আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

গিবতের সংজ্ঞা

প্রশ্নঃ ২৩৯৫২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, প্রশ্ন ১ বাইরে কোন কিছু হলে, ভালো মন্দ, পরিবারের লোকদের জানালে কি গিবত হবে? ওই বিষয়ে বোনে বোনে কথা বলাটাও কি গিবত??প্রশ্ন ২ :একবার আমার বোন সপ্নে দেখে যে, আল্লাহ আমার ওপর খুশি এবং বলেন যে, অমুক নিশ্চই বেহেশতে যাবে,ওই সময় আমি ইবাদতে অনেক তৃপ্তি পেতাম,কিন্তু মাঝে আমি অনেক অন্যায় করে ফেলেছি, তার জন্য আমি আল্লাহর কাছে তওবা করি,আবার পুনরায় গুনাহ করে ফেলি,আবার তওবা করি,,ইবাদত করি ঠিকই কিন্তু আগের মতো তৃপ্তি পাচ্ছি না,এখন মি কি করব??

১৫ আগস্ট, ২০২৪
বানিয়াচং

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


১. আপনার প্রশ্নটি অত্যধিক সংক্ষিপ্ত। বাইরের খবরাখবর বলতে কি বোঝাতে চেয়েছেন সেটা উল্লেখ করা জরুরী।
নিচের গিবতের সঙ্গাটি লক্ষ করুন। যদি আপনাদের আলোচনা এর অন্তুর্ভূক্ত হয় তাহলে সেটা গিবত হিসেবে গণ্য হবে। তা না হলে নয়।


গীবত কাকে বলে?
গীবত অর্থ পরনিন্দা। কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ-ত্রুটি আলোচনা করা। হতে পারে দোষটি তার মধ্যে আছে। কিন্তু এই আলোচিত দোষটির কথা শুনলে সে নির্ঘাত মনে ব্যথা পাবে। তাহলে এটাই গীবত। হাদীস শরীফে এক সাহাবীর কথা এসেছে, যিনি নবীজী ﷺ-কে প্রশ্ন করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! গীবত কাকে বলে?

নবীজি ﷺ উত্তরে বলেছিলেন, আপন ভাইয়ের আলোচনা তার পেছনে এমনভাবে করা যা তার নিকট পছন্দনীয় নয়। অর্থাৎ সে পরবর্তীতে যদি জানতে পারে তার সম্পর্কে অমুক মজলিসে এ আলোচনা হয়েছে তাহলে মনে কষ্ট পাবে। এটাই গীবত।

সাহাবী পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, আমি যে দোষ নিয়ে আলোচনা করেছি তা যদি সত্যি সত্যি আমার ভাইয়ের মাঝে থাকে?

নবীজি ﷺ উত্তর দিলেন, আসলেই যদি দোষ থাকে তাহলেই গীবত হবে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার হবে। (আবু দাউদ, বাবলু গীবাত ৪৮৭৪)

লক্ষ্য করুন, আমাদের আলোচনা এবং সভা-সমিতির প্রতি একটু চোখ বুলিয়ে দেখুন। কত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এই মহামারি! আমরা দিবানিশি এই জঘন্য পাপে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থাকি। আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়েত করুন। অনেকে গীবতকে বৈধতার পোশাক পরাতে চায়। বলে থাকে, আমি গীবত করছি না; বরং আমি কথাটি তার মুখের উপরও বলে দিতে পারব। সুতরাং এটা তার পেছনেও বলতে পারব। জেনে রাখুন, গীবত গীবতই। মুখের উপর বলতে পারা আর না পারার বিষয় এখানে বিবেচ্য নয়। কারো দোষ-ত্রুটি তার অনুপস্থিতিতে আলোচনা করলেই তার গীবত হবে। যা একটি কবিরা গুনাহ; মহাপাপ।

২. স্বপ্ন সম্পর্কে প্রথম কথা হলো- স্বপ্ন এক রহস্যময় জগত। আমাদের বাস্তব জীবনের আনেক কিছুই স্বপ্নের সাথে মিলে না। স্বপ্নে আমরা আনেক আনন্দদায়ক জিনিস দেখি কিন্তু বাস্তবে দেখি তার উল্টো।আবার কিছু জিনিস আছে স্বপ্নে বেদনাদায়ক হলেও বাস্তবে সেটা অত্যন্ত অনন্দদায়ক। আমাদের জীবন পদ্ধতি, কাজ-কর্ম, চলা-ফেরা, চিন্তা-চেতনা এবং আচার-অনুষ্ঠানের অনেক ভাবনাই কখনো কখনো স্বপ্ন হিসেবে আমাদের কাছে ফোটে উঠে। মানসিক চাপ, পারিবারিক অশান্তি ইত্যাদীও অনেক সময় স্বপ্নে ধরা দেয়। কাজেই স্বপ্নকে কখনো এরচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিবেন না।

সম্মানিত প্রশ্নকারী!
এখন আপনার জন্য করণীয় হল, ইসলামের প্রতিটি বিধান গুরুত্বসহকারে মেনে চলা । বিশেষকরে সঠিক যথাসময়ে সালাত আদায় করা। ফরজ রোজার এহতেমাম করা, সম্পদ থাকলে হিসেব করে যাকাত আদায় করা এবং হজ ফরজ হলে হজ করা। পর্দাপুশিদা, হালাল-হারাম নির্ণয় করে চলা। অধিনস্ত লোকদের হক আদায় করা। ঋণ থাকলে দ্রুত আদায় করে দেওয়া সাধ্যমতো দান-সদকাহ করা। এক কথায় মানুষ যেহেতু মরণশীল কাজেই নিজেকে সবসময় মৃত্যু পথের যাত্রীভেবে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর প্রস্তুতি নেওয়া। হতে পারে আল্লাহ তায়ালা এর মাধ্যমে আপনাকে আখেরাত সম্পর্কে সতর্ক ও সচেতন করছেন। কাজেই সম্পূর্ণরূপে দ্বীনের প্রতি মনোনিবেশ করুর। এর মধ্যে যদি কোনো খায়ের থাকে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তা দান করুন। আর কোনো অকল্যাণ থাকলে তাও দূর করে দিন। আমাদের দুনিয়া ও আখেরাত কল্যাণময় করুন। আমিন।

والله اعلم بالصواب

মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর, কদমতলী, ঢাকা।
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন