আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

খাস বা অননুমোদিত জমিতে নির্মিত মসজিদ প্রসঙ্গে

প্রশ্নঃ ৪৩১৪২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মাননীয় মুফতী সাহেবগণ! আমার প্রশ্ন এই যে, একটি মসজিদ ৫০ বৎসর আগে নির্মাণ করা হয়েছিলো এবং সেই সময় হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত উক্ত মসজিদে পাবন্দীর সহিত নামাজ আদায় করা হচ্ছে। বর্তমানে উক্ত মসজিদের জন্য একটি নতুন কমিটি গঠন হয়েছে। এই নতুন কমিটি মসজিদের কাগজ পত্র খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, যে জায়গায় মসজিদ তৈরী করা হয়েছিল ঐ জমিটি আদৌ মসজিদের নামে নয় বরং সরকারী খাস জমি। (যার খতিয়ান নং ১) এছাড়া পুরানো রেকর্ড থেকে এও জানা যায় এই জমি কারো নামে পাট্টাও নেই (সাধারণত খাস জমি ভূমিহীনদের পাট্টা করে দেওয়া হয় যা বিক্রয় যোগ্য নয়) এখন প্রশ্ন হলো- (১) এ পর্যন্ত যত নামাজ ঐ মসজিদে আদায় করা হয়েছে তার হুকুম কি? (২) যেহেতু মসজিদ অবৈধ জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে তাহলে কি ঐ মসজিদ ভেঙ্গে ফেলতে হবে? বা কোন বৈধ জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে ? (৩) এই মসজিদ বৈধ করার উপায় কি? (৪) অবশ্য সরকারী অফিসে টাকা খাইয়ে ঐ জমি মসজিদের নামে পাট্টা করে নেওয়া যাবে, এটা কি জায়েয হবে? (৫) মসজিদ কে বাঁচাবার জন্য এরুপ ঘুষ কি দেওয়া যাবে? অনুগ্রহ পূর্বক উত্তর দিয়ে বাধিত করিবেন। -ফাইজুল হাসান বীরভূম ইন্ডিয়া,

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

West Bengal ৭৩১৩০১

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সম্মানিত প্রশ্নকারী!
শরীয়তের বিধান মতে কারও সম্পদ তার সন্তুষ্টি ব্যতীত ব্যবহার করা জায়েজ নাই।
এমর্মে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ تِجَارَۃً عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡکُمۡ ۟ وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِکُمۡ رَحِیۡمًا ﴿۲۹﴾
হে ইমানদারগণ ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না। তবে তোমরা পরস্পর রাযী হয়ে ব্যবসা করা বৈধ। এবং নিজেদের হত্যা করো না।নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (সুরা নিসা ২৯)

হাদীস শরীফে আবূ হুররাহ্ আর্ রক্কাশী (রহঃ) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করে বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন,
أَلَا لَا تَظْلِمُوا أَلَا لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ». رَوَاهُ الْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيْمَانِ وَالدَّارَقُطْنِىِّ فِى الْمُجْتَبٰى
সাবধান! কারো ওপর জুলুম করবে না। সাবধান! কারো মনোতুষ্টি ছাড়া তার মাল অন্য কারো জন্য হালাল নয়।-(আহমাদ ২০৬৯৫, শু‘আবুল ঈমান ৫১০৫, ইরওয়া ১৪৫৯, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৬২।)

প্রিয় দ্বীনি ভাই!
মসজিদ নির্মাণ নিঃসন্দেহে অনেক সাওয়াবের কাজ। আল্লাহ তায়ালা সুরা তাওবার ১৮ নং আয়াতে ইরশাদ করেন,
اِنَّمَا یَعۡمُرُ مَسٰجِدَ اللّٰہِ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰہِ وَالۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلٰوۃَ وَاٰتَی الزَّکٰوۃَ وَلَمۡ یَخۡشَ اِلَّا اللّٰہَ فَعَسٰۤی اُولٰٓئِکَ اَنۡ یَّکُوۡنُوۡا مِنَ الۡمُہۡتَدِیۡنَ
অর্থঃ আল্লাহর মসজিদ তো আবাদ (নির্মাণ) করে তারাই, যারা আল্লাহ ও পরকালে ঈমান এনেছে এবং নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। এরূপ লোকদের সম্পর্কেই আশা আছে যে, তারা সঠিক পথ অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, " مَنْ بَنَى لِلَّهِ مَسْجِدًا بَنَى اللَّهُ لَهُ مِثْلَهُ فِي الْجَنَّةِ " যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কোন মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে তদ্রূপ একটি বাড়ি নির্মাণ করবেন।
(জামে' তিরমিযী) হাদীস নং: ৩১৮ আন্তর্জাতিক নং: ৩১৮
হাদীসের লিংকঃ https://muslimbangla.com/hadith/29950

খাস জমির বিধান:
খাস জমি সরকারী সম্পদ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বৈধ অনুমতি ছাড়া তা যে কারো জন্য ব্যবহার করা জায়েজ নাই। অনূরূপভাবে সরকারী জায়গায় মসজিদ নির্মাণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি লাগবে। সরকারী অনুমতি ছাড়া কোনো স্থানকে মসজিদ হিসেবে রূপ দান করলেও সেই স্থান শরঈ মসজিদ হিসেবে গণ্য হবে না। বরং সেটা “সাধারণ নামাজ ঘর” হিসেবে গণ্য হবে।

করণীয়:
ওই “নামাজ ঘর”টি মসজিদ হিসেবে রূপান্তর করতে করণীয় হলো, সংশ্লিষ্ট বৈধ কর্তৃপক্ষ/মন্ত্রণালয়/অধিদপ্তর কর্তৃক বিধিবদ্ধ আইন অনুযায়ী মৌখিক বা লিখিত অনুমোদন গ্রহন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বৈধ অনুমতি না নিয়ে কেবল সাধারণ কর্মচারী বা অফিসারের মৌখিক অনুমোদন, অথবা ঘুষ খাইয়ে ঐ জমি মসজিদের নামে পাট্টা/বরাদ্দ/লিজ নেওয়া জায়েয হবে না।

যদি বৈধ অনুমতি পাওয়া না যায় তাহলে “নামাজ ঘর”টি সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে মহল্লাবাসী তাদের সুবিধামত স্থানে নির্মাণ করবে।

আর যেহেতেু ওই “নামাজ ঘর”টি শরঈ মসজিদ হিসেবে গণ্য হয়নি তাই ‘মসজিদ রক্ষা’ করার বিষয়ও নাই। তবে ইতিপূর্বে সেখানে যে নামাজ পড়া হয়েছে সেগুলো আদায় হয়ে গেছে। সেগুলো কাজা করতে হবে না। কেননা অনুমতি ছাড়া নেওয়ার সত্ত্বেও যেহেতু জায়গাটি পাক ছিল তাই সেখানে নামাজ আদায়ে অসুবিধা হয়নি।

فى الدر المختار- لا يجوز التصرف فى مال غيره بلا اذنه ولا ولايته ( الدر المختار مع الشامى -9/291
وفى شرح المجلة- لا يجوز لأحد ان يتصرف فى ملك غيره بلا اذنه او وكالته او ولايته عليه وان فعل كان ضامنا( شرح المجلة-1/262)
وفى البحر الرائق- الخامس من شرائطه الملك وقت الوقف…………. اما لو وقف ضيعة غيره على جهات فبلغ الغيرفأجازه جاز بشرط الحكم والتسليم، ( البحر الرائق-5/188
حُكمُ الصَّلاةِ في الأرضِ المَغصوبَةِ
الصَّلاة في الأرضِ المغصوبةِ صحيحةٌ، وهو مذهبُ الجمهور: الحنفيَّة، والمالكيَّة، والشافعيَّة، وروايةٌ عن أحمد؛ وذلك لأنَّها أرضٌ طاهرةٌ، وإنَّما المنعُ فيها لمعنًى في غيرها، وهو حقُّ المالكِ، وذلك لا يَمنعُ صِحَّةَ الصَّلاةِ

আরো দেখুন-
# ফাতওয়ায়ে শামী- ৯/২৯১
# শরহু মাজাল্লাতিল আহকামিল আদলিয়্যাহ-১/২৬২
# আলবাহরুর রায়েক-৫/১৮৮
# ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২১/৩৩১-৩৩৭

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০৩৯৭

সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সার্জারী করে স্তন করা ছোট করা যাবে কি?


২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ON M৩C ১A২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

২৭৮৬০

স্ত্রীর দুধ খাওয়া কি বৈধ?


১২ জানুয়ারী, ২০২৩

পাইকগাছা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৩৫৪৮৪

প্রতিবেশীর আয় হারাম হলে


১০ জুলাই, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

২৭৭২৯

অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করা


২৪ জানুয়ারী, ২০২৩

ঢাকা ১২১২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy