তালাকের আগের ধাপগুলো কি?
প্রশ্নঃ ২৯৬২৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, বিয়ের পরে বউকে তালাক দেওয়াযাবে কিনা
২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
WCX৪+XPJ
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সম্মানিত প্রশ্নকারী!
তালাক তো বিয়ের পরই দেওয়া যায়। আগে তো আর দেওয়ার সুযোগ নাই! ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক যদিও বৈধ। তবে সকল হালালের মধ্যে নিকৃষ্টতম হালাল হলো তালাক।
হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ "
কাসীর ইবনে উবাইদ ..... ইবনে উমর (রাযিঃ) নবী করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট নিকৃষ্টতম হালাল বস্তু হল তালাক। (আবু দাউদ : হাদিস নং ২১৭৮, সুনানে ইবনে মাজা' হাদিস নং: ২০১৮)
তালাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে হযরত আলী রা. এর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তোমরা বিয়ে কর কিন্তু তালাক দিয়ো না। কেননা তালাক দিলে তার কারণে আল্লাহ তায়ালার আরশ কেঁপে ওঠে।’ (তাফসিরে কুরতুবি)
তাছাড়া শরীয়তে তালাকের আগে আরও কিছু স্টেপ আছে যেগুলোতে ব্যর্থ হলেই কেবল তালাকের পরামর্শ দিয়ে থাকে। কাজেই তালাকের আগে অবশ্যই সেই স্টেপগুলো অতিক্রম করতে হবে।
কুরআনুল কারীম বলছে,
اَلرِّجَالُ قَوّٰمُوۡنَ عَلَی النِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ اللّٰہُ بَعۡضَہُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ وَّبِمَاۤ اَنۡفَقُوۡا مِنۡ اَمۡوَالِہِمۡ ؕ فَالصّٰلِحٰتُ قٰنِتٰتٌ حٰفِظٰتٌ لِّلۡغَیۡبِ بِمَا حَفِظَ اللّٰہُ ؕ وَالّٰتِیۡ تَخَافُوۡنَ نُشُوۡزَہُنَّ فَعِظُوۡہُنَّ وَاہۡجُرُوۡہُنَّ فِی الۡمَضَاجِعِ وَاضۡرِبُوۡہُنَّ ۚ فَاِنۡ اَطَعۡنَکُمۡ فَلَا تَبۡغُوۡا عَلَیۡہِنَّ سَبِیۡلًا ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ عَلِیًّا کَبِیۡرًا
পুরুষ নারীদের অভিভাবক, যেহেতু আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু পুরুষগণ নিজেদের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে। সুতরাং সাধ্বী স্ত্রীগণ অনুগত হয়ে থাকে, (পুরুষের) অনুপস্থিতিতে আল্লাহ প্রদত্ত্ব হিফাজতে (তার অধিকারসমূহ) সংরক্ষণ করে। আর যে সকল স্ত্রীর ব্যাপারে তোমরা অবাধ্যতার আশংকা কর, (প্রথমে) তাদেরকে বুঝাও এবং (তাতে কাজ না হলে) তাদেরকে শয়ন শয্যায় একা ছেড়ে দাও এবং (তাতেও সংশোধন না হলে) তাদেরকে প্রহার করতে পার। অতঃপর তারা যদি তোমাদের আনুগত্য করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনও (ব্যবস্থা গ্রহণের) পথ খুঁজো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকলের উপর, সকলের বড় (সুরা নিসা, আয়াত: 34)
তাফসীরঃ দেখুন। https://muslimbangla.com/sura/4/tafsir/34
وَاِنۡ خِفۡتُمۡ شِقَاقَ بَیۡنِہِمَا فَابۡعَثُوۡا حَکَمًا مِّنۡ اَہۡلِہٖ وَحَکَمًا مِّنۡ اَہۡلِہَا ۚ اِنۡ یُّرِیۡدَاۤ اِصۡلَاحًا یُّوَفِّقِ اللّٰہُ بَیۡنَہُمَا ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ عَلِیۡمًا خَبِیۡرًا
আর তোমরা যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ সৃষ্টির আশঙ্কা কর, তবে (তাদের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য) পুরুষের পরিবার হতে একজন সালিস ও নারীর পরিবার হতে একজন সালিস পাঠিয়ে দেবে। তারা দু’জন যদি মীমাংসা করতে চায়, তবে আল্লাহ উভয়ের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞাত এবং সর্ববিষয়ে অবহিত (সুরা নিসা, আয়াত:35)
তাফসির দেখুন। https://muslimbangla.com/sura/4/tafsir/35
তাহলে তালাকের আগের ধাপগুলো হলো,
এক. প্রথমে তাদেরকে বুঝাতে হবে।
দুই. (তাতে কাজ না হলে) শয়ন শয্যায় একা ছেড়ে দিতে হবে।
তিন. (তাতেও সংশোধন না হলে) তাদেরকে হালকা প্রহার করতে পারবে।
অতঃপর তারা যদি স্বামীর আনুগত্য করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনও (ব্যবস্থা গ্রহণের) পথ খোঁজা যাবে না।
চার. তারপরও যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ সৃষ্টির আশঙ্কা হয়, তবে (তাদের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য) স্বামীর পরিবার থেকে একজন সালিশ এবং স্ত্রী পরিবার থেকে একজন সালিশ পাঠাতে হবে। উভয় সালিশ যদি (নিষ্ঠার সাথে) মীমাংসা করতে চায়, তবে আল্লাহ অবশ্যই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে দেবেন।
এরপর যদি সম্ভব না হয় তাহলে শরীয়ত বলে,
اَلطَّلَاقُ مَرَّتٰنِ ۪ فَاِمۡسَاکٌۢ بِمَعۡرُوۡفٍ اَوۡ تَسۡرِیۡحٌۢ بِاِحۡسَانِ...............
তাফসির: আয়াতে এক নির্দেশ তো এই দেওয়া হয়েছে যে, তালাক যদি দিতেই হয় তবে সর্বোচ্চ দুই তালাক দেওয়া উচিত। কেননা এ অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক বহাল রাখার সুযোগ থাকে, যেহেতু তখন ইদ্দত চলাকালে তালাক প্রত্যাহার করে নেওয়ার অধিকার স্বামীর থাকে এবং ইদ্দতের পর উভয়ে পারস্পরিক সম্মতিক্রমে নতুন মোহরানায় নতুনভাবে বিবাহ সম্পন্ন করতে পারে। কিন্তু তিন তালাক দিয়ে ফেললে এ উভয় পথ বন্ধ হয়ে যায়, যেমন পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সম্পর্ক বহাল করার কোনও পথই খোলা থাকে না। দ্বিতীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই যে, স্বামী তালাক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিক বা সম্পর্কচ্ছেদের, উভয় অবস্থায়ই ব্যাপারটা সুন্দরভাবে সদাচরণের সাথে সম্পন্ন করা চাই। সাধারণ অবস্থায় স্বামীর পক্ষে এটা হালাল নয় যে, সে তালাকের বদলে মোহরানা ফেরত দেওয়ার বা মাফ করে দেওয়ার দাবী জানাবে। হাঁ স্ত্রীর পক্ষ থেকেই যদি তালাক চাওয়া হয় এবং সেটা স্বামীর পক্ষ হতে কোনও জুলুমের কারণে না হয়, বরং অন্য কোনও কারণে হয়, যেমন স্ত্রী স্বামীকে পছন্দ করতে পারছে না, আর এ কারণে উভয়ের আশঙ্কা হয় তারা স্বচ্ছন্দভাবে বৈবাহিক দায়িত্ব-কর্তব্য আদায় করতে পারবে না, তবে এ অবস্থায় এটা জায়েয রাখা হয়েছে যে, স্ত্রী আর্থিক বিনিময় হিসেবে পূর্ণ মোহরানা বা তার অংশবিশেষ স্বামীকে ওয়াপস করবে কিংবা এখনও পর্যন্ত তা আদায় না হয়ে থাকলে তা মাফ করে দেবে (পরিভাষায় এটাকে ‘খুলা’ বলে)।
والله اعلم بالصواب
মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর, কদমতলী, ঢাকা।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১