প্রশ্নঃ ৬৪৩৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম শায়েখ,আমার প্রশ্ন কসম ভাঙ্গা এবং এর কাফফারা নিয়ে।আমি অনেকের কাছে জেনেছি ও শুনেছি এর কাফফারা সম্পর্কে। আমার জন্য কাফফারার বিধান পেয়েছি ৩টি।১। ১০ জন মিসকিনকে ২ বেলা খাওয়ানো।২। ফিতরার সমপরিমাণ টাকা দিয়ে দেয়া।৩। ১০ জন মিসকিন কে কাপড় প্রদান করা।এখন আমি কি এর যেকোন একটাই করলে হবে নাকি আমাকে শুধু প্রথমটাই করতে হবে, যেহেতু কোরানের যে আয়াতে আমি এই সমাধান দেখেছি সেখানে শুধু ১ম টাই উল্লেখ আছে। আমি চাচ্ছি আমার এই কাফফারা সম্পর্কে আমি ছাড়া আর কেউ না জানুক, তাই আমার জন্য ২য় পদ্ধতিটি সবচেয়ে ভাল হয়।আশা করি উত্তরটি দিয়ে আমাকে উপকৃত করবেন।জাযাকাল্লাহু খইরান।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
কসম ভঙ্গের কাফফারাহ সংক্রান্ত বিধান এই আয়াতে সবিস্তারে বর্ণনা রয়েছে।
لَا یُؤَاخِذُکُمُ اللّٰہُ بِاللَّغۡوِ فِیۡۤ اَیۡمَانِکُمۡ وَلٰکِنۡ یُّؤَاخِذُکُمۡ بِمَا عَقَّدۡتُّمُ الۡاَیۡمَانَ ۚ فَکَفَّارَتُہٗۤ اِطۡعَامُ عَشَرَۃِ مَسٰکِیۡنَ مِنۡ اَوۡسَطِ مَا تُطۡعِمُوۡنَ اَہۡلِیۡکُمۡ اَوۡ کِسۡوَتُہُمۡ اَوۡ تَحۡرِیۡرُ رَقَبَۃٍ ؕ فَمَنۡ لَّمۡ یَجِدۡ فَصِیَامُ ثَلٰثَۃِ اَیَّامٍ ؕ ذٰلِکَ کَفَّارَۃُ اَیۡمَانِکُمۡ اِذَا حَلَفۡتُمۡ ؕ وَاحۡفَظُوۡۤا اَیۡمَانَکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ لَکُمۡ اٰیٰتِہٖ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ
আল্লাহ তোমাদেরকে নিরর্থক শপথের জন্য তোমাদের পাকড়াও করবেন না। ৬৬ কিন্তু তোমরা যে শপথ পরিপক্কভাবে করে থাক, ৬৭ সেজন্য তিনি তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন। সুতরাং তার কাফফারা হল, দশজন মিসকীনকে মধ্যম ধরনের খাবার দেবে, যা তোমরা তোমাদের পরিবারবর্গকে খাইয়ে থাক অথবা তাদেরকে বস্ত্র দান করবে কিংবা একজন গোলাম আযাদ করবে। তবে কারও কাছে যদি (এসব জিনিসের মধ্য হতে কিছুই) না থাকে, সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা তোমাদের শপথের কাফফারা যখন তোমরা শপথ করবে (এবং তারপর তা ভেঙ্গে ফেলবে তোমরা নিজেদের শপথকে রক্ষা করো। ৬৮ এভাবেই আল্লাহ তোমাদের সামনে নিজ আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা আদায় কর।
—আল মায়িদাহ - ৮৯
তাফসীরঃ
৬৬. নিরর্থক (লাগ্ব্) শপথ বলতে এমন সব কসমকে বোঝানো হয়, যা কসমের উদ্দেশ্য ছাড়া কেবল কথার মুদ্রা বা বাকরীতি হিসেবে উচ্চারিত হয়ে থাকে। এমনিভাবে অতীতের কোনও বিষয়কে সত্য মনে করে যে কসম করা হয় এবং পরে প্রকাশ পায়, আসলে তা সত্য ছিল না, তার ধারণা ভুল ছিল, সেটাও নিরর্থক শপথের অন্তর্ভুক্ত। এ জাতীয় কসমে কোনও গুনাহ হয় না এবং এ জন্য কাফফারাও ওয়াজিব হয় না। তবে নিষ্প্রয়োজনে কসম করা কোন ভালো কাজ নয়। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। হয়েছে। তৃতীয় প্রকার হচ্ছে সেই কসম, যাতে অতীতের কোনও বিষয়ে জেনে-শুনে মিথ্যা বলা হয় এবং প্রতিপক্ষের অন্তরে বিশ্বাস জন্মানোর জন্য কসম করা হয়। এরূপ কসম করা কঠিন শুনাহ। তবে দুনিয়ায় এর জন্য কোনও কাফফারার বিধান নেই। কেবল তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার কাছে ক্ষমার আশা রাখা যায়।
৬৭. এর দ্বারা ভবিষ্যতে কোনও কাজ করা বা না করা সম্পর্কে যে শপথ করা হয় তাকে বোঝানে হয়েছে। সাধারণ অবস্থায় এরূপ শপথ ভাঙ্গা কঠিন গুনাহ। কেউ এরূপ শপথ ভেঙ্গে ফেললে কাফফারা দেওয়া ওয়াজিব। কাফফারা কিভাবে আদায় করতে হবে তাও আয়াতে বলে দেওয়া।
৬৮. অর্থাৎ কসম করা কোনও তামাশার বিষয় নয়। সুতরাং প্রথমত চেষ্টা থাকতে হবে, কসম যত কম করা যায়। বিশেষ প্রয়োজনে যদি কসম করতেই হয়, তবে সাধ্যমত তা পূর্ণ করার চেষ্টা থাকা চাই। অবশ্য কেউ যদি কোনও নাজায়েয কাজ করার জন্য কসম করে ফেলে তবে তার জন্য অপরিহার্য হল, সে কসম ভেঙ্গে ফেলা ও তার কাফফারা আদায় করা। এমনিভাবে কেউ যদি কোনও জায়েয কাজ করার জন্য কসম করে, তারপর উপলব্ধি হয় সে কাজ করা অপেক্ষা না করাই শ্রেয়, তখনও কসম ভেঙ্গে কাফফারা আদায় করাই উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদীসে এরূপ শিক্ষাই দান করেছেন।
সুতরাং আপনি আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত তিনটির যেকোনো একটি পন্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন