প্রশ্নঃ ২৪১৩৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কিয়াম করা কি ইসলামের শরিয়তে জায়েজ আছে নাকি নাই?,
২৫ অক্টোবর, ২০২২
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মিলাদ-কিয়াম এর শরয়ী বিধান
‘মিলাদ’ এর শাব্দিক অর্থ - জন্মকাল।
‘মিলাদ’ এর পারিভাষিক অর্থ- কয়েক জন বা কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে হুজুর (সাঃ) এর জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করা।
মিলাদ অনুষ্ঠান উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে অত্যান্ত বরকতময় ও ফযিলতের অনুষ্ঠান। মুসলমান জাতি হিসেবে প্রত্যেকের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আদর্শে আদর্শিত হওয়া অত্যান্ত জরুরী, আর তজ্জন্যে রাসূল (সাঃ) এর জীবনী আলোচনা করাও জরুরী। কেননা ইসলাম হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ও একটি মহান শিক্ষা। আর রাসূল (সাঃ) হচ্ছে তার বাস্তবরুপ। যেমনিভাবে কালামে পাকে ইরশাদ হচ্ছে -
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآَخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের জীবন চরিত্রে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ’। ঐ সব লোকদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল (এর মঙ্গল) প্রত্যাশা করে, এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে।(সূরা-আহযাব-২১)
তেমনিভাবে আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আখলাক সম্পর্কে জিজ্ঞাসার জবাবে বলেছিলেন-
فَإِنَّ خُلُقَ نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وَسَلَّمَ كَانَ القُرآنَ
অর্থাৎ-‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর চরিত্র ছিল হুবহু আল-কোরআন’। (মুসলিম- হাঃ নং-৭৪৬)
সুতরাং মিলাদ তথা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবনী আলোচনার মাধ্যমে আমাদেরকে তাঁর পূর্ণ জীবনী সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে তাঁর আদর্শে আদর্শিত হয়ে জীবনের সফলতা অর্জন করা আবশ্যকীয় কর্তব্য।
বর্তমানের প্রচলিত মিলাদ
পূর্বোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, মিলাদ হচ্ছে রাসূলে কারীম (সাঃ) এর জীবনী আলোচনা করা এবং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে- আলোচনার মাধ্যমে রাসূল (সাঃ) জীবনী আদর্শ জানা ও তাঁর আদর্শে আদর্শিত হওয়া।
মূলত‘মিলাদ অনুষ্ঠান ও তার উদ্দেশ্য’ বিবেচনা করলে এটা ছিল একটা উৎকৃষ্টধর্মীয় অনুষ্ঠান। মুসলিম সমাজের জন্য ছিল অত্যন্ত উপকারী ওখুবই প্রয়োজনীয়।কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে বর্তমানে আমাদের সমাজে প্রচলিত মিলাদ একটা রেওয়ায়েজী অনুষ্ঠান ছাড়া আর কিছুুই নয়।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আদর্শ ও জীবনী বর্ণনার পরিবর্তে কয়েকজন লোক এক জায়গায় জড়ো হয়ে কিছু কল্প-কাহিনী ও সুরে সুর মিলেয়ে কিছু শে’র (আরবী কবিতা) আবৃত্তি করা,কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে সবাই দাড়িয়ে যাওয়া ও আল্লাহ,রাসূল ও সাহাবায়ে কেরামের শিক্ষা দেয়া আদব লেহাজের সাথে দুরুদ-সালাম পাঠ করারপরিবর্তে নিজের মনগড়া,অশুদ্ধ ও বিকৃত ভাবে সালাম পেশ করা যা আদবের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। অতঃপর মজমা শেষে রুসুম অনুযায়ী, ফিরনী, জিলাপী বা অন্য কোন খাবার বিতরণ করাএবং আগত আলেমকে কিছু নাজরানা পেশ করা।
বস্তুত উদ্দেশ্য ও পন্থা উভয় দিক থেকে বিকৃত করে মিলাদের নামে নব্য আবিকৃত একটি রেওয়ায়েজকে বর্তমানে জাতির সামনে পেশ করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে ‘শুধু ধনাট্য ব্যক্তিদের সম্পদ প্রদর্শন, ব্যতিত মুসলিম উম্মাহর জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের (অন্য) কোন কল্যান তো নিহিত নেই’ই, উপরন্তু বিদ’আতী কর্মের দ্বারা আমল নষ্ট হচ্ছে। আর যারা এটা করে তাদের মধ্যে অনেকেই যেহেতু এই বিদ’আতকে বিদ’আত বলে মনে করছে না বরং এটাকেই দ্বীন বলে মনে করছে তাই সেদিক থেকে আকীদাও নষ্ট হচ্ছে। আর এভাবেই সাধারণ মুসলমানেরা দিন দিন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, মুহাদ্দিস, মুফাস্সির ও আলেম বলে দাবীদার অনেকে’ই নিজেরা এই বিদ’আতে লিপ্ত ও জনসাধারনকেও তার প্রতি ধাবিত করছে। উপরন্তু যাঁরা ইহা করছে না বা তার সমর্থনও করে না তাঁদেরকে ওহাবী-কাফের বলে গালি-গালাজ করছে। আর নিজেরা সুন্নি নামের অন্তরালে সুন্নাতকে দাফন করে দিয়েবিদ’আতের নর্দমায় ডুবে রয়েছে।
আর এই প্রচলিত মিলাদকে জায়েজ বলে প্রমাণ করার লক্ষ্যে অনেকেই এই যুক্তি দিয়ে থাকে যে, মিলাদে পঠিত শে’র গুলোর মর্মার্থ তো খুবই ভাল। তাই এগুলো পড়লে দোষের কি আছে? কিন্তু আমরা বলব যে, যদিও এখানে ঐ শে’র অর্থাৎ- আরবী কবিতা গুলোর মমার্থ খুবই ভালো, তথাপিও তা ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়, বরং বিদ’আত বলে পরিগণিত হবে। যার কারণ সমূহ আমরা সামনে উল্লেখ করবো। (ইনশাআল্লাহ)
প্রচলিত মিলাদ বিদ’আত কেন?
আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি যে, ইসলাম কোন মানুষের মনগড়া জীবন বিধানের নাম নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল (সাঃ)এরমাধ্যমে পাওয়া, সাহাবায়ে কেরামের আদর্শে বাস্তবায়িত এক জীবন বিধানের নাম’ই হচ্ছে- ইসলাম।আর এই ইসলামকে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে রাসূল(সাঃ)এর বিদ্যমান থাকাবস্থায়, আর ঘোষণা করেছেন-
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকেপরিপূর্ণকরে দিলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।(সূরা-মায়েদা-০৩)
এখন একটি প্রশ্ন দাঁড়ায় যে, যদি রাসূল (সাঃ)এর বিদ্যমান থাকাবস্থায়’ই দ্বীন পরিপূর্ণ হয়ে থাকে তাহলে- পরবর্তী সোনালী তিনযুগেরঅনুস্মরণ জায়েয হয় কিভাবে?অথচ দ্বীন তো পূর্বেই পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছ।এর উত্তরে আমরা বলব রাসূল (সাঃ) তাঁহার পরবর্তী সময়ের জন্য শরীয়তের পথ প্রদর্শন করতে গিয়ে বলেন-
تركت فيكم امرين لن تضلوماتمسكتم بهما كتاب الله وسنة رسوله
আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতদিন তোমরা এই দুটিকে আঁকড়ে ধরে রাখবে, ততদিন পর্যন্ত তোমরা পদস্খলিত হবে না। তাদের একটি হলো- আল্লাহর কিতাব (কুরআন শরীফ) অন্যটি তাঁর রাসূলের হাদিস।(মেশকাত-৩১)
সুতরাং-শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে কোরআন যেমনিভাবে পালনীয় ঠিক তেমনিভাবে হাদীসও অনুসরণীয়, যেমনিভাবে কালামে পাকে ইরশাদ হচ্ছে-
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
অর্থাৎঃ- বলুন যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুগত্য কর।(সূরা-আল ইমরান-৩১)
এমনিভাবে সূরা নিসা’র- ৮০ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছেÑ
مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ
অর্থ-যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল সে আল্লাহরইআনুগত্য করল।
(সূরা নিসা-৮০)
বর্ণিত আয়াতদ্বয়ের মাধ্যমে এটাই প্রতিয়মান হয় যে,কুরআনের অনুসরনের সাথে সাথে রাসূল (সাঃ) তথা হাদিসের অনুসরন করাও জরুরী। আর সেই হাদীসের ভাষ্যানুসারেই পরবর্তী সোনালী তিন যুগের অনুসরন জায়েয এবং অপরিহার্য, যেমন হাদীসে এসেছে-
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ
আমার পর যারা বেঁচে থাকবে তাঁরা অনেক মতানৈক্য দেখতে পাবে। তখন তোমাদের উপর জরুরী হলো আমার সুন্নত ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা।(আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ,তিরমীযি, ইবনে মাজাহ-৫পৃঃ)
এমনিভাবে অন্যত্র রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন-
خَيْرُ أُمَّتِي الْقَرْنُ الَّذِينَ يَلُونِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ
অর্থাৎ- সর্বোত্তম যূগ আমার যূগ এপর তৎপরবর্তী সংলগ্নযূগ অতঃপর তৎপরবর্তী সংলগ্ন যূগ।-(বুখারী শরীফ-১/৫১৫.মুসলিম.২/৩০৯পৃঃ)
সুতরাং হাদীসদ্বয়ের ভাষ্যমতে বুঝা যাচ্ছে যে, রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের যূগের পরে আরো দুই যূগ অর্থাৎ তাবেয়ীন ও তাবেয়ীগণের যূগও অনুসরণীয়, যার সময় সীমা ২২০হিঃ সাল পর্যন্ত। এই সময়ের ভিতর শরীয়তের কোন আমল পাওয়া গেলে তা গ্রহণযোগ্য হবে,নচেৎ তা পরিত্যাজ্য বলে বিবেচিত হবে।
এখন দেখার বিষয় হলোআমাদের আলোচ্য বিষয় তথা প্রচলিত মিলাদ, ২২০হিঃ সালের মধ্যে এর কোন অস্তিত্ব ছিল কি না? নাকি এটা ২২০ হিঃ সালের পর নব্যআবি®কৃত এমন একটি আমল যা শরীয়তে পরিত্যাজ্য।
¬
সীরাতের কিতাবাদি থেকে প্রচলিত মিলাদের যেতথ্য আমরা পাই তা নিম্নরূপ:-
ইসলামের ইতিহাসে পূর্ণ ৬০০ বৎসরের মধ্যে মিলাদ মাহফিল নামে কোন অনুষ্ঠান বা এরকম কোন ইবাদতের নাম-গন্ধও ছিল না। বরং ৬০৪ হিঃ সালে ইরাকের মুসিল শহরে বাদশাহ ‘আবু সাঈদ মুজফ্ফর কুকুবুরী (মৃতঃ-৬৩০হিঃ)দুনিয়া লোভী,পেটুক দরবারী আলেম ‘আবুল খাত্তাব উমর ইবনে দিহইয়া’ এর মাধ্যমে সর্বপ্রথম প্রচলিত মিলাদের সূচনা করেন। ১২ই রবিউল আউয়ালকে কেন্দ্র করে আনন্দ উৎসব ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্য ইসালে সওয়াব এর উদ্দেশ্যে এই প্রচলিত মিলাদ ও যিয়াফতের আয়োজন করা হয়।(ইবনেকাসীর-১৩/১৩৬,তারীখে ইবনে খাল্লেকান-৩/৫৩৭পৃঃ)
প্রচলিত মিলাদ মাহফিলের উদ্ভাবক ‘মৌলভী আবুল খাত্তাব ওমর ইবনে দিহয়া’ সম্পর্কে জগৎ দ্বিখ্যাত আলেমে দ্বীন হাফেজ ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) লিখেন-‘সে পূর্ববর্তী ইমাম আলেম-উলামাদের সাথে বেয়াদবী করত। সে ছিল অশ্লীলভাষী, অহংকারী, নির্বোধ এবং দ্বীন সম্পর্কে সংকীর্ণমনা ও অলস প্রকৃতির।তাঁর সম্পর্কে আল্লামা ইবনুন নাজ্জার (রহঃ) মন্তব্য করেন যে, আমি এই মৌলভীর মিথ্যাচার ও দুর্বলতা সম্পর্কে লোকদের একমত দেখেছি।(লিসানুল মিযান-৪/২৯৬)
প্রচলিত মিলাদ বিদ’আত হওয়ার দলীলসমূহ ঃ
প্রচলিত মিলাদ বিদ’আত হওয়ার প্রথম দলীলঃ-
খায়রুল কুরুন তথা ইসলামের প্রথম সোনালী তিন যুগে না থাকা।
সম্মানিতপাঠকপূর্বোক্ত আলোচনা দ্বারা ইহাই প্রতিয়মান হয় যে,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কর্তৃক স্বীকৃত ইসলামের প্রাথমিক তিন স্বর্ণ যূগের মধ্যে এই প্রচলিত মিলাদের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। বরং স্বীকৃত তিন যুগঅতিবাহিত হওয়ারআরো প্রায় ৪০০ বছর পর এমন যুগে এই মিলাদের উদ্ভাবন হয়,যে যুগ সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) এর কোন স্বীকৃতিতো নাই’ই বরং ‘তারপর হবে মিথ্যার ছড়াছড়ি’ বলে রয়েছে কঠোর হুশিঁয়ারি। উপরন্তু যার সম্পর্কে রয়েছে মিথ্যা, অহংকার ও লোভের অভিযোগ। এমন দুনিয়া লোভী আলেম দ্বারা উদ্ভাবিত কোন অনুষ্ঠান যার অস্তিত্ব ইসলামের প্রাথমিক স্বীকৃত তিন যুগে ছিল না, এমন আমল শরীয়তে কিছুতেই স্বীকৃত হতে পারে না।
সুতরাং বর্তমানে প্রচলিত মিলাদ মাহফিল কিছুতেই স্বীকৃত হতে পারে না।বরং তা সম্পূর্ণ বিদ’আত ও অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
প্রচলিত মিলাদ বিদ’আত হওয়ার দ্বিতীয় দলীল ঃ
এমন কোন কাজ করা রাসূল (সাঃ) এর সময় প্রয়োজন থাকা সত্তে¡ও যা তিনি করেননি।
ঐ সমস্ত কাজও বিদ’আতের অন্তর্ভুক্ত ‘যার প্রয়োজন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সময়েও ছিল এবং তা বাস্তবায়নে কোন প্রকার বাধাও ছিল না। তথাপিও রাসূলুল্লাহ(সাঃ) নিজে কখনো ঐ কাজ করেননি বা সাহাবা কেরামকেও আদেশ বা ইঙ্গিত করেননি, এবং সাহাবা কেরামগণও পরবর্তীতে ঐ কাজ কখনো করেননি।
সুতরাং-আমরা এ নীতিমালার দৃষ্টিকোন থেকেও যদি ‘বর্তমানে প্রচলিত মিলাদ’ এর পর্যালোচনা ও বিচার করি তথাপিও তা সম্পূর্ণ বিদ’আত বলে বিবেচিত হচ্ছে।
কেননা যদি বলা হয় যে, মিলাদ রাসূল (সাঃ) এর প্রতি দুরুদ শরীফ পড়া বা মহাব্বত প্রকাশ করনের জন্য পড়া হয়, তাহলেতো রাসূল (সাঃ) এর প্রতি দুরুদ পড়া বা মহাব্বত প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা তখনও ছিল। কিন্তু তজ্জন্যে রাসূল (সাঃ), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন,তাবে’ তাবেয়ীনদের কেউই প্রচলিত এ মিলাদের সুরতে দুরুদ পাঠ বা মহাব্বত প্রকাশ করেননি।আর প্রয়োজন থাকা সত্বেও তাঁরা যা করেননি পরবর্তীরা তা করাইবিদ’আত, যা সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য।
অতএব, বর্তমানে প্রচলিত মিলাদও বিদ’আত ও সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য।
প্রচলিত মিলাদ বিদ’আত হওয়ার তৃতীয় দলীল ঃ
শরীয়ত কর্তৃক স্বাধীন কোন বিষয়কে নিজেরা সীমাবদ্ধ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করা।
প্রচলিত মিলাদ কে যদি আমরা তর্কের খাতিরে কিছুক্ষণের জন্য জায়েজ বলে মেনেও নেই,তথাপিও তা বেশি থেকে বেশি মুস্তাহাব বা নফল আমল বলে গণ্য হবে। আর এমন কোনমুস্তাহাব বা নফল আমল যার জন্য শরীয়ত কর্তৃক কোন সীমাবদ্ধতা নির্ধারিত নেই।বান্দা নিজের পক্ষ থেকে তাঁর জন্য কোন সীমাবদ্ধতা বা তাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা জায়েয নেই।অথচ বর্তমানে প্রচলিত মিলাদের মধ্যে নিজের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নিয়ম নীতি নির্ধারণ ও তা মানার উপর জোর দেয়া হয়। যেমনঃ- প্রথমে একজন কিছু আবৃত্তি করবে, অতঃপর সবাই সুরে সুর মিলেয়ে পড়বে, অতঃপর কিছুক্ষণ বসে আবার দাঁড়িয়ে মাঝে মাঝে আবার বাংলা, উর্দূ, ফারসী বা আরবী কবিতার পংক্তি আবৃত্তি করা ইত্যাদি।যা শরীয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা হয়নি বরং (সোনালী তিন যূগের) পরবর্তীরা তা নির্ধারণ করেছে।
আর প্রত্যেক ঐ নিয়ম-শৃঙ্খলা যা ইসলামের অনুস্মরণীয় প্রাথমিক তিন যূগের পরবর্তীরা নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে নির্ধারণ করেছেতা অবশ্যই বিদ’আত ও পরিত্যাজ্য। সুতরাং বর্তমানে প্রচলিত মিলাদ বিদ’আত ও পরিত্যাজ্য।
প্রচলিত মিলাদ বর্জনীয় হওয়ার চতুর্থ দলীল ঃ-
মুস্তাহাব হিসেবে স্বীকৃত কোন আমলকে এমন গুরুত্ব সহকাওে পালন করা, যে মানুষ ক্রমান্বয়ে তাকে জরুরী ও অত্যাবশ্যকীয় মনে করতে থাকে।(সিয়ায়াহ-২/২৬৫ লাহোর)
এখানেও আমরা যদি প্রচলিত মিলাদকে জায়েয ও নফল হিসেবে মেনে নেই। তথাপিও বর্তমানের অবস্থানুযায়ী তা বিদ’আত বলে গণ্য হবে। কেননা বর্তমানে প্রচলিত মিলাদকে মানুষ এত গুরুত্ব ও অত্যাবশ্যকীয় মনে করতে শুরু করেছে, যে তা ওয়াজিব বা ফরযের চেয়েও জরুরী মনে করছে।সমাজে কেউ দাড়ি না রাখলে (যা ওয়াজিব) নামাজ না পড়লে (যা ফরয)এবং সুদের লেনদেন (যা সম্পূর্ণ হারাম) এর সাথে জড়িত থাকলেওএত খারাপ মনে করে না, তাকে নিয়ে এত সমালোচনা করা হয় না। অথচ যে ব্যক্তি প্রচলিত মিলাদ পড়ে না তাকে নিয়ে নানা সমালোচনা ও বিভিন্ন ভাবে তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়, এমনকি মিলাদ না পড়লে মসজিদ থেকে বের করে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়।যা কিনা উপরে বর্ণিত হারাম কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও করা হয় না।বরং হারাম কাজ থেকে বাঁচা ও নামাজআদায় করা ফরয। আর বর্তমানে প্রচলিত মিলাদ না পড়নেওয়ালাদের প্রতি উক্ত ফরয আদায় করার চেয়েও বেশি চাপ সৃষ্টি করা হয়।অবস্থাদৃষ্টে বুঝা যায় তারা মুস্তাহাবকে ফরযের চেয়েও বেশি জরুরী মনে করছে। উপরন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, এই মিলাদ মাহফিল মসজিদ সমূহে হয়ে থাকে, অথচ ইবনে মাসউদ (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদল লোককে মসজিদে থেকে শুধুমাত্র এজন্যই বের করে দিয়েছেন যে, তারা মসজিদের উচ্চস্বরে لآ اله الا اللهও দুরূদ পড়তেছিল। এবং তিনি তাদেরকে বললেন যে, আমি তোমাদেরকে কেবল মাত্র বেদ’আতীই মনে করি। (মিনহাজুল ওয়াজিহ-১২৭)
ভাবার বিষয় এই যে, ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর মতসাহাবী মসজিদের ভেতর জোরে জিকিরকারী ও জোরে দুরূদ পাঠকারীদেরকে বিদআতী মনে করে মসজিদ হতে বের করে দিয়েছিলেন, অথচ জিকির ও দরূদ কোরআন-হাদীস দ্বারা প্রমানিত কিন্তু মসজিদে উচ্চস্বরে করার কারনে তা তিনিবিদ’আত মনে করেছেন। জিকির ও দরূদের মত প্রমানিত আমলগুলো’ই যখন সম্মিলিতভাবে, মসজিদে, উচ্চস্বরে বিত’আত, তখন ‘প্রচলিত মিলাদ’ শরীয়তে যার কোন ভিত্তি’ই নাই,তা কি কখনো সম্মিলিতভাবে, মসজিদে, উচ্চস্বরে জায়েয হতে পারে? অবশ্যই না। কিন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, সম্মিলিতভাবে মসজিদে উচ্চস্বরে জিকির ও দরূদকে বিদ’আত মনে করে সম্মিলিতভাবে উচ্চস্বরে জিকিরও দরূদ পাঠ কারীকে ইবনে মাসউদ (রাঃ) মসজিদ হতে বের করে দিয়েছেন। আর বর্তমানে যারা বিদ’আত হতে বেঁেচ থাকার উদ্দেশ্যে মসজিদে উচ্চস্বরে মিলাদ পড়ে না বিদ’আতীরা তাদেরকে মসজিদ হতে বের করে দেয়। যা অত্যান্ত বাড়াবাড়ির শামিল। আর এই বাড়াবাড়ির পরিবেশ এ জন্যই সৃষ্টি হয়েছে যে, বর্তমান সমাজে মূর্খতা বেড়েগেছে আর এ মূর্খতার কারনেই মানুষ মুবাহ, মুস্তাহাব এমনকি বিদ’আত সমূহ নিয়ে বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। তর্কের খাতিরে অসম্ভবকে মেনে নিলেও তা বেশি থেকে বেশি মুস্তাহাব। আর কোন জাতি যখন মুস্তাহাব কোন আমলকে জরুরী ও অত্যাবশ্যকীয় মনে করতে শুরু করবে তখন ঐ মুস্তাহাব আমলটি ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব হয়ে পড়ে।
সুতরাং- পরিস্থিতিদৃষ্টে বর্তমানের প্রচলিত মিলাদ ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব।
প্রচলিত মিলাদ বিদ’আত হওয়ার পঞ্চম দলীল ঃ-
আহŸান করেঐক্যবদ্ধভাবে (জামা’য়াতে) নফল ইবাদত আদায় করা।
প্রচলিত মিলাদকে যদি আমরা কিছুক্ষণের জন্য জায়েয ও নফল হিসেবে মেনেও নেই,তথাপিও বর্তমানে প্রচলিত মিলাদ নাজায়েয ও পরিত্যাজ্য বলে বিবেচিত হয়। কেননা প্রচলিত মিলাদেঘোষনা দিয়ে কিছু লোক এক স্থানে একত্রিত হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে (জামায়াতে) মনগড়া ভাবে কিছু কবিতা আবৃত্তি করা হয় ও সমস্বরে নিজের খেয়াল খুশিমতো কিছু সালাত-সালাম পাঠ করা হয়, অথচ ইসলামের সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ইবাদত নামাযের ক্ষেত্রেওফোকায়ে কেরাম গণের ঐক্যমত হলো যে নফল নামায জামায়াতে পড়া মাকরুহ।
সুতরাং-যেখানে নফল নামাযের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত জামাতে(ঐক্যবদ্ধভাবে) আদায় করা মাকরুহ।সেখানে বর্তমানের প্রচলিত মিলাদ (শরীয়তে যার কোন ভিত্তিই নেই) তা কিভাবে জায়েয হতে পারে?[
অতএব, বর্তমানে প্রচলিত মিলাদ সম্পূর্ণরুপে বিদ’আত ও পরিত্যাজ্য।
প্রচলিত মিলাদ বিদ’আত হওয়ার ষষ্ঠ দলীল ঃ-
রাসুলের শানে বেয়াদবি।
বর্তমানে প্রচলিত মিলাদ বিদ’আত ও পরিত্যাজ্য হওয়ার অন্য আরেকটা কারণ হলো আকীদা গত দিক থেকে ভ্রান্তিতে নিম্মজ্জিত হওয়া, যথা:-রাসূল (সাঃ) কে হাজির-নাজির মনে করে তার সামনে চিল্লা-চিল্লি করে সালাত সালাম পাঠ করা।
রাসূল (সাঃ) প্রচলিত মিলাদ-মাহফিলে উপস্থিত হন না এটা’ই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়া’তের আকীদা এবং এই আকীদার মাঝেই রয়েছে রাসূল (সাঃ) এর শানে তা’যীম ও সন্মান এবং ইহাই কোরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণীত সহীহ আকীদা।
উপরন্তু যারা ‘মিলাদ-মাহফিলে রাসূল (সাঃ) আগমন করেন’ বলে আকীদা পোষণ করেন, তাদের এই আকীদা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। তাদের এই আকীদার পক্ষে কোরআন-হাদীস থেকে কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ তো নাই’ই বরং উক্ত আকীদা কোরআন-হাদীসের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
তর্কের খাতিরে সত্যকে পাশ কাটিয়ে কিছুক্ষণের জন্য যদি মেনেও নেই, যে রাসুল(সাঃ) মিলাদ মাহফিলের মজলিসে উপস্থিত হন,তবে এখানে কয়েকটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।যথা:-রাসূল (সাঃ) কি স্বশরীরেউপস্থিত হন, নাকি রুহানিভাবে? যদি বলা হয় যে স্বশরীরে উপস্থিত হন,তবে আমরা বলব এই আকীদা কুরআন-হাদীসের সাথেসম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক কেননা হাদীস শরীফে এসেছে- পৃথীবির বুকে কিছু ফেরেশতাকে আল্লাহ তায়ালা এজন্যই নির্ধারিত করে রেখেছেন যে,যেখানে’ই আমার উম্মতেরা আমার উপর দুরুদ পাঠ করবে, তারা আমার নিকট তা পৌছে দিবে। আরেক স্থানে রাসূল (সাঃ) কিয়ামত পর্যন্ত সর্বদা রওয়াজা মুবারকে থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে সেখান থেকে রওয়াজা খালি করে অন্য কোথাও যাওয়ার কথা কোরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নেই। উপরন্তু ইহা ইন্দ্রিয় গ্রাহ্যও নয়। কেননা স্বশরীরে রাসূল (সাঃ) উপস্থিত হলে অবশ্যই উপস্থিত ব্যক্তিরা দেখতে পেত। কেননা স্বশরীরে রাসূল (সাঃ) কে সাহাবায়ে কেরামগণও দেখতে পেতেন।উপরুন্তু এমন আকীদা পোষনকারী মুশরীকদের কাতারে শামিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা সে আল্লাহর খাস সিফাতের সাথে অন্যকে অন্তর্ভূক্ত করার দ্বারাআল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করেছে।
আর যদি কেউ এ দাবি করেন যে, স্বশরীরে নয় বরং রুহানীভাবে উপস্থিত হন- তখন বলা হবে যে, যদি রাসূল (সাঃ) এর রুহ মোবারক মিলাদ মাহফিলে এসে থাকে। তাহলে রওজায় থাকা দেহ নি®প্রান হয়ে পড়ে থাকবে,আর এটাআহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদা হায়াতুন্নাবী’র সম্পূর্ণ বিপরিত ও রাসূলের শানে চরম বেয়াদবী।
এরপরওযদি তর্কের খাতিরে কিছুক্ষণের জন্য তাদের কথাকে মেনে নেই তবে বলব।
একই সময়ে বিভিন্ন স্থানে একসাথে মিলাদ আনুষ্ঠান হয়ে থাকে তো হযরতের রুহ মোবারক একসাথে কয় স্থানে হাজির হবে।
দ্বিতীয়ত- এর পরও যদি মেনে নেয়া হয় যে হুজুর পাক (সাঃ) মিলাদ অনুষ্ঠানে হাজির হয় তবে বলব, সূরা হুজুরাত-এর ২নং আয়াতে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন:-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَنْ تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
অর্থাৎ- হে ঈমানদার গণ তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদেরকন্ঠস্বর উচুঁ করো না, এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উচুস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উচুস্বরে কথা বলো না।এতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে অথচ তোমরা টেরও পাবে না।-(সূরা-হুজরাত-আয়াত-২)
উক্ত আয়াতের তাফসীরে কাজী আবুবকর ইবনে আরাবী (রহঃ) বলেন! রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সম্মান ও আদব তাঁর ওফাতের পরেও জীবদ্দশার ন্যায় ওয়াজিব। তাই কোন কোন আলেম বলেন যে, তাঁর পবিত্র রওজার সামনেও উচ্চস্বরে সালাম কালাম করাআদবেরখেলাফ।(মা’আরেফুল কুরআন -১২৭৬)
যদি রাসুলের সম্মানার্থে রওজার সামনে উচ্চস্বরে সালাম কালাম করা বে’য়াদবী হয়েথাকে তবে বর্তমানে প্রচলিত মিলাদে হুজুর (সাঃ) কে হাজির-নাজিরজেনে তাঁর সামনে উচ্চস্বরে চিল্লা-চিল্লি করে সালাত সালাম পাঠ করা তো আরো বড় বে’আদবী, যা রাসূলের শানে ধৃষ্টতা প্রদর্শনেরশামিল।
আর যা রাসূলের শানে বে’আদবীও ধৃষ্টতা প্রদর্শনের শামিল তা জায়েয নেই।
অতএব বর্তমানে প্রচলিত মিলাদ ও জায়েয নেই।
তৃতীয়তঃ- রাসূল(সাঃ) যদি হাজির হয়েই থাকে তাহলেকখন হাজির হলো মিলাদের শুরুতে, মাঝে না শেষে? যদি বলা হয় যে তাঁকে তো দেখা যায় না। তাহলে বলব যে যদি দেখতে নাই-ই পাও তবে তাঁর আগমনের কারনে সঠিক সময়ে দাঁড়িয়ে তাকে সন্মান প্রদর্শন করে তাঁর প্রতি আদব রক্ষা করবে কিভাবে? কেননা মিলাদ মাহফিলে কিয়াম করা হয় মাহফিলের শেষ দিকে। এমতাবস্থায় রাসূলের (সাঃ) যদি আগে চলে আসেযে অবস্থায় সবাই বসে রইল এমতাবস্থায় কি রাসূলের শানে বে’আদবী হবে না? আর যদি রাসূল (সাঃ) পরে আসে যে অবস্থায় সবাই দাঁড়িয়ে ছিল। তাহলে তা রাসূলের আগমনের উদ্দেশ্যে দাঁড়ানো হলো না। এরপর রাসূল (সাঃ) আবার কখন ফিরে গেলেন? যদি বলা হয়, কিয়াম থেকে বসার পূর্বে। তাহলে বলব রাসূল (সাঃ) চলে গেল অথচ তোমরা এমনিতই দাঁড়িয়ে রইলেযা কিনা বেহুদা কাজ। আর যদি বলেন যে কিয়াম থেকে বসার পর। তাহলে বলব, তাঁর রওজার সামনে’ইযখন উচ্চস্বরে সালাম করাও আদবের খেলাফ, তবে তার সামনে মনচাহি মত ইচ্ছে হলেই দাড়িয়ে যাওয়া, আবার ইচ্ছে হলে’ই বসে যাওয়া,ইহা রাসূলের শানে সম্মান নয় বরং তাঁর সাথে ধৃষ্টতা প্রদর্শনের শামিল। আর যা রাসূলের শানে ধৃষ্টতা প্রদর্শনের শামিল তা থেকে বেচেঁ থাকা জরুরী।সুতরাং কিয়াম থেকেও বেচেঁ থাকা জরুরী।
এর পরও যদি কেউ বলেন যে, না বরং রাসূল (সাঃ) যখন আসেন আমরা তখনই দাঁড়াই আর যখন চলে যায় তখন-ই বসে পড়ি, তবে বলব যে- এতো আপনাদের মনগড়া কথা। আপনাদের এই মনগড়া আ‘মাল ও মনগড়া কথার সমর্থনে কোন সহীহ হাদীসতো দূরের কথা যয়ীফ (দুর্বল) হাদীসও পেশ করতে পারবেননা। আর তর্কের খাতিরে মেনে নিলেও যে, রাসূল (সঃ) যখন আসে তখন‘ই তারা দাঁড়ায় ও যখন চলে যায় তখন‘ই তারা বসে যায়। তারপরও কিয়ামের উক্ত পদ্বতি ও তার বৈধতা সম্পর্কে সন্দেহ থেকে যায়। আর সন্দেহ যুক্ত বিষয় থেকে বেঁচে থাকাও জরুরী যেমন রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন-
الْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشَبَّهَاتٌ لَا يَعْلَمُهَا كَثِيرٌ مِنْ النَّاسِ فَمَنْ اتَّقَى الْمُشَبَّهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ
অর্থাৎ- হালাল সুস্পষ্ট, হারাম সুস্পষ্ট এদুটির মাঝে সন্দেহযুক্ত কিছু জিনিস রয়েছে। যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাকল সে তাঁর ঈমানেরহেফাযত করল।(বুখারী-১/১৩পৃঃ)
তেমনিভাবে আরেক হাদিসে আছে-
عَنْ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَسَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ الْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَ ذَلِكَ أُمُورٌ مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَدْرِي كَثِيرٌ مِنْ النَّاسِ أَمِنْ الْحَلَالِ هِيَ أَمْ مِنْ الْحَرَامِ فَمَنْ تَرَكَهَا اسْتِبْرَاءً لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ فَقَدْ سَلِمَ وَمَنْ وَاقَعَ شَيْئًا مِنْهَا يُوشِكُ أَنْ يُوَاقِعَ الْحَرَامَ كَمَا أَنَّهُ مَنْ يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى يُوشِكُ أَنْ يُوَاقِعَهُ أَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى أَلَا وَإِنَّ حِمَى اللَّهِ مَحَارِمُهُ
অর্থাৎ- হালাল জিনিস স্পষ্ট, হারাম জিনিস স্পষ্ট, হালাল-হারামের মাঝেকিছু সংশয়যুক্ত জিনিস রয়েছে, অনেকে জানে না এটা হালালের অন্তর্ভূক্ত না হারামের অর্ন্তভ‚ক্ত। সুতরাং যে ব্যাক্তি নিজের ঈমান-আব্রæ রক্ষার্থে এসব বস্তু পরিহার করবে সে নিরাপদে থাকবে, আর যে ব্যাক্তি এগুলোর মধ্যে হতে কোন কিছুতে লিপ্ত হবে, সে শীঘ্রই হারামেও লিপ্ত হবে।(তিরমিজি-১/২২৯পৃঃ)
সুতরাং-ঈমান আমলের হেফাযতের জন্য কিয়াম থেকে বেঁচে থাকা জরুরী।
এরপর কথা হল রাসূল(সাঃ) যদি মিলাদ-কিয়ামের মাহফিলে এসেই থাকে, তাহলে কেন আসে? মেজবানের আয়োজনকৃত খাবারের জন্য? অবশ্যই না (যা সবাই মানতে প্রস্তুত) তাহলে কেন? যদি বলা হয় যে সালাত-সালাম গ্রহণের জন্য। তাহলে তো তাদের এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অবৈধ ও ভ্রান্ত যা সহীহ হাদীসের সম্পূর্ণ বিপরীত, কেননা হাদীস শরীফে আছে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صلى علي عند قبري سمعته ومن صلى علي نائيا أبلغته
যে ব্যক্তি আমার রাওজার কাছে দূরুদ পড়ে আমি তা শুনতে পাই । আর যে ব্যক্তি দুরবর্তী স্থান হতে দূরুদ পড়ে সেটি দুর হতে আমার নিকট পৌছানো হয়।(মেশকাত ১/১৮৭পৃঃ)
যে পৃথিবীর যে প্রান্তে’ই রাসূল (সাঃ) এর প্রতি দুরুদ পড়া হয় তা রাসূল (সাঃ) নিকট পৌছানোর জন্য ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছে। রাসূল (সাঃ) গিয়ে তা আনতে হয় না।যেমনিভাবে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আরেক হাদীসে আছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন-
انللهملائكةسياحينفىالارضيبلغونىمنامتىالسلام-(النسائى.الدارمى)
অর্থ- আল্লাহ পাকের এমন এক দল ফেরেশতা রয়েছে, যারা দুনিয়া ভ্রমণ করে আমার উম্মতের সালাম আমার নিকট পৌছে দেয়।(মেশকাত-১/৮৬)
তেমনিভাবে হযরত আবু দারদা(রা)হতে বর্ণিত আরেক হাদীসে আছেতিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ (সাঃ)ইরশাদ করেন,জুমার দিনে তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কেননা এটা উপস্থিতির দিন। এ দিনে ফেরেশতাকুল উপস্থিত হয়ে থাকেন। তোমাদের যে কেউ’ই আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে নিশ্চই তার দরুদ আমার নিকট পেশ করা হয়,যতক্ষণ পর্যন্ত সে দরুদ থেকে অবসর না হয়।বর্ণনাকারি বলেন আমি বললাম,মৃত্যুর পরেও {কি দরুদ আপনার সমীপে পেশ করা হবে}? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জবাবে বললেন! {মৃত্যুর পরেও কেননা}আল্লাহ তায়ালার নবীদের দেহ ভক্ষণ করা মাটির প্রতি হারাম করে দিয়েছেন।সুতরাং আল্লাহ তায়ালার নবী সর্বদাই জীবিত, তাঁকেরিজিক দেয়া হয়।(ইবনে মাজা)
উপরোক্ত হাদীসসমূহ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, রাসূল (সাঃ) মিলাদানুষ্ঠানে উপস্থিত হন না, বরং ফেরেশতাদের মাধ্যমে সমগ্র দুনিয়াতে তাঁর উপর পঠিত দরুদ শরীফসমূহ তাঁর নিকট পৌঁছানো হয়।অতএব রাসূল(সাঃ) মিলাদানুষ্ঠানে হাজির হওয়ার যে আকীদা বিদ’আতীরা পোষণ করে থাকে।তাদের এই আকীদা সম্পূর্ণ অবৈধ ও ভ্রান্ত আর এই ভ্রান্ত ধারণার উৎপত্তিস্থল হচ্ছে বর্তমানের প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম। অতএব যেই কাজ ভ্রান্ত আকীদারদিকে নিয়ে যায় তা থেকে বেঁচে থাকা ওয়াজিব।
সুতরাং প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম থেকেও বেঁচে থাকা ওয়াজিব।
মূলত যারা মিলাদ-কিয়াম করে থাকে তারা এর জন্য এমন খোঁড়া যুক্তিই দিয়ে থাকে যা কুরআন-হাদীস দ্বারা তো প্রমাণিত নয়ই, উপরন্তু তাঁর বিপরিত হয়ে থাকে।
সর্বোপরি যে কাজ সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন,তাবে’তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহেদীনদের কেউ কখনোকরেন নি।জাল হাদীস,অপব্যাখ্যা আর খোঁড়া যুক্তির মাধ্যমে তা কখনো শরীয়ত স্বীকৃত আমল হতে পারে না।হ্যাঁ কিছু পয়সা কামানো ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হতে পারে মাত্র। কিন্তু দুনিয়ার অন্যান্য মানুষেরা দুনিয়াবী পন্থায় আরো বেশী পয়সা উপার্জন করে, আরো ভালো খায়। যদি পেট ও পিঠের চিন্তা এতোই হয়ে থাকে তবে দুনিয়ায় আরো অনেক পন্থা আছে। দ্বীন বিকৃত করার কোন প্রয়োজন নেই-আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন- আমীন।
قيام (কিয়াম( ও তার বর্জনিয়তা
قيام (কিয়াম(এর শাব্দিক অর্থ- দাঁড়ানো, দন্ডায়মানতা বা অবস্থান করা।(মু’জামুল ওয়াফী ৬৫৩পৃঃ)
পরিভাষায় কিয়াম বলতে বুঝায় - প্রচলিত পন্থায় কিছুক্ষণ মিলাদ পড়ার পর হঠাৎ সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে যাওয়া এবং মিলাদের মতই সুরে সুর মিলিয়ে ‘ইয়া নবী সালামুলাইকা,ইয়া রাসূল সালামুলাইকা’ বলে সালাম পেশ করা।
বর্তমানের‘প্রচলিত মিলাদের ন্যায় এই আরেকটি নিন্দনীয় ও পরিত্যাজ্য ফিৎনা হলো কিয়ামযা মিলাদের সাথেই সম্পৃক্ত।অনেকে ইহাকে দুরুদ শরীফ পড়ার আদব এবং অনেকে রাসূল(সাঃ) এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন বলেমনে করে থাকে।অবশ্যই মিলাদ-কিয়াম উভয়টি প্রবর্তন, প্রবর্তক ও উ™া¢বনের সময়ের দিক থেকে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু হুকুম অর্থাৎ বিদ’আত ও পরিত্যাজ্য হওয়ার ক্ষেত্রে উভয়টি সমপর্যায়ের। কেননা শরীয়তের চার দলীল তথা কোরআন,হাদীস,ইজমা, কিয়াসসহ ইসলামের প্রাথমিক তিন যূগে মিলাদেরমত এরও কোন অস্তিত্ব ছিল না।বরং ৭৫১ হিঃ সালে শাফেয়ী মাজহাবের বিখ্যাত বুযুর্গ খাজা তাকী উদ্দিন সুব্কী(রহঃ) এর খানকাহ্তে প্রসিদ্ধ ফাতেমীয় কবি ইয়াহইয়া ইবনে ইউসুফহুজুর (সাঃ) এর শানে আবেগপূর্ণ কিছু কবিতা আবৃত্তি করতে করতে যখন এই পংক্তিতে পৌছলে-
وانتنهص الاشراف عند سماعه- قياما صفوفا اوجسياعلى الركب -
অর্থাৎ-যদি সম্মানিত ব্যক্তিগণ রাসূল (সাঃ) এর শানে না’ত শ্রবণের সময় কাঁতার বন্দী হয়ে অথবা সওয়ারীর উপর একত্রিত হয়ে দাঁড়িয়ে যেতেন।
কবিতার মমার্থ বুঝে তাকি উদ্দিন সুব্কী (রহঃ)এর অবস্থার মধ্যে পরিবর্তন এসে যায় এবং তিনি হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়েন। তাঁর দেখাদেখি তাঁর সাথীরাওদাঁড়িয়ে যায়। তাঁর সারা জিন্দেগীতে এই একবারই তিনি কিয়াম করেছেন, এর পূর্বে বা পরে আর কখনো তিনি কিয়াম করেন নি। উপরন্তু তিনি ছিলেন ধ্যানমগ্ন মাযবুর (সূফী সাধকদের ধ্যানমগ্ন এক বিশেষ হালত) অবস্থায়। সে যাই হোক-কোন ব্যক্তি বিশেষের ঐ আমল যা কোরআন-হাদীস বা ইসলামের প্রথম তিন যূগের দ্বারা প্রমাণিত নয় তা কোনভাবেই অন্যের জন্য অনুস্মরণীয় হতে পারে না। উপরুন্তুযদি সেটাকে জরুরী মনে করা হয় তাহলে তা হবে অবশ্যই বর্জনীয় ও পরিত্যাজ্য।
কিয়াম’ বর্জনীয় হওয়ার দলীলসমূহ:-
কিয়াম বিদ’আত ও বর্জনীয় হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে ঐ কারণগুলোওঅন্তর্ভুক্ত যা আমরা প্রচলিত মিলাদ বিদ’আত হওয়ার কারণ এর ক্ষেত্রে উল্লেখ করেছি, উক্ত কারণ সমূহ ছাড়াও কিয়াম বিদ’আত হওয়ার আরো কিছু বাড়তি কারণ রয়েছে যা আমরা পূর্বের ছয়টির পর সপ্তম দলীল থেকে ক্রমান্বয়ে উল্লেখ করছি।
কিয়াম বর্জনীয় হওয়ার সপ্তম দলীল :-
রাসূল (সাঃ) কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা:-
হযরত আবু উমামা(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-
خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم متكئ على عصا فقمنا له فقال لاتقوموا كما يقومو الاعاجم بعظم بعضها بعضا (ابوداود)
একবার রাসূল (সাঃ) লাঠিতে ভর করে বের হলেন। আমরা (তাঁর সম্মানার্থে) সকলে দাঁড়িয়ে গেলাম। তখন রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে নিষেধ করতে গিয়ে বলেন, তোমরা (এভাবে) দাঁড়িও না যেমনিভাবে অনারবরা দাঁড়িয়ে একে অপরকে সম্মান প্রদর্শন করে।(আবু দাউদ,মেশকাত-২/৪০৩)
যারা মিলাদের পর কিয়াম করে থাকে তাঁরা বলে থাকে যে, মিলাদ মাহফিলে রাসূলের আগমনের সম্মানার্থে আদবের জন্য কিয়াম করে থাকে। অথচ আমরা তা মানি না। তর্কের খাতিরে যদি কিছুক্ষণের জন্য মেনেও নেই,তবে আমরা বলব যে, উপরোল্লেখিত হাদীসের দ্বারা জানা যায় যে,রাসূলে কারীম (সাঃ) তাঁর জীবদ্দশায়’ই তাঁকে দাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করাকে অপছন্দ ও নিষেধ করেছেন। ইন্তেকালের পর কি খুশি হবেন? অবশ্যই না বরং তাঁর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার কারণে আরো নারাজ হবেন।আর যে কাজে রাসূল(সাঃ) নারাজ হবেন তা অবশ্যই বর্জনীয়।
সুতরাং প্রচলিত কিয়ামও অবশ্যই বর্জনীয়।
কিয়াম বর্জনীয় হওয়ার অষ্টমদলীল :-
সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের খেলাফ(বিপরীত)ঃ-
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে-
لَمْ يَكُنْ شَخْصٌ أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ وَكَانُوا إِذَا رَأَوْهُ لَمْ يَقُومُوا لِمَا يَعْلَمُونَ مِنْ كَرَاهِيَتِهِ لِذَلِكَ
সাহাবায়ে কেরামের নিকট রাসূল (সাঃ) থেকে অধিক প্রিয় পাত্র আর কেউই ছিল না। তথাপিও তাঁরা রাসূল (সাঃ) কে যখন দেখতেন তখন দাঁড়াতেন না। কেননা তাঁরা জানতেন রাসূল (সাঃ) এটা অপছন্দকরেন।(তিরমিজি-২/১১৮পৃঃ)
রাসূলে কারীম (সাঃ) এর পর শরীয়তের সকল ক্ষেত্রে সাহাবায়েকেরামগণই আমাদের জন্য অনুসরণীয়।বর্তমানেরপ্রচলিত কিয়াম যেহেতু সাহাবায়ে কেরামগণের আদর্শের বাইরে আরশরীয়তের কোন কাজ তাদের আদর্শের বাইরে করাই বিদ’আত।আর যা বিদ’আত তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
সুতরাং-প্রচলিত কিয়ামও বিদ’আত ও অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
কিয়াম বর্জনীয় হওয়ার নবম দলীল :-
কুরআন-হাদীসে সম্বোধনকৃত শিক্ষার পরিপন্থি:-
আল্লাহ পাক রাববুল আলামীন তাঁর প্রিয় হাবীব (সাঃ)কে তাঁর বান্দাদের মাঝে পাঠিয়ে তাঁর মাধ্যমে’ই হেদায়েতের পথ প্রদর্শন করেছেন। তদুপরি রাসূল (সাঃ) এর মাধ্যমে বান্দাদের শিক্ষা দিয়েছেন ইবাদতের সঠিক নিয়ম-নীতি। আর রাসূল (সাঃ)এর প্রতি দুুরুদ ও সালাম পেশ করাও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সমূহের অন্যতম।
তাইতো হাদীসের কিতাব সমূহের পাতায় পাতায় উল্লেখ রয়েছে অসংখ্য দুরুদ শরীফ। আর সাহাবায়ে কেরামের জিন্দেগীর আমলের মধ্যে পাই, তা পালন করার বাস্তব নমুনা। তেমনিভাবে রাসূল (সাঃ) কে সালাম পেশ করা বা অন্য কোন প্রয়োজনে তাঁকেসম্বোধন করার ক্ষেত্রেও রয়েছে কুরআন-হাদীসের সঠিক দিক-নির্দেশনা। সমগ্র কুরআনুল কারীমে বা সহীহ হাদীস সমূহের কোথাও প্রচলিত কিয়ামে ব্যবহৃত শব্দাবলীيانبى سلامعليك (ইয়া নবী সালামু আলাইকা(,) يارسولسلامعليكইয়া রাসূল সালামু আলাইকা) দ্বারা সালাত সালাম পেশ করা বা অন্য কোন প্রয়োজনে রাসূল (সাঃ)কে يانبى(ইয়া নাবী) বাيارسول (ইয়া রাসূল) বলেসম্বোধনের প্রমাণ নেই। বরং কুরআনুল কারীমের যেখানে’ই আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন হুজুর(সাঃ)কে সম্বোধন করেছেন সেখানে’ই)يايهالنبيইয়া আয়্যুহান্নাবীয়্যূ)ياايهالرسول(ইয়া আয়্যূহাররাসূলু’( বলে সম্বোধন করেছেন। এমনিভাবেহাদীস শরীফেওসরাসরি শুধুমাত্র) يانبيইয়া নবী( বা يارسول (ইয়া রাসুল( বলে সম্বোধনের প্রমাণ নেই, বরং সাহাবায়ে কেরাম রাসুল(সাঃ)কে অত্যান্ত আদবের সহিত يانبىالله (ইয়া নাবীয়্যাল্লাহ) يارسولالله (ইয়া রাসূলুল্লাহ) বলেসম্বোধন করেছেন। অথচ প্রচলিত কিয়ামে কুরআন হাদীসেরঅনুসরণ বাদ দিয়ে নিজেদের মনগড়া বচন ভঙ্গিতে যেভাবে রাসূলে কারীম (সাঃ)কে সম্বোধন করা হচ্ছে তা আদৌ ঠিক নয়বরংতা সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের খেলাফ ও রাসূলের শানে বেয়া’দবী। আর যে জিনিস সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের খেলাফ ও রাসূলের শানে বেয়া’দবী তা থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরী।
সুতরাং প্রচলিত কিয়াম ও তারবচনভঙ্গি সমূহ থেকেও বেঁচে থাকা অত্যন্তজরুরী।
কিয়াম বর্জনীয় হওয়ার দশম দলিল : -
আরবী ব্যাকরণের দৃৃষ্টিতেও তা রাসূলের শানে সম্মানহানীর পর্যায়ের শামিল।
আরবী ব্যকরণ এর দৃষ্টিতেও কিয়ামে পঠিত বাক্যগুলোরাসূল(সাঃ)এর শানে সম্মানহানীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা আরবী ব্যাকরণ অনুযায়ী) يا‘ইয়া(হচ্ছেحرفندي(আহŸান সূচক শব্দ) যার অর্থ-‘হে’! এই (يا) ‘ইয়া’ অর্থাৎ সম্বোধন সূচক শব্দ দ্বারা যাকে সম্বোধন করা হয় তাকে বলা হয় (منادا) ‘মুনাদা’অর্থাৎ সম্বোধিত ব্যক্তি। আর ‘ইয়া’(يا) দ্বারা যখন কোন ব্যক্তিকে সম্বোধন করা হয় তখন ঐ সম্বোধিত ব্যক্তিকে সম্মানিত বুঝাতে তাঁর নামের পূর্বে ايها (আয়্যুহা) শব্দটি যোগ করতে হয়। যথাঃ-ياايهاالنبى(ইয়া আয়্যুহান্নাবীয়্যু)। এখানে মূলত শব্দটি ছিলيانبى (ইয়া নাবীয়্যূ) কিন্তু নবীজির শান ও সম্মান বুঝাতে نبى (নাবীয়্যূন) শব্দের পূবেايهর্ا(আয়্যূহা) শব্দটি যোগ করায়ياايهاالنبى (ইয়া আয়্যূহান্নাবীয়্যু) হয়েছে, তেমনিভাবে হাদীস শরীফের যেখানেই সাহাবায়ে কেরাম রাসূল(সাঃ) কেيا(ইয়া) হরফে নেদা দ্বারা সম্বোধন করেছেন, কোথাও শুধুيانبى(ইয়া নাবী)বাيارسول(ইয়া রাসূল) বলে সম্বোধন করেননি। বরং সম্মান প্রদর্শনার্থেيانبىالله(ইয়া নাবীয়্যাল্লাহ)يارسولالله(ইয়া রাসূলুল্লাহ) বলে সম্বোধন করেছেন। আর ইহাই সম্বোধনের ক্ষেত্রে রাসূল (সাঃ)কে সম্মান প্রদর্শনের তরীকা বা পদ্ধতি। আর প্রত্যেক মুসলমান’ই চায় রাসূল (সাঃ) কে সম্মান প্রদর্শন করতে। কিন্তু সেই সম্মান প্রদর্শন হতে হবে সহীহ ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে। আর তা হল কুরআন-হাদীসে বর্ণিত ও সাহাবায়ে কেরামের প্রদর্শিত পদ্ধতি।তাছাড়া অন্য কোন পদ্ধতি বা তরীকা গ্রহণযোগ্য নয়।বরং তা বিদ’আত ও অবশ্যই বর্জনীয়। কিয়ামে দাঁড়িয়ে যে শব্দাবলী দ্বারা রাসূল (সাঃ)কে সম্বোধন করা হয়, তাকুরআন-হাদীসে বর্ণিত ও সাহাবায় কেরামের প্রদর্শিত সহীহ পদ্ধতি ও বিশুদ্ধ বচন ভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, বরং তার বিপরীত। আর যা কুরআন-হাদীসে বর্ণিত ও সাহাবায়ে কেরামের প্রদর্শিত সহীহ পদ্ধতি ও বিশুদ্ধ বচন ভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তা অবশ্যই বর্জনীয়।
সুতরাং বর্তমানে প্রচলিত কিয়াম ও তাতে উচ্চারিত শব্দাবলী অবশ্যই বর্জনীয়।
কিয়াম বিদ’আত হওয়ার একাদশতম দলীল : -
কিয়ামকারীদের প্রতি সন্তুষ্ট ব্যক্তি জাহান্নামী :-
হযরত মুয়া’বিয়া(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন-
من سره ان يتمثلله الرجال قياما فليتبوأ مقعده من النار-
ঐ ব্যক্তি ‘লোকেরা দাঁড়িয়ে তাঁকে সন্মান করাটা যাকে আনন্দিত করে’ সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা ঠিক করে নেয়।
(তিরমিযি,২/১০৪ আবু দাউদ,মেশকাত-৪০৩পৃঃ)
বর্তমানে প্রচলিত মিলাদের মধ্যে যারা কিয়াম করে থাকে, তারা অবশ্যই রাসূল (সাঃ) কে সন্মান প্রদর্শন ও তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই তা করে থাকে। অথচ উপরোল্লিখিত হাদীস দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, যাকে সন্মান প্রদর্শন করার জন্য দাঁড়ানো হবে, সে ব্যক্তি যদি খুশি হয় তবে সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে ঠিক করে নেয়, অর্থাৎ- সে জাহান্নামী।
এখন কথা হচ্ছে, যারা কিয়াম করে,তাদের এই কিয়াম এর প্রতি কি হুজুর(সাঃ) সন্তুষ্ট ? না, অসন্তুষ্ট? যদি বলেন সন্তুষ্ট, তবে (নাউযুবিল্লাহ) হাদীসানুসারে হুজুর(সাঃ)...(বাকিটা পাঠক বুঝে নিন)
আর যদি বলেন যে, না হুজুর(সাঃ) অসন্তুষ্ট, তবে আমরা বলব, যে কাজের প্রতি হুজুর (সাঃ) অসন্তুষ্ট তা করা আল্লাহর পক্ষ থেকে গযব ও লা’নত এর উপযোগী হওয়া ছ্ড়াা আর কিছুই নয়।
কিয়াম বর্জনীয় হওয়ার একাদশতম দলিল : -
কিয়ামে পঠিত শব্দসমূহ ভ্রান্ত আকিদার পথ তৈরীকারি।
বর্তমনে যারা কিয়াম করে থাকে তাদের মধ্যেও আবার ‘হুযুর(সাঃ) মিলাদ-মাহফিলে উপস্থিত হওয়া’ না হওয়া সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের মতানৈক্য রয়েছে।। অনেকে বলে থাকে যে, ‘হুযুর(সাঃ) মিলাদ-মাহফিলে হাজির হয়’ এটা ভ্রান্ত আকিদা,আমরা এই আকিদা নিয়ে মিলাদ-কিয়াম করি না, বরং আমরা শুধু দুরূদ পাঠের উদ্দেশ্যেইমিলাদ-কিয়াম করে থাকি।
এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে চাই যে, মিলাদ-মাহফিলে ‘হুযুর(সাঃ) হাজির হওয়ার’ ভ্রান্ত আকিদা পোষণকরা থেকে বেঁচে থাকলেন ঠিক আছে, কিন্তু আপনি যে শব্দসমূহ দ্বারা দুরূদ-সালাম পেশ করছেন তা ঐ ভ্রান্ত আকিদার দিকেই পথ তৈরী করছে যা থেকে আপনি বেঁেচ থাকতে চান। কেননা يانبى (ইয়া নাবী) يارسول (ইয়া রাসূল) শব্দসমূহের মাঝে উপস্থিতির একটা গন্ধ প্রকাশ পায়, যা র্শিকি আকিদা সৃষ্টি হওয়ার দিকে পথতৈরী করে।
ভ্রান্ত আকিদার পথ প্রদর্শনকারি এই শব্দসমূহ থেকে বেঁেচ না থাকলে ঐ শব্দ সমূহের কারনেই তার দিলে একসময় ভ্রান্ত আকিদাসৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এ কারণেই রাসূল(সাঃ) গোলামের জন্য নিজ মুনিবকে رَبِّي(হে আমার প্রভ‚) এবং মুনিবের জন্য নিজ গোলমকেও عَبْدِي (হে আমারবান্দা) শব্দ দ্বারা ডাকতে নিষেধ করেছেন। কেননা এই শব্দগুলো অর্থের দিক দিয়ে ঠিক থাকলেও তাতে শিরকের গন্ধ পাওয়া যায়, তাই রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন-
لَا يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْ عَبْدِي فَكُلُّكُمْ عَبِيدُ اللَّهِ وَلَكِنْ لِيَقُلْ فَتَايَ وَلَا يَقُلْ الْعَبْدُ رَبِّي وَلَكِنْ لِيَقُلْ سَيِّدِي
অর্থাৎ- তোমাদেরকেউ যেন তার গোলামকে عَبْدِي (হে আমারবান্দা) বলে না ডাকে, কেননা তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা। বরং বলবে হে আমার জোয়ান এবং গোলামও তার মুনিবকে رَبِّي(হে আমার প্রভ‚) বলবে না বরং বলবে হে আমার সর্দার। (মুসলিম-২/২৩৮পৃঃ)
সুতরাং কিয়ামে পঠিত শব্দসমূহ র্শিকি আকিদা সৃষ্টি হওয়ার দিকে পথ প্রদর্শন করে বিধায় তা হতে বেঁেচ থাকা জরুরী।
বর্ত
বস্তুত এমন সুস্পষ্ট বর্ণনা সমূহ বিদ্যমান থাকার পরও কিছু খোঁড়া যুক্তি ও দু’একটা অস্পষ্ট বর্ণনার উপর নির্ভর করে সহীহহাদীসে বর্ণিত আমল সমূহকে বাদ দিয়ে এসব রেওয়ায়েজ ভিত্তিক আমল কোন যুক্তিতে করা হয়, তা আমাদের বোধগম্য নয়। যারা এসব রেওয়ায়েজ ভিত্তিক বিদ’আতে লিপ্ত, আমরা শুধু মুসলমান ভাই ও দ্বীনের খাতিরে তাদেরকে কোরআন-হাদীসানুযায়ী সঠিক পথ দেখিয়ে যাবো, গড়ি-মসি ও টাল-বাহানার ক্ষেত্রে ফায়সালা আল্লাহর’ইহাতে।
ফোকাহায়ে কেরামের দৃষ্টিতে মিলাদ-কিয়ামের হুকুম :-
বর্তমানে প্রচলিত মিলাদ(ও কিয়াম) সালফে সালেহীন (সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে’তাবেয়ীন) থেকে প্রমাণিত নয়।বরং তা প্রথম তিন যূগের পর খারাপ জামানায় আবি®কৃত।অতএব পূর্ববর্তীরা যে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন সেক্ষেত্রে আমরা পরবর্তীদের অনুসরণ করব না। কেননা পূর্ববর্তীদের অনুসরণ’ই যথেষ্ট নতুন বিষয় আবিষ্কারের দরকার কি?(আশ্রাফুল ফতোয়া-১/৪৪০ পৃঃ)
আল্লামা ইবনে কাসীর(রঃ)তারঁ বিখ্যাত তাফসির ইবনে কাসীরে বলেন: -আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বক্তব্য হল, যেকথা ও কাজ সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত নয় তা করা বিদ’আত। কেননা সে কাজ ভাল হলে তা অবশ্যই তারা করতেন। কারণ তারা সওয়াবের কোন দিক, কোন নেক আমল এবং কোন সৎ গুণ ছেড়ে যান নি। বরং দ্বীনের সর্ব ক্ষেত্রেই তাদের অবদান ছিল অগ্রগণ্য।
কিয়ামকারীদের দলীল ও তার জবাবঃ-
প্রথম দলীল-আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর হাদীস :-
عن ابى سعيدالخدرى قال لما نزلت بنوقريظة على حكم سعد بن معاذ بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم فجاءعلى حمار فلما دنى قال رسول الله صلى الله عليه وسلم "قوموا إلى سيِّدكُم فجاء فجلس ...........الاخ
অর্থাৎ-হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন! যখন হযরত সা’দ ইবনে মু’য়াযের ফায়সালা মেনে নেয়ার শর্তে (ইয়াহুদী গোত্র) বনু কোরায়যা দূর্গের দ্বার খুলে বাহিরে আসল, তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (সা’দ ইবনে মুয়াজ (রাঃ) কে আনার জন্য) লোক পাঠালেন। অতঃপর তিনি একটি গাধার পৃষ্ঠে আরোহিত হয়ে আসলেন।যখন তিনি নিকটস্থ হলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উপস্থিত লোকদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের নেতার দিকে দাঁড়াও।অতঃপর সা’দ (রাঃ) এসে বসলেন .............(বুখারী,মুসলিম, মেশকাত-২/৩৪৪পৃঃ)
উক্ত হাদিসে উল্লেখিত قومواالىسيدكم(তোমরা তোমাদের নেতার দিকে দাঁড়াও) এই বাক্য দ্বারা বিদ’আতীরা দলীল পেশ করে থাকে যে-কাহারো আগমনে তাঁকে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা জায়েয, কেননা উক্ত হাদীসের বর্ণণানুযায়ী বুঝা যাচ্ছে, যখন আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) আগমন করলেন তখন হুজুর (সাঃ) তাঁর সম্মানার্থে সবাইকে দাঁড়াতে বলেছেন।
প্রথম জবাবঃ উক্ত হাদীসে উল্লেখিত ঘটনার পঁচিশ দিন পূর্বে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং সা’দ (রাঃ) সে যুদ্ধে পায়ের রগের মধ্যে জখম হওয়ায় তা থেকে রক্ত ঝরতে ছিল। হুজুর (সাঃ) বনু কুরায়যা দূর্গ অবরোধ করলে তারা হযরত সা’দ (রাঃ) যে ফায়সালা দিবে তা মেনে নেয়ার অঙ্গিকার করে। তাই হুজুর (সাঃ) তাদের ব্যাপারে ফায়সালা দেয়ার জন্য সা’দ ইবনে মু’য়ায (রাঃ)কে ডেকে পাঠালেন। ঐ সময় সা’দ (রাঃ)এর জখম থেকে রক্ত পড়া কিছুটা বন্ধ ছিল। এমতাবস্থায় সা’দ ইবনে মুয়াজ (রাঃ) হুজুর (সাঃ) এর ডাকে সাড়া দিতে ঘোড়ার উপর সওয়ার হওয়া অবস্থায় আসতেছিলেন। তিনি অশ্বারোহন থেকে অবতরনে অনেক কষ্ট হত। এবং অধিক নড়া-চড়ায় যখম থেকে পুনরায় রক্ত বের হওয়ার খুবই সম্ভাবনা ছিল বিধায় হুজুর (সাঃ) তাঁকে বেশী নড়া-চড়া দেওয়া ব্যতিত সওয়ারী থেকে নামতে সাহায্য করার জন্য সাহাবাদের নির্দেশ দিয়ে বললেন قومواالىسيدكم (অর্থাৎ- তোমরা তোমাদের সর্দারের দিকে দাঁড়াও) অর্থাৎ- তোমাদের সর্দারকে অশ্বারোহন থেকে অবতরন করার জন্য সাহায্য কর। এখানে সম্মান প্রদর্শনের কোন প্রশ্নই আসেনা। যদি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্য দাঁড়ানোর জন্য বলা হতো তা হলে الى এর স্থানে ‘ڶ’ হরফ অর্থাৎ- "قوموا إلى سيِّدكُم না বলে لسيدكم قوموا বলতেন।(তানযিমুল আশতাত-১৫৫)
সুতরাং- উক্ত হাদীস সম্পর্কে পূর্ণ পর্যালোচনা করলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত হাদীস দ্বারা কিয়াম এর পক্ষে দলিল দেয়া হাদীসের অপব্যখ্যা বৈ কিছুই নয়।
দ্বিতীয় জবাব : যেমনিভাবে আয়েশা (রাঃ) এর পবিত্রতা বর্ণনাকারী আয়াত নাযিলের পর হযরত আয়েশা রাঃ এর আম্মা তাকে বললেন হে আয়েশা) قومي اليهঅর্থাৎ তার নিকটে যাও) তখন আয়েশা রাঃ কৃত্রিম অভিমান করে বললেনلا اقوم اليه بل اشكر الله (না আমি তাঁর নিকট যাবো না বরং আমি কেবল আল্লাহরই প্রশংসা করবো।
ق،ي،م এর মাসদার থেকে উদ্ভূত শব্দ দেখলেই যদি সেখানে দাঁড়ানোর অর্থ নেয়া আবশ্যক হয়ে থাকে, তাহলে এখানেও দাঁড়ানোর অর্থ গ্রহণ করতে হবে, তখন ) قومي اليهএর অর্থ হবে (তার দিকে দাঁড়াও (উত্তরে) অবশ্যই আমি তার দিকে দাঁড়াবো ন ) ফলে হাদিসের পূর্বাকার কথার সাথে এখানের বাক্যগুলোর অর্থ মিলবে না, বরং তা হাদীসের বাক্যের সাথে অসামাঞ্জস্যতা প্রকাশ পাবে এবং এক্ষেত্রে এরূপ অর্থ গ্রহণকারী বেওকুফ হিসেবেই সাব্যস্ত হবে। আর এর মূল কারণ হচ্ছে শব্দের পূর্বাপর না দেখেই তার অর্থ গ্রহণ করা। সুতরাং আয়েশা (রাঃ)এর হাদিসের শব্দ ) قومي اليهযেভাবে সম্মান প্রদর্শনার্থে দাঁড়ানোকে সাব্যস্ত করে না, ঠিক তেমনিভাবে সাদ ইবনে মুয়ায (রাঃ)এর হাদিসও সম্মান প্রদর্শনার্থে দাঁড়ানোকে প্রমাণ করে না।
তৃতীয় জবাব : অবস্থার পরিপেক্ষিতে উক্ত হাদীসে বর্ণিত দাঁড়ানোর হুকুমের কারণটা مجمل) অস্পষ্ট( বলে সাব্যস্ত হয়। যার বিপরিতে (আমাদের পূর্বে উল্লেখিত) হযরত আনাস ও আবু উমামা (রাঃ) থেকে বণিত! হাদীস রয়েছে এবং তা সম্পূর্ণ صريح (অর্থাৎ-সুস্পষ্ট)। আর مجمل অর্থাৎ-অস্পষ্ট, হুকুম যখন صريح(সুস্পষ্ট) হুকুমের এর বিপরীত হবে তখন مجمل (অস্পষ্ট হুকুম) কে ত্যাগ করে صريح(স্পষ্ট) হুকুম এর উপর আমল করতে হবে।
সুতরাং-সা’দ ইবনে মু’য়াজ (রাঃ)এর হাদীসের (مجمل)অস্পষ্ট হুকুমকে পরিত্যাগ করে আনাস(রাঃ) ও আবু উমামা (রাঃ) এর হাদীসের (صريح) সুস্পষ্ট হুকুম পালন করতে গিয়ে কিয়ামকে বর্জন করতে হবে।
দ্বিতীয় দলীল-ইক্বরামা ও আদী ইবনে হাতেম(রাঃ)এর হাদীস :-
এমনিভাবেপ্রচলিত কিয়াম প্রমাণ করার লক্ষ্যে আমাদের দেশের বিদ’আতীরা আরো দুটি হাদীস পেশ করে থাকে যথা :-
১/ হযরত ইকরামা ইবনে আবু জাহেল হুজুর (সাঃ) এর নিকট আগমন করলেন তখন হুজুর (সাঃ) আরোহনকারী মুজাহেরদের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েদাঁড়িয়েছেন।
২/ হযরত আদি ইবনে হাতেম (রাঃ) বলেন-আমি যখনই হুজুর (সাঃ)এর খেদমতে উপস্থিত হয়েছি তখন হুজুর (সাঃ) দাঁড়িয়েছেন বা নড়া চড়া করেছেন।
সুতরাং-হুজুর (সাঃ) যখন তাঁর সাহাবাদের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন তবে আমরা হুজুরের জন্য দাঁড়াব না কেন?
প্রথম জবাব :- প্রথমত এই উভয় হাদীস নিন্তান্তই যয়ীফ যা দ্বারা দলীল পেশ করা যায় না। সুতরাং তা দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয় জবাব :- তর্কের খাতিরে যদি কিছুক্ষণের জন্য হাদীসদ্বয়কে মেনে নিলেও এই উভয় হাদীস দ্বারা প্রচলিত কিয়াম প্রমানিত হয়না। কেননা এই উভয় হাদিসفِعْلِىْ অর্থাৎ- হুজুর (সাঃ) এর কর্মের বিবরণ। আর আমাদের পেশকৃত হাদীসقَوْلِىْ অর্থাৎ- হুজুরের (সাঃ) এর বাণী। আর শরয়ী উসূল (মূলনীতি) হলোحديثقولىযদি حديثفعلى এর বিপরীত হয় তবেحديثقولىপ্রাধান্য পাবে।
সুতরাং-হাদীসদ্বয়ের উপর আমল করা জায়েজ নয়।
তৃতীয় জবাবঃ- হুজুর (সাঃ) তাঁর সাহাবাদের জন্য দাঁড়িয়েছেন ইহা যদি তর্কের খাতিরে কিছুক্ষণের জন্য মেনেও নেই, তবুও এই হাদীসদ্বয় দ্বারা প্রচলিত কিয়ামের পক্ষে দলীল পেশ করা যায় না। কেননা হুজুর (সাঃ) দাঁড়িয়েছেন স্বচক্ষে দেখে, আর বিদ’আতীরা দাঁড়ায় না দেখে। যেখানে দাবীর সাথে দলীল ও দলীলের সাথে অবস্থার কোন মিল নাই।
সুতরাং- উক্ত হাদীসদ্বয় দ্বারা কিয়ামের পক্ষে দলিল পেশ করা কোন ভাবে সহীহ হবে না।
বি. দ্র.-সম্মান প্রদর্শনার্থে দাঁড়ানো জায়েজ হবে কি, হবে না, ইহার আলোচনা তখনই আসবে, যখন সম্মান প্রদর্শন যাকে করা হবে সে যদি উপস্থিত থাকে। কিন্তু প্রচলিত মিলাদ মাহফিলগুলোতে হুজুর (সাঃ) উপস্থিত থাকেই না, বরং এই আকীদা রাসূলের শানে চরম বেয়াদবী, এবং ইহার ভিত্তি কোন সহীহ হাদীসে তো নাই’ই কোন দুর্বল হাদীসেও নাই। তাই এই মতানৈক্য ও তার পর্যালোচনা করার কোন দরকার ছিল না। তথাপিও বিদ’আতীরা বিভিন্ন স্থানে মানুষদেরকেবানোয়াট হাদীস ও বিভিন্ন সহিহ হাদিসের অপব্যখ্যা করে বিভ্রান্ত করে বিধায় এখানে সংক্ষেপে তাঁর উত্তর দেয়া হলো।
আল্লাহর রাসূল(সাঃ) এর ভবিষ্যদ্বাণী আজ আমাদের মাঝে বিরাজমান। হাদীস শরীফে বর্ণিত অসংখ্য দোয়া-দুরুদ, যা পাঠের প্রতি আমাদেরকে স্বয়ং নবী কারীম(সাঃ) উৎসাহিত করেছেন এবং উক্ত দুরুদের অসংখ্য ফযিলতও বর্ণনা করেছেন সেগুলোও আমাদের সামনে সুবিন্যস্ত। অথচ আমাদের সমাজ থেকে সহীহ হাদীসে বর্ণিত সেই দোয়া দুরুদ আজ বিলুপ্ত প্রায়। বড়জোর দুরুদে-ইব্রাহিম কিছু কিছু লোকে পারে তাও আবার কেউ অর্ধৈক কেউ সামান্যএকটু তাঁর মধ্যে আবারশতকরা ৯৯ জনের এমন পর্যায়ের ভুল ও অশুদ্ধ যা শুনলে ব্যথায় দীল মুষড়ে ওঠে। অথচ এতটুকুও আবার শিখা হয়েছে শুধু নামাযে পড়তে হয় বলে।নচেৎ এটুৃকুও ছেড়ে দিত। কেন এই পরিস্থিতি? তাঁর ঐ একটাই কারণ যা রাসূলে কারীম (সাঃ) আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে ইরশাদ করে গেছেন-
مَا أَحْدَثَ قَوْمٌ بِدْعَةً إِلاَّ رُفِعَ مِثْلُهَا مِنَ السُّنَّةِ
অর্থাৎ- যখনই কোন স¤প্রদায় একটি বিদ’আত সৃষ্টি করে তখন’ইতাঁর অনুরুপ একটি সুন্নতকে উঠিয়েনেয়াহয়।(আহমদ,মেশকাত)
আর এরই বাস্তবতা বর্তমানে আমাদের মাঝে বিদ্যমান। বর্তমানে মানুষ এই ভিত্তিহীন মিলাদকে’ই দুরুদ মনে করে তাঁর সারাটা জীবন এর পিছেই কাটিয়ে দিচ্ছে। আর আলেমদের মুখে দুরুদ শরীফের ফজীলতের বয়ান শুনে মনে মনে ভাবে, ওহ্ প্রতি বৎসর ধুমধাম করে খাবারের আয়োজন করে মসজিদের হুজুরের মাধ্যমে কয়েকবার মিলাদ পড়াই। আমার চেয়ে বড় আশেকে রাসূল কে হতে পারে? এ ভেবেই আবার গুনগুন করে পড়তে শুরু করে ইয়া ‘নবী সালা মুআলাইকা.....’।
আর এদিকে কিছু পেট পূজারী আলেমরাও তাদেরকে আর সত্য জানার প্রতি আহŸান তো করেইনা উপরন্তু কেউ এ বিষয়ে মুখ খুললেই তাঁকে ওহাবী, কাফের, নবীর দুশমন বলে গালি দিয়ে থাকে।আর নিজেদের এই অপকীর্তি গুলো ঢাকতে মক্কার কাফেরদের মত বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষদের দোহাই দিয়ে বলে থাকে যে, আমাদের বাপ-দাদারা যা করেছে আমরাও তা করব অথবা বলে থাকে ‘আমাদের বাপ-দাদারা কি ভুল করেছে? আমরা বলবো কে ভূল করল আর কে ঠিক করল তা আল্লাহর জ্ঞানের মধ্যে আছে। শরীয়তের ক্ষেত্রে কোরআন-হাদীসের বিপরীতে কোন ব্যক্তি বিশেষ দলিল হতে পারে না।
সুতরাং আমাদের দায়িত্ব রাসূলের দেখানো পথ অনুযায়ী কোরআন-হাদীস মুতাবেক আমল করা, এর বাইরে নয়। বাকী রইল যে ভাইয়েরা বুঝতেছে না তাদেরকে সুন্দর ভাবে বুঝানো। বুঝতে চাইলে ভালো আর একগুয়েমীর বেলায় বলব প্রকৃত হক্ক ও বাতিলের ফায়সালা হাশরের ময়দানের জন্যই তোলা রইল।
দৃষ্টি আকষর্ণ
[বিদ’আতী স¤প্রদায় সাধারণ মানুষদের ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে মিলাদের শুরুতে কালামে পাকের এই আয়াত তেলাওয়াত করে থাকে যথা :-
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
অর্থাৎ- নিশ্চয় আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ নবীর উপর “সালাত” প্রেরণ করেন হে ইমানদারগণ তোমরাও নবীর উপর দুরুদ পাঠ কর।(সূরা আহযাব-৫৬)
উক্ত আয়াত পাঠ করে তারা জনগণকে এটাই বুঝাতে চান যে, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দুরুদ পাঠ করতে বলেছেন’ তাই এখন দুরুদ পাঠ করা হবে অথচ পরবর্তীতেই তারা সমন্বরে সুরে সুর মিলিয়ে প্রচলিত মিলাদ পাঠ করে থাকে। যা আল্লাহর পক্ষ থেকে আদেশকৃত দুরুদ শরীফের সাথে এতটুকুও সম্পর্ক ও নেই। কালামে পাকে ও হাদীস শরীফের অসংখ্য জায়গায় হুজুর(সাঃ) এর উপর দুরুদ পাঠের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে, সাথে সাথে হাদীসের কিতাব সমূহের পাতায় পাতায় বর্ণিত রয়েছে হুজুর(সাঃ) হতে অসংখ্য দুরুদ শরীফ সাথে সাথে সাহাবায়ে কেরামগণের পক্ষ থেকেও রয়েছে দুরুদ-শরীফের আমলের বাস্তবনমুনা। কিন্তু হাদীসে বর্ণিত দুরুদ-শরীফসমূহ ও সাহাবায়ে কেরামগণের আদর্শের সাথে বর্তমানে প্রচলিত মিলাদ এর কোন সম্পর্ক ও সামঞ্জস্য নেই। বরং বর্তমানের প্রচলিত মিলাদ-হাদীসে বর্ণিত দুরুদ-শরীফসমূহ থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত। কোরআন-হাদীসসহ সাহাবায়ে কেরামগণের জিন্দেগীতেও এর কোন অস্তিত্বখুজে পাওয়া যায় না। বরং ইহা হুজুর(সাঃ)এর ইন্তেকালের ৬০০ বছর পর নব্য আবি®কৃত এমন একটি আমল, যার অস্তিত্ব কোরআন-হাদীসের কোথাও খুজে পাওয়া যায়তো না’ই বরং এহেন বিদ’আতী কর্ম-কান্ডের কারণে হাদীস শরীফে বর্ণিত দুরুদ শরীফের আমল সমূহ বিলুপ্ত প্রায়। কেননা জন সাধারণ বর্তমানে প্রচলিত মিলাদ সমূহকেই দুরুদ-শরীফ মনে করে থাকে, যার কারণে হাদীসে বর্ণিত দুরুদ সমূহকে আর জানা ও তার উপর আমল করার প্রয়োজনীয়তা মনে করে না। আর এভাবেই বর্তমান সমাজ সুন্নত থেকে দূরে সরে দিন দিনবিদ’আতের চৌরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে। বিদায় নিচ্ছে জন-জীবন থেকে রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাত আর সেই স্থান দখল করে নিচ্ছে অপর একটি বিদ’আত। আর এদিকে ইঙ্গিত করেই হাদীস শরীফে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন- যখন কোন জাতি কোন বিদ’আত আবিষ্কার করেন তখন তাদের থেকে তদ্রæপ একটি সুন্নতকে উঠিয়ে নেয়া হয়।
উক্ত হাদীসের বাস্তবরূপ বর্তমানে আমাদের সামনে বিদ্যমান। মিলাদ-কিয়াম নামক বিদ’আতের স্তুপের নিচে চাপা পড়ে দুরুদ নামক সুন্নাতটি হারিয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে জনসাধারণ মিলাদ নামক এই বিদ’আতকেই দুরুদ শরীফমনে করে আমল করে যাচ্ছে। অন্য দিকে যারা এই বিদ’আত ও রুসুমতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে, বিদ’আতী ছদ্মবেশী মৌলভীরা তাঁদেরকে ওহাবী-কাফের নবীর দুশমন বলে গালি-গালাজ করে থাকে এবং জনগণকে এটা বুঝাতে থাকে যে, এরা নবীর সাথে দুশমনী করে নবীর উপর দুরুদ পড়ার বিরোধিতা করে। অথচ- বাস্তবতা হলো যে, এসব হক্কানী আলেম-ওলামাগণ দুরুদ নয় বরং প্রচলিত বিদ’আত ভিত্তিক মিলাদের’ই বিরোধীতা করছে। আর এটা শুধুআলেম-ওলামাদের’ই নয় বরং সকল মুসলমানদের’ই জানা প্রয়োজন যে, প্রচলিত মিলাদ ও দুরুদ এক নয় বরং উভয়টি পরষ্পর ভিন্ন ও বিপরীত। একটি সুন্নাত আরেকটি বিদ’আত। আর প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ বিদ’আতকে বর্জন করে সুন্নাত মোতাবেক আমল করা। তাই সুন্নাতকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং বিদ’আতকে উৎখাত করতে আমাদেরকে সুন্নাত ও বিদ’আতের মধ্যকার প্রার্থক্য জানতে হবে। (আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের জানার ও তদানুযায়ী আমল করার তওফীক দিন-(আমীন)
মিলাদ-কিয়াম নামক বিদ’আতের স্তূপের নিচে চাপাপড়া দরুদ শরীফের সুন্নাত :-
প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম বিদ’আত হওয়া সংক্রান্ত আলোচনার পর আমরা ঐ সুন্নাত সমূহকে তুলে ধরার চেষ্টা করব, যে সুন্নাতসমূহ এই বিদ’আতগুলোর স্তুপের নিচে চাপা পড়ে বিলুপ্ত প্রায়। বিদ’আত সমূহের প্রবণতার কারণে সহীহ হাদীসে বর্ণিত এসব সুন্নাত সমূহ আজ আমাদের মাঝে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সুন্নাতের আবরনে মোড়ানো বিদ’আত সমূহকে’ই আমরা প্রকৃত সুন্নাত ভেবে এর পিছনে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি। আর নিজেকে আশেকে রাসূল মনে করে নিজের উপর নিজে খুবই সন্তুষ্ট হয়ে, মনে মনে রাসূলের দিদারের আশা করছি। অপর দিকে বিদ’আতে লিপ্ত থেকে আমল ধ্বংসের মাধ্যমে নিজেই নিজের আখেরাতকে ধ্বংস করে যাচ্ছি। তাই এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেতেই বিদ’আত ও তা পরিতাজ্যের কারণ সমূহ বর্ণনা করার পর’ই বিদ’আতের কারণে বিলুপ্ত প্রায় সুন্নাতটিকে তুলে ধরছি।
বর্তমানের প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম এর কারণে যে সুন্নাতটি বিলুপ্ত প্রায় তা হলো রাসুলের (সাঃ) এর প্রতি দুরুদ পাঠ করা। আর রাসূল (সাঃ) এর উপর দুরুদ পাঠ করা সর্ম্পকে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
অর্থাৎ-নিশ্চয়’ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ রাসূল (সাঃ)এর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ তোমরা নবীর উপর দুরুদ পড় এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর।(সূরা-আহযাব-৫৬)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি যে সালাতের সম্পৃক্ত করা হয়েছে এর অর্থ হবে,আল্লাহ হুজুর (সাঃ) এর উপর রহমত নাযিল করেন। ফেরেশতাদের প্রতি সালাতের যে সম্পৃক্ত করা হয়েছে তার অর্থ হবে-তাঁরা রহমতের দো’য়া করেন, এবং মানুষের দিকে সালাতকে সম্পৃক্ত করে যে হুকুম দেয়া হয়েছে তার অর্থ হবে-‘দুরুদ পাঠ করা’ এক্ষেত্রে শাব্দিক তাহকীক এর স্থান নয়। কিন্তু বিদ’আতী সম্প্রদায় এ আয়াতকে অপব্যখ্যা করে,উক্ত আয়াত দ্বারা মিলাদ-কিয়াম প্রমাণ করতে চায় তাই তারা মিলাদের শুরুতে এই আয়াত তেলওয়াত করেই মিলাদ শুরু করে থাকে। অথচ মিলাদ ও দুরুদ এক নয়। যার আলোচনা পূর্বে করা হয়েছে।দরুদ পাঠের নির্দেশ দিয়ে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত এক হাদীসে রাসুল(সাঃ) ইরশাদ করেন-
وصلوا عليّ فإن صلاتكم تبلغني حيث كنتم
অর্থাৎ- তোমরা আমার প্রতি দুরুদ পাঠ কর। তোমাদের দুরুদ আমার কাছে পৌঁছবে তোমরা যেখানেই থাক না কেন।(নাসায়ী,মেশকাত-১/৮৬)
এমনিভাবে আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আরেক হাদীসে দুরুদ পাঠের প্রতি উৎসাহ দিয়ে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন-
[
من صلى على واحدة صلى الله عليه عشرا
অর্থাৎ-যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরুদ পাঠ করে, আল্লাহতা’য়ালা তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষনকরেন।(মুসলিম,মেশকাত-১/৮৬পৃঃ)
এমনিভাবে হাদীসের কিতাব সমূহের পাতায় পাতায় রাসূল (সাঃ) এর প্রতি দুরুদ পড়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে অসংখ্য দুরুদ শরীফ উল্লেখ রয়েছে। একথা সর্বস্বীকৃত যে-
* রাসূল (সাঃ) এর উপর প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে কমপক্ষে একবার দুরুদ পাঠ করা ফরয।
*কেউ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নাম উচ্চারণ করলে বা শুনলে দুরুদ পড়া ওয়াজিব।
*নামাযে তাশাহহুদের পর দুরুদ পাঠ করা (হানাফীদের মতে) সুন্নাত।
*একই মজলিসে বার বার হুজুর (সাঃ) এর নাম উচ্চারিত হলে (প্রথমবার ওয়াজিব) পরের প্রত্যেক বার দুরুদ পড়া মু¯তাহাব।
*অপবিত্র ও পায়খানা-প্রস্রাবে থাকাবস্থায় দুরুদ পাঠ হারাম।
* নবী ও রাসূল ব্যতীত অন্যদের প্রতি দরুদ পড়া (অনেকের মতেই) বৈধ নয়।
দুরুদ পাঠের বিধানাবলী সম্পর্কে আলোচনার পর, এখন দুরুদ পড়ার নিয়মাবলী সম্পর্কে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা হচ্ছে।
হাদীসে বর্ণিত দুরুদ শরীফ সমূহঃ-
১নং দুরুদ শরিফ-হযরত আবু হুমাইদ সায়েদী (রাঃ) হতে বর্ণিত, একবার সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন-হেআল্লাহর রাসূল! আমরা কিভাবে আপনারপ্রতি দুরুদ পাঠ করব? তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, তোমরা বলবে-
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيد " .
অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ এবং তাঁর পতœীগণ ও বংশধরগনের প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ কর, যেভাবে তুমি ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর পরিজনের প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করেছ, এবং মুহাম্মদ (সাঃ) এর পতœীগণ ও তাঁর বংশধরগণের প্রতি তোমার কল্যাণ নাযিল করো,যেভাবে তুমি হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পরিবার পরিজনের প্রতি কল্যান নাযিল করেছ। অবশ্যই তুমি খুব প্রশংসিত এবং খুব সম্মানিত।(বুখারী, মুসলিম-মেশকাত-১/৮৬পৃঃ)
২ নং দুরুদ শরিফ- হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবু লায়লা (রাঃ) হতে বর্ণিত! তিনি বলেন একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম। আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কিভাবে আপনার প্রতি ও আপনার পরিবারের প্রতি দুরুদ পাঠ করব, যা আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে দুরুদ ও সালাত পাঠ করার পদ্ধতি শিখিয়েছেন? রাসূল (সাঃ) বললেন! তোমরা এভাবে বলবে-
اللّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সাঃ) ও মুহাম্মাদ (সাঃ) এর পরিবার পরিজনের প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করো, যেভাবে তুমি হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি অনুগ্রহ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি কল্যাণ বর্ষণ করো, যেভাবে তুমি হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি কল্যাণ বর্ষণ করেছ। অবশ্যই তুমি প্রশংসিত এবং সম্মানিত।(বুখারী-২/৭০৮,মুসলিম, মেশকাত-১/৮৬পৃঃ)
৩ নং দুরুদ শরিফ- হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত! তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেনÑ যে ব্যক্তি পাল্লা পরিপূর্ণ করে (সওয়াব) মেপে নিতে ভালোবাসে সে যখন আমার ও আমার পরিজনের উপর দুরুদ পাঠ করে, তখন যেন এভাবে বলেÑ
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النبي، وَأَزْوَاجِهِ أُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِينَ، وَذُرِّيَّتِهِ وَأَهْلِ بَيْتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيد
অর্থাৎ- হে আল্লাহ! নবী মুহাম্মাদ(সাঃ), তাঁর বিবিগণ যারা মু’মিনদের মা, তাঁর বংশধর ও পরিবার-পরিজনের উপর অনুগ্রহ বর্ষণ কর। যেভাবে তুমি ইব্রাহিম (আঃ)এর পরিবারের উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করেছ। নিশ্চয়’ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত।(আবু-দাউদ,মেশকাত-১/৮৭পৃঃ)
৪ নং দুরুদ শরিফ-
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُولِكَ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ
অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনি মোহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি অনুগ্রহ করুন, যিনি আপনার বান্দা ও আপনার রাসুল যেমনি ভাবে আপনি ইব্রহিম (আঃ)এর পরিবার পরিজনের প্রতি অনুগ্রগ করেছেন । এবং মোহাম্ম্দ (সাঃ) এর পরিবার পরিজনের প্রতি কল্যান বর্ষণ করেছন (বখারি শরিফ ২/৭০৮ পৃঃ)
এমনিভাবে দুরুদ শরীফ পাঠের সময় ও নিয়মাবলী শিক্ষা দিয়ে হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন- একদা আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমি (একটি নির্ধারিত সময়ে) আপনার উপর বেশী বেশী দুরুদ পাঠ করি, এর কি পরিমাণ সময় আপনার উপর দুরুদ পাঠের জন্য নির্দিষ্ট করে নেব? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তা তোমার ইচ্ছা। আমি বললাম, তাহলে এক চতুর্থাংশ সময়? তিনি জবাবে বললেন, তা তোমার ইচ্ছা। তবে যদি আরো অধিক করো তাহলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম তাহলে কি অর্ধেক সময় নির্ধারণ করে নেব? রাসূল (সাঃ) বললেন, তা তোমার ইচ্ছা। তবে যদি এটা অপেক্ষা অধিক করো, তবে তোমার জন্য অধিক কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, তাহলে কি দুইতৃতীয়াংশ সময় নির্ধারণ করে নেব? রাসূল (সাঃ) বললেন, তা তোমার ইচ্ছা। আর এর থেকে যদি অধিক করো তবে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। তখন আমি বললাম, তা হলে সম্পূর্ণ সময়টাই আপনার দুরুদ পাঠের জন্য নির্দিষ্ট করে নেব। রাসূল (সাঃ) বললেন তা হলে তোমার আখাঙ্কা পূর্ণ হবে এবং গুনাহ সমূহ ক্ষমা করা হবে।(তিরমিযী-মেশকাত-১/১৮৭পৃঃ)
৫ নং দুরুদ শরিফ-
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সাঃ) ও মুহাম্মাদ (সাঃ) এর পরিবার পরিজনের প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করো, যেভাবে তুমি হযরত ইব্রাহিম (আঃ)এর প্রতি অনুগ্রহ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি কল্যাণ বর্ষণ করো, যেভাবে তুমি হযরত ইব্রাহিম (আঃ)এর প্রতি কল্যাণ বর্ষণ করেছ। অবশ্যই তুমি প্রশংসিত এবং সম্মানিত।
এমনিভাবে হাদীসের কিতাব সমূহের পাতায় পাতায় উল্লেখ রয়েছে আরো অসংখ্য দুরুদ শরীফ ও তা পাঠের নিয়মাবলী।
উল্লেখিত হাদীস সমূহে যেমনিভাবে রাসূল (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামগণকে দুরুদ শরীফ সমূহ শিক্ষা দিয়েছেন ঠিক তেমনিভাবে সাহাবায়ে কেরামগণকে দুরুদ শরীফ পাঠ করার সময় ও তার নিয়ম-কানুন সমূহও শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু হাদীস শরীফের কোথাও বর্তমানে প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম এর আলোচনা, তাতে পঠিত বাক্যসমূহ ওতাতে বসে পড়া-দাঁড়িয়ে পড়া, মাঝে মাঝে কবিতা পড়া ইত্যাদির যে, বাধ্য-বাধকতা পূর্ণ পদ্ধতি রয়েছে এরুপ হাদীসের কোথাও নাই। এমনকি হাদীসে উল্লেখিত দুরুদ সমূহের ক্ষেত্রেও এরুপ কোন নির্দিষ্ট সময় বা নির্দিষ্ট পদ্ধতি নির্ধারনের উপর কোনো রুপ জোর দেয়া হয়নি বরং যার যখন যেভাবে মনে চায়, দাঁড়িয়ে, বসে, হাটতে-হাটতে সব সময় দুরুদ পাঠ করতে পারবে এবং সর্বদা দুরুদ পাঠকারীর ক্ষেত্রে আমাদের উল্লেখিত হাদীসসহ আরো বহু হাদীসে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।অতএব এরুপ গুরুত্ব পূর্ণ আমলের ক্ষেত্রে যতœবান হওয়া উচিত, যার সবগুলো এখানে লিপিবদ্ধ সম্ভব নয়। উদাহরণ স্বরুপ মাত্র কয়েকটি দরুদ শরীফ ও দুরুদ পাঠের কিছু বিধানাবলী এখানে উল্লেখ করা হলো যাতে করে মানুষ দুরুদ ও মিলাদের মধ্যকার সুন্নাত ও বিদ’আতের প্রার্থক্যটা বুঝতে পারে এবং বিদ’আতকে বর্জন করে সুন্নাত অনুযায়ী আমল করতে পারে। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। (আমীন)
والله اعلم بالصواب
শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৫০৮৫৫
মিম্বার ছাড়া কি খুতবা দেওয়া জায়েজ হবে?
৫ জানুয়ারী, ২০২৪
Jharka

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে