আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

নারীর ফেতনা থেকে বাঁচার উপায় ও আমল

প্রশ্নঃ ২৩৮৬১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার বয়স ১৯। এখন আমি কিভাবে বাজে চিন্তা, যেনা বা নারী ফেতনা থেকে বাঁচতে পারি? একটু জানাবেন। যেনার ভয়াবহতা একটু কষ্ট করে জানাবেন।,

১৫ নভেম্বর, ২০২২

ঢাকা ১২১৬

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এক.
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, আমাদের কাছে এমন কোনো যাদুকরী আমল নেই যে, যার মাধ্যমে আপনি নিমিষেই খারাপ চিন্তা থেকে একেবারে বের হয়ে আসতে পারবেন। তবে হ্যাঁ, যেন চিন্তার আধিক্যতা ধীরে ধীরে কমে আসে; এ উদ্দেশ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ আপনাকে দিচ্ছি–

১. আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহণ করুন। তাদের মজলিসে আসা যাওয়া করুন। এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা আপনার জন্য সহজ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

২. অধিকহারে ইস্তেগফার করুন। প্রয়োজনে এর জন্য প্রত্যেক নামাজের পর একটা নিয়ম করে নিন। যেমন, প্রত্যেক নামাজের পর ৫০/১০০/২০০ বার أسْتَغْفِرُ اللهَ অথবা أسْتَغْفِرُ اللهَ وَأتُوبُ إلَيهِ অথবা اللَّهُمَّ اغْفِرْ لي পড়ার নিয়ম করে নিতে পারেন। কেননা, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَا أَصَرَّ مَنِ اسْتَغْفَرَ وَإِنْ عَادَ فِي الْيَوْمِ سَبْعِينَ مَرَّةً
যে ব্যক্তি দিনে সত্তরবার করে একই গুনাহ করার পরও আল্লাহর কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইবে, (ইস্তেগফার করবে) সে যেন প্রকৃতপক্ষে গুনাহ বার বার করে নি। (তিরমিযী ৩৫৫৯)

৩. কখনো একাকী নিভৃতে থাকবেন না। কেননা একাকীত্ব গোনাহ চিন্তা করার কারণ হতে পারে। আপনার সময়কে উপকারী বিষয়ে ব্যয় করতে সচেষ্ট হোন। ঈমান ও ইসলামের পরিবেশে সময় ব্যয় করুন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
فَمَنْ أَرَادَ مِنْكُمْ بَحْبَحَةَ الْجَنَّةِ فَلْيَلْزَمُ الْجَمَاعَةَ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ مَعَ الْوَاحِدِ، وَهُوَ مِنَ الِاثْنَيْنِ أَبْعَدُ
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জান্নাতের মাঝখানে থাকতে ইচ্ছুক, সে যেন অবশ্যই জামাতবদ্ধ জীবন যাপন করে। কেননা শয়তান একাকী মানুষের সঙ্গী এবং দু’জন থেকে সে অপেক্ষাকৃত দূরে থাকে। (তিরমিযি ২২৫৪)

৪. প্রত্যেক নামাযের পর দৈনিক অন্তত পাঁচ বার কিছু সময়ের জন্য- দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন। মুরাকাবা এভাবে করবেন- চোখ বন্ধ করবেন। তারপর ভাববেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহ আমার সাথে আছেন।’ অথবা এই আয়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করবেন- هُوَ مَعَكُمْ اَيْنَمَا كُنْتُمْ ‘তোমরা যেখানেই তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।’

৫. আনাস রাযি. বলেন, রাসুল ﷺ (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় এই দোয়া করতেন, يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِىْ عَلىٰ دِيْنِكَ হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দীনের উপর দৃঢ় করে দিন।

আনাস রাযি. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার উপর এবং আপনার আনিত শিক্ষার উপর ঈমান এনেছি। এখন আপনার মনে কি আমাদের সম্পর্কে কোনো সন্দেহ আছে? ( যে বেশি বেশি এই দোয়া করেন!) রাসুল ﷺ উত্তর দিলেন হ্যাঁ! সব অন্তর আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে পড়ে আছে। আল্লাহ যেভাবে চান, এগুলোকে পরিবর্তন করেন। (তিরমিযি ২১৪০ তাকদির অধ্যায়)

সুতরাং এই হাদিসের শিক্ষা অনুযায়ী আপনিও উক্ত দোয়া অধিকহারে করুন।

৬. হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ দোয়া করতেন,
اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا، وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَن زَكَّاهَا، أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا
হে আল্লাহ আমাকে তাকওয়ার তওফীক দান করুন এবং নাফসকে পবিত্র করুন, আপনিই তো উত্তম পবিত্রকারী। আর আপনিই আমার নাফসের মুরুব্বী ও পৃষ্ঠপোষক। (মুসলিম ২৭২২)

সুতরাং আপনিও দোয়াটি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৭. বেশী করে আল্লাহর জিকির করুন। কেননা, জিকির শয়তান থেকে আত্মরক্ষার শক্তিশালী দুর্গ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنسَاهُمْ ذِكْرَ اللَّهِ أُوْلَئِكَ حِزْبُ الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُونَ
শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর আল্লাহর জিকির ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা মুজাদালাহ ১৯)

এভাবে নিয়মিত কিছুদিন করতে পারলে -ইনশা আল্লাহ- ধীরে ধীরে আল্লাহর সান্নিধ্যের সার্বক্ষণিক অনুভূতি অন্তরে বসে যাবে এবং বাজে চিন্তা থেকে বের হওয়া সহজ হয়ে যাবে।

দুই. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, হাদিস থেকে বুঝা যায়, মূলত ব্যভিচার এমন অপরাধ, যার ভয়াবহতা হত্যার পরেই। এটি এমন কবিরা গুনাহ, যার কারণে ব্যভিচারীর উপর দরিদ্রতা নেমে আসে এবং তার বয়স কমে যায়। তাকে লাঞ্ছিত হতে হয়। তাকে ফেরেশতা থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া হয় এবং এটি তাকে শয়তানের নিকটবর্তী করে দেয়। সর্বোপরি ব্যভিচারের সময় ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর ঈমান সঙ্গে থাকে না।

আবূ হুরাইরাহ রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল ﷺ বলেছেন,
إِذَا زَنَى الرَّجُلُ خَرَجَ مِنْهُ الْإِيْمَانُ ؛ كَانَ عَلَيْهِ كَالظُّلَّةِ، فَإِذَا انْقَطَعَ رَجَعَ إِلِيْهِ الْإِيْمَانُ
যখন কোন পুরুষ ব্যভিচার করে তখন তার ঈমান তার অন্তর থেকে বের হয়ে মেঘের ন্যায় তার উপরে চলে যায়। অতঃপর যখন সে ব্যভিচারকর্ম সম্পাদন করে ফেলে তখন আবারো তার ঈমান তার নিকট ফিরে আসে। (আবূ দাউদ ৪৬৯০)
পরিশেষে দোয়া করি, আল্লাহ আমাদের সকলকে এই ভয়াবহ গুনাহ থেকে হেফাজত করুন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৫৫৭৯

যে মেয়ে গুনাহয় আসক্ত; তার প্রতি নসিহত


২১ নভেম্বর, ২০২২

দিনাজপুর ৫২০০

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

২৫৫০২

প্রিয় মানুষকে পাওয়ার জন্য কোন দোয়া আছে কিনা?


২০ নভেম্বর, ২০২২

Howtat Bani Tamim ১৬৬৩১

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

২১৬৫৩

মাকে সন্তষ্ট কর, দুনিয়া-আখেরাতের কোথাও তুমি আটকাবে না


৮ অক্টোবর, ২০২৩

West Bengal ৭৪৩৭১১

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy