদ্ধ, হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম একবার আল্লাহকে বললেন, হে আল্লাহ আমি সকল সৃষ্টিজীবকে এক বছর খাওয়াতে চাই। আল্লাহ বললেন, হে সুলাইমান তুমি তা পারবে না। তখন সুলাইমান আলাইহিস সালাম বললেন, আল্লাহ! তাহলে এক সপ্তাহ। আল্লাহ বললেন, তুমি তাও পারবে না। সুলাইমান আলাইহিস সালাম বললেন, তাহলে একদিন। আল্লাহ বললেন, হে সুলাইমান তুমি তাও পারবে না। একপর্যায়ে আল্লাহ এক দিনের অনুমতি দিলেন। সুলাইমান আলাইহিস সালাম জিন ও মানুষকে হুকুম করলেন, পৃথিবীতে যত প্রকার খাদ্য শস্য আছে এবং হালাল যত প্রকার প্রাণী আছে সব হাযির কর। তারা তা করল। এরপর বিশাল বিশাল ডেগ তৈরী করা হল এবং রান্না করা হল। তারপর বাতাসকে আদেশ করা হল, সে যেন খাদ্যের উপর দিয়ে সদা প্রবাহিত হতে থাকে যাতে খাবার নষ্ট না হয়। তারপর খাবারগুলো সুবিস্তৃত যমিনে রাখা হল। যে যমিনে খাবার রাখা হল তার দৈর্ঘ্য ছিল দুই মাসের পথ। খাবার প্রস্ত্তত শেষ হলে আল্লাহ বললেন, হে সুলাইমান! কোন্ প্রাণী দিয়ে শুরু করবে? সুলাইমান আ. বললেন, সমুদ্রের প্রাণী দিয়ে। তখন আল্লাহ সাগরের একটি বড় মাছকে বললেন, যাও সুলাইমানের যিয়াফত খেয়ে এস। তখন মাছটি সমুদ্র থেকে মাথা উঠিয়ে বললো, হে (আল্লাহর নবী) সুলাইমান, আপনি নাকি যিয়াফতের ব্যবস্থা করেছেন? তিনি বললেন, হাঁ, এইতো খাবার প্রস্ত্তত, তুমি শুরু কর। তখন সে খাওয়া শুরু করল এবং খেতে খেতে খাবারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পৌছে গেল। সব খাবার শেষ করে ফেলল। তারপর বলল, আমাকে আরো খাবার দিন, আমি এখনও তৃপ্ত হইনি। তখন সুলাইমান আলাইহিস সালাম বললেন, তুমি সব খাবার খেয়ে ফেলেছ তাও তোমার পেট ভরেনি। তখন মাছ বলল, মেজবান কি মেহমানের সাথে এভাবে কথা বলে? হে (আল্লাহর নবী) সুলাইমান! শুনে রাখুন, আমার রব আমাকে প্রতিদিন এর তিন গুণ খাবার দেন। আজ আপনার কারণে আমাকে কম খেতে হল। এ কথা শুনে সুলাইমান আ. সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন...।

এ ঘটনাটি একেবারেই ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। হাদীস, তাফসীর বা ইতিহাসের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে এর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। তাছাড়া এ ঘটনার মাঝে এমন কিছু বিষয় আছে যা নিজেই প্রমাণ করে যে, ঘটনাটি সত্য নয়।

১. একজন নবী এমন উদ্ভট ও অযৌক্তিক আবদার করবেন তা হতে পারে না। এর অর্থ দাড়ায় আল্লাহর মাখলুক সম্পর্কে তার ন্যূনতম ধারণা নেই। একজন নবীর শানে এ রকম ধারণা করা সমীচীন নয়। ২. আল্লাহ নিষেধ করার পরও একজন নবী এরকম আবদার করতে থাকবেন। আর আল্লাহও তাকে এমন অযৌক্তিক বিষয়ের অনুমতি দিয়ে দিবেন তা কীভাবে হয়?

৩. পৃথিবীর সকল প্রাণীই কি রান্না করা খাবার খায়? মাছ কি রান্না করা খাবার খায়? ৪. ঘটনায় বলা হয়েছে, খাবার যে যমীনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে তার দৈর্ঘ্য দুই মাসের পথ। মাছটি কি দুই মাসের পথ মুহূর্তেই অতিক্রম করে ফেলল? বা এত দীর্ঘ পথ জলের প্রাণী স্থলে থাকল কীভাবে? ৪. যে মাছের পেটে এত খাবার সংকুলান হয় সে মাছটি কত বড়! ৫.শুধু বাতাস প্রবাহিত হওয়াই কি পাক করা খাদ্য নষ্ট না হওয়ার জন্য যথেষ্ট? এ ধরনের আরো অযৌক্তিক কথা এ কিচ্ছায় রয়েছে। যা এ ঘটনা মিথ্যা হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এমন ঘটনা বর্ণনা করা যেমন বৈধ নয় তেমনি বিশ্বাস করাও মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়।

কোনো প্রকার যাচাই বাছাই ছাড়াই শোনা কথা বলা থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। (আল কাউসার)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৪০২০০

নবীজী কি সর্বদা কেবল জুব্বা পরিধান করেছেন ?


২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

নোয়াখালী

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

৬০৮৪৭

বাসর ঘর সাজানো কি জায়েজ?


১৩ মে, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

২৮৮৪৪

دقائق الأخبار في ذكر الجنة والنار কিতাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা


১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

চট্টগ্রাম

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

২৬০০৯

ফরজ গোসল করার পদ্ধতি


২ ডিসেম্বর, ২০২২

কেরানীগঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy