পূর্ণাঙ্গ নামাজ শিক্ষা
প্রশ্নঃ ৪৬০৪৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, চার রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়ার নিয়ম?,
১৭ নভেম্বর, ২০২৩
Z4022
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ মুসলিমই হানাফি মাজহাবের অনুসারী। তাই হানাফি মাজহাব অনুসারেই নিচে নামাজ পড়ার সংক্ষিপ্ত নিয়ম উল্লেখ করা হলো।
নামাজের নিয়ত করে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাতে হবে। এরপরে তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) পড়ার পর বাম হাতের ওপর ডান হাত রেখে নাভির নিচে হাত বাঁধতে হবে। এরপর অনুচ্চৈঃস্বরে সানা পড়তে হবে।
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা তোমারই পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি, তোমার নামই বরকতপূর্ণ এবং তোমার গৌরবই সর্বোচ্চ, তুমি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। (নাসায়ি, হাদিস নং : ৮৮৯)
এরপর অনুচ্চৈঃস্বরে أَعُوْذُ بِا للہِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ এবং بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ পড়ে সুরা ফাতেহা পড়তে হবে।
সূরা ফাতিহা
ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ رَبِّ ٱلْعَالَمِينَ
ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
مَالِكِ يَوْمِ ٱلدِّينِ
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
ٱهْدِنَا ٱلصِّرَاطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ
صِرَاطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
غَيۡرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا اَ۬لضَّآلِّينَ ص
তারপর আমিন বলতে হবে। তবে হানাফি মাজহাব মতে, আমিন আস্তে পড়া উত্তম।
সূরা ফাতিহা পড়া শেষ হলে একটি সূরা অথবা তিনটি ছোট আয়াত (যা কমপক্ষে লম্বা একটি আয়াতের সমতুল্য হয় পড়তে হবে।) (আবু দাউদ, হাদিস নং : ৬৯৫)
নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য তেলাওয়াত শুদ্ধ হওয়া আবশ্যক। তবে নামাজে কোরআন তিলাওয়াতের সুন্নত পরিমাণের বিষয়ের বিবরণ ফিকহের কিতাবে উল্লেখ করা আছে।
অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে মাথা নিতম্বের বরাবর করতে হবে। (আবু দাউদ, হাদিস নং : ৭২৯)
রুকুতে আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরতে হবে। (মুজামে সাগির ২/৪৯৭)
রুকুতে কমপক্ষে তিনবার سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ পড়তে হবে। (তিরমিজি, হাদিস নং : ২৪২) তবে পাঁচবার/সাতবার বলাও সুন্নত।
এবার রুকু থেকে سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলে মাথা উঠবে। মুক্তাদি হলে অনুচ্চৈঃস্বরে শুধু رَبَّنَالَكَ الْحَمْدُ বলতে হবে। এরপর حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ এই দোয়াও পড়তে পারবে। তারপর তাকবির পড়ে অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৭৪৭)
সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাঁটু, তারপর হাত, তারপর উভয় হাতের মধ্যে প্রথমে নাক এবং পরে কপাল মাটিতে রাখতে হবে। নিজের পেট রান থেকে এবং বাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক করে রাখুন। হাত ও পায়ের আঙুলকে কিবলামুখী করে রাখতে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৭৮৫)
সিজদায় কমপক্ষে তিনবার سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى পড়তে হবে। (তিরমিজি, হাদিস নং : ২৪২) তবে পাঁচবার/সাতবার বলাও সুন্নত। এরপর সিজদা থেকে উঠার সময় সর্বপ্রথম মাথা উঠিয়ে উভয় হাত রানের ওপর রেখে স্থিরতার সঙ্গে বসে পড়তে হবে। দুই সিজদার মাঝে এই দোয়াও পড়তে পারবে। اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاجْبُرْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ
সূত্র: https://muslimbangla.com/others/dua/410
এরপর তাকবির বলে দ্বিতীয় সিজদা করতে হবে। দ্বিতীয় সিজদায়ও কমপক্ষে তিনবার তাসবিহ পড়তে হবে। বিজোড় সংখ্যায় এর বেশিও তাসবিহ পড়া যাবে। এরপর জমিনে হাত দ্বারা ঠেক না দিয়ে এবং না বসে সরাসরি তাকবির বলে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। এ পর্যন্ত আমাদের প্রথম রাকাত সম্পন্ন হয়েছে।
এবার দ্বিতীয় রাকাত আরম্ভ হলো। এতে হাত উঠাতে হবে না, ছানাও পড়বে না,
أَعُوْذُ بِا للہِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ -ও পড়তে হবে না। তবে আগের মতো بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ পড়ে সুরা ফাতিহা ও এর সাথে অন্য একটি সূরা পড়ে রুকু-সিজদা করতে হবে।
দ্বিতীয় সিজদা শেষ করে ডান পা খাড়া করে বাম পা জায়নামাজে বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর বসে যেতে হবে। তখন হাত রাখতে হবে রানের ওপর এবং ডান পায়ের আঙুলগুলো থাকবে কিবলামুখী।(মুসলিম, হাদিস নং : ৯১২)
অতঃপর তাশাহুদ পড়তে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৭৮৮)
তাশাহুদ বা আত্তাহিয়াতু দোয়া
– اَلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَن لَّاإِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ. –
তাশাহুদ পড়ার সময় ‘আশহাদু আল-লা ইলাহা’ পড়ার সময় শাহাদাত আঙুল উঁচু করে ইশারা করতে হবে। আর ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় আঙুল নামিয়ে ফেলতে হবে।
তবে তাশাহুদের বাক্য ও আঙুল দিয়ে ইশারা করার বিষয়ে অন্য নিয়মও ইমামদের বক্তব্যে দেখা যায়। তাই বিষয়টি নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি করা কাম্য নয়।
যদি নামাজ দুই রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—ফজরের নামাজ, তাহলে তাশাহুদের পর নিম্নের দরুদ শরিফ পাঠ করতে হবে (মুসলিম, হাদিস নং : ৬১৩)–
তাশাহুদের পর দরুদ শরীফ
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ, وبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِْيدٌ مَجِيْدٌ . –
এরপর পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত যে কোনো দোয়া পাঠ করতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ১/২৯৮)
যেমন— দোয়ায়ে মাসুরা পড়তে পারেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৯)
দোয়ায়ে মাসুরা বা দোয়া মাসুরা
اللّٰهُمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمْاً كَثِيْراً، وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
অতঃপর ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতে বলতে ডানে এবং বাঁয়ে মাথা ফেরাতে হবে। সালাম ফেরানোর সময় পাশের নামাজি ব্যক্তি এবং ফেরেশতাদের কথা স্মরণ করবেন।
*****************
যদি নামাজ তিন রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—মাগরিবের নামাজ, তখন প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ পর আর কিছু পড়বে না। বরং ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সোজা দাঁড়িয়ে যেতে হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২২৪)
তবে তৃতীয় রাকাতে শুধু সুরা ফাতিহা পড়তে হবে। আর নামাজ যদি চার রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—জোহর, আসর ও এশার নামাজ, তখন চতুর্থ রাকাতেও শুধু সুরা ফাতিহা পড়তে হবে। এছাড়া সুন্নত নফল বা বিতির হলে নামাজের সকল রাকাতেই সুরা ফাতেরহার সাথে অন্য সুরা মিলাতে হবে। এরপর প্রথম দুই রাকাতের মতো রুকু-সিজদা করে তৃতীয়/চতুর্থ রাকাত সম্পন্ন করে শেষ বৈঠকে বসবে। সেখানে উল্লিখিত পদ্ধতিতে তাশাহহুদের পর দরুদ এবং এরপর দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে উভয় দিকে সালাম ফেরাতে হবে।
والله اعلم بالصواب
উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৯০২৩৩
তোমাদের সন্তানদের সন্ধ্যায় ঘরে আটকিয়ে রাখ এবং কিছু সময়ের পর ছেড়ে দিও এটা কোরান বা হাদীসের কোথাও কি আছে?
২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার
৯০৪৯৪
হারাম টাকায় পোষাক বানিয়ে তা পরে ইবাদত করলে ইবাদত কবুল হবে?
২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
G৯FW+M৫W

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
৯০৩৪৪
‘‘এক বলেই আউট হয়ে যাবে’’ ‘‘নিশ্চিত আজকে ওরা হারবে’’ এধরণের বাক্য বলার দ্বারা কি শিরক হয়?
২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
CG৩X+VQ

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
৯০৫৮৩
ভিন্ন দেশ থেকে ৩০ রোযা রেখে বাংলাদেশে গেলে রোযা রাখতে হবে? রাখলে ৩১টা হয়ে যায়। করণীয় কি?
২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
대한민국 경기도 파주시 월롱면 통일로৬২০번길 ৮৯-৫৩ (KR)

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে