আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

বেনামাজী এবং গীবতকারী বাবা মায়ের ক্ষেত্রে সন্তানের করণীয়

প্রশ্নঃ ৪২৯৮৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মা-বাবা যদি নামাজ না পড়ে বা গীবত করে , তাহলে সন্তানের করণীয় কী?,

১৪ অক্টোবর, ২০২৩

Daulatpur

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সম্মানিত প্রশ্নকারী!
নামায না পড়া মারাত্মক কবীরাহ গুনাহ, হাদীস শরীফে যাকে কুফরের সমপর্যায়ের বলা হয়েছে। আমরা দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা ওই পিতা-মাতাকে নামাজি এবং খাঁটি দ্বিনদার বানিয়ে দিন। আমিন। আর সন্তান হিসেবেও যিনি তার বাবা মাকে নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন তাকেও পিতা-মাতার হেদায়াতে কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সন্তানের জন্য এজাতীয় ক্ষেত্রে কিছু করুণীয় আছে। সেগুলো হলো,
(উপস্থাপন সহজার্থে আমরা প্রশ্নকারীকেউ সম্ভোধন করে বলছি)
এক. আপনার বাবাকে হেকমত ও বুদ্ধিমত্তার সাথে নামাজের দাওয়াত অব্যাহতভাবে দিতে থাকবেন। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ

মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা তাহরীম ৬)

আর দেয়ার ক্ষেত্রে আদর্শ পদ্ধতি হবে সংক্ষেপে নিম্নরূপ:

১। তাদের মাঝে মাঝে স্মরণ করিয়ে দিন যে, নামায একটি ফরয ইবাদত এবং ঈমানের পর নামায ইসলামের সবচেয়ে মহান রুকন।

২। কখনওবা তাদেরকে নামাযের কিছু ফযিলত অবহিত করুন; যেমন- আল্লাহ্‌ বান্দার উপর যা কিছু ফরয করেছেন তার মধ্যে নামায সর্বোত্তম। বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। একটিমাত্র সেজদার মাধ্যমে বান্দার এক ধাপ মর্যাদা সমুন্নত হয় এবং একটি পাপ মোচন হয়…ইত্যাদি নামাযের ফযিলতের ব্যাপারে আরও যা কিছু বর্ণিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আশা করি, তার অন্তর খুলে যাবে এবং নামায তাঁদের চোখের শীতলতায় পরিণত হবে।

৩। মাঝে মাঝে তাদের আল্লাহ্‌র সাক্ষাত, মৃত্যু ও কবরের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। নামায বর্জনকারীর যে, খারাপ মৃত্যু হয় ও কবরে আযাব হয় তাকে সেটা স্মরণ করিয়ে দিন।

৪। তাদের মাঝে মাঝে স্মরণ করিয়ে দিন, নির্ধারিত সময় এর চেয়ে দেরীতে নামায আদায় করা কবিরা গুনাহ্‌। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ সেসব নামাযীদের জন্য ধ্বংস যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর। (সূরা মাউন ৪,৫)

৫। নামায সংক্রান্ত, নামায বর্জনকারী ও অবহেলাকারীর শাস্তি সংক্রান্ত কিছু পুস্তিকা উপহার দিন।

দুই. দাওয়াত দিতে গিয়ে কোনো অবস্থাতেই বাবা মায়ের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যাবেন না। অযাচিত তর্ক অনেক সময়ই সুন্দর পরিবেশ বিনষ্ট করে। উর্বর হৃদয়কে অনুর্বর করে দেয়। শুস্কতায় চৌচির করে দেয়। তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না। কেননা, তারা আপনার বাবা-মা। আর মা-বাবা সর্বাবস্থায় সদ্ব্যবহারে হকদার; এমন কি তারা অমুসলিম হলেও। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَإِن جَاهَدَاكَ عَلى أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا

পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। (সূরা লুকমান ১৫)


তিন. প্রিয় ভাই, আপনার উক্ত মেহনত ও দরদ আরও বেশি কার্যকরী ও সহজ হবে, যদি আপনার বাবাকে কোন হক্কানী আলেমের সঙ্গে সম্পর্ক করিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি প্রথমে তাকে কোন হক্কানী আলেমের বয়ান শোনার জন্য আগ্রহী করে তুলতে পারেন। ওলামাদের মজলিসে আসা যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে পারেন। অথবা তাকে দাওয়াত-তাবলিগে কিছু সময় দেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

প্রিয় ভাই, উক্ত মেহনত আপনাকে চালিয়ে যেতে হবে প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি তার হেদায়তের জন্যও দোয়া করতে হবে নিয়মিত। কোন অবস্থায় আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। আশাহত হয়ে চেষ্টা কিংবা দোয়া বর্জন করবেন না। ইনশাআল্লাহ একদিন না একদিন সাফল্য পাবেন। وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। (সূরা ত্বলাক ৩) রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ ভাগ্য পরিবর্তন হয় না দোয়া ব্যতীত। (তিরমিযী ২১৩৯) বাবা পরিবর্তণ হলো আশা করা যায় মায়ের পরিবর্তণটা সহজ হবে।

সাথে সাথে তাদের হেদায়াতের উদ্দেশ্যে সাধ্যমতো সদকাও করতে পারেন। কেননা বালা মুসিবত এবং বিপদ আপদ দূর করতে দান-সদকার অদৃশ্য প্রভাব রয়েছে। আর পিতা মাতা দ্বিনদান না হওয়াও অনেক বড় বিপদ। অনেক বড় মুসিবত।

হাদিস শরীফে আম্মাজান আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন,
الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ لاَ يُخْسَفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلاَ لِحَيَاتِهِ فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَادْعُوا اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وَكَبِّرُوا وَتَصَدَّقُوا "
চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ কারও জন্ম মৃত্যুর ফলে হয়না। যখন তোমরা তা এই অবস্থায় দেখবে, তখন আল্লাহর যিক্‌র করবে, দুআ করবে এবং দান খয়রাত করবে।
(সুনানে আবু দাউদ) হাদীস নং: ১১৯১ আন্তর্জাতিক নং: ১১৯১
হাদীসের লিংকঃ https://muslimbangla.com/hadith/15537


তথাপিও যদি তারা তাদের অবস্থান থেকে ফিরে না আসেন, তাহলে আপনি দায়িত্বমুক্ত বলে বিবেচিত হবেন এবং উক্ত চেষ্টা ও দোয়ার জন্য অশেষ সাওয়াবের অধিকারী হবেন। আমরাও দোয়া করি, আল্লাহ আপনার বাবা মাকে পরিপূর্ণ হেদায়াত দান করুন। আমিন।

প্রিয়ভাই!
গিবতকারী বাবা মায়ের ক্ষেত্রেও আমরা একই পরামর্শ দিব। কৌশলে হিকমাহ ও প্রজ্ঞার সাথে তাদের গিবতের ভয়াবতা সম্পর্কে সজাগ করতে হবে। নিচের উত্তরগুলো দেখুন।
১.গিবতের ভয়াবহতা: https://muslimbangla.com/masails?q=13227&page=1
২. গিবত থেকে উত্তরণের উপায়: https://muslimbangla.com/masail/13991

এসব করার কারণে যদি তারা আপনাকে গাল-মন্দ করে, বকা-ঝকা করে, কটু কথা বলে তবুও সেটা তাদের হেদায়াতের মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শুনে যাবেন। তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর দিবেন না। সময় সুযোগ বুঝে তার ভুল বুঝিয়ে দিবেন । আল্লাহ তায়ালা আপনার মা বাবাকে পরিপূর্ণ হেদায়াত দান করুন। আমিন।
(শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী-এর লেখা থেকে সংগৃহিত ও সংযোজিত)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
উস্তাজুল ইফতা, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৫৬২৪

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য


২২ নভেম্বর, ২০২২

মানিকগঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

২৭৭৪৪

সন্তানকে ত্যাজ্য করার হুকুম


১২ জানুয়ারী, ২০২৩

ঢাকা ১২১২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৩৭৯০৮

বিধবা নারীর বিয়ে হলে তার সন্তানদের লালন পালনের দায়িত্ব কার উপর বর্তাবে?


২৮ আগস্ট, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

২৫২৪১

বিয়ের জরুরত আছে, কিন্তু পরিবার বাধা দিচ্ছে, যুবকের করণীয় কী?


১৯ জানুয়ারী, ২০২৫

ফেনী

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy