আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রচলিত একটি উক্তির তাহকীক

প্রশ্নঃ ২৯৭১৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে! আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই তার থেকে উত্তম কিছু দান করবেন..! ~ এটি কোন হাদিস কি হাদিস না..? যদি হদিস হয়ে থাকে তাহলে দয়া করে বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ।,

২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


মুহতারাম, কথাটি হুবহু এভাবে আসেনি। এটি বিশ্লেষণযোগ্য।

হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি কেবলমাত্র আল্লাহর ভয়ে গুনাহ থেকে বিরত থাকে আল্লাহ তাআলা তার জন্য নেকী লিখে দেন।
অন্যত্র আছে, যে ব্যক্তি কেবলমাত্র আল্লাহর ভয়ে গুনাহ থেকে বিরত থাকে আল্লাহ তাআলা তার ঈমান বৃদ্ধি করে দেন, অন্তরে যার মজা অনুভূত হতে থাকে।

مسند أحمد ط الرسالة (36/ 610)
22278 - حدثنا إبراهيم بن إسحاق، حدثنا ابن مبارك، وعتاب قال حدثنا عبد الله هو ابن المبارك، أخبرنا يحيى بن أيوب، عن عبيد الله بن زحر، عن علي بن يزيد، عن القاسم، عن أبي أمامة، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: " ما من مسلم ينظر إلى محاسن امرأة أول مرة، ثم يغض بصره إلا أحدث الله له عبادة يجد حلاوتها "

المعجم الكبير للطبراني (10/ 173)
10362 - حدثنا أحمد بن زهير التستري قال: قرأنا على محمد بن حفص بن عمر الضرير المقرئ، ثنا يحيى بن أبي بكير، ثنا هريم بن سفيان، عن عبد الرحمن بن إسحاق، عن القاسم بن عبد الرحمن، عن أبيه، عن عبد الله بن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إن النظرة سهم من سهام إبليس مسموم، من تركها مخافتي أبدلته إيمانا يجد حلاوته في قلبه»

المستدرك على الصحيحين للحاكم (4/ 349)
7875 - حدثنا أبو بكر بن إسحاق، أنبأ محمد بن غالب، ثنا إسحاق بن عبد الواحد القرشي، ثنا هشيم، عن عبد الرحمن بن إسحاق، عن محارب بن دثار، عن صلة بن زفر، عن حذيفة، رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «النظرة سهم من سهام إبليس مسمومة فمن تركها من خوف الله أثابه جل وعز إيمانا يجد حلاوته في قلبه» هذا حديث صحيح الإسناد ولم يخرجاه "

এসব হাদীসের আলোকে এখন উপরোক্ত কথার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, হাসানা তথা ভালো প্রতিদান অবশ্যই যাবতীয় অপছন্দনীয় ও গুনাহ থেকে উত্তম। এবং যে ব্যক্তি কেবলমাত্র আল্লাহর ভয়ে গুনাহ থেকে বিরত থাকে আল্লাহ তাআলা তার জন্য গুনাহ অপেক্ষা উত্তম তথা নেকী দান করেন এবং তার ঈমান বৃদ্ধি করে দেন, অন্তরে যার মজা অনুভূত হতে থাকে।

বুখারী শরীফে এসেছেঃ

باب مَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ أَوْ بِسَيِّئَةٍ

حَدَّثَنَا أَبُو مَعْمَرٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، حَدَّثَنَا جَعْدٌ أَبُو عُثْمَانَ، حَدَّثَنَا أَبُو رَجَاءٍ الْعُطَارِدِيُّ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيمَا يَرْوِي عَنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ قَالَ قَالَ " إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ الْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ، ثُمَّ بَيَّنَ ذَلِكَ فَمَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلَةً، فَإِنْ هُوَ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ عِنْدَهُ عَشْرَ حَسَنَاتٍ إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ إِلَى أَضْعَافٍ كَثِيرَةٍ، وَمَنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلَةً، فَإِنْ هُوَ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللَّهُ لَهُ سَيِّئَةً وَاحِدَةً ".

৬০৪৭। আবু মা’মার (রাহঃ) ... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) (হাদীসে কুদসী স্বরূপ) তার রব থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা নেকী ও বদীসমূহ চিহ্নিত করেছেন। এরপর সেগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন সুতরাং যে ব্যক্তি কোন সৎ কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করল না, আল্লাহ তা’আলা তাঁর কাছে এর জন্য পূর্ণ নেকী লিপিবদ্ধ করবেন। আর সে ইচ্ছা করল ভাল কাজের এবং তা বাস্তবেও পরিণত করল তবে আল্লাহ তা’আলা তার কাছে তার জন্য দশ গুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত এমন কি এর চেয়েও অনেক গুণ বেশি সাওয়াব লিখে দেন। আর যে ব্যক্তি কোন অসৎ কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করল না, আল্লাহ তাআলা তার কাছে তার জন্য পূর্ণ নেকী লিপিবদ্ধ করবেন। আর যদি সে ওই অসৎ কাজের ইচ্ছা করার পর বাস্তবেও তা করে ফেলে, তবে তার জন্য আল্লাহ তাঁআলা মাত্র একটা পাপ লিখে দেন।

আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ (সহীহ বুখারী)
হাদিস নং: ৬০৪৭ আন্তর্জাতিক নং: ৬৪৯১
তাহকীকঃ তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
বর্ণনাকারীঃ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)(মৃত্যুঃ ৬৮ হিজরী)
হাদিসের লিংকঃ https://muslimbangla.com/hadith/6790

হাদিসের ব্যাখ্যাঃ
এটি একটি হাদীছে কুদসী। হাদীছে কুদসী বলে এমন হাদীছকে, যা নবী সাল্লাল্লাহ 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা'আলার বরাতে বর্ণনা করেছেন। সাধারণ হাদীছ থেকে এর পার্থক্য হল, সাধারণ হাদীছ সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এভাবে বর্ণনা করেন যে, তিনি এই বলেছেন বা এই করেছেন। কিন্তু হাদীছে কুদসী বর্ণনা করতে গিয়ে সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আল্লাহ তা'আলারও উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, তিনি আল্লাহ তা'আলা থেকে এই এই বর্ণনা করেছেন। এই উভয় প্রকার হাদীছও ওহীই বটে, যেমন কুরআন মাজীদও ওহী। তবে কুরআন মাজীদের ভাব ও ভাষা উভয় আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, আর হাদীছের ভাব আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে কিন্তু ভাষা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের। কুরআনকে ওহীয়ে মাতলু এবং হাদীছকে ওহীয়ে গায়রে মাতলু বলে।

এ হাদীছে বলা হয়েছে যে, কেউ যদি কোনও নেক কাজের নিয়ত করে কিন্তু কাজটি করা না হয়, তবে কেবল নিয়তের কারণেও সেই কাজ করার ছওয়াব পাবে। এটা আল্লাহ তা'আলার মেহেরবানী যে, তিনি নেক কাজের নিয়তকেও একটি স্বতন্ত্র নেক কাজের মর্যাদা দিয়ে দেন। যেমন কেউ নিয়ত করল সে দু' রাক'আত নামায পড়বে, কিন্তু কোনও কারণে তার তা পড়া হল না। কিংবা নিয়ত করল, অমুক দীনী কাজে সে এত টাকা দান করবে, কিন্তু টাকাটা তার দান করা হল না। এ অবস্থায় তার ওই নিয়ত বৃথা যায় না। কাজটি করা হল না বলে তার নিয়ত বাতিল গণ্য হয় না; বরং আল্লাহ তা'আলা নিজ দয়ায় ওই নিয়তকেও একটি পূর্ণাঙ্গ কাজের মর্যাদা দিয়ে দেন এবং তার আমলনামায় সেই নিয়তকে একটি পূর্ণাঙ্গ নেক কাজরূপে লিখে দেন। তিনি লেখেন মানে ফিরিশতাদেরকে লেখার হুকুম করেন এবং তারা তা পালন করেন।

নেক কাজের নিয়ত করার পর বান্দা যদি তা পালন করতে সক্ষম হয়, তবে আল্লাহ তা'আলা তাকে দশ থেকে সাতশ' গুণ পর্যন্ত বরং তারও বেশি নেক কাজের মর্যাদা দিয়ে দেন। দশগুণ থেকে সাতশ' বা তারও বেশি হয় ইখলাসের তারতম্য ও আমলের সৌন্দর্যগত পার্থক্যের কারণে। অর্থাৎ যার ইখলাস যতবেশি হবে এবং আমল যতবেশি সুন্নতসম্মত ও সুচারু হবে, ছওয়াবও ততবেশি হবে। আমল একটা হওয়া সত্ত্বেও ছওয়াব বহুগুণ বেশি দেওয়াটা কেবলই আল্লাহ তা'আলার মেহেরবানী ও তাঁর দয়া।

এটাও আল্লাহ তা'আলার মেহেরবানী যে, অসৎ কাজের ক্ষেত্রে নেক কাজের মত বৃদ্ধি তিনি ঘটান না। একটা মন্দ কাজকে একটা মন্দ কাজই লেখা হয়। আবার মন্দ কাজের নিয়তকে স্বতন্ত্র কাজরূপে ধরা হয় না যে, সেজন্যও পাপ লেখা হবে। বরং উল্টো পাপের পরিবর্তে ছওয়াব লেখা হয়। অর্থাৎ যদি পাপ কাজের ইচ্ছা করার পর সেই পাপ কাজটি করা না হয়, তবে সে যে পাপ কাজটি করল না, সে তার ইচ্ছা বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকল, এজন্যে তার আমলনামায় একটি নেক কাজের ছওয়াব লিখে দেওয়া হয়। সুবহানাল্লাহ! এই মেহেরবানীরও কি কোনও সীমা আছে! এর জন্য আমাদের কতই না শোকর আদায় করা উচিত!

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. নেক কাজের নিয়তও যেহেতু ছওয়াবের কারণ, সেহেতু যখনই কোনও নেক কাজের অবকাশ আসে, অবিলম্বে তার নিয়ত করে ফেলা উচিত। এমনও হতে পারে যে, অবকাশ আসা সত্ত্বেও কোনও ওযরের কারণে কাজটি করা হল না। কিন্তু যেহেতু করার নিয়ত করা হয়েছিল, তাই সে কাজটি না করা সত্ত্বেও তার ছওয়াব থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত থাকতে হবে না; বরং নিয়তের কারণে একটা ছওয়াব অবশ্যই লেখা হবে। কিন্তু নিয়ত যদি না করা হত, তবে তো সম্পূর্ণই বঞ্চিত থাকতে হত। কাজটি করতে না পারার কারণে করার ছওয়াব তো পাওয়াই গেল না, আবার যেহেতু নিয়ত করা হয়নি তাই নিয়তেরও ছওয়াব থেকে মাহরূম থাকতে হল।

খ. শয়তান বা নফসের প্ররোচনায় কোনও পাপকর্মের ইচ্ছা জাগলে বান্দার কর্তব্য তা পরিহারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো, যেহেতু পরিহার করতে পারলে একটি নেককাজ করার ছওয়াব পাওয়া যায়।

গ. এ হাদীছ বান্দার প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত ও দয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে। সুতরাং এর জন্যও আল্লাহর শোকর আদায় করা অবশ্যকর্তব্য।

মুসলিমে এসেছেঃ
باب إِذَا هَمَّ الْعَبْدُ بِحَسَنَةٍ كُتِبَتْ وَإِذَا هَمَّ بِسَيِّئَةٍ لَمْ تُكْتَبْ

حَدَّثَنَا شَيْبَانُ بْنُ فَرُّوخَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، عَنِ الْجَعْدِ أَبِي عُثْمَانَ، حَدَّثَنَا أَبُو رَجَاءٍ الْعُطَارِدِيُّ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِيمَا يَرْوِي عَنْ رَبِّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَالَ " إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ الْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ ثُمَّ بَيَّنَ ذَلِكَ فَمَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللَّهُ عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلَةً وَإِنْ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عِنْدَهُ عَشْرَ حَسَنَاتٍ إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ إِلَى أَضْعَافٍ كَثِيرَةٍ وَإِنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللَّهُ عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلَةً وَإِنْ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللَّهُ سَيِّئَةً وَاحِدَةً " .

২৩৮। শায়বান ইবনে ফাররুখ (রাহঃ) ... ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে হাদীসে কুদসীতে বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা সমুদয় সৎ ও অসৎ কর্মের হিসাব লেখেন। এরপর তিনি এর ব্যাখ্যা করে বলেনঃ সুতরাং যে ব্যক্তি নেক কাজের ইচ্ছা গ্রহণ করেছে অথচ তা সম্পাদন করে নি আল্লাহ তা’আলা এর বিনিময়ে তার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সাওয়াব লিখে দেন। তারপর কাজে পরিণত করলে আল্লাহ তা'আলা এর বিনিময়ে দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত সাওয়াব লিখে দেন। পক্ষান্তরে যদি কোন মন্দ কর্মের অভিপ্রায় করে এবং তা কাজে পরিণত না করে তবে আল্লাহ তা’আলা তার বিনিময়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সাওয়াব লিখে দেন। আর অভিপ্রায়ের পর তা সম্পাদন করে ফেললে তিনি একটি মাত্র গুনাহ লেখেন।

আল মুসনাদুস সহীহ- ইমাম মুসলিম রহঃ (সহীহ মুসলিম)
হাদিস নং: ২৩৮ আন্তর্জাতিক নং: ১৩১ - ১
তাহকীকঃ তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
বর্ণনাকারীঃ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)(মৃত্যুঃ ৬৮ হিজরী)
হাদিসের লিংকঃ https://muslimbangla.com/hadith/8029

হাদিসের ব্যাখ্যাঃ
এটি একটি হাদীছে কুদসী। হাদীছে কুদসী বলে এমন হাদীছকে, যা নবী সাল্লাল্লাহ 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা'আলার বরাতে বর্ণনা করেছেন। সাধারণ হাদীছ থেকে এর পার্থক্য হল, সাধারণ হাদীছ সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এভাবে বর্ণনা করেন যে, তিনি এই বলেছেন বা এই করেছেন। কিন্তু হাদীছে কুদসী বর্ণনা করতে গিয়ে সাহাবীগণ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আল্লাহ তা'আলারও উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, তিনি আল্লাহ তা'আলা থেকে এই এই বর্ণনা করেছেন। এই উভয় প্রকার হাদীছও ওহীই বটে, যেমন কুরআন মাজীদও ওহী। তবে কুরআন মাজীদের ভাব ও ভাষা উভয় আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, আর হাদীছের ভাব আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে কিন্তু ভাষা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের। কুরআনকে ওহীয়ে মাতলু এবং হাদীছকে ওহীয়ে গায়রে মাতলু বলে।

এ হাদীছে বলা হয়েছে যে, কেউ যদি কোনও নেক কাজের নিয়ত করে কিন্তু কাজটি করা না হয়, তবে কেবল নিয়তের কারণেও সেই কাজ করার ছওয়াব পাবে। এটা আল্লাহ তা'আলার মেহেরবানী যে, তিনি নেক কাজের নিয়তকেও একটি স্বতন্ত্র নেক কাজের মর্যাদা দিয়ে দেন। যেমন কেউ নিয়ত করল সে দু' রাক'আত নামায পড়বে, কিন্তু কোনও কারণে তার তা পড়া হল না। কিংবা নিয়ত করল, অমুক দীনী কাজে সে এত টাকা দান করবে, কিন্তু টাকাটা তার দান করা হল না। এ অবস্থায় তার ওই নিয়ত বৃথা যায় না। কাজটি করা হল না বলে তার নিয়ত বাতিল গণ্য হয় না; বরং আল্লাহ তা'আলা নিজ দয়ায় ওই নিয়তকেও একটি পূর্ণাঙ্গ কাজের মর্যাদা দিয়ে দেন এবং তার আমলনামায় সেই নিয়তকে একটি পূর্ণাঙ্গ নেক কাজরূপে লিখে দেন। তিনি লেখেন মানে ফিরিশতাদেরকে লেখার হুকুম করেন এবং তারা তা পালন করেন।

নেক কাজের নিয়ত করার পর বান্দা যদি তা পালন করতে সক্ষম হয়, তবে আল্লাহ তা'আলা তাকে দশ থেকে সাতশ' গুণ পর্যন্ত বরং তারও বেশি নেক কাজের মর্যাদা দিয়ে দেন। দশগুণ থেকে সাতশ' বা তারও বেশি হয় ইখলাসের তারতম্য ও আমলের সৌন্দর্যগত পার্থক্যের কারণে। অর্থাৎ যার ইখলাস যতবেশি হবে এবং আমল যতবেশি সুন্নতসম্মত ও সুচারু হবে, ছওয়াবও ততবেশি হবে। আমল একটা হওয়া সত্ত্বেও ছওয়াব বহুগুণ বেশি দেওয়াটা কেবলই আল্লাহ তা'আলার মেহেরবানী ও তাঁর দয়া।

এটাও আল্লাহ তা'আলার মেহেরবানী যে, অসৎ কাজের ক্ষেত্রে নেক কাজের মত বৃদ্ধি তিনি ঘটান না। একটা মন্দ কাজকে একটা মন্দ কাজই লেখা হয়। আবার মন্দ কাজের নিয়তকে স্বতন্ত্র কাজরূপে ধরা হয় না যে, সেজন্যও পাপ লেখা হবে। বরং উল্টো পাপের পরিবর্তে ছওয়াব লেখা হয়। অর্থাৎ যদি পাপ কাজের ইচ্ছা করার পর সেই পাপ কাজটি করা না হয়, তবে সে যে পাপ কাজটি করল না, সে তার ইচ্ছা বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকল, এজন্যে তার আমলনামায় একটি নেক কাজের ছওয়াব লিখে দেওয়া হয়। সুবহানাল্লাহ! এই মেহেরবানীরও কি কোনও সীমা আছে! এর জন্য আমাদের কতই না শোকর আদায় করা উচিত!

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. নেক কাজের নিয়তও যেহেতু ছওয়াবের কারণ, সেহেতু যখনই কোনও নেক কাজের অবকাশ আসে, অবিলম্বে তার নিয়ত করে ফেলা উচিত। এমনও হতে পারে যে, অবকাশ আসা সত্ত্বেও কোনও ওযরের কারণে কাজটি করা হল না। কিন্তু যেহেতু করার নিয়ত করা হয়েছিল, তাই সে কাজটি না করা সত্ত্বেও তার ছওয়াব থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত থাকতে হবে না; বরং নিয়তের কারণে একটা ছওয়াব অবশ্যই লেখা হবে। কিন্তু নিয়ত যদি না করা হত, তবে তো সম্পূর্ণই বঞ্চিত থাকতে হত। কাজটি করতে না পারার কারণে করার ছওয়াব তো পাওয়াই গেল না, আবার যেহেতু নিয়ত করা হয়নি তাই নিয়তেরও ছওয়াব থেকে মাহরূম থাকতে হল।

খ. শয়তান বা নফসের প্ররোচনায় কোনও পাপকর্মের ইচ্ছা জাগলে বান্দার কর্তব্য তা পরিহারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো, যেহেতু পরিহার করতে পারলে একটি নেককাজ করার ছওয়াব পাওয়া যায়।

গ. এ হাদীছ বান্দার প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত ও দয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে। সুতরাং এর জন্যও আল্লাহর শোকর আদায় করা অবশ্যকর্তব্য।



সূত্রঃ

فإن من ترك معصية خوفاً من الله أثابه الله على تعففه عن الحرام، فقد قال صلى الله عليه وسلم: إن الله كتب الحسنات والسيئات ثم بين ذلك، فمن هم بحسنة فلم يعملها كتبها الله عنده حسنة كاملة، وإن هم بها فعملها كتبها الله عز وجل عنده عشرة حسنات إلى سبعمائة ضعف إلى أضعاف كثيرة، وإن هم بسيئة فلم يعملها كتبها الله عنده حسنة كاملة، وإن هم بها فعملها كتبها الله سيئة واحدة. رواه الإمام مسلم.

والمعاصي لو تركها الإنسان من مخافة الله زاد الله في إيمانه، روى الطبراني في الكبير أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: إن النظرة سهم من سهام إبليس مسموم من تركها مخافتي أبدلته إيماناً يجد حلاوته في قلبه.

ثم إننا نفيدك أن الله لا يحاسب العبد على حديث النفس المجرد، ما لم يتحول إلى عزم على فعل المعصية، قال صلى الله عليه وسلم: إن الله تجاوز عن أمتي ما حدثت به أنفسها، ما لم تعمل أو تتكلم. رواه البخاري ومسلم.

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০৩৪৪

‘‘এক বলেই আউট হয়ে যাবে’’ ‘‘নিশ্চিত আজকে ওরা হারবে’’ এধরণের বাক্য বলার দ্বারা কি শিরক হয়?


২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

CG৩X+VQ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৯০২১৪

রজব শব্দটি মুনসারিফ নাকি গায়রে মুনসারিফ?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

৮P৩C+GV৭

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৭৭৪৮৭

নখ কাটার সুন্নত


৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

রংপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৮৭৩৫১

আল্লাহ কেন অমুসলিমদেরকে এমন অনেক বিষয় দান করেন যা অনেক সময় মুসলিমরা পায়না?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বগুড়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy