আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট স্কিমে টাকা রেখার বিধান

প্রশ্নঃ ২১৪১১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি আল আরাফার ব্যাংকে এক বছর মেয়াদী মোদারাবা টার্ম ডিপোজিট স্কিমে টাকা রেখে ছিলাম। তারপর কথা ছিল লাভ লোকসানের ভিত্তিতে বছরান্তে আমাকে লাভ দিবে। কিন্তু এক বছর পর লাভ ওঠাতে গিয়ে দেখলাম, তারা গত বছর থেকে এ বছর পর্যন্ত আমাকে ৪% হারে লাভ দেখিয়েছে এবং এটাও বললো যে, এ বছর ৬% হারে লাভ ঘোষণা করা হচ্ছে এবং এক বছর পরে যদি তাদের লাভ ৪% এর কম হয় অথবা বেশি হয়, তবুও আমাকে এই ৬ পার্সেন্ট হারেই লাভ দিবে। এখন আমার প্রশ্ন হল এটা তো আমার কাছে সুদের মতোই মনে হল। কারণ ৬ পার্সেন্ট হারে বা চার পার্সেন্ট হারে সারা বছর আমাকে লাভ দিবে এবং সূত্রটা বলল, যেদিন থেকে আমি টাকাটা রাখবো, ওইদিন ব্যাংকের যে প্রফিট রেট আছে বা থাকবে, ওইটাই আমার জন্য প্রযোজ্য হবে। মাঝে লাভ বৃদ্ধি পাক কিংবা কমে যাক তাতে আমার লাভ লোকসানের কোন তারতম্য হবে না। এতদিন আমি জানতাম আল আরাফা ব্যাংক লাভ লোকসানের ভিত্তিতে টাকা প্রদান করেন। ফলে এটা সুদের মধ্যে গণ্য হবে না যেহেতু লাভটা ফিক্সড করে নাই এবং লাভ কিংবা লোকসান যেটাই হোক, সেগুলো নিতে গ্রাহকরা বাধ্য থাকবে। কিন্তু আজকে যে কথাটা শুনলাম এবং আমাকেও সেভাবেই এক বছরের লাভ ক্যালকুলেশন করে ফোর পার্সেন্ট হিসেবে দিয়েছেন এবং এটাও জানিয়েছেন আগামী বছর আমাকে ৬% হিসেবে লাভ দিবেন, যেহেতু আজকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ৬% হিসেবে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছেন, তাই আগামী এক বছর আমার হিসাবের জন্য এই ৬% কার্যকর থাকবে। এখন হযরতদের কাছে আমার প্রশ্ন, এই পদ্ধতিতে কি সুদ হয়ে যাচ্ছে নাকি লাভ হচ্ছে? আর যদি সুদই হয়, তাহলে আমরা টাকা কোন ব্যাংকে রাখবো? কারণ এই টাকা তো ব্যাংকে না রেখেও আমার উপায় নেই, কেননা এমন কোন খাত নেই যে, আমি সেখানে ব্যবহার করে ওখান থেকে কিছু লাভ পাব।আমাকে তো এই টাকার উপর যাকাত প্রদান করতে হবে। অন্তত যাকাত পরিমাণ লাভ তো আমার প্রয়োজন হবে। তা না হলে তো আমার টাকা কমতে থাকবে। সংসারের প্রয়োজনীয়তার জন্যওতো লাভের অংশ দরকার।অন্তত: আমার লাভ নাহয় নাই হইলো কিন্তু যাকাতের টাকা তো আসা দরকার।আবার ব্যবসায় এ ও আমার কিছু করার সুযোগ নেই। তাই এই পেনশনের টাকা গুলুর ব্যাপারে আপনার মূল্যবান সঠিক দিক নির্দেশনা বিনীত ভাবে চাচ্ছি। জানালে উপকৃত হতাম।,

