আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

যে যুবক হারাম সম্পর্ক থেকে বাঁচার জন্য ম্যসেঞ্জারের মাধ্যমে গোপন বিয়ে করতে চায়; তার প্রতি পরামর্শ

প্রশ্নঃ ২৫১৪৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম,একজন সাক্ষী রেখে মেসেঞ্জার গ্রুপে কালেমা পড়ে কবুল বললে বিয়ে হবে? ছেলে মেয়ে ২ জন এই ১৮ বসর এর উপরে। এখন বাড়িতে বিয়ের কথা বললে বলবে আগে নিজে কিছু করো তাই ২ বছর পর পরিবারকে জানিয়ে পারিবারিকভাবে বিয়ে করবে। এখন কালেমা পড়ে বিয়ে করে রাখতে চায়। কারণ তাদের সম্পর্ক যেন হালাল সম্পর্ক হয়ে থাকে।,

১৫ নভেম্বর, ২০২২

Shibchar, Bangladesh

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এক. প্রিয় ভাই, আপনি কি আমাদের কাছে এজন্য প্রশ্ন করেছেন যে, আমরা আপনাকে গোপনে বিয়ে করার অনুমতি দিব?! অথচ অভিভাবকশূন্য এমন অসামাজিক ও অমানবিক বিয়ের অনুমতি দেয়ার অধিকার তো আমাদের নেই। কেননা, ইসলামের নির্দেশনা হলো,
أعلنوا النكاح
‘বিয়ে করবে ঘোষণা দিয়ে।’ (মুসনাদে আহমাদ ৪/৫)
দেখুন, আল্লাহ তাআলা বিয়ে দেয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وأَنْكِحوا الأيامى منكم
‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ দাও।’ (সূরা নুর ৩২)
নাকি আপনি চাচ্ছেন যে, আমরা আপনাকে বিবাহ-বহির্ভূত প্রেম বৈধ বলে ফতোয়া দিব?! কোন মুসলমানের পক্ষে এ ফতোয়া দেয়া সম্ভব নয়। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ এটাকে যেনা বা ব্যভিচার বলেছেন-
اَلْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظْرُ وَالْاُذُنَانِ زِنَاهُمَا الْاِسْتِمَاعُ وَاللِّسَانُ زِنَاهُمَا الْككَلَامُ وَالْيَدُ زِنَاهُمَا الْبَطْشُ وَالرِّجْلُ زِنَاهُمَا الخُطَا وَالْقَلْبُ يَهْوِىْ وَيَتَمَنَّى وَيُصَدِّقُ ذَالِكَ الْفَرْجُ اَوْ يُكَذِّبُه
‘দুই চোখের ব্যভিচার হল হারাম দৃষ্টি দেয়া, দুই কানের ব্যভিচার হল পরনারীর কণ্ঠস্বর শোনা, জিহবার ব্যভিচার হল, [পরনারীর সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের ব্যভিচার হল পরনারী স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হল গুনাহর কাজের দিকে পা বাড়ান, অন্তরের ব্যভিচার হল কামনা-বাসনা আর গুপ্তাঙ্গঁ তা সত্য অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।” (সহীহ মুসলিম ২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ ৮৯৩২)
বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এক্ষেত্রে আপনি উক্ত হারাম এবং কবিরা গুনাহর ব্যাপারে তাওবা না করে অন্য কিছু ভাবছেন! এটা ভাবলেন না যে, আপনারা বিয়ে-বহির্ভূত প্রেমের মাধ্যমে একপ্রকার যিনা বা ব্যভিচারেও জড়িত!
আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এক্ষেত্রে আপনি আপনার একটি গোপন লালসা ঠিক রাখার জন্য তাদের কষ্টের কথা ভাবলেননা যারা আপনার বাবা-মা, যারা আপনাকে নিস্বার্থভাবে ভালোবাসেন, যাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেবল শ্রদ্ধারই নয়, আনুগত্যেরও!
দুই. আপনারা উক্ত অবৈধ সম্পর্ককে বজায় রাখার জন্য মেসেঞ্জার গ্রুপে বিয়ে করতে চাচ্ছেন; যার অনুমোদন ইসলামে নেই। আল-লাজনাতুদ্দায়িমাহ লিল-ইফতা, সৌদি আরব-এর ফতোয়াও এটাই যে, টেলিফোন বা মোবাইলে বিবাহ বৈধ হবে না। যেমন, সেখানে বলা হয়েছে,
نظرا إلى عناية الشريعة الإسلامية بحفظ الفروج والأعراض ، والاحتياط لذلك أكثر من الاحتياط لغيرها من عقود المعاملات – رأت اللجنة أنه ينبغي ألا يعتمد في عقود النكاح في الإيجاب والقبول والتوكيل على المحادثات التليفونية ؛ تحقيقا لمقاصد الشريعة ، ومزيد عناية في حفظ الفروج والأعراض حتى لا يعبث أهل الأهواء ومن تحدثهم أنفسهم بالغش والخداع
নারীর সম্ভ্রম ও ইজ্জতের হেফাজত, বিবাহের গুরুত্ব, ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে নিরাপত্তা এবং ইসলামি শরিয়তের মাকাসিদের প্রতি লক্ষ্য করে ফাতওয়া বোর্ড এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, বিবাহের ইজাব-কবুল ও প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে ফোনের কথোপকথনের ওপর নির্ভর করা উচিত হবে না। (ফাতওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাহ ১৮/৯০)
যা হোক, এখন আপনার প্রতি আমাদের একটাই উপদেশ। তাহল,
গুনাহর পর গুনাহ আর নয়; বরং তাওবা করুন। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلا تَقرَبُوا الزِّنى إِنَّهُ كانَ فاحِشَةً وَساءَ سَبيلًا
আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (সূরা ইসরা ৩২)
যদি আপনি আসলেই আল্লাহর কাছে তাওবা করতে চান তাহলে প্রথমে এই পাপে পুনরায় পতিত হওয়ার সকল উপায় উপকরণ কর্তন করুন। এক কথায়, মেয়েটির সাথে সকল সম্পর্ক কর্তন করতে হবে। কেননা, আল্লাহ তাআলা এ জাতীয় সীমালংঘনকারীর তাওবার আলামত হিসাবে বলেছেন,
وَمَن تَابَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَإِنَّهُ يَتُوبُ إِلَى اللَّهِ مَتَابًا
আর যে (ব্যভিচার থেকে) তাওবা করে এবং সৎকাজ করে তবে নিশ্চয় সে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। (সূরা আল ফুরকান ৭১)

দুই. এতদসত্ত্বেও যদি আপনি আপনার নেক সূরতের অন্যায় লালসায় তাড়িত হয়ে কমপক্ষে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে করেই ফেলেন, তাহলে যদিও শরিয়তের দৃষ্টিতে বিশেষ বিবেচনায় বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু পারিবারিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে তা সম্পূর্ণ অনুচিত হবে। যা আপনার শারীরিক ও মানসিক ব্যাধির কারণ হতেও পারে।সুতরাং আপনি আখেরাত ও জাহান্নামের কথা স্মরণ করে গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজনে অভিভাবকদের জানিয়ে তাদের পরামর্শক্রমেই বিয়ে করুন। দায় দায়িত্বহীনভাবে গোপনে বিয়ে করা শরিয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় নয়।
فى الدر المختار- ( و ) شرط ( حضور ) شاهدين ( حرين ) أو حر وحرتين ( مكلفين سامعين قولهما معا ) (الدر المختار ، كتاب النكاح،-3/9)
বিবাহ সহীহ হওয়ার শর্ত হল শরীয়তের মুকাল্লাফ [যাদের উপর শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়] এমন দুইজন আযাদ পুরুষ সাক্ষি বা একজন আযাদ পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষি হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য স্বকর্ণে উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। (আদ দুররুল মুখতার-৩/৯, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৪১০৪১

একাধিক বিয়ে


২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

কেরানীগঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

৭৮৯৮৭

গৃহস্থলি কাজে নারীর দায়বদ্ধতা


২ ডিসেম্বর, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৩৫০৩৬

সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত কি সঠিক?


৯ জুলাই, ২০২৩

ময়মনসিংহ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৩৩৭৪০

তাওবা করার পরেও কি ভালো স্ত্রী পাওয়া যাবে না?


২৯ মে, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy