স্বামী নামাজ পড়ে না, মারধর করে; স্ত্রীর করণীয় কী?
প্রশ্নঃ ৩২৩২৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার স্বামী আগে নামাজ রোজার পাবন্দ ছিলো। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমরা দুজনে। তাকে দেখতাম নামাজ পড়তে চাইতো না।কিন্তু একটু বুঝালে পড়ে নিতো।আমি ভেবেছিলাম রমজান মাস থেকে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে গেছে। সে এখন কোনো নামাজ পড়ে না।রোজা রাখে।আমি কিছু বললে আমাকে গালাগাল করে। ছোট ছোট বিষয় নিয়ে মানুষিক কষ্ট দেয়। মারধরও করে।আগে নজরের হেফাজত করে চলতো এখন খারাপ ভিডিও দেখে আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। আমরা নিজেরা বিয়ে করেছিলাম। দুইজনের পরিবারের সবাই বিয়ের ব্যাপারে জানে।কিন্ত একসাথে থাকতে দেয় না।দুই পরিবারের মধ্যে দা কুমড়া সম্পর্ক। আমি আমার স্বামীকে অনেক ভালোবাসি। তার এমন পরিবর্তন আমি মানতে পারছিনা।সে নিজে আমাকে দীনের পথে এনেছে। এখন নিজে ছেড়ে দিচ্ছে সব।তাকে দীনদার লোকজনের সহবতে আনতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি।কি করবো বুঝতে পারছি না।আমি যতটা সম্ভব তার হুকুম মেনে চলি। তাও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।এসবের কারণে আমার নিজের আমলে কমতি এসেছে।আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে একটু সাহায্য করুন।,
৪ এপ্রিল, ২০২৩
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য যিনি আপনার মনে আল্লাহর দীনের ব্যপারে আগ্রহ সৃষ্টি করে দিয়েছেন, আপনাকে সামর্থ্য দিয়েছেন তাঁর আদেশ নিষেধ পালন করার এবং আপনার অন্তরে সৃষ্টি করেছেন স্বামীর প্রতি অফুরন্ত ভালবাসা।
প্রিয় বোন, মূলতঃ কোন ঘরই সমস্যা মুক্ত নয়। কিছু ঘরের সমস্যা মামুলি। আর কিছু ঘরের সমস্যা জটিল। আর আপনার সমস্যা বড় হলেও জটিল নয়। আমরা এ ব্যাপারে আপনাকে সাধারণ কিছু পরামর্শ দিব, যেগুলো আপনার জন্য ও অন্য কারো জন্য উপকারী হবে।
এক:
আপনার কথা থেকে মনে হচ্ছে, আপনার স্বামীর ক্ষেত্রে অভিমানের চাইতে ভালবাসাপূর্ণ আচরণই কার্যকর হবে বেশি। তাছাড়া অতিরিক্ত অভিমান অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়। তাই ভালবাসাপূর্ণ আচরণ, আদর-সোহাগ দিয়ে প্রথমে তার পরিপূর্ণ আস্থা অর্জন করুন। আচার-আচরণে মার্জিত থাকুন। তার সমালোচনা না করে তার চেহারা, বা বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদির প্রশংসা করুন। তার অন্তরে এই আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলুন যে, স্বামী হিসেবে তিনি শ্রেষ্ঠ। এটা আপনার প্রতি তার ভালবাসাকে আর তাঁতিয়ে তুলবে এবং আপনি হয়ে ওঠবেন তার কাছে ‘শ্রেষ্ঠ স্ত্রী’।
দুই:
আপনার উক্ত রোমান্টিকতার ভেতর দিয়েই সমানতালে আপনি তাকে নামায আদায়ের দাওয়াত দিতে থাকুন। খেয়াল রাখতে হবে, আপনার দাওয়াত যেন এতটা দীর্ঘ না হয় যে, এতে আপনাদের রোমান্টিকতায় ছেদ পড়ে কিংবা আপনার স্বামীর কাছে তা আপনার ‘ঘ্যান ঘ্যান আচরণ’ মনে হয়। আর দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে আদর্শ পদ্ধতি হবে সংক্ষেপে নিম্নরূপ:
১। তাকে স্মরণ করিয়ে দিন যে, নামায একটি ফরয ইবাদত এবং ঈমানের পর নামায ইসলামের সবচেয়ে মহান রুকন।
২। তাকে নামাযের কিছু ফযিলত অবহিত করুন; যেমন- আল্লাহ্ বান্দার উপর যা কিছু ফরয করেছেন তার মধ্যে নামায সর্বোত্তম। বান্দার কাছ থেকে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। একটিমাত্র সেজদার মাধ্যমে বান্দার এক ধাপ মর্যাদা সমুন্নত হয় এবং একটি পাপ মোচন হয়…ইত্যাদি নামাযের ফযিলতের ব্যাপারে আরও যা কিছু বর্ণিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আশা করি, তার অন্তর খুলে যাবে এবং নামায তার চক্ষুশীতলে পরিণত হবে।
৩। মাঝে মাঝে তাকে আল্লাহ্র সাক্ষাত, মৃত্যু ও কবরের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। নামায বর্জনকারীর যে, খারাপ মৃত্যু হয় ও কবরে আযাব হয় তাকে সেটা স্মরণ করিয়ে দিন।
৪। তাকে মাঝে মাঝে স্মরণ করিয়ে দিন, নির্ধারিত সময় এর চেয়ে দেরীতে নামায আদায় করা কবিরা গুনাহ্। আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ
সেসব নামাযীদের জন্য ধ্বংস যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর। (সূরা মাউন, আয়াত ৪,৫)
৫। তাকে নামায সংক্রান্ত, নামায বর্জনকারী ও অবহেলাকারীর শাস্তি সংক্রান্ত কিছু পুস্তিকা উপহার দিন।
৬। উপর্যুপরি সে নামায ত্যাগ করতে থাকলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার মৃদু হুমকি দিতে পারেন। আর এই হুমকিটা দিবেন আপনাদের রোমান্টিকতার মুহূর্তগুলোতে। লক্ষ্য রাখতে হবে, এই অভিমান যেন খুব বেশি জোরালো না হয়।
তিন:
প্রিয় বোন, আপনার উক্ত মেহনত ও দরদ আরও বেশি কার্যকরী ও সহজ হবে, যদি তাকে কোন হক্কানী আলেমের সঙ্গে সম্পর্ক করিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি প্রথমে তাকে কোন হক্কানী আলেমের বয়ান শোনার জন্য আগ্রহী করে তুলতে পারেন। ওলামাদের মজলিসে আসা যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে পারেন। অথবা তাকে দাওয়াত-তাবলিগে কিছু সময় দেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)
প্রিয় বোন, উক্ত মেহনত আপনাকে চালিয়ে যেতে হবে প্রতিনিয়ত। পাশাপাশি তার হেদায়তের জন্যও দোয়া করতে হবে নিয়মিত। কোন অবস্থায় আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। আশাহত হয়ে চেষ্টা কিংবা দোয়া বর্জন করবেন না। ইনশাআল্লাহ একদিন না একদিন সাফল্য পাবেন।
وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সূরা ত্বলাক : ৩)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ
ভাগ্য পরিবর্তন হয় না দোয়া ব্যতীত। (তিরমিযী ২১৩৯)
আপনি যেহেতু তার সবচেয়ে কাছের কল্যাণকামী, সেহেতু তার মাঝে বিদ্যমান সমূহ ফেতনা থেকে উত্তরণের জন্য তার জন্য আল্লাহর কাছে অধিকহারে কোরআনে বর্ণিত এ দোয়াটিও করতে পারেন; ইনশা-আল্লাহ আল্লাহ আপনার স্বামীকে আপনার চোখের শীতলতা বানিয়ে দিবেন।
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের জীবনসঙ্গীর পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ দান করুন। (সূরা ফুরকান ৭৪)
প্রিয় বোন, অনেক সময় দেখা যায়, দাম্পত্যজীবনের সমস্যাগুলো খুব দ্রুত সমাধানে আসে না। বরং ছেলে-মেয়ে বড় হতে হতে সমস্যা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে। সুতরাং আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। বেশি হারে ইস্তেগফার পড়ুন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِب
যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুঃশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। (আবূদাউদ ১৫২০)
পরিশেষে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আপনাদেরকে সুখময় দাম্পত্যজীবন দান করেন।
والله اعلم بالصواب
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
২৭১০৬
তিন তালাকের বিধান
২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
EAAA৪৯৫৭، ৪৯৫৭ عبدالرحمن الاشعري، ৮৬৪৮، حي الصدفة، الخبر ৩৪২১৫، السعودية (SA)

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
২৮৯০৭
স্ত্রীর নামের সঙ্গে স্বামীর নাম-পদবি যোগ করা যাবে কি?
৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
আশুগঞ্জ

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে