আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৫৭০৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, বেতোরের ৩ রাকাত নামাজে দুই রাকাতে তাশাহুদ বৈঠক বসতে হবে কি? অনেকে বলেন বসতে হবেনা, আবার অনেকে বলেন বসতে হবে, সাধারনত হানাফি মাজহাবের লোকেরা দুই রাকাতে বসেন, দলীল সহ জানালে উপকৃত হব।

২৯ এপ্রিল, ২০২১
রাজশাহী

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


السلام عليكم ورحمة الله وبركاته

বিতর নামায তিন রাকাত। ওয়াজিব। যা এশার পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত আদায় করা যায়। তা আদায়ের নিয়ম স্বাভাবিক নামাযের মতই। তবে এতে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। যেমন এর প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলানো ওয়াজিব। দ্বিতীয় রাকাত শেষে বৈঠকে শুধু তাশাহহুদ পর্যন্ত পড়বে। এরপর তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে। তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলানোর পর আল্লাহু আকবার বলে দুই হাত উঠাবে। এরপর দুই হাত বেঁধে দুআ কুনূত পাঠ করবে, অতপর যথানিয়মে নামায শেষ করবে।

বিতর নামায আদায়ের উক্ত পদ্ধতি ও বিবরণ বিশুদ্ধ হাদীস ও আসার দ্বারা প্রমাণিত। যেমন :

এক. সহীহ মুসলিমের একটি দীর্ঘ হাদীসে ইবনে আব্বাস রা. বলেন, একবার তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট রাত্রিযাপন করলেন। রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে মিসওয়াক, ওযু করে দীর্ঘ কেরাত ও রুকু-সিজদার সাথে দুই রাকাত নামায আদায় করলেন। অতপর তিনি পুনরায় নিদ্রা যাপন করলেন। এরূপভাবে তিনবারে তিনি ছয় রাকাত আদায় করলেন অতপর তিন রাকাত বিতর আদায় করলেন।
সহীহ মুসলিম, ১/২৬১

দুই. আয়েশা রা. হতে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের দুই রাকাত শেষে সালাম ফেরাতেন না।
সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮

তিন. উবাই ইবনে কা‘ব রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতির পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন ও তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। এবং রুকুর পূর্বে দুআ কুনত পড়তেন...।
সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৬৯৯;
শরহু মুশকিলিল আসার ১১/৩৬৮

চার. উবাই বিন কাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর পড়তেন এবং রুকুর পূর্বে কুনূত পড়তেন।
সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদীস ১১৮২;
উমদাতুল ক্বারী ৭/১৯

পাঁচ. সাবেত আল বুনানী রাহ. বলেন, আমি আনাস রা.-এর ঘরে রাত্রি যাপন করেছি এবং তার সাথে নামায পড়েছি। তাঁকে দেখেছি রাতে দুই রাকাত করে নামায পড়েছেন এবং সবশেষে মাগরিবের নামাযের মত তিন রাকাত বিতর পড়লেন।
মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৪৬৩৬

ছয়. সুফিয়ান সাওরী রাহ. বলেন, তারা (অর্থাৎ তাবেয়ীগণ) তিন রাকাত বিতরের প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা পড়তেন দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফীরুন পড়তেন। তারপর বসে তাশাহহুদ পড়ে আবার উঠে দাঁড়াতেন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন।
সালাতুল বিতর লিল মারওয়াযী পৃ. ২৭৯

সাত. আসওয়াদ রাহ. বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কেবল বিতর নামাযেই কুনূত পড়তেন। তিনি রুকুর আগে কুনূত পড়তেন, কেরাআত শেষ করে কুনূতের জন্য তাকবীর বলতেন।
শরহু মুশকিলুল আছার ১১/৩৭৪

মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বায় আরো এসেছে যে, তিনি কুনূতের জন্য হাত উঠাতেন।
হাদীস ৭০২৭;
জুযউ রাফইল ইয়াদাইন, ইমাম বুখারী, ৬৮-৬৯

আট. আসেম রাহ. বলেন আমি আনাস রা. কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেছেন, কুনূত পড়ার বিধান রয়েছে। এরপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম রুকুর পরে না রুকুর আগে? তিনি বললেন, রুকুর আগে। আমি বললাম, অমুক আমাকে বলেছে, আপনি নাকি রুকুর পরে কুনূত পড়ার কথা বলেন। তিনি বললেন, সে ভুল বলেছে। রুকুর পরে নবী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামশুধু একমাস কুনূত পড়েছিলেন।
সহীহ বুখারী, হাদীস ১০০২

উলে­খ্য যে, বিতর নামাযে দুআ কুনূত পাঠ করা ওয়াজিব। আর হাদীসে বর্ণিত দুআই কুনূতের জন্য পাঠ করা উত্তম।

والله اعلم بالصواب

ইসহাক মাহমুদ মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন