ইবনে জুরাইজ এর ঘটনা
প্রশ্নঃ ৫০০৫১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কেমন আছেন..? হজরত জুরাইজ (রাহ) উনার যেই ঘঠনা টি অনেক আলেমের জবানে শুনে থাকি যে তিনি আল্লাহর ইবাদত করতে যাইয়া মায়ের কথার জবাব দিতে পারেন নাই, তাই তার মা তারজন্য জঘন্য বদদোয়া করে ছিল যে তোমাকে বেশ্যার চেহারা না দেখায়া আল্লাহ মৃত্যু দিব না, তারপর নাকি তাই হয়েছিল, এবং ছোট্ট নাবালক বাচ্চা নাকি তার সত্যতা প্রমাণ করেছিল। এখন আমার জানার বিষয় হচ্ছে এই ঘঠনা কতটুকু সত্য এবং এর কোন রেফারেন্স আছে কি..? যারা বায়ান করে তাদের মধ্যে অনেকে বলে এইটা নাকি বুখারী শরিফের হাদিস এই কথাটা কি সঠিক..?,
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
বাজিতপুর
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
জি, সঠিক। নিচের হাদিসটি দেখুন।
وَقَالَ اللَّيْثُ: حَدَّثَنِي جَعْفَرُ بْنُ رَبِيعَةَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ هُرْمُزَ، قَالَ: قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ [ص:64] رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " نَادَتِ امْرَأَةٌ ابْنَهَا وَهُوَ فِي صَوْمَعَةٍ، قَالَتْ: يَا جُرَيْجُ، قَالَ: اللَّهُمَّ أُمِّي وَصَلاَتِي، قَالَتْ: يَا جُرَيْجُ، قَالَ: اللَّهُمَّ أُمِّي وَصَلاَتِي، قَالَتْ: يَا جُرَيْجُ، قَالَ: اللَّهُمَّ أُمِّي وَصَلاَتِي، قَالَتْ: اللَّهُمَّ لاَ يَمُوتُ جُرَيْجٌ حَتَّى يَنْظُرَ فِي وُجُوهِ المَيَامِيسِ، وَكَانَتْ تَأْوِي إِلَى صَوْمَعَتِهِ رَاعِيَةٌ تَرْعَى الغَنَمَ، فَوَلَدَتْ، فَقِيلَ لَهَا: مِمَّنْ هَذَا الوَلَدُ؟ قَالَتْ: مِنْ جُرَيْجٍ، نَزَلَ مِنْ صَوْمَعَتِهِ، قَالَ جُرَيْجٌ: أَيْنَ هَذِهِ الَّتِي تَزْعُمُ أَنَّ وَلَدَهَا لِي؟ قَالَ: يَا بَابُوسُ، مَنْ أَبُوكَ؟ قَالَ: رَاعِي الغَنَمِ "
১১৩৩। লাইস (রাহঃ) বলেন, জা’ফর (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ এক মহিলা তার ছেলেকে ডাকল। তখন তার ছেলে গীর্জায় ছিল। বলল, হে জুরাইজ! ছেলে মনে মনে বলল, ইয়া আল্লাহ! (এক দিকে) আমার মা (এর ডাক) আর (অপর দিকে) আমার নামায! মা আবার ডাকলেন, হে জুরাইজ! ছেলে বলল, ইয়া আল্লাহ! আমার মা ও আমার নামায! মা আবার ডাকলেন, হে জুরাইজ! ছেলে বলল, ইয়া আল্লাহ! আমার মা ও আমার নামায! মা (বিরক্ত হয়ে) বললেন, ইয়া আল্লাহ! পতিতাদের সামনে দেখা না যাওয়া পর্যন্ত যেন জুরাইজের মৃত্যু না হয়। এক রাখালিনী যে বকরি চরাতো, সে জুরাইজের গীর্জায় আসা যাওয়া করত। সে একটি সন্তান প্রসব করল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, এ সন্তান কার ঔরষজাত? সে জবাব দিল, জুরাইজের ঔরষের। জুরাইজ তার গীর্জা থেকে নেমে এসে জিজ্ঞাসা করলো, কোথায় সে মেয়েটি, যে বলল যে, তাঁর সন্তান আমার? (সন্তানসহ মেয়েটিকে উপস্থিত করা হলে, নিজে নির্দোষ প্রমাণের উদ্দেশ্যে শিশুটিকে লক্ষ্য করে) জুরাইজ বলেন, হে বাবূস! তোমার পিতা কে? সে বলল, বকরীর অমুক রাখাল।
আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ (সহীহ বুখারী)
হাদীস নং: ১১৩৩ আন্তর্জাতিক নং: ১২০৬
হাদীসের লিংকঃ https://muslimbangla.com/hadith/1133
হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
জুরায়জের এ কারামত দেখে মুহূর্তেই পরিস্থিতি বদলে গেল। এতক্ষণ যারা তাকে ঘৃণা করছিল, ফের তারা ভক্তি-শ্রদ্ধায় বিগলিত হল। কেউ ভক্তিতে চুমু দেয়, কেউ বরকতের আশায় শরীর স্পর্শ করে ইত্যাদি। এমনকি তারা স্বর্ণ দিয়ে তার উপাসনালয়টি নতুনভাবে তৈরি করে দেওয়ারও প্রস্তাব করল। কিন্তু তিনি ছিলেন খাঁটি আল্লাহওয়ালা। অর্থবিত্তের লোভ-লালসা তো আগেই ত্যাগ করেছেন। এখন তাতে আরও পরিপক্কতা এসেছে। তিনি প্রলোভনের শিকার হলেন না। আগের মতই মাটির ঘর তৈরি করে দিতে বললেন।
জুরায়জ রহ. এ বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলেন মায়ের বদ্দুআয়। তার কর্তব্য ছিল মায়ের ডাকে সাড়া দেওয়া। নফল ইবাদত-বন্দেগী অপেক্ষা পিতামাতার হুকুম পালন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন لو كان جريج الراهب فقيها عالما لعلم أن إجابته أنه أفضل من عبادة ربه “সংসারত্যাগী জুরায়জ ফকীহ আলেম হলে জানতেন যে, তার পক্ষে মায়ের ডাকে সাড়া দেওয়া তার রব্বের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম ছিল।
পিতামাতার আদেশ শরীআতবিরোধী না হলে মানা ফরয। জুরায়জ রহ.-এর দ্বারা এ ব্যাপারে ত্রুটি হয়ে গেছে। তার এ ত্রুটি মা ক্ষমা করে দিলে হয়তো কিছুই হত না, আল্লাহ তাআলাও ক্ষমা করে দিতেন। মায়ের পক্ষে সেটাই শ্রেয় ছিল। সন্তানকে বদদুআ দিতে নেই । মায়ের বদ্দুআ অমোঘ। তা লেগেই যায়। সুতরাং জুরায়জের প্রতি মায়ের বদ্দুআ লেগে গেল এবং তার সাধু জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে গেল।
বাহ্যদৃষ্টিতে যদিও জুরায়জ রহ.-কে এক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটাও তার প্রতি আল্লাহ তাআলার রহমতই ছিল। দুনিয়ায় তো এর ফায়দা হয়েছে এই যে, ঘটনার পর মানুষের চোখে তিনি একজন সত্যিকারের আবেদ ও সাধকরূপে সমাদৃত হয়ে গেছেন। আর আখেরাতের ফায়দা হল মায়ের ডাকে সাড়া না দেওয়ার অপরাধ থেকে মুক্তি। এ ঘটনা দ্বারা তার অপরাধের প্রতিকার হয়ে গেছে। ফলে আশা করা যায় আখেরাতে এজন্য তাকে ধরা হবে না। আল্লাহ তাআলা তার নেক বান্দাদেরকে অনেক সময় তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতির একরকম প্রতিফল দুনিয়াতেই দিয়ে দেন, যাতে আখেরাতে পরিপূর্ণ মুক্তি পেয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানে নিরাপত্তা দান করুন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
এ হাদীছটির মধ্যে শিক্ষণীয় আছে অনেক কিছুই। তার মধ্যে বিশেষ কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা যাচ্ছে।
ক. এ হাদীছ দ্বারা আল্লাহ তাআলার অসীম কুদরত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। নবীগণের মু'জিযা এবং ওলী-বুযুর্গদের কারামত তাঁর সে কুদরতেরই প্রকাশ।
খ. নফল ইবাদত অপেক্ষা পিতামাতার হুকুম পালন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই নফল ইবাদতকালে পিতামাতার কেউ ডাক দিলে সে ডাকে সাড়া দেওয়া কর্তব্য।
গ. পিতামাতার বদ্দুআ অব্যর্থ। তাই এমন কোনও কাজ করা উচিত নয়, যাতে পিতামাতা কষ্ট পেতে পারে ও তাদের মনে বদ্দুআ আসতে পারে।
ঘ. খাঁটি ঈমানদারকে আল্লাহ তাআলা বিপদ-আপদে সাহায্য করে থাকেন, বিশেষত দীন ও ঈমান বিষয়ক ফিতনার সময়। ফলে ফিতনা তাদের ক্ষতি করতে পারে না, যেমন জুরায়জকে ব্যভিচারীনী নারী প্রলোভনে ফেলতে পারেনি।
ঙ. কোনও ব্যক্তি নিজে নির্দোষ ও খাঁটি হলে তার নামে অপবাদ ও মিথ্যা অভিযোগ বেশি দিন স্থায়ী হয় না। সত্য একদিন না একদিন প্রকাশ পেয়েই যায়।
চ. যাচাই-বাছাই ছাড়া কারও সম্পর্কিত কোনও অভিযোগে কান দিতে নেই। তাতে অনেক সময়ই নির্দোষ ব্যক্তিকে অহেতুক হয়রানি করা হয়।
والله اعلم بالصواب
উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৯৩২৮৩
বছরের শুরু শেষ নেসাব ঠিক ছিলো, মাঝে যে সম্পদ বেড়েছে তার যাকাতের জন্য বৎসর পূর্ণ হতে হবে?
৫ মার্চ, ২০২৫
Mahini

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
৯০৪৯৮
ইমামের সাথে একজন /দুইজন মুকতাদী কিভাবে দাড়াবে?
২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
Bethua

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
৮১৭৯৯
অমুসলিমের সাথে বর্গা চুক্তি করলে উশর নাকি খারাজ দিবে?
২০ ডিসেম্বর, ২০২৪
নামবিহীন রাস্তা

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
৯০৫১৯
মেসেঞ্জারে বিবাহ করলে কি তা হয়
২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
Gazirchat

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে