আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৬৩৩০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম। মুহতারাম! পিতা মাতা জীবিত অবস্থায় যদি কন্যা সন্তান মারা যায় এবং ওই কন্যার ঘরে কোন ছেলে সন্তান থাকে তাহলে কি সেই ছেলে তার নানা নানির সম্পদের ভাগ পাবে? জানিয়ে বাধিত করবেন ইনশাআল্লাহ,

২৮ মে, ২০২১

যশোর

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم




ঐ নানা-নানীর থেকে মিরাস সূত্রে সরাসরি সম্পত্তির ভাগ নাতি না পেলেও তাকে নানা নানি নিজ উদ্যোগে নিজেদের জীবদ্দশায় কিছু সম্পদ বুঝিয়ে দেয়া উচিত।

لِلرِّجَالِ نَصِیۡبٌ مِّمَّا تَرَکَ الۡوَالِدٰنِ وَالۡاَقۡرَبُوۡنَ ۪ وَلِلنِّسَآءِ نَصِیۡبٌ مِّمَّا تَرَکَ الۡوَالِدٰنِ وَالۡاَقۡرَبُوۡنَ مِمَّا قَلَّ مِنۡہُ اَوۡ کَثُرَ ؕ نَصِیۡبًا مَّفۡرُوۡضًا

পুরুষদের জন্যও সেই সম্পদে অংশ রয়েছে, যা পিতা-মাতা ও নিকটতম আত্মীয়বর্গ রেখে যায় আর নারীদের জন্যও সেই সম্পদে অংশ রয়েছে, যা পিতা-মাতা নিকটতম আত্মীয়বর্গ রেখে যায়, চাই সে (পরিত্যক্ত) সম্পদ কম হোক বা বেশি। এ অংশ (আল্লাহর তরফ থেকে) নির্ধারিত। ১০
—আন নিসা - ৭

তাফসীরঃ
১০. জাহিলী যুগে নারীদেরকে মীরাছের কোনও অংশ দেওয়া হত না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে এ জাতীয় কিছু ঘটনা পেশ করা হল, যেমন এক ব্যক্তি এক স্ত্রী ও নাবালেগ সন্তান রেখে মারা গেল। এ অবস্থায় তার ভাইয়েরা তার রেখে যাওয়া সমুদয় সম্পত্তি কব্জা করে নিল। স্ত্রীকে তো বঞ্চিত করা হল নারী হওয়ার কারণে। আর সন্তানগণ যেহেতু নাবালেগ ছিল তাই তাদেরকেও কিছু দেওয়া হল না। এ প্রেক্ষাপটেই আলোচ্য আয়াত নাযিল হয়। এতে পরিষ্কার করে দেওয়া হয় যে, নারীদেরকে মীরাছ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। অতঃপর সামনে ১১নং আয়াত থেকে যে রুকূ শুরু হয়েছে, তাতে সকল নর-নারী আত্মীয়বর্গের কে কি পরিমাণ পাবে তাও আল্লাহ তাআলা স্থির করে দিয়েছেন।

শানে নুজুলঃ
জাহিলিয়াতের যুগে নারী ও শিশুদেরকে মীরাসের কোন অংশ দেয়া হত না এবং বলা হত, যারা শত্রুর সাথে মোকাবেলায় সক্ষম কেবল তারাই মীরাসের হকদার। ইসলামের আবির্ভাবের পর মুসলামান্দের মধ্যে হযরত ইবনে সাবেতের ইন্তেকাল হলে তাঁর সম্পদ তাঁর চাচাত ভাই- সুওয়াইদ, খালেদ ও আরফজা দখল করে নেয় এবং ইবনে সাবেতের ছোট ছোট দুই কন্যা, এক ছেলে এবং এক স্ত্রীর কাকেও কিছুই দিল না। তখন তাঁর বিধবা স্ত্রী উম্মে কুহাহ্‌ রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকটেসে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ), আমার স্বামী ইবনে সাবেত জঙ্গে ওহুদে শহীদ হন। তাঁর তিনটি ছোট ছোট সন্তান আছে। এদিকে তাঁর পরিত্যাজ্য সমুদয় সম্পদ তাঁর চাচত ভাইয়েরা দখল করে নেয়। এখন বলুন এ সন্তানদের লালন-পালন কি করে করি? তখন আলোচ্য আয়াতটি নাযিল হয়য়। আর সঙ্গে সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরফজা ও ছুওয়াইদাকে ডেকে ইবনে সাবেতের যাবতীয় সম্পদ যথাপূর্ব রেখে দিতে বললেন এবং এতে যে নারীদেরও অংশ আছে তা বলে দিলেন। কিন্তু পরিমান তখনও জানা ছিল না। পরে আয়াত দ্বারা পরিমাণ জানান হলে মীরাস সংক্রান্ত বিধান পূর্ন হয়ে যায়। (বঃ কোঃ)

وَاِذَا حَضَرَ الۡقِسۡمَۃَ اُولُوا الۡقُرۡبٰی وَالۡیَتٰمٰی وَالۡمَسٰکِیۡنُ فَارۡزُقُوۡہُمۡ مِّنۡہُ وَقُوۡلُوۡا لَہُمۡ قَوۡلًا مَّعۡرُوۡفًا

আর যখন (মীরাছ) বণ্টনের সময় (ওয়ারিশ নয় এমন) আত্মীয়, ইয়াতীম ও মিসকীন উপস্থিত হয়, তখন তাদেরকেও তা থেকে কিছু দাও এবং তাদের সাথে সদালাপ কর। ১১
—আন নিসা - ৮

তাফসীরঃ
১১. মীরাছ বণ্টনকালে এমন কিছু লোকও উপস্থিত থাকে, যারা শরীয়ত অনুযায়ী ওয়ারিশ হয় না। কুরআন মাজীদের নির্দেশনা হচ্ছে, তাদেরকেও কিছু দেওয়া ভালো। অবশ্য এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে- (ক) এরূপ লোকদেরকে দেওয়া ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব এবং (খ) তাদেরকে নাবালেগ ওয়ারিশদের অংশ থেকে দেওয়া জায়েয নয়। কেবল বালেগ ওয়ারিশগণ নিজেদের অংশ থেকে দেবে।

وَلۡیَخۡشَ الَّذِیۡنَ لَوۡ تَرَکُوۡا مِنۡ خَلۡفِہِمۡ ذُرِّیَّۃً ضِعٰفًا خَافُوۡا عَلَیۡہِمۡ ۪ فَلۡیَتَّقُوا اللّٰہَ وَلۡیَقُوۡلُوۡا قَوۡلًا سَدِیۡدًا

আর সেইসব লোক (ইয়াতীমদের সম্পদে অসাধুতা করতে) ভয় করুক, যারা নিজেদের পেছনে অসহায় সন্তান রেখে গেলে তাদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকত। ১২ সুতরাং তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং সরল-সঠিক কথা বলে
—আন নিসা - ৯

তাফসীরঃ
১২. অর্থাৎ তোমাদের যেমন নিজ সন্তানদের ব্যাপারে চিন্তা থাকে যে, আমাদের মৃত্যুর পর তাদের অবস্থা কী হবে, তেমনি অন্যদের সন্তানদের ব্যাপারেও চিন্তা কর এবং ইয়াতীমদের সম্পদে যে কোনও রকমের অসাধু পন্থা অবলম্বন করা হতে বিরত থাক।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৪১৯৩

মিরাস বন্টন নীতি


১ এপ্রিল, ২০২৩

নবীনগর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy