و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

সম্মানিত প্রশ্নকারী!
আল্লাহ সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা হলো, আল্লাহ তায়ালা সকল প্রকার আকার আকৃতি থেকে মুক্ত। যিনি আদম আ. এর অকৃতিকে আল্লাহ তায়ালার অকৃতির সাথে তুলনা করেছেন তিনি মূলত এসংক্রান্ত একটি হাদিসের অনুবাদের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেন।
হাদিসটি হলো,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَفِي حَدِيثِ ابْنِ حَاتِمٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا قَاتَلَ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ فَلْيَجْتَنِبِ الْوَجْهَ فَإِنَّ اللَّهَ خَلَقَ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ
অর্থাৎ, সাহাবী হজরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আর ইবনে হাতিম বর্ণিত হাদীসেও নবী (ﷺ) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন তার ভাইকে প্রহার করে সে যেন তার চেহারায় আঘাত করা থেকে বেঁচে থাকে। কেননা, আল্লাহ তা’আলা আদম (আলাইহিস সালাম) কে তার নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। (সহীহ মুসলিম হাদিস নং: ৬৪১৩)

এই হাদিসে “তার নিজ আকৃতি” বাক্যের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন,

وقال النووي:…وأن المراد أنه خلق في أول نشأته على صورته التي كان عليها في الأرض, وتوفي عليها, وهي: طوله ستون ذراعًا, ولم ينتقل أطوارًا كذريته, وكانت صورته في الجنة هي صورته في الأرض لم تتغير.
অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে তার সৃষ্টির সূচনাতেই আপন আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। যেই আকৃতিতে তিনি দুনিয়াতে ছিলেন এবং ইন্তেকাল করেছেন। তার উচ্চতা ছিল ষাট হাত। এবং তিনি তার বংশধরদের মত পর্যায়ক্রমে নড়াচড়া করেননি, এবং জান্নাতে তার আকৃতি তাই ছিল যা পৃথিবীতে আগমনের পরও ছিল। যাতে কোনো পরিবর্তিত হয়নি।
দ্বিতীয়ত: যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, এখানে “তাঁর নিজ অকৃতি” বলতে আল্লাহ তায়ালার আকৃতি বুঝানো হয়েছে তাহলে এটা আল্লাহ তায়ালা নিজের ক্ষমতার প্রকাশ ঘটাচ্ছেন, যেমনিভাবে সুরা ছ্বা-দ এর ৭৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন
یٰۤاِبۡلِیۡسُ مَا مَنَعَکَ اَنۡ تَسۡجُدَ لِمَا خَلَقۡتُ بِیَدَیَّ ؕ اَسۡتَکۡبَرۡتَ اَمۡ کُنۡتَ مِنَ الۡعَالِیۡنَ
হে ইবলিস! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি, তাকে সিজদা করতে কোন জিনিস তোমাকে বাধা দিল? তুমি কি অহংকার করলে, নাকি তুমি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কিছু?
এখানে আল্লাহ তায়ালা “নিজ হাতে” শব্দ বলে তার সীমাহীন কুদরত বুঝিয়েছেন।
তাছাড়া আল্লাহ তয়ালার একটি সিফাতি বা গুণবাচক নাম হলো, بَدِيْعٌ বাদীউন। আর বাদিউন বলা হয় ওই সত্ত্বা যিনি নমুনাহীন সৃষ্টি করেন। সেখান থেকেই بَدِیۡعُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ -তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উদ্ভাবক। নমুনাহীন স্রষ্টা। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সমগ্র পৃথিবীর সকল মাখলুককে নমূনাহীন সৃষ্টি করেছেন সেখানে আদম আ. কে সৃষ্টি করার জন্য তিনি তার নিজের নমুনা অনুসরণের মুখাপেক্ষে হবেন বিষয়টি যুক্তিযুক্ত নয়।

শরহুল আকাইদিন নাসাফিয়্যাহ্ গ্রন্থে উল্লেখ আছে,
ولا جسم لانه مترکب ومتحیز وذالک امارة الحدوث (ص:۳۹،ط: قدیمی)۔
তাঁর কোন শারীরিক গঠন নেই কারণ দেহ হলো, যৌগিক ও পক্ষপাতদুষ্ট। আর এ এটি নিঃশেষ হওয়ার লক্ষণ।

কাজেই যিনি ওই বক্তব্য দিয়েছেন যদি তিনি ভুলবশত কিংবা অজ্ঞতার কারণে এমনটি বলে থাকেন তাহলে তার উচিত তাওবা করে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা পার্থনা করা। আর এজাতীয় লোকদের পেছনে নামাজ আদায় করতে কোনো বাঁধা নেই। কিন্তু যদি তিনি এটা বিশ্বাস করে বলে থাকেন তাহলে তিনি শিরিক করেছেন। এই জাতীয় লোকদের পেছনে নামাজ পড়া জায়েজ নাই।

والله اعلم بالصواب