আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ৩৭১৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, السلام عليكمসম্মানিত মুফতি সাহেব , তাজবিহ দিয়ে যিকির করা কি বিদায়াত এ বিষয়ে জানালে উপকৃত হতাম,

১৯ নভেম্বর, ২০২০

ভুয়াপুর

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


"তাসবিহ/তসবি-দানা" দিয়ে জিকির করা হয় না। মূলত জিকিরের সংখ্যা মনে রাখার জন্য তাসবিহ ব্যবহার করা হয়।
সুতরাং জিকির বা তাসবিহ পাঠে তাসবিহ-দানা ব্যবহার করা জায়েয ৷ ফকিহগণ নামাজের বাইরে হাত, কংকর ও তাসবিহ-মালা দ্বারা তাসবিহ পাঠের অনুমতি দিয়েছেন। পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী কোনো ফকিহ একে নাজায়েয বা মাকরূহ বলেন নি। কেননা এটি কেবল জিকিরের উসিলা বা স্মরণ করিয়ে দেয়া ও গগনার মাধ্যম ৷

হাদীস শরীফে এসেছে, উম্মুল মুমিনীন সাফিয়্যা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ وَبَيْنَ يَدَيَّ أَرْبَعَةُ آلَافِ نَوَاةٍ أُسَبِّحُ بِهَا ، فَقَالَ : لَقَدْ سَبَّحْتِ بِهَذِهِ ، أَلَا أُعَلِّمُكِ بِأَكْثَرَ مِمَّا سَبَّحْتِ بِهِ ، فَقُلْتُ : بَلَى عَلِّمْنِي . فَقَالَ : قُولِي : سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ خَلْقِهِ

একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার কাছে এলেন। আমার কাছে তখন চার হাজার খেজুর-বীচি ছিল। এগুলো দ্বারা আমি তাসবিহ পাঠ করছিলাম। তিনি বললেন, তুমি তো এগুলোর মাধ্যমে তাসবিহ পাঠ করছ। যে পরিমাণ তাসবিহ তুমি পাঠ করেছ, তদপেক্ষা বেশী পরিমাণের উপায় কি আমি তোমাকে শিখিয়ে দিব? আমি বললাম, অবশ্যই আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, তুমি বলবে, (سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ خَلْقِهِ) – সৃষ্টির পরিমাণ সংখ্যকবার সুবহানাল্লাহ। জামে তিরমিযি, হাদীস নং: ৩৫৫৪ ৷

অন্য বর্ননায় এসেছে, সা’দ ইবন আবূ ওয়ক্কাস রাযি. থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর সঙ্গে এক মহিলার কাছে গেলেন। উক্ত মহিলার সামনে তখন কিছু খেজুর-বীচি ছিল। এগুলো দিয়ে তিনি তাসবিহ পাঠ করছিলেন। নবীজী ﷺ তাকে বললেন, এর চেয়ে সহজ ও উত্তম উপায় সম্পর্কে কি তোমাকে অবহিত করব? তা হল,

سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي السَّمَاءِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي الأَرْضِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا بَيْنَ ذَلِكَ وَسُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا هُوَ خَالِقٌ وَاللَّهُ أَكْبَرُ مِثْلَ ذَلِكَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ مِثْلَ ذَلِكَ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ مِثْلَ ذَلِكَ

অর্থাৎ, আল্লাহ মহাপবিত্র আকাশে তার সৃষ্টি জীবের সমসংখ্যক, আল্লাহ মহাপবিত্র দুনিয়াতে তার সৃষ্ট জীবের সমসংখ্যক, আল্লাহ তা’আলা মহাপবিত্র এতদুভয়ের মধ্যকার সৃষ্টির সমসংখ্যক, আল্লাহ তা’আলা মহাপবিত্র তিনি যে সকল প্রাণী সৃষ্টি করবেন তার সমসংখ্যক, অনুরূপ পরিমাণ আল্লাহ তা’আলা মহান, অনুরূপ পরিমাণ আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা, অনুরূপ সংখ্যকবার আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কল্যাণ করার বা ক্ষতিসাধনের আর কোন শক্তি নেই। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং: ১৩১৭ ৷

রাসূলুল্লাহ ﷺ উক্ত মহিলাকে নিষেধ করেন নি। তিনি কেবল এর চেয়ে উত্তম ও সহজটা বলে দিয়েছেন। যদি এটি নিষিদ্ধ হত তাহলে তিনি বলে দিতেন। সুতরাং এই হাদিস ও অনুরূপ আরো হাদিস একথার দলিল যে, জিকিরের গণনার জন্য প্রচলিত তাসবিহ-দানা ব্যবহারে কোনো অসুবিধা নেই। আর বর্ণিত আছে যে, আবু হুরায়রা রাযি.ও এরূপ করতেন।

আল বাহরুর রায়িক ২/৩১; আল মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা ১১/২৮৩; ফয়যুল কাদির ৪/৩৫৫; মাজমুউল ফাতাওয়া ২২/৫০৬ ৷

তবে জিকির গণনায় তাসবিহ-দানা ব্যবহার করার চাইতে উত্তম হল, হাতের আঙ্গুল বা আঙ্গুলের কর ব্যবহার করা। কেননা তাসবিহমালা হাতে থাকলে রিয়া আসতে পারে। তাছাড়া হাদিস শরিফে এসেছে, ইয়ুসাইরাহ রাযি. বলেন,

أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ أَمَرَهُنَّ أَنْ يُرَاعِينَ بِالتَّكْبِيرِ وَالتَّقْدِيسِ وَالتَّهْلِيلِ وَأَنْ يَعْقِدْنَ بِالْأَنَامِلِ فَإِنَّهُنَّ مَسْئُولَاتٌ مُسْتَنْطَقَاتٌ

রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা তাকবির, তাকদিস এবং তাহলিল এগুলো খুব ভালভাবে স্মরণে রাখবে এবং এগুলোকে আঙ্গুলে গুণে রাখবে। কেননা আঙ্গুলগুলোকে জিজ্ঞাসা করা হবে এবং এগুলোও সেদিন অর্থাৎ কেয়ামতের দিন কথা বলবে। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস: ২৫৮৪১; আবু দাউদ, হাদীস: ১৫০১৷

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ, মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩৯৩৮০

ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসী ও অন্যান্য দোয়া পড়ার নিয়ম


২৬ আগস্ট, ২০২৩

সাতক্ষীরা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

২৭৯৪৬

অজু ছাড়া দরূদ পড়া যাবে কি?


১২ জানুয়ারী, ২০২৩

ঢাকা ১৩৬১

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৩৯৮৫৪

তিন কুলের আমল


৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

শাহজীবাজার

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

৪১২০৮

সকাল সন্ধ্যার যিকরগুলো কোন সময় পড়তে হবে?


২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ঢাকা ১২১৫

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy