আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মান্নত করে ভুলে গেলে করণীয়

প্রশ্নঃ ২৭০১৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ওবারাকাতুহু মুফতি সাহেব আমার প্রশ্ন হলো কোনো ব্যক্তি যদি ছোট থেকে ১৯-২০ বছর পর্যন্ত অনেক মান্নত করে এবং পরবর্তীতে সে যদি ভুলে যায় সে কোন কাজের জন্য কি মান্নত করেছে তাহলে সে কি সব মান্নতের জন্য শুধু তিনটা রোজা রাখবে নাকি আরো অনেক রোজা রাখবে যেহেতু সে জানে না সে কয়টা মান্নত পূর্ণ করে নাই।

১১ জানুয়ারী, ২০২৩
নোয়াখালী

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সম্মানিত প্রশ্নকারী!
মান্নত শরিয়তে পছন্দনীয় নয়। শরিয়ত উদ্বুদ্ধ করে নফল সদকার প্রতি।মান্নতের প্রতি নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- بَاكِرُوا بِالصَّدَقَةِ ؛ فَإِنَّ الْبَلَاءَ لَا يَتَخَطَّى الصَّدَقَةَ “তোমরা দানের ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করবে। কেননা বিপদাপদ তাকে অতিক্রম করতে পারে না”। (বাইহাকী ৭৩৭৪)।

মান্নতের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা প্রসঙ্গে সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযি.) বর্ণনা করেন-
أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَوْمًا يَنْهَانَا عَنِ النَّذْرِ وَيَقُولُ إِنَّهُ لاَ يَرُدُّ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ مِنَ الشَّحِيحِ
রাসূলুল্লাহ (সা.) একদিন আমাদের মান্নত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন, মান্নত কোনো কিছুকে ফেরাতে পারে না। তবে মান্নতের মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ৪৩২৫)

এতদ্বসত্ত্বেও যদি কেউ মান্নত করে তাহলে তা থেকে রুজু করার কোন সুযোগ নেই। তাই মান্নতকৃত ইবাদতটি করা আবশ্যক। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- وَلْيُوفُوا نُذُورَهُمْ তারা যেন মান্নত পূর্ণ করে [সূরা হজ্জ-২৯]

সম্মানিত প্রশ্নকারী! আল্লাহর নামে আপনি যা মান্নত করেছিলেন তা আপনার জন্য পুরণ করা আবশ্যক ছিল। কিন্তু যেহেতু আপনি বিষয়টি ভুলে গেছেন তাই তাই যথাসম্ভব স্মরণ করে তা আদায়ের চেষ্টা করুন। কিন্তু যদি কোনো ক্রমেই স্মরণে না আসে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে এর কাফফারা দিতে হবে না। কেননা হাদিশ শরীফে আছে,

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُصَفَّى الْحِمْصِيُّ حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ حَدَّثَنَا الْأَوْزَاعِيُّ عَنْ عَطَاءٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ اللهَ وَضَعَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ

মুহাম্মদ ইবন মুসাফ্ফা হিমসী (র).... ইবন আব্বাস (রা) সূত্রে নবী (সা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহ আমার উম্মতকে ভুল–বিস্মৃতি ও জোরপূর্বক কৃত কাজের দায়–দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। (সুনান ইবনে মাজাহ্ : হাদিস নং- ২০৪৫)

তবে নিজের এই ভুলের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা ও ইসতেগফার করতে থাকুন। আর সম্ভব হলো একটি মান্নতের কাফফারা আদায় করে দিন।

মান্নতের কাফফারা
পবিত্র কুরআনে মান্নতের কাফফারার চারটি স্তর উল্লেখ করা হয়েছে।
১. দশজন মিসকিনকে দুবেলা পেট ভরে খাইয়ে দেয়া। https://muslimbangla.com/sura/5/tafsir/89
২. অথবা দশজন মিসকিনকে একজোড়া করে কাপড় প্রদান করা।
৩. অথবা গোলাম আজাদ করা।
৪. উপরোক্ত তিনটির কোনোটি করার সাধ্য না থাকলে তিন দিন রোযা‌ রাখা।

لَا یُؤَاخِذُکُمُ اللّٰہُ بِاللَّغۡوِ فِیۡۤ اَیۡمَانِکُمۡ وَلٰکِنۡ یُّؤَاخِذُکُمۡ بِمَا عَقَّدۡتُّمُ الۡاَیۡمَانَ ۚ فَکَفَّارَتُہٗۤ اِطۡعَامُ عَشَرَۃِ مَسٰکِیۡنَ مِنۡ اَوۡسَطِ مَا تُطۡعِمُوۡنَ اَہۡلِیۡکُمۡ اَوۡ کِسۡوَتُہُمۡ اَوۡ تَحۡرِیۡرُ رَقَبَۃٍ ؕ فَمَنۡ لَّمۡ یَجِدۡ فَصِیَامُ ثَلٰثَۃِ اَیَّامٍ ؕ ذٰلِکَ کَفَّارَۃُ اَیۡمَانِکُمۡ اِذَا حَلَفۡتُمۡ ؕ وَاحۡفَظُوۡۤا اَیۡمَانَکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ لَکُمۡ اٰیٰتِہٖ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ

তোমাদের বৃথা শপথের জন্যে আল্লাহ্ তোমাদের দায়ী করবেন না। কিন্তু যেসব শপথ তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কর সেগুলোর জন্যে তিনি তোমাদের দায়ী করবেন। এরপর এর কাফফারা দশজন দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের আহার্য দান, যা তোমরা তোমাদের পরিজনদের খেতে দাও, বা তাদেরকে বস্ত্রদান, কিংবা একজন দাস মুক্তি। এবং যার সামর্থ্য নেই তার জন্যে তিনদিন সিয়াম পালন। তোমরা শপথ করলে এটাই তোমাদের শপথের কাফ্ফারা, তোমরা তোমাদের শপথ রক্ষা কর। এইভাবে আল্লাহ্ তোমাদের জন্যে তাঁর বিধানসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।

والله اعلم بالصواب

মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর, কদমতলী, ঢাকা।

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন