সরকারী চাকুরী কি জায়েয?
প্রশ্নঃ ৫৪৬৩০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, গনতন্ত্র যেহেতু হারাম রাষ্ট্র ব্যবস্হা। এই হারাম সরকারের অধীনে যেকোনো পদে সরকারি চাকুরী করা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে জানতে চাই। জানাটা খুবই প্রয়োজন। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
২ মে, ২০২৪
হাটহাজারী
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সরকারী চাকুরী জায়েয। তবে-
কুরআন হাদীস বিরোধী কোনো কিছু বাস্তবায়ন করার কাজ হলে বা এমন কোনো চাকুরী যেখানে গেলে কুরআন-হাদীসকে সঠিকভাবে অনুসরণ করা যায় না তাহলে এমন চাকুরী কখনো বৈধ হবে না। (কিতাবুন নাওয়াজেল ১৭/৫০৪)
কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। (সূরা মায়েদা ২)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ
অসৎকাজে আনুগত্য নয় ; আনুগত্য কেবলমাত্র সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে। (বুখারী ৭১৪৫ মুসলিম ১৮৪০)
যেমন–
১. বিচারক হওয়া যাবে না, সরাসরি আল্লাহর আইনের বাইরে বিচার করতে হবে, এই কারণে। ইসলাম ও গণতন্ত্রের মৌলিক দ্বন্দ্ব হলো, ইসলাম শেখায়, ইলাহ হলেন একমাত্র আল্লাহ। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। অপরদিকে গণতন্ত্র শেখায়, ইলাহ হলো একমাত্র জনগণ। ‘লা ইলাহা ইল্লান্নাস’। সুতরাং গ্ণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অধীনে আইনকানুন ও বিধিবিধান প্রণয়নের যে কোনো চাকরি করা হারাম।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ… فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ… فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ.
‘যারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুসারে ফায়সালা করে না, তারাই কাফির…, তারাই জালিম…, তারাই ফাসিক।
২। সরকারী চাকুরীর মাধ্যমে যদি মানুষের উপর জুলুম ও অন্যায়ভাবে তাদের মাল ভক্ষণ উদ্দেশ্য হয় তাহলে এ ধরনের চাকুরী করা জায়েয নয়। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا ٱلسَّبِيلُ عَلَى ٱلَّذِينَ يَظْلِمُونَ ٱلنَّاسَ وَيَبْغُونَ فِى ٱلْأَرْضِ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ ۚ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
কেবল তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের উপর জুলুম করে এবং জমিনে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। (সূরা শূরা ৪২)
মাওলানা আবদুল হাই ফিরিঙ্গি মহল্লি রহ. বৈধ চাকরি ও অবৈধ চাকরির পরিচয় প্রসঙ্গে লিখেন,
جس نوکری میں اجراۓ احکام غیر شرعیہ کی اور اجراۓ احکام ظلم وغیرہ کی نہ ہو وہ درست ہے اور جن میں یہ امور ہوں وہ حرام ہے۔
যে চাকরিতে শরিয়াহবহির্ভূত বিধিবিধান বাস্তবায়ন এবং জুলুম ও এজাতীয় অন্যান্য বিষয়ের বিধিবিধান প্রয়োগ করতে হয়, তা নাজায়েয। আর যে চাকরিতে এই সমস্যাগুলো থাকবে না, তা জায়েয। (ফাতাওয়া ২/১৬২)
৩। সুদের সহযোগিতা হয় এমন চাকুরীও নাজায়েয। যেমন ব্যাংক, বীমাতে চাকুরী করা জায়েয হবে না, সরাসরি সুদের কাজ হওয়ার কারণে। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ ﷺ آكل الربا وموكله وكاتبه وشاهديه، وقال : هم سواء.
আল্লাহর রাসূল ﷺ সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক এবং তার উপর সাক্ষীদ্বয়কে অভিশাপ করেছেন, আর বলেছেন, ওরা সকলেই সমান। (মুসনাদে আহমাদ ৩৮০৯)
والله اعلم بالصواب
শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১