২১ জানুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা ১২১৫

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


1. আমাদের দেশে বর্তমানে শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত হওয়ার দাবিদার ইসলামী ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগে যথাযথভাবে শরীয়তের নীতিমালা অনুসারণ করে না। তাই শরীয়তের এ সংক্রান্ত নীতিমালা যথাযথভাবে পালনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত এসব ব্যাংকে ডিপিএস, এফডিআর বা অন্য কোনো সেভিং একাউন্টে টাকা রেখে অতিরিক্ত গ্রহণ করা যাবে না। হালাল-হারাম বেছে চলতে চায় এমন মানুষের জন্য এধরনের টাকা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়। মুনাফার নামে দেওয়া এ ধরনের টাকা সদকা করে দেওয়াই নিরাপদ। (মাসিক আলকাউসার: জুমাদাল উলা ১৪৪০ || ফেব্রুয়ারি ২০১৯)
2. সুদ দেয়া এবং নেয়া উভয়ই কবিরা গোনাহ। কুরআন ও হাদীসে এ বিষয়ে কঠোরসব ধমকি এসেছে। সেই সাথে ভয়াবহ শাস্তির কথাও উদ্ধৃত হয়েছে। সুতরাং এহেন পাপের সাথে জড়িত হওয়া কোনো মুসলমানের জন্য জায়েজ নাই। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَإِن تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ [٢:٢٧٩]
অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না। [সূরা বাকারা-২৭৯]

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ [٢:٢٧٨]
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। [সূরা বাকারা-২৭৮]

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ۗ وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ۚ فَمَن جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىٰ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَمَنْ عَادَ فَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ [٢:٢٧٥]
যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। [সূরা বাকারা-২৭৫]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا، أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ»
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদের গুনাহর সত্তরটি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন মাকে বিবাহ (যেনা) করা। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২৭৪, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫১৩১, মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-২২৫৯]

عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَكَاتِبَهُ
ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -সূদখোর, সূদ দাতা সূদের সাক্ষীদ্বয় ও সূদের (চুক্তি বা হিসাব) লেখককে অভিসম্পাত করেছেন। [সুনানে তিরমিজী-১/২২৯ হাদীস নং-১২০৬, সহীহ মুসলিম-২/৭২, হাদীস নং-১৫৯৮]

لأن القرض إعارة ابتداء، حتى صح بلفظها معاوضة انتهاء، لأنه لا يمكن الانتفاع به إلا باستهلاك عينه، فيستلزم إيجاب المثلي في الذمة، وهذا لا يتأتى في غير المثلي قال في البحر: ولا يجوز في غير المثلي، لأنه لا يجب دينا في الذمة ويملكه المستقرض بالقبض كالصحيح (رد المحتار، كتاب البيوع، باب المرابحة والتولية، فصل فى القرض-7/388)

সম্মানিত প্রশ্নকারী!
আমাদের জানামতে এমন কোনো নিরাপদ জায়গা নাই যেখানে আপনি বিনিয়োগ করে শরীয়া মোতাবেক লাভমান হতে পারেন। তার একটিই রাস্তা সেটা হলো নিজে ঝুকি নিয়ে সরাসরি ব্যবসা করা।
আপনি এখন যেই টাকার মালিক গতকালও আপনি তার মালিক ছিলেন না। এটা আল্লাহ আপনাকে মালিক বানিয়েছেন। কাজেই আল্লাহর নির্দেশিত পথে তা ব্যয় করতে কুন্ঠিত হওয়া জায়েজ নাই।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৭১৩২১

গ্যাসের ফি বিলম্বে দেয়া কি জায়েজ? নাকি সুদ?


২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Nayakanda

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৫৫২৫৫

হালাল হারাম


১৮ মার্চ, ২০২৪

টঙ্গী

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

৬৯৪২৮

সন্দেহযুক্ত/ হারাম টাকায় নির্মিত মসজিদে নামাযের বিধান কি?


২৪ নভেম্বর, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮৭২৭৪

আনসার বাহিনীতে চাকুরিরত ব্যক্তির জন্য বিশেষ লোন নেওয়া কি জায়েয?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy