মুসলিম বিবাহ

আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ২৫০৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, নামাযে কীভাবে মন স্থির রাখা যায়। খুশু-খুযুর গুরুত্ব কী? খুশু-খুযুর সাথে নামায পড়ার উপায় কী?বিস্তারিত জানালে খুব উপকৃত হব। ,

২৯ অক্টোবর, ২০২০

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


নামাযে খুশু-খুযু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন-হাদীসে এ সম্পর্কে অনেক তাকীদ করা হয়েছে। খুশু-খুযুর দুটি অংশ রয়েছে : এক. নামাযে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির রাখা। দুই. মনোযোগ ও একাগ্রতা রক্ষা করা। এ দুটি বৈশিষ্ট্যের সাথে যে নামায আদায় করা হয় তাকে খুশু-খুযুযুক্ত নামায বলে। এ দুটি বৈশিষ্ট্য কীভাবে অর্জন করা যায় সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল।

এক. বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির রাখা। যেমন হাত, পা এবং শরীরকে নামাযের বাইরের কোনো কাজে ব্যবহার না করা। অনর্থক নড়াচড়া থেকে বিরত থাকা। সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের নবীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন সাতটি (অঙ্গের) উপর সিজদা করে এবং নামাযে চুল বা কাপড় না গুটায়।-সুনানে আবু দাউদ ২/১৪, হাদীস : ৮৮৬

নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় এসেছে, বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. বলেন, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন মনে হত একটি কাঠ মাটিতে গেড়ে দেওয়া হয়েছে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৭৩২২

প্রখ্যাত তাবেয়ী আমাশ রাহ. থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. যখন নামাযে দাঁড়াতেন তাকে দেখে মনে হত যেন একটি পড়ে থাকা কাপড়।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৩৩০৩

তদ্রূপ এদিক সেদিক না তাকানো; নামায অবস্থায় যখন যেখানে দৃষ্টি রাখা নিয়ম সেখানে দৃষ্টি রাখাও বাহ্যিক খুশু-খুযুর অন্তর্ভুক্ত।

আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছি যে, নামাযে এদিক সেদিক তাকানোর ব্যাপারে আপনি কী বলেন? জবাবে তিনি বলেছেন, এটা হল শয়তানের ছোঁ মারা, যা দ্বারা শয়তান আল্লাহর বান্দাদেরকে নামায থেকে গাফেল ও উদাসীন করে ফেলে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৭৫১

বিশিষ্ট সাহাবী আবু যর রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নামাযের সময় আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি সর্বক্ষণ (রহমতের) দৃষ্টি রাখেন যতক্ষণ নামাযী অন্য কোনো দিকে দৃষ্টি না দেয়। যখন সে অন্য দিকে চেহারা ফেরায় তখন আল্লাহ তাআলা তার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২১৫০৮

দুই. নামাযে মনোযোগ ও একাগ্রতা রক্ষা করা।

ক) এমন মনোভাব নিয়ে নামায আদায় করা যে, এটিই তার জীবনের শেষ নামায।

বিশিষ্ট সাহাবী আবু আইয়ুব আনসারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, আল্লাহর রাসূল! আমাকে সংক্ষিপ্তভাবে দ্বীনের কিছু কথা বলে দিন। জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যখন নামায পড় তখন জীবনের শেষ নামায আদায়কারীর মতো নামায পড়।-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪৭১

খ) পুরো নামায এ অনুভূতি নিয়ে আদায় করা যে, আল্লাহ তাআলা আমাকে দেখছেন, আমি তার সামনে দন্ডায়মান।

প্রসিদ্ধ হাদীসে-জিবরীলে এসেছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি এমনভাবে ইবাদত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। আর তুমি যদি আল্লাহকে না-ও দেখ তবে আল্লাহ তো তোমাকে অবশ্যই দেখছেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮

গ) সাথে সাথে এ খেয়াল করবে যে, আমি আল্লাহ তাআলার সম্মুখে দাঁড়িয়েছি এবং তাঁর সাথে কথা বলছি। কেননা নামায হল আল্লাহ তাআলার সাথে একান্তে কথোপকথন করা।

সহীহ বুখারীতে এসেছে, সাহাবী আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন সে আল্লাহর সাথে একান্তে কথা বলে; যতক্ষণ সে তার নামাযের জায়গায় থাকে।-সহীহ বুখারী,

হাদীস : ৪১৬

উপরে বর্ণিত পন্থাগুলো অবলম্বনের পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার কাছে একাগ্রতা অর্জনের জন্য নামাযের বাইরে বিভিন্ন সময় দুআও করতে হবে।

মনোযোগ রাখার আরেকটি সহজ পন্থা হল, নামাযের কিরাত ও আযকারের দিকে মনোযোগ রাখা। অর্থ বুঝলে অর্থের দিকেও ধ্যান রাখা। কখনো অনিচ্ছাকৃতভাবে অন্যদিকে খেয়াল চলে গেলে ক্ষতি নেই। তবে স্মরণ হওয়ামাত্র পুনরায় মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে হবে। স্মরণ হওয়ার পরও অন্য কিছু খেয়াল করতে থাকা বা ইচ্ছাকৃত অন্য কিছুর খেয়াল আনা নিষিদ্ধ। তাই এ থেকে বিরত থাকতে হবে। এভাবে নামায পড়লে ইনশাআল্লাহ তা খুশু-খুযু বিশিষ্ট নামায বলে গণ্য হবে।

উল্লেখ্য যে, সাহাবা-তাবেয়ীন ও বুযুর্গানে দ্বীনের নামাযের বিবরণ পাঠ করাও খুশু-খুযু হাসিলের ক্ষেত্রে সহায়ক। তবে তাদের যেসব ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের খুশু-খুযুর বিবরণ পাওয়া যায় সেসব ঘটনা পাঠ করে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। কারণ খুশু-খুযুর বিভিন্ন পর্যায় আছে এবং চেষ্টা অব্যাহত রাখলে আল্লাহ তাআলার ফযল ও করমে ধীরে ধীরে উচ্চ পর্যায়ের খুশু-খুযুও হাসিল হতে পারে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ঐ পর্যায়ের খুশু-খুযু অর্জনের তাওফীক দান করুন। আমীন।


والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মাসিক আলকাউসার

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৭৭৮২

একাকী নামাজ আদায় করলে কি মনে সুকুন বেশী হয়?


১৬ অক্টোবর, ২০২৩

পটুয়াখালী

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ

৪৩২৫১

চার রাকাত ফরজ নামাজে শেষ দুই রাকাতে সূরা ফাতিহা না পড়লে, নামাজ আদায় হবে?


১৮ অক্টোবর, ২০২৩

West Bengal ৭৪৩৪২৮

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

৭৯৮৬

ইকামতের সময় ইমাম ও মুসল্লিগণ কখন দাঁড়াবেন?


১০ অক্টোবর, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

১২৯৬৪

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ইমাম সাহেব যদি বিড়ি সিগারেট পান করে তার পিছনে নামায পড়া যাবে কি

২২ জানুয়ারী, ২০২২

ছাতক

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি