আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মদ পানকারীর ৪০ দিন নামায কবুল না হওয়া ও তার তাওবা প্রসঙ্গে

প্রশ্নঃ ২৫৩৭৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি ৯/১১/২২ তারিখে মদ পান করি। জীবনের প্রথম বার। আমার বয়স ২২ বছর। আমি অনেক অনুতপ্ত। এই কারণে আল্লাহর কাছে অনেক মাফ চাই এবং আর করব না মর্মে প্রতিজ্ঞা করি। আজ ১৭/১১/২২ তারিখ। আমার কি নামায কবুল হবে? আমি নামায পড়তে পারব নাকি? ১৯/১২/২২পর্যন্ত আমার কোন দোয়া কি কবুল হবে না? (আমার কি ৪০ দিন পর্যন্ত কোন দোয়া কবুল হবে না বা ৪০দিন পর্যন্ত কি আল্লাহ তরফ থেকে আমার জন্য কোন রহমত আসবে না?) আপনার সময়ের জন্য ধন্যবাদ।

২১ নভেম্বর, ২০২২
ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এক. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, নিঃসন্দেহে মদ পান করা কবিরা গুনাহ। আর হাদিসে প্রশ্নোক্ত বক্তব্যের অনুরূপ কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন, ইবনু আব্বাস রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেছেন,
كلُّ مُخمَّرٍ خمرٌ ، وكل مُسكِرٍ حرامٌ ، ومن شرب مسكرًا بخِستْ صلاتُه أربعين صباحًا ، فإن تاب تاب اللهُ عليه ، فإن عاد الرابعةَ كان حقًّا على اللهِ أن يَسقِيَه من طينةِ الخَبالِ ؛ صديدِ أهلِ النَّارِ ، ومن سقاه صغيرًا لا يعرف حلالَه من حرامِه ، كان حقًّا على اللهِ أن يَسقِيَه من طينةِ الخبالِ
নেশা উদ্রেককারী প্রতিটি বস্তু মদের অন্তর্ভুক্ত। আর নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি বস্তু হারাম। যে ব্যক্তি একবার নেশা উদ্রেককারী জিনিস পান করলো সে তার চল্লিশ দিনের নামাজের কল্যাণ হতে বঞ্চিত হলো। সে যদি তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করতে পারেন। সে যদি চতুর্থবার তা পান করে তবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামীদের ঘা হতে নির্গত পুঁজ খাওয়াবেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! ‘তীনাতুল খাবাল’ কি? তিনি বললেন, জাহান্নামীদের পুঁজ। যে ব্যক্তি কোন বালককে যার হালাল-হারাম সম্পর্কিত জ্ঞান হয় নি, এটা পান করাবে আল্লাহ তাকে অবশ্যই জাহান্নামীদের পুঁজ-রক্ত পান করাবেন। (আবু দাউদ ৩৬৮০ বাইহাকী ১৭৮০৭)
দুই. আপনার প্রতি আমাদের পরামর্শ হল,
~ তাওবার শর্ত পূর্ণ করে আল্লাহর কাছে তাওবা করুন। আলেমগণ বলেছেন, তাওবার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে ১। গুনাহ ত্যাগ করা। ২। কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। ৩। সে গুনাহতে পুনরায় লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া। যদি এ তিনটি শর্তের কোন একটি না পাওয়া যায় তাহলে সে তাওবা শুদ্ধ হবে না।
~ সত্যিকার অর্থে তাওবা করেছেন; এটা বুঝানোর জন্য অধিকহারে 'আসতাগফিরুল্লাহ' পড়ুন। আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমত যে, তিনি তাওবার দরজা খোলা রেখেছেন। সুতরাং যদি আপনার ক্ষেত্রে এ শর্তগুলো পূর্ণ হয় তাহলে আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় আপনার তাওবা কবুল হওয়ার উপযোগী। এরপরে তাওবা কবুল হয় নি কিংবা নামায ও দোয়া কবুল হবে না; এমন ওয়াসওয়াসা বা খুতখুত রাখা উচিত হবে না। কেননা এটি শয়তানের পক্ষ থেকে এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল যেভাবে উল্লেখ করেছেন যে, একনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত তওবাকারীর তাওবা কবুল হয়— এ ধরণের খুতখুত এর বিপরীত। আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيماً حَكِيماً
নিশ্চয় তাওবা কবূল করা আল্লাহর জিম্মায় তাদের জন্য, যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করে। তারপর শীঘ্রই তাওবা করে। অতঃপর আল্লাহ এদের তাওবা কবুল করবেন আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা ১৭)
~ আশা করি, উপরোক্ত কথা থেকে নিশ্চয় আপনি বুঝে গেছেন যে, তাওবা করার পরেও ৪০ দিন পর্যন্ত নামায ও দোয়া কবুল হবে না; এমন ওয়াসওয়াসায় তাড়িত হয়ে নামায, দোয়া ও অন্যন্য ইবাদত ছেড়ে দেয়ার অর্থ হল, আপনি সেটাই করছেন, যা শয়তান চাচ্ছে। সুতরাং এই ভুল মোটেও করবেন না। বরং তাওবা করার পর আপনি নিশ্চিন্ত মনে আরো বেশী আগ্রহ ও আল্লাহর রহমতের আশা নিয়ে ইবাদতে মনোযোগ দিন। আল্লাহ তো বলেছেন,
اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡہٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَالۡمُنۡکَرِ
নামায অবশ্যই বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ হতে। (আলআনকাবুত ৪৫)
প্রিয় দীনী ভাই, পরিশেষে উপহার হিসেবে আপনার জন্য একটি হাদীস পেশ করছি। আশা করি, চমৎকৃত হবেন এবং স্বস্তির স্নিগ্ধ পরশ অনুভব করবেন। হাদীসে কুদসীতে ইরশাদ হয়েছে-
قَالَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيكَ وَلَا أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ، وَلَا أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لَا تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً.
আল্লাহ তাআলা বলেন, হে বনী আদম! তুমি যত গুনাহই কর, যতক্ষণ আমাকে ডাকতে থাকবে এবং আমার কাছে (ক্ষমার) আশা রাখবে আমি তোমার পূর্বের সব (গুনাহ) মাফ করে দিব, কোনো পরোয়া করব না। হে বনী আদম! তোমার গুনাহ যদি (এত বেশি হয় যে তা) আকাশের মেঘমালা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, অতপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি ক্ষমা করে দিব, কোনো পরোয়া করব না। হে বনী আদম! যদি তুমি শিরিক থেকে বেঁচে থাক, আর পৃথিবী-ভরা গুনাহও নিয়ে আস তাহলে আমি ঐ পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব। (জামে তিরমিযী ৩৫৪০)

والله اعلم بالصواب

শাইখ উমায়ের কোব্বাদী সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন