আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

পাপমুক্ত জীবন গড়তে করণীয়

প্রশ্নঃ ৩৮৪৪৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি চাই একেবারে ভালো হয়ে যেতে

১৪ আগস্ট, ২০২৩
চট্টগ্রাম

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


আল্লাহ আপনার ইচ্ছাকে কবুল করুন।
সত্যিই আপনার এরকম নিয়ত থাকে। তাহলে আপনি নিজেকে কোনো ভালো আলেমের সাহচর্য গ্রহণ করুন। ইনশআল্লাহ আপনি সঠিক পথ পাবেন।

তবে এখানে ছোট্ট করে পাপমুক্ত জীবন গড়তে করণীয় কী এ বিষয়ে কয়েকটি পরামর্শ দিচ্ছি।


মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং আমাদের হুকুম করেছেন আমরা যেন তাঁর অনুগত হয়ে চলি। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় আমরা নিজেকে নানা অপরাধে জরিয়ে ফেলি। এর কারণে এপারে-ওপারে সবখানেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। এক পাপ অন্য পাপকে টেনে নিয়ে আসে।
এর মাঝে কিছু পাপ এমন আছে, যা থেকে বিরত থাকলে বাকি অন্য সব পাপ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।

গিবত পরিহার করা
আজকাল আমাদের ছোট-বড় সব বৈঠক গিবতমুক্ত নয়। এটি মহামারি আকার ধারণ করেছে।
কেউ যদি শুধু এই নিয়ত করে যে আমি গিবত থেকে বেঁচে থাকব, তাহলে তার জন্য অনেক পাপাচার থেকে বেঁচে থাকা সহজ। গিবত থেকে বেঁচে থাকার সহজ উপায় হচ্ছে, অহেতুক কারো আলোচনা না করা, অপ্রয়োজনীয় কারো কথা না শোনা—ভালোটাও শুনব না, মন্দটাও শুনব না। কারণ অন্যের ভালো আলোচনা অনেক সময় ধীরে ধীরে তার মন্দ আলোচনার দিকে নিয়ে যায়। তাই নিজে নিজের কাজে ব্যস্ত থাকব।
আমি যখন নিজের কাজেই এত ব্যস্ত থাকব, তখন অন্যকে নিয়ে স্মরণ করার সুযোগ থাকবে না।

অন্যায় থেকে বেঁচে থাকা
কারো প্রতি কখনো জুলুম করব না—এ কথায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া। কারো সম্পদ আত্মসাৎ করব না। অন্যায়ভাবে কাউকে আঘাত করব না। কথা দ্বারা অন্যকে কষ্ট দেব না।
এ ব্যাপারে যদি নিজেকে অভ্যস্ত করে নিতে পারি, তাহলে আমাকে আল্লাহ তাআলা অনেক অপরাধ থেকে হেফাজত করবেন।

নিজেকে বড় মনে করব না
আমাদের একটি বড় রোগ হচ্ছে, নিজেকে বড় মনে করা আর অন্যকে ছোট মনে করা। এ থেকে বেঁচে থাকার সহজ উপায় হচ্ছে, মনে মনে চিন্তা করা, আমি যেসব নিয়ে অহংকার করছি, আত্মগরিমায় ভুগছি, এগুলো একমাত্র আল্লাহর দান। আমার নিজস্ব কোনো ক্ষমতা দিয়ে আমি এগুলো অর্জন করতে পারিনি। সুতরাং যে দয়াময় আল্লাহ আমাকে এগুলো দিয়েছেন, তিনি তা মুহূর্তেই আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারেন। তাই এ নিয়ে অহংকার করার কিছুই নেই। সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও চিন্তা করা যে আল্লাহ তাআলা আমাকে কী থেকে সৃষ্টি করেছেন! এক ফোঁটা নাপাক পানি থেকে আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি অহংকার করছি!

রাগ নিয়ন্ত্রণ করা
অনিয়ন্ত্রিত রাগ মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এই রাগের কারণে আমাদের জীবনে অনেক সময় অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়, যার জন্য সারা জীবন আফসোস করতে হয়। তাই কেউ যদি নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারে, তাহলে তার জন্য অনেক পাপের দুয়ার বন্ধ হয়ে যাবে। এর জন্য সহজ পদ্ধতি হচ্ছে, যেসব কারণে আপনি রেগে যান সেসব বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং এ কথা চিন্তা করা, রাগ হচ্ছে আগুনের মতো। এই আগুনের স্ফুলিঙ্গ রাগান্বিত ব্যক্তিকে জ্বালিয়ে দেয়। অপরের ক্ষতির চেয়ে নিজের ক্ষতিই বেশি হয়।

সচ্চরিত্র থাকা
যাদের সঙ্গে বিবাহ বৈধ—এমন নারীদের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক না রাখা। পরনারীর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা, তার সঙ্গে খোশগল্প করা কিংবা একাকী তার সঙ্গে থাকা—এসব থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। কারণ এটা এমন এক পাপ, যার কারণে তার সব পাপের দরজা খুলে যাবে এবং এর পরিণামে তার জীবনে বড় বড় মুসিবত আসবে।

হারাম অথবা সন্দেহপূর্ণ খাবার থেকে বেঁচে থাকা
হারাম বা সন্দেহপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ সব পাপের মূল। শরীরের রক্ত-মাংস সব কিছু যখন হারাম জিনিস দ্বারা লালিত হচ্ছে, তাহলে এর প্রভাব তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই পড়বে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধূলিধূসরিত রুক্ষ কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দোয়া তিনি কী করে কবুল করতে পারেন? (মুসলিম, হাদিস : ২২৩৬)

والله اعلم بالصواب

মুফতি জাওয়াদ তাহের মুহাদ্দিস, জামিয়া বাবুস সালাম, বিমানবন্দর ঢাকা
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন