আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৪১২০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম শায়েখ,আমার এক ফেইসবুক ফ্রেন্ড আমার কাছে জানতে চায়,""আচ্ছা ইসলামে এত বিভাজন কেন,এত দল কেন? যেমন :আহলে হাদিস, হানাফি(৪মাযহাব) ইত্যাদি!""আর আহলে হাদীসদের কে সে হয়তো মোহাম্মদী নামে চিনে।সে কোন দলের এমনটা জানতে চাইলে সে বলে, "আমি মোহাম্মদী"এখন, (ইসলামে এত বিভাজন, এত ইসলামিক দল কেন?) তার এই প্রশ্নের জবাবে তাকে কি বলা উচিত সেটা জানালে অনেক ভালো হতো, অনুগ্রহপূর্বক।জাজাকাল্লাহ খাইরান,

৪ জানুয়ারী, ২০২১

দিনাজপুর

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন:

وَفِی الۡاَرۡضِ اٰیٰتٌ لِّلۡمُوۡقِنِیۡنَ ۙ
(আয-যারিয়াত - ২০)
বিশ্বাসকারীদের জন্যে পৃথিবীতে নিদর্শনাবলী রয়েছে,
وَفِیۡۤ اَنۡفُسِکُمۡ ؕ اَفَلَا تُبۡصِرُوۡنَ
(আয-যারিয়াত - ২১)
এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও, তোমরা কি অনুধাবন করবে না?

পবিত্র কুরআনে কারীমের সূরা যারিয়াত এর ২০ ও ২১ নং আয়াতে ফিকির করলে আপনার এই প্রশ্নের জবাব মিলবে। পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই রয়েছে যাতে বহুত্বের মাঝে রয়েছে ঐক্যের সুর। মহাসড়কগুলোতে ৬-৮টি লেন থাকে। সবগুলো দিয়েই গাড়ি চলে। প্রতিটি লেনের ধাবমান গাড়ির গতি ভিন্ন হলেও সবগুলোর রুট নং থাকে একই।
উদাহরণস্বরূপ আপনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবেন। এর জন্য আপনার সম্মুখে রয়েছে নেকগুলো মাধ্যম। বিমান, ট্রেন, বাস, প্রাইভেট কার, বাইক অথবা হেঁটেও যেতে পারেন। পরিনাম সবগুলোর একই। যেকোন একটা মাধ্যম গ্রহণ করে আপনি চট্টগ্রামে গিয়ে পৌঁছতে পারবেন। গন্তব্য এক হলেও মাধ্যম হিসেবে নিতে পারেন যেকোন একটিকে।

পবিত্র কুরআনে কারীমে আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেন :
وَالَّذِیۡنَ جَاہَدُوۡا فِیۡنَا لَنَہۡدِیَنَّہُمۡ سُبُلَنَا ؕ  وَاِنَّ اللّٰہَ لَمَعَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ٪
(আল আনকাবুত - ৬৯)
যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। ( আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথগুলো দেখিয়ে দেব)। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন।

পবিত্র কুরআনে কারীমের এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা পথগুলো (বহুবচন শব্দ) ব্যবহার করেছেন। ইসলামের মধ্যে থেকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবেন যেকোন একটি পথ বেয়ে।

পবিত্র কুরআনে কারীমের সূরা তাওবাহ এর ১০০নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :

وَالسّٰبِقُوۡنَ الۡاَوَّلُوۡنَ مِنَ الۡمُہٰجِرِیۡنَ وَالۡاَنۡصَارِ وَالَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡہُمۡ بِاِحۡسَانٍ ۙ رَّضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَرَضُوۡا عَنۡہُ وَاَعَدَّ لَہُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ تَحۡتَہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَاۤ اَبَدًا ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ
(আত তাওবাহ্ - ১০০)
আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা।

এ আয়াতে দুইটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১. সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে দুটি টি জামাআত ছিল।
ক. মুহাজির
খ. আনসার
এখানে কি আপনি প্রশ্ন করবেন যে, এক নবীর অনুসারী দুটি দল কেন?

২. আল্লাহ তা'আলা সকল সাহাবীদের অনুসারীদের জন্য জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণার আলোকে যেকোন সাহাবীকে আপনি অনুসরণ করে সফলতা তথা জান্নাত পেয়ে যাবেন। সাহাবীদের মধ্যে হযরত আবু যর গিফারী রদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু যেমন নিভৃত এবাদতে নিমগ্ন বুজুর্গ ছিলেন। বিপরীতে খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর মতো সাহসী বীর সেনানীও ছিলেন। আপনি যেকোনো একজনকে অনুসরণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত অর্জন করতে পারবেন।
আপনি যদি সাহাবায়ে কেরামের জীবনী অধ্যায়ন করে থাকেন তাহলে সেখানে অবশ্যই পেয়ে থাকবেন, সাহাবীদের সময় সকল সাহাবী কুরআনে কারীমের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। কিন্তু ফিক্বহের ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ কয়েকজন সাহাবীর অনুকরণ করে চলতেন। সাধারণ সাহাবীরা চার খলিফা (আবু বকর আল-সিদ্দিক, ওমর বিন আল-খাত্তাব, ওসমান ইবনে আফফান, আলী বিন আবি তালিব), ইবনে মাসউদ, যায়েদ বিন সাবিত, আবু মুসা আল-আশারী, মুয়ায বিন জাবাল, উবাই ইবনে কাআব, আবুদ্দারদা, এবং আয়েশা বিনতে আবী-বাক-আল-সিদ্দিক, ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ বিন উমর, আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর বিন আওয়াম, ও আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আল আস, ইনাদের অনুসরণ করে চলতেন। সাধারণত মাসআলা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে যিনি যাকে অনুসরণ করতেন, ‍অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাকেই অনুসরণ করে চলতেন। অন্য ফক্বীহ সাহাবীর কাছ থেকে মাসআলা নিতেন না। এ ধরনের কয়েকটি ঘটনাও প্রসিদ্ধ রয়েছে।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, আল্লাহ এক। কুরআন এক। অথচ কুরআনুল কারীম সাতটি হরফে নাযিল হয়েছে।

এক আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন নবীর উপরে একটি কুরআন নাজিল হলো। অথচ কুরআন সাত ভাবে নাযিল হলো। কিন্তু কেন?
এই প্রশ্নের যে উত্তর, ইসলামের মধ্যে চারটি মাযহাবের বিষয়ে একই উত্তর।

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدٍ الْقَارِيِّ، أَنَّهُ قَالَ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ يَقُولُ سَمِعْتُ هِشَامَ بْنَ حَكِيمِ بْنِ حِزَامٍ، يَقْرَأُ سُورَةَ الْفُرْقَانِ عَلَى غَيْرِ مَا أَقْرَؤُهَا، وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَقْرَأَنِيهَا، وَكِدْتُ أَنْ أَعْجَلَ عَلَيْهِ، ثُمَّ أَمْهَلْتُهُ حَتَّى انْصَرَفَ، ثُمَّ لَبَّبْتُهُ بِرِدَائِهِ فَجِئْتُ بِهِ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ إِنِّي سَمِعْتُ هَذَا يَقْرَأُ عَلَى غَيْرِ مَا أَقْرَأْتَنِيهَا، فَقَالَ لِي ‏"‏ أَرْسِلْهُ ‏"‏‏.‏ ثُمَّ قَالَ لَهُ ‏"‏ اقْرَأْ ‏"‏‏.‏ فَقَرَأَ‏.‏ قَالَ ‏"‏ هَكَذَا أُنْزِلَتْ ‏"‏‏.‏ ثُمَّ قَالَ لِي ‏"‏ اقْرَأْ ‏"‏‏.‏ فَقَرَأْتُ فَقَالَ ‏"‏ هَكَذَا أُنْزِلَتْ‏.‏ إِنَّ الْقُرْآنَ أُنْزِلَ عَلَى سَبْعَةِ أَحْرُفٍ فَاقْرَءُوا مِنْهُ مَا تَيَسَّرَ ‏"‏‏.‏

‘উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমি হিশাম ইবনু হাকীম ইবনু হিযামকে সূরা ফুরকান আমি যেভাবে পড়ি তা হতে ভিন্ন পড়তে শুনলাম। আর যেভাবে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এ সূরা পড়িয়েছেন। আমি তাড়াতাড়ি তাকে বাধা দিতে চাচ্ছিলাম। কিন্তূ তার সালাত শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। এরপর তার গলায় চাদর পেঁচিয়ে তাকে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে নিয়ে এলাম এবং বললাম, আপনি আমাকে যা পড়তে শিখিয়েছেন, আমি তাকে তা হতে ভিন্ন পড়তে শুনেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন তাকে ছেড়ে দিতে। তারপর তাকে পড়তে বললেন, সে পড়ল। তিনি [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন, এরূপ নাযিল হয়েছে। এরপর আমাকে পড়তে বললেন, আমিও তখন পড়লাম। আর তিনি [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন, এরূপই নাযিল হয়েছে। কুরআন সাত হরফে নাযিল হয়েছে। তাই যেরূপ সহজ হয় তোমরা সেরূপেই তা পড়।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৪১৯

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ, মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৮৫৭৪৫

ইল্লাল্লাহ জিকির করার বিধান


২০ জানুয়ারী, ২০২৫

কালিয়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৮৭৩৫১

আল্লাহ কেন অমুসলিমদেরকে এমন অনেক বিষয় দান করেন যা অনেক সময় মুসলিমরা পায়না?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বগুড়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৯০৫১৯

মেসেঞ্জারে বিবাহ করলে‌ কি তা হয়


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Gazirchat

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৭৭৪৮৭

নখ কাটার সুন্নত


৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

রংপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy