বন্ধুত্বের সম্পর্ক জুড়ে দেওয়ার বিধান
প্রশ্নঃ ৩০০৫২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুয়ালাইকুম, আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যে আমরা ৪ জন বান্ধবী আমাদের প্রায় ৫-৬ বছরের সম্পর্ক এতদিনের সম্পর্কের মধ্যে আমার বাকি তিন ফ্রেন্ডদের মধ্যে এক ফ্রেন্ড এর সাথে ওদের দুইজনের কিছু সমস্যার জন্য মনোমালিন্য হয়েছে ওরা অনেকদিন থেকে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে না আগের মতো সম্পর্কটা ওদের তিনজনের মধ্যে এখন আর নেই । এখন ওরা যে সম্পর্কটা রাখছে না বা রাখতে চাচ্ছে না এতে ওদের গুনাহ হবে। যে ফ্রেন্ড এর সাথে মনোমালিন্য হয়েছে সে তেমন দ্বীনদার না সে ফ্যাশনএ্যাবল এখন আমি চাচ্ছি তাদের সম্পর্কটা ঠিক করে দিতে এখন ও যে দ্বীনদার না ওর সাথে সম্পর্কটা ঠিক করে দেওয়া কি আমার ঠিক হবে নাকি না দেওয়াই ভালো হবে। আর আমি কি ওর সাথে মিশবো নাকি আমিও সম্পর্ক ছেড়ে দিবো।সম্মানিত শায়েখ,যদি একটু বুঝায়ে বলে দিতেন।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলামের দৃষ্টিতে বন্ধুত্বের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনেরও নির্দেশ দিয়েছে। বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ নিয়ে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মানুষ তার বন্ধু স্বভাবী হয়, তাই তাকে লক্ষ্য করা উচিত, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (তিরমিজি)
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
وَاصۡبِرۡ نَفۡسَکَ مَعَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ رَبَّہُمۡ بِالۡغَدٰوۃِ وَالۡعَشِیِّ یُرِیۡدُوۡنَ وَجۡہَہٗ وَلَا تَعۡدُ عَیۡنٰکَ عَنۡہُمۡ ۚ تُرِیۡدُ زِیۡنَۃَ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَلَا تُطِعۡ مَنۡ اَغۡفَلۡنَا قَلۡبَہٗ عَنۡ ذِکۡرِنَا وَاتَّبَعَ ہَوٰىہُ وَکَانَ اَمۡرُہٗ فُرُطًا
আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্য কলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না। (সুরা কাহাফ: আয়াত 28)
ইসলামে বন্ধুত্বের সম্পর্কের বুনিয়াদ হলো, তাকওয়া। যারা আল্লাহ তায়ালার জন্য পরস্পরকে ভালোবাসে তারা হাশরের মাঠে আল্লাহ তায়ালার (আরশের) ছায়ায় থাকবে।
এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সা.মুমিন ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, ‘মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে সঙ্গী বা বন্ধু হিসেবে নির্বাচন করবে না। (তিরমিজি)
আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক যেহেতু আত্মীয়তার সম্পর্ক নয় তাই সেটা স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। স্বার্থের সুবাদে হোক আর জীবিকার তাগিতে হোক এক সময় সেই সম্পর্কে ইতি টানতেই হয়ে। তবে নেককার বন্ধুদের মাঝে সম্পর্ক জুড়ে দেওয়া অবশ্যই ভালো এবং সাওয়াবের কাজ। আল্লাহ তায়ালা সুরাতুল হুজরাতের ১০ নং আয়াতে ইরশাদ করেন,
اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ اِخۡوَۃٌ فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَ اَخَوَیۡکُمۡ وَاتَّقُوا اللّٰہَ لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ
প্রকৃতপক্ষে সমস্ত মুসলিম ভাই-ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের দু’ ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও, আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত করা হয়।
যাদের মাঝে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে যদি তাদের মাঝে সম্পর্ক জুড়ে দিলে তাদের দ্বীনি ফায়দা হয় তাহলে জুড়ে দেওয়া ভালো। ইনশাআল্লাহ আপনি সাওয়াবের অধিকারী হবেন। কিন্তু যদি তাতে তাদের উভয়ের বা কোনে একজনেরও দ্বীনি ফায়দা না হয় তাহলে সেখানে অযথা সময় নষ্ট করা উচিত হবে না।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন