আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

কুরআন শোনা এবং পড়ার সওয়াব কি একই?

প্রশ্নঃ ৩২৫৯৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন গুলো হলো - ১. খতম তারাবি পড়লে কি কোরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়? ২. কোরআন তিলাওয়াত শোনা এবং পড়ার সওয়াব কি একই? ৩. সম্পূর্ণ কুরআনের তেলাওয়াত শোনার মাধ্যমে কি কোরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যাবে?,

২ মে, ২০২৩

চট্টগ্রাম

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


কুরআন তেলাওয়াত শোনার চেয়ে নিজে কুরআন তেলাওয়াত করার সওয়াব বেশি, যদিও কুরআন তিলাওয়াত করা এবং কুরআন শোনা উভয়ই মুস্তাহাব আমল এবং অনেক সওয়াবের কাজ, তবে কুরআন তিলাওয়াত কুরআন শোনার চেয়ে উত্তম কাজ। হাদিস শরীফে আছে হজরত আবু মুসা আশআরীর রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন,

مَثَلُ الَّذِى يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَالأُتْرُجَّةِ طَعْمُهَا طَيِّبٌ وَرِيحُهَا طَيِّبٌ وَالَّذِى لاَ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَالتَّمْرَةِ طَعْمُهَا طَيِّبٌ وَلاَ رِيحَ لَهَا ‘‘
যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে তার উদাহরণ একটি কমলালেবুর মতো, যার স্বাদ এবং সুগন্ধ রয়েছে এবং যে ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত করে না তার উদাহরণ একটি খেজুরের মতো, যার স্বাদ ভাল। কিন্তু কোন গন্ধ নেই (সহীহ বুখারীঃ ৫০২০, সহীহ মুসলিমঃ ৭৯৭।)

(২) আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

" أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ إِذَا رَجَعَ إِلَى أَهْلِهِ أَنْ يَجِدَ فِيهِ ثَلاَثَ خَلِفَاتٍ عِظَامٍ سِمَانٍ " . قُلْنَا نَعَمْ . قَالَ " فَثَلاَثُ آيَاتٍ يَقْرَأُ بِهِنَّ أَحَدُكُمْ فِي صَلاَتِهِ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلاَثِ خَلِفَاتٍ عِظَامٍ سِمَانٍ " .
তোমাদের কেউ কি এ কথা পছন্দ করে যে, যখন সে তার বাড়ীতে ফিরে যায় তখন সেখানে সে তিনটি গর্ভবর্তী তাজা উট পেয়ে যাবে? আমরা বললাম জ্বী, হ্যাঁ! তিনি বললেন তা হলে তিনটি আয়াত যা তোমাদের কেউ তার নামাযে পাঠ করে তা তার জন্য তিনটি গর্ভবর্তী মোটা তাজা উটের চেয়ে উত্তম।
সহীহ মুসলিম , হাদিস নং: ১৭৪৫ আন্তর্জাতিক নং: ৮০২
হাদিসের লিংকঃ HTTPS://MUSLIMBANGLA.COM/HADITH/8794

(৩) আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ
" مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لاَ أَقُولُ الم حَرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلاَمٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ
যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করবে তার নেকী হবে। আর নেকী হয় দশ গুণ হিসাবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম মিলে একটি হয়ফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, এবং মীম আরেকটি হরফ।
জামে' তিরমিযী, হাদিস নং: ২৯১০ আন্তর্জাতিক নং: ২৯১০
হাদিসের লিংকঃ HTTPS://MUSLIMBANGLA.COM/HADITH/32555

এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে, কুরআন শোনার চেয়ে কুরআন তিলাওয়াতের সওয়াব বেশি, কারণ এগুলো পড়ার সাথে সম্পর্কিত।

তেলাওয়াত শোনার সাওয়াব:
অবশ্যই তেলাওয়াত শোনাও একটি মুস্তাহাব কাজ এবং নিম্নোক্ত হাদীসটি এর পক্ষে প্রমাণ বহন করে।ইবরাহিম নাখায়ী ইবনু মাসউদ রা. থেকে বর্ণনা করে বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. তাঁকে বললেন,

اقْرَأْ عَلَيَّ ، قَالَ : أَقْرَأُ عَلَيْكَ ، وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ ؟ قَالَ : إِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَسْمَعَهُ مِنْ غَيْرِي ، قَالَ : فَقَرَأَ عَلَيْهِ مِنْ أَوَّلِ سُورَةِ النِّسَاءِ إِلَى قَوْلِهِ : { فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلَاءِ شَهِيدًا } ، فَبَكَى .

আমাকে কুরআন তেলাওয়াত করে শোনাও! তিনি আরজ করলেন, আমি আপনাকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাবো! অথচ কুরআন আপনার প্রতিই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ আমি অন্যের থেকে তেলাওয়াত শোনতে পছন্দ করি, অতঃপর তিনি প্রথম থেকেই সূরা নিসা পাঠ করতে লাগলেন যখন তিনি
فَكَيفَ إِذا جِئنا مِن كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهيدٍ وَجِئنا بِكَ عَلىٰ هـٰؤُلاءِ شَهيدًا ﴿٤١﴾ سورة النساء
আয়াতে পৌঁছলেন তখন কেঁদে ফেললেন।

এই হাদিস অন্যের থেকে কুরআন তেলাওয়াত শোনার ফাজায়েল বহন করে ।

মোট কথা, উভয়টিই সওয়াবের কাজ। তবে তেলাওয়াতের সাওয়াব শ্রবণের সাওয়াব থেকে অধিক। আর ইমাম সাহেব নামাজে পড়তে থাকতে তখন মুসল্লীগণ তেলাওয়াত করবে না। তখন মুসল্লীর দায়িত্ব হলো, চুপ থেকে মনোযোগের সাথে তেলাওয়াত শ্রবণ করা। নামাজে/তারাবীহতে তেলাওয়াত করলে এবং শ্রবণ করলে উভয়েরই অধিক সওয়াব প্রাপ্তির আশা করা যায়।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর, কদমতলী, ঢাকা।

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৬৬৬২৪

প্রথম রাকাতে সূরা নাস পড়ে ফেললে করণীয়


৭ জুলাই, ২০২৪

লৌহজং

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম

৯৩২৯৫

ফরয নামাযের শেষ দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলালে সাহু সাজদা দিতে হবে?


৫ মার্চ, ২০২৫

মোল্লাপুর ইউনিয়ন

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৫০৬৬৪

আসরের পর কাজা নামাজ পড়ার বিধান


৩ জানুয়ারী, ২০২৪

কালিয়াকৈর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯১৪৮৫

এক নামাজে দুইবার সেজদায়ে সাহু দিলে নামাজ হবে?


২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy