প্রশ্নঃ ৪৮৫৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, জানাজার নামাযে সুরা ফাতিহা পড়া যাবে কিনা? কুরআন এবং হাদীসের আলোকে জানতে চাচ্ছি। ধন্যবাদ,
২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
ঢাকা ১২১২
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
জানাযার নামাযে প্রথম তাকবীরের পর আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা মূলক বাক্যমালা তথা ছানা পড়তে হয়। যেহেতু সূরা ফাতিহার মধ্যে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা মূলক বাক্য রয়েছে। এ জন্য কোন কোন সাহাবী ছানার পরিবর্তে সূরা ফাতিহা পড়েছেন।
আবার বহুসংখ্যক সাহাবায়েকেরাম জানাযায় কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করতে নিষেধ করতেন। যেহেতু সূরা ফাতিহা কুরআনুল কারীমের অংশ। বিধায় কুরআন তিলাওয়াতের নিষিদ্ধতার মধ্যে থাকতে গেলে সুরা ফাতিহা পড়া থেকে বিরত থাকা সর্তকতা। এই দৃষ্টিকোণ থেকে সূরা ফাতিহা পড়তে কেউ কেউ নিষেধ করেন।
সাহাবায়ে কেরাম থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত তাবেয়ীগণের মধ্যে যারা শীর্ষস্থানীয়, বিশেষ করে তৎকালীন পায় প্রতিটি ইসলামী শহরের যারা বড় বড় তাবেয়ী মনীষী ছিলেন, তাদের থেকেও জানাযার নামাযে সূরা ফাতেহা না পড়ার ফতোয়া পাওয়া যায়। যেমন :
১. মক্কা মুকাররমার বিখ্যাত তাবেয়ী আতা ইবনে আবী রাবাহ এর ফতোয়া :
عَنْ حَجَّاجٍ قَالَ : سألت عطاء عن القراءة على الجنازة فقال ما سمعنا بهذا إلا حديثا.
হাজ্জাজ রহ. বলেন, আমি আতাকে জানাযার নামাযে কুরআন পাঠ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমরা তো একথা নতুন নতুন শুনছি। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ১১৫২৭ )
২. মদীনা মুনাওয়ারার বিখ্যাত তাবেয়ী প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ফকীহ হযরত সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বলেছেন,
لا قراءة على الجنازة .
জানাযায় কোন কুরআন পাঠ নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ১১৫৩২)
৩. মদীনার আরেক প্রখ্যাত তাবেয়ী সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব র. বলেন,
ما نعلم في الصلاة على الميت من قراءة ولا دعاء شيئا معلوما
জানাযার নামাযে নির্দিষ্ট কোন কেরাত ও দুআ আছে বলে আমার জানা নেই। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৬৪৩৬)
৪. কুফা নগরীর বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত শাবী রহ. বলেন,
ليس في الجنازة قراءة .
জানাাযার নামাযে কুরআন পাঠ নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ১১৫২৮ )
৫. কুফার-ই আরেক প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রহ. বলেন,
لا قراءة على الجنازة ولا ركوع ولا سجود ولكن يسلم عن يمينه وعن شماله إذا فرغ من التكبير. (كتاب الآثار لمحمد ، ২৩৬)
জানাযার নামাযে কোন কিরাআত নেই, কোন রুকু-সেজদা নেই। বরং তাকবীর বলা শেষ হলে ডানে-বামে সালাম ফিরাতে হবে। (কিতাবুল আছার, হাদীস : ২৩৬)
শাবী রহ. বরং স্পষ্ট করে বলেছেন,
التكبيرة الاولى على الميت ثناء على الله والثانية صلاة على النبي صلى الله عليه و سلم والثالثة دعاء للميت والرابعة تسليم
জানাযার নামাযে প্রথম তাকবীর আল্লাহর প্রশংসা, দ্বিতীয় তাকবীর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরূদ পড়া, তৃতীয় তাকবীর মৃতের জন্য দুআ করা এবং চতুর্থ তাকবীর হচ্ছে সালাম ফিরানো। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৬৪৩৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ১১৩৭৫, ১১৩৭৮)
ইমাম মুহাম্মদ রহ. কিতাবুল আছারে ইবরাহীম নাখায়ীর অনুরূপ একটি ফতোয়া উদ্ধৃত করেছেন। (নং ২৩৮)
কোন কোন হাদীসে দেখা যায়, সাহাবী ও তাবেয়ীগণের কেউ কেউ জানাযার নামাযের প্রত্যেক তাকবীরের পরই সূরা ফাতেহা পড়তেন এবং দুআ করতেন। এ থেকেও বোঝা যায়, তারা সূরা ফাতেহা কেরাত হিসেবে নয়, বরং হামদ বা প্রশংসা হিসাবেই পড়েছেন। যেমন: মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকের বর্ণনা -
عن أبي هريرة وأبي الدرداء وأنس بن مالك وابن عباس أنهم كانوا يقرؤون بأم القرآن ويدعون ويستغفرون بعد كل تكبيرة من الثلاث ثم يكبرون الرابعة فينصرفون ولا يقرؤون.
আবু হুরায়রা, আবুদ্দারদা, আনাস ইবনে মালেক ও ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, তারা প্রথম তিন তাকবীরের পর সূরা ফাতেহা পড়তেন, দুআ করতেন ও ইসতিগফার করতেন। এরপর চতুর্থ তাকবীর বলতেন। এবং কোন কেরাত না পড়েই নামায শেষ করতেন। (হাদীস নং ৬৪৩৭)
وعن الحسن كان يقرأ في التكبيرات كلها بأم القرآن
হাসান )বসরী) র. থেকে বর্ণিত, তিনি প্রত্যেক তাকবীরের পরই সূরা ফাতেহা পড়তেন। (হাদীস নং ৬৪৩০)
তিরমিযী শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত আছে,
إنه من السنة أو من تمام السنة
অর্থাৎ সূরা ফাতেহা পড়া সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত অথবা সুন্নতের পরিপূর্ণতা। এটি যদিও বাহ্যত পূর্বোক্ত বক্তব্যগুলোর বিপরীত মনে হয়, কিন্তু সবগুলো বক্তব্যের মাঝে সমন্বয় করলে এটাই সাব্যস্ত হয় যে, ইবনে আব্বাস রা. দুআ হিসেবেই তা পড়তেন। আর তিনি যে এটাকে সুন্নত বলেছেন, তার অর্থ হলো- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কখনো কখনো দুআর উদ্দেশ্যেই সেটি পড়েছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝে মধ্যে যে আমল করেছেন, সাহাবীগণ সেটিকেও সুন্নত শব্দে ব্যক্ত করতেন। তিরমিযী শরীফে দুই সেজদার মাঝে বসার পদ্ধতি সম্পর্কে ইবনে আব্বাস রা.ই বলেছেন, ইকআ করা (অর্থাৎ পা খাড়া রেখে গোড়ালির উপর বসা) সুন্নত। অথচ এ আমল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়তো হঠাৎ কখনো করেছেন। নয়ত তাঁর সাধারণ আমল ছিল বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা। তেমনি জানাযায়ও তাঁর সাধারণ আমল ছিল ফাতেহা না পড়া। কাজেই সুন্নত সেটাই। আর ব্যতিক্রমভাবে কদাচিৎ তিনি ফাতেহাও পড়েছেন। দোয়া হিসেবে চাইলে কেউ তা পড়তেও পারে। কিন্তু এই ব্যতিক্রম আমলকেই সুন্নত বলা এবং সে হিসেবে ফাতেহা পাঠ না করাকে সুন্নতের পরিপন্থী সাব্যস্ত করা একটি বাড়াবাড়িমূলক কর্মপন্থা। সাধারণ আমলকে পাশ কাটানোর এই একরোখা নীতি অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
সারসংক্ষেপ কথা হলো: জানাযায় প্রথম তাকবীরের পর কেউ ছানা পড়লে তাকে সূরা ফাতিহা পড়ার জন্য বাধ্য করা উচিত হবে না। আবার কেউ সূরা ফাতিহা পড়তে চাইলে তাকে বারন করাও ঠিক হবে না।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
১৩৪৪৭
৩০ জানুয়ারী, ২০২২
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ
২১৭৬৩
১৭ আগস্ট, ২০২২
পলাশ

উত্তর দিয়েছেনঃ শফিকুল ইসলাম হাটহাজারী
৯৬০৪০
সানায় وجل ثناؤك অংশ বৃদ্ধির হুকুম
২০ মার্চ, ২০২৫
কলারোয়া

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে