আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

বিতির নামাজের তৃতীয় রাকাতে দোয়া কুনুত পড়ার সময় কি হাত উঠাতে হয়?

প্রশ্নঃ ২৪৬৫২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন হলো 1. বিতরের নামাজের তৃতীয় রাকাতে দোয়া কুনুত পড়ার সময় কি হাত উঠাতে হয়? 2. মোবাইলে নামাজের app থাকে। তার ভিতরে কোরআনুলকরীম থাকে। তো অনেক সমায় মোবাইল পায়ে লাগে। আবার বাথ রুমে গেলে মোবাইল সাথে থাকে। এর কারণে কি গুনাহ হবে?,

১৯ নভেম্বর, ২০২২

Al Amarat

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এক. বিতির নামাযে দোয়ায়ে কুনূত রুকুর আগে, না পরে? এ বিষয়ে মতভেদ আছে। হানাফী মাযহাবের আলিমগণ বলেন, রুকুর আগে পড়া হবে। এর দলিল হল, সহীহ বুখারী (১/১৩৬) ‘বাবুল কুনূত কাবলার রুকু ওয়া বা’দাহ’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে আছে, আসিম আহওয়াল বলেন,
سَأَلْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، عَنِ الْقُنُوتِ؟ فَقَالَ: قَدْ كَانَ الْقُنُوتُ، قُلْتُ: قَبْلَ الرُّكُوعِ أَوْ بَعْدَهُ؟ قَالَ: قَبْلَهُ، قُلْتُ: فَإِنَّ فُلَانًا أَخْبَرَنِي عَنْكَ، أَنَّكَ قُلْتَ: بَعْدَ الرُّكُوعِ، فَقَالَ: كَذَبَ، إِنَّمَا قَنَتَ رَسُولُ اللَّهِ – ﷺ– بَعْدَ الرُّكُوعِ شَهْرًا،.
আমি আনাস ইবনে মালিক রাযি.কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, কুনূত আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, রুকুর আগে, না পরে? তিনি বললেন, রুকুর আগে। আমি বললাম, জনৈক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন যে, আপনি রুকুর পরে কুনূত পড়ার কথা বলেছেন? তিনি বললেন, সে ভুল বলেছে। রুকুর পরে তো নবী ﷺ শুধু এক মাস কুনূত পড়েছেন।
এছাড়াও আরো দলিল আছে। তবে রুকুর পরে কুনূতের কথাও হদীসে আছে। হানাফী আলিমগণ উভয় বর্ণনার মাঝে সমন্বয় এভাবে করেন যে, কুনূতে নাযেলা রুকুর পরে ও বিশেষ বিশেষ অবস্থায় পড়া হবে। আর বিতিরের কুনূত রুকুর আগে ও সব সময় পড়া হবে। কেননা, আনাস রাযি. থেকেই অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ মৃত্যু পর্যন্ত কুনূত পড়েছেন। (বাযযার-মাজমাউয যাওয়াইদ ১/১৩৯) এই বর্ণনায় বিতরের কুনূতই উদ্দেশ্য। কারণ ফজরের কুনূত সর্বদা পড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় না।
দুই. যারা উপরোক্ত হাদীসসমূহের ভিত্তিতে রুকুর আগে কুনূত পড়ার কথা বলেন তাদের নিকট কিরাত ও কুনূতের মাঝে তাকবীর দেওয়া সুন্নত। এই তাকবীরের সাথে রাফয়ে ইয়াদাইন (হাত উত্তোলন) আছে। এজন্য ইমাম তহাবী রহ. বলেন,
وقد أجمع الذين يقنتون قبل الركوع على الرفع معها
‘যারা রুকুর পূর্বে কুনূত পড়ার কথা বলেন তাদের ইজমা রয়েছে যে, এই তাকবীরের সাথে রাফয়ে ইয়াদাইনও করতে হবে।’ (তহাবী ১/৩৩২)
এ প্রসঙ্গে সাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে কিছু দলিল উল্লেখ করা হল। কেননা, সাহাবায়ে কেরামের আমল নিশ্চয় নবী ﷺ-এর সুস্পষ্ট শিক্ষা থেকেই গৃহীত আমল।
১. আবু ইসহাক থেকে বর্ণিত, মাসরূক রহ., আসওয়াদ রহ. ও ইবনে মাসউদ রাযি.-এর অন্য শাগরিদগণ বলেছেন,
وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ لا يَقْنُتُ إلا فِي الْوِتْرِوَكَانَ يَقْنُتُ قَبْلَ الرُّكُوعِ يُكَبِّرُ إِذَا فَرَغَ مِنْ قِرَاءَتِهِ حِينَ يَقْنُتُ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. শুধু বিতর নামাযে কুনূত পড়তেন আর তিনি কুনূত পড়তেন রুকুর আগে এবং কিরাআত সমাপ্ত হওয়ার পর কুনূত পড়ার সময় তাকবীর দিতেন। (শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৪ মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০৭)
২. ইমাম বুখারী রহ. জুয্‌উ রাফয়িল ইয়াদাইন (পৃ. ৬৮)-এ উল্লেখ করেছেন,
عن أبي عثمان كان عمر رضي الله عنه يرفع يديه في القنوت
আবু উছমান বলেন, ‘উমর রাযি. কুনূতে রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন।’
৩. ইমাম বাইহাকী রহ. উল্লেখ করেছেন,
إن عدداً من الصحابة – رضي الله عنهم – رفعوا أيديهم في القنوت
‘নিশ্চয় সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই কুনূতে রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন।’ (আস সুনানুল কুবরা ২/২১১)

তিন. রাফয়ে ইয়াদাইন (হাত উত্তোলন)-এর পর হাত কী করবে? এর তিনটি পদ্ধতি হতে পারে- ১. দোয়ার মতো হাত উঠিয়ে রাখবে ২. রাফয়ে ইয়াদাইন (হাত উত্তোলন) করার পর কওমার মত হাত ছেড়ে দিবে ৩. রাফয়ে ইয়াদাইনের পর কিয়ামের মত দুই হাত বেঁধে নিবে।
প্রথম পদ্ধতিটি হানাফী ইমামগণের নিকট পসন্দনীয় নয়। কেননা, যদিও হাত তুলে দোয়া করাই দোয়ার সাধারণ নিয়ম কিন্তু নামাযের যত জায়গায় দোয়া আছে কোথাও হাত ওঠানোর নিয়ম নেই। সুতরাং দোয়ায়ে কুনুতের সময়ও এর ব্যতিক্রম হবে না। এজন্যই ইবনে উমর রাযি. এই পদ্ধতিকে বিদআত বলেছেন। তিনি বলেন,
أرأيتم قيامكم عند فراغ الإمام من السورة هذا القنوت والله إنه لبدعة ما فعله رسول الله ﷺ غير شهر ثم تركه أرأيتم رفعكم في الصلاة والله إنه لبدعة ما زاد رسول الله ﷺهذا قط فرفع يديه حيال منكبيه، رواه الطبراني في الكبير وفيه شهر بن حوشب ضعفه أحمد وابن معين وأبو زرعة وأبو حاتم والناسئي ووثقه أيوب وابن عدي
দেখ, তোমরা যে ফজরের নামাযেও ইমামের কিরাত শেষে কুনূতের জন্য দাঁড়াও,আল্লাহর কসম,এটা বিদআত। নবী ﷺ তা শুধু এক মাস করেছেন। দেখ, তোমরা যে নামাযে হাত তুলে কুনূত পড়, আল্লাহর কসম, এটিও বিদআত। নবী ﷺ তো শুধু কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন। (আলমু’জামুল কাবীর তবারানী; মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১৩৭)
উপরোক্ত রেওয়ায়েতের সরল অর্থ এটাই যে, নবী ﷺ কুনূতের জন্য যদিও রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন কিন্তু দোয়ার মতো হাত উঠিয়ে কুনূত পড়তেন না।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় পদ্ধতি সম্পর্কে কথা এই যে, কুনূত যদি রুকুর আগে পড়া হয়, যেমন বিতরের কুনূত, তো রুকুর আগের হালত যেহেতু কিয়ামের হালত, আর কিয়ামের হালতে হাত বাঁধা সুন্নত তাই এ সময় হাত বাঁধা থাকবে। পক্ষান্তরে কুনূতে নাযিলা যেহেতু রুকুর পর কওমার হালতে পড়া হয় আর কওমার হালতে হাত বাঁধা সুন্নত নয় এজন্য এ কুনূত হাত ছেড়ে পড়া হবে।
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, নিয়ম হল, এক বারে একটি প্রশ্ন করা। কেননা, আমাদের এই কার্যক্রম সকলের জন্য। একাধিক প্রশ্ন করা হলে মাসআলার শিরোনাম লিখতে সমস্যা হয়। ব্যবহারকারীরা মাসআলা খুঁজে পেতে সমস্যা হয় ইত্যাদি। তাই আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে নিয়ম মেনে দ্বিতীয় বার প্রশ্ন করুন।
আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৪২৩৮৪

জানাজায় ভুলে চারের অধিক তাকবির বললে কি নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে?


৪ অক্টোবর, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৪৬৫৮৩

জুমার নামাজের হুকুম


২২ নভেম্বর, ২০২৩

ঢাকা ১২১৭

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম

৪০৫৮৫

রুকুতে কি উভয় পায়ের টাখনু মিলিয়ে রাখা সুন্নত?


১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

পটুয়াখালী

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৫০৮৫৫

মিম্বার ছাড়া কি খুতবা দেওয়া জায়েজ হবে?


৫ জানুয়ারী, ২০২৪

Jharka

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